সূরা লুকমান (আয়াত: 23)
হরকত ছাড়া:
ومن كفر فلا يحزنك كفره إلينا مرجعهم فننبئهم بما عملوا إن الله عليم بذات الصدور ﴿٢٣﴾
হরকত সহ:
وَ مَنْ کَفَرَ فَلَا یَحْزُنْکَ کُفْرُهٗ ؕ اِلَیْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ ﴿۲۳﴾
উচ্চারণ: ওয়া মান কাফারা ফালা-ইয়াহযুনকা কুফরুহূ ইলাইনা-মারজি‘উহুম ফানুনাব্বিউহুম বিমা‘আমিলূ ইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুম বিযা-তিসসুদূ র।
আল বায়ান: আর যে কুফরী করে, তার কুফরী যেন তোমাকে ব্যথিত না করে; আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তারা যে আমল করত আমি তা তাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরসমূহে যা আছে তা সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৩. আর কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন আপনাকে কষ্ট না দেয়(১) আমাদেরই কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমরা তাদেরকে তারা যা করত সে সম্পর্কে অবহিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরসমূহে যা রয়েছে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।
তাইসীরুল ক্বুরআন: কেউ কুফরী করলে তার কুফরী তোমাকে যেন মনোকষ্ট না দেয়, তাদের প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই; অতঃপর আমি তাদেরকে জানিয়ে দেব তারা কী করত। (মানুষের) অন্তরসমূহে কী আছে সে সম্পর্কে আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
আহসানুল বায়ান: (২৩) কেউ অবিশ্বাসী হলে তার অবিশ্বাস যেন তোমাকে দুঃখিত না করে।[1] আমারই নিকট ওদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর ওরা যা করেছে, আমি ওদেরকে তা অবহিত করব।[2] অবশ্যই অন্তরে যা রয়েছে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [3]
মুজিবুর রহমান: কেহ কুফরী করলে তার কুফরী যেন তোমাকে ক্লিষ্ট না করে। আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তাদেরকে অবহিত করব তারা যা করত। অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
ফযলুর রহমান: আর যে কুফরি করে তার কুফরি যেন তোমাকে চিন্তিত না করে; (কেননা) আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন (নির্ধারিত আছে)। তখন আমি তাদেরকে তাদের যাবতীয় কৃতকর্ম অবহিত করব। আল্লাহ (মানুষের) অন্তরের খবর ভাল করেই জানেন।
মুহিউদ্দিন খান: যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফরী যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। আমারই দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তাদের কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করব। অন্তরে যা কিছু রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত।
জহুরুল হক: আর যে অবিশ্বাস পোষণ করে তার অবিশ্বাস তবে যেন তোমাকে কষ্ট না দেয়। আমাদেরই কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন, কাজেই আমরা তাদের জানিয়ে দেব যা তারা করত। নিঃসন্দেহ অন্তরের অভ্যন্তরে যা রয়েছে আল্লাহ্ সে সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।
Sahih International: And whoever has disbelieved - let not his disbelief grieve you. To Us is their return, and We will inform them of what they did. Indeed, Allah is Knowing of that within the breasts.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ২৩. আর কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন আপনাকে কষ্ট না দেয়(১) আমাদেরই কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমরা তাদেরকে তারা যা করত সে সম্পর্কে অবহিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরসমূহে যা রয়েছে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।
তাফসীর:
(১) সম্বোধন করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। অর্থ হচ্ছে, হে নবী! যে ব্যক্তি আপনার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করে, সে তো নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে একথা মনে করে যে, ইসলামকে প্রত্যাখ্যান এবং কুফরীকে মেনে নিয়েও তার ওপর জোর দিয়ে সে আপনাকে অপমানিত করেছে। কিন্তু আসলে সে নিজেই নিজেকে অপমানিত করেছে। সে আপনার কোন ক্ষতি করেনি। বরং নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে। কাজেই সে যদি আপনার কথা না মানে তাহলে তার পরোয়া করার প্রয়োজন নেই। [সা’দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (২৩) কেউ অবিশ্বাসী হলে তার অবিশ্বাস যেন তোমাকে দুঃখিত না করে।[1] আমারই নিকট ওদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর ওরা যা করেছে, আমি ওদেরকে তা অবহিত করব।[2] অবশ্যই অন্তরে যা রয়েছে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [3]
তাফসীর:
[1] কারণ, ঈমান লাভের সৌভাগ্য তাদের নেই। তোমার প্রচেষ্টা স্বস্থানে ঠিকই আছে এবং তোমার আকাঙ্ক্ষাও কদর পাওয়ার যোগ্য; কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।
[2] অর্থাৎ, তাদের কর্মের প্রতিফল দেব।
[3] সুতরাং তাঁর নিকট কোন কিছু গোপন নেই।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ২২-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে ও তাঁর আনুগত্য করে এবং যাবতীয় আদেশ পালন ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বিষয় থেকে বিরত থেকে নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণ করে সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করল যা কখনো ছিঁড়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে না। আল্লাহ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য এ রজ্জুই যথেষ্ট।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা প্রদান করে বলছেন: তোমার আহ্বান শোনার পর যদি কেউ কুফরী করে তাতে তুমি দুঃখ প্রকাশ কর না। তারা এ দুনিয়াতে কুফরী করার পর অবশেষে আমার নিকটই তাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তাদের দুনিয়ার জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং তখন তাদেরকে কুফরীর শাস্তি প্রদান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَي اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ ط مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيْقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيْدَ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)
“বল: ‘যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তারা সফলকাম হবে না।’ পৃথিবীতে তাদের জন্য আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর কুফরীর কারণে তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।” (সূরা ইউনূস ১০:৬৯-৭০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে হবে। ইবাদতের মধ্যে কোন প্রকার একনিষ্ঠতার ঘাটতি থাকলে চলবে না।
২. দুনিয়া একদিন শেষ হয়ে যাবে। আর তখন মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই ফিরে যেতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ২২-২৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ চিত্তে আমল করে, যে সত্যভাবে আল্লাহর অনুগত হয়, যে শরীয়তের অনুসারী হয়, আল্লাহর আদেশের উপর আমল করে এবং তার নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকে সে দৃঢ় রঞ্জুকে ধারণ করলো, সে যেন আল্লাহর ওয়াদা নিয়েছে যে, সে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা পাবে। কাজের শেষ পরিণতি আল্লাহরই অধিকারে রয়েছে।
এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তুমি কাফিরদের কুফরীর কারণে মোটেই চিন্তিত হয়ো না। তাদেরকে আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। সে সময় আমি তাদেরকে তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিফল প্রদান করবো। আমার কাছে তাদের কোন আমলই গোপন নেই। আমি স্বল্পকালের জন্যে তাদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিবো। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তারা সফলকাম হবে না, পার্থিব সুখ-সম্ভোগ তো এদের জন্য রয়েছে, পরে আমারই নিকট এদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাববা।” (১০:৬৯-৭০)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।