সূরা লুকমান (আয়াত: 22)
হরকত ছাড়া:
ومن يسلم وجهه إلى الله وهو محسن فقد استمسك بالعروة الوثقى وإلى الله عاقبة الأمور ﴿٢٢﴾
হরকত সহ:
وَ مَنْ یُّسْلِمْ وَجْهَهٗۤ اِلَی اللّٰهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَکَ بِالْعُرْوَۃِ الْوُثْقٰی ؕ وَ اِلَی اللّٰهِ عَاقِبَۃُ الْاُمُوْرِ ﴿۲۲﴾
উচ্চারণ: ওয়া মাইঁ ইউছলিম ওয়াজহাহূ ইলাল্লা-হি ওয়া হুওয়া মুহছিনুন ফাকাদিছতামছাকা বিল ‘উরওয়াতিল উছকা- ওয়া ইলাল্লা-হি ‘আ-কিবাতুল উমূর।
আল বায়ান: আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২২. আর যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমৰ্পণ করে, এমতাবস্থায় যে সে মুহসিন(১) সে তো দৃঢ়ভাবে ধরলো এক মযবুত হাতল। আর যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহরই কাছে।
তাইসীরুল ক্বুরআন: যে কেউ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে আর সে সৎকর্মশীল, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কর্ম পরিণাম ফলের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে যায়।
আহসানুল বায়ান: (২২) যে কেউ সৎকর্মপরায়ণ হয়ে[1] আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে,[2] সে আসলে এক মজবুত হাতল ধারণ করে।[3] আর যাবতীয় কার্যের পরিণাম আল্লাহর অধীনে।
মুজিবুর রহমান: যদি কেহ সৎ কর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করে তাহলে সেতো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মাযবূত হাতল, যাবতীয় কার্যের পরিণাম আল্লাহর দিকে।
ফযলুর রহমান: যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে এবং সৎকর্মশীল হয় সে তো সবচেয়ে মজবুত রশিটিই আঁকড়ে ধরেছে। আর আল্লাহর কাছেই সকল কাজের পরিণতি।
মুহিউদ্দিন খান: যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে।
জহুরুল হক: আর যে তার মুখ আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ সমর্পণ করে আর সে সৎকর্মপরায়ণ হয়, তাহলে তো সে এক মজবুত হাতল পাকড়ে ধরেছে। আর আল্লাহ্র কাছেই রয়েছে সকল বিষয়ের পরিণাম।
Sahih International: And whoever submits his face to Allah while he is a doer of good - then he has grasped the most trustworthy handhold. And to Allah will be the outcome of [all] matters.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ২২. আর যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমৰ্পণ করে, এমতাবস্থায় যে সে মুহসিন(১) সে তো দৃঢ়ভাবে ধরলো এক মযবুত হাতল। আর যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহরই কাছে।
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ মুখে নিজেকে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করার ঘোষণা দেয়া হবে কিন্তু কার্যত আল্লাহর অনুগত বান্দার নীতি অবলম্বন করা হবে না, এমনটি যেন না হয়। আর তা হবে কেবলমাত্র রাসূলকে অনুসরণ করার মাধ্যমে। এ আয়াতের প্রথম অংশ তাওহীদ আর দ্বিতীয় অংশ রাসূলের অনুসরন করা বাধ্য করে দিয়েছে। তাওহীদ পরিশুদ্ধ হতে হলে রাসূলের অনুসরণ জরুরী। [সা'দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (২২) যে কেউ সৎকর্মপরায়ণ হয়ে[1] আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে,[2] সে আসলে এক মজবুত হাতল ধারণ করে।[3] আর যাবতীয় কার্যের পরিণাম আল্লাহর অধীনে।
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, যাবতীয় আদেশ পালন করে এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ বর্জন করে।
[2] অর্থাৎ, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমল করে এবং তাঁর আদেশ পালন ও তাঁর বিধান মান্য করে।
[3] অর্থাৎ, সে আল্লাহর নিকট পাক্কা প্রতিশ্রুতি নেয় যে, তিনি তাকে শাস্তি দেবেন না।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ২২-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে ও তাঁর আনুগত্য করে এবং যাবতীয় আদেশ পালন ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বিষয় থেকে বিরত থেকে নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণ করে সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করল যা কখনো ছিঁড়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে না। আল্লাহ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য এ রজ্জুই যথেষ্ট।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা প্রদান করে বলছেন: তোমার আহ্বান শোনার পর যদি কেউ কুফরী করে তাতে তুমি দুঃখ প্রকাশ কর না। তারা এ দুনিয়াতে কুফরী করার পর অবশেষে আমার নিকটই তাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তাদের দুনিয়ার জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং তখন তাদেরকে কুফরীর শাস্তি প্রদান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَي اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ ط مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيْقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيْدَ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)
“বল: ‘যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তারা সফলকাম হবে না।’ পৃথিবীতে তাদের জন্য আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর কুফরীর কারণে তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।” (সূরা ইউনূস ১০:৬৯-৭০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে হবে। ইবাদতের মধ্যে কোন প্রকার একনিষ্ঠতার ঘাটতি থাকলে চলবে না।
২. দুনিয়া একদিন শেষ হয়ে যাবে। আর তখন মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই ফিরে যেতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ২২-২৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ চিত্তে আমল করে, যে সত্যভাবে আল্লাহর অনুগত হয়, যে শরীয়তের অনুসারী হয়, আল্লাহর আদেশের উপর আমল করে এবং তার নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকে সে দৃঢ় রঞ্জুকে ধারণ করলো, সে যেন আল্লাহর ওয়াদা নিয়েছে যে, সে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা পাবে। কাজের শেষ পরিণতি আল্লাহরই অধিকারে রয়েছে।
এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তুমি কাফিরদের কুফরীর কারণে মোটেই চিন্তিত হয়ো না। তাদেরকে আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। সে সময় আমি তাদেরকে তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিফল প্রদান করবো। আমার কাছে তাদের কোন আমলই গোপন নেই। আমি স্বল্পকালের জন্যে তাদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিবো। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তারা সফলকাম হবে না, পার্থিব সুখ-সম্ভোগ তো এদের জন্য রয়েছে, পরে আমারই নিকট এদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাববা।” (১০:৬৯-৭০)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।