সূরা আল-গাশিয়া (আয়াত: 12)
হরকত ছাড়া:
فيها عين جارية ﴿١٢﴾
হরকত সহ:
فِیْهَا عَیْنٌ جَارِیَۃٌ ﴿ۘ۱۲﴾
উচ্চারণ: ফীহা-‘আইনুন জা-রিয়াহ।
আল বায়ান: সেখানে থাকবে প্রবাহমান ঝর্ণাধারা,
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. সেখানে থাকবে বহমান প্রস্রবণ,
তাইসীরুল ক্বুরআন: সেখানে থাকবে প্রবহমান ঝর্ণা,
আহসানুল বায়ান: ১২। সেখানে আছে প্রবহমান ঝরনা।
মুজিবুর রহমান: সেখানে আছে প্রবহমান ঝর্ণাধারা –
ফযলুর রহমান: সেখানে থাকবে বহমান ঝরনা।
মুহিউদ্দিন খান: তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।
জহুরুল হক: সেখানে রয়েছে বহমান ঝরনা,
Sahih International: Within it is a flowing spring.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১২. সেখানে থাকবে বহমান প্রস্রবণ,
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ১২। সেখানে আছে প্রবহমান ঝরনা।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৮-১৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
জাহান্নামী ও তাদের দূরবস্থার কথা আলোচনার পর কিয়ামতের দিন জান্নাতীরা তাদের সৎআমলের প্রতিদানস্বরূপ যে নেয়ামতপূর্ণ সুউচ্চ জান্নাত পাবে এবং যে সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশে থাকবে সে কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْٓ أُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ)
“এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফল-মূল, তোমরা তা হতে আহার করবে।” (সূরা যুখরূফ ৪৩ : ৭২-৩)
তবে কেউ আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে পারবে না যদি আল্লাহ তা‘আলা রহম না করেন। এ সম্পর্কে সূরা যুখরূফের ৭২ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
نَّاعِمَةٌ অর্থাৎ জান্নাতীদের চেহারায় নেয়ামতের সজিবতা প্রকাশ পাবে। এসব তাদের ভাল আমলের প্রতিদানস্বরূপ।
(لَّا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً)
‘সেখানে তারা অবান্তর বাক্য শুনবে না।’ যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا إِلَّا سَلٰمًا ط وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيْهَا بُكْرَةً وَّعَشِيًّا)
“সেথায় তারা ‘শান্তির সম্ভাষণ ব্যতীত’ কোন অসার বাক্য শুনবে না এবং সেথায় সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।” (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৬২) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(جَزَا۬ئًۭ بِمَا کَانُوْا یَعْمَلُوْنَﭧلَا یَسْمَعُوْنَ فِیْھَا لَغْوًا وَّلَا تَاْثِیْمًا)
“তাদের আমলের পুরস্কারস্বরূপ। তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬ : ২৪-২৫)
(عَيْنٌ جَارِيَةٌ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেন : জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ মিশকের টিলা বা পাহাড় হতে প্রবাহিত। (সহীহ ইবনু হিব্বান হা. ২৬২২, সনদ হাসান)
(فِيْهَا سُرُرٌ مَّرْفُوْعَةٌ)
অর্থাৎ জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে উঁচু উঁচু পালংক থাকবে এবং ঐসব পালংকে আরামদায়ক বিছানা তোষকসমূহ থাকবে। বিছানার পাশে হুরগণ বসে থাকবে। যখন তারা এসব বিছানায় বসতে ইচ্ছা করবে তখন তা নূয়ে পড়বে।
(وَّزَرَابِيُّ مَبْثُوْثَةٌ)
زَرَابِيُّ-অর্থ : গালিচা, আসন, গদি ইত্যাদি। আর مَبْثُوْثَةٌ অর্থ : বিছানো বা ছড়ানো। অর্থাৎ এসব আসন বিভিন্ন জায়গায় বিছানো থাকবে।
সুতরাং এমন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রতিটি মু’মিন মুসলিমের যে-কোনো মূল্যে সৎ আমলের প্রতি প্রচেষ্টা করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে।
২. জান্নাতে প্রস্তুত করে রাখা নেয়ামতরাজির বর্ণনা জানলাম।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৮-১৬ নং আয়াতের তাফসীর
এর পূর্বে পাপী, দুষ্কৃতিকারী এবং মন্দ লোকদের বর্ণনা এবং তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে পুণ্যবান ও সঙ্কৰ্মশীলদের পরিণাম ও পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, সেইদিন এমন বহু চেহারা দেখা যাবে যাদের চেহারা থেকে তৃপ্তি ও আনন্দ উল্লাসের নিদর্শন প্রকাশ পাবে তারা নিজেদের সৎকাজের বিনিময় দেখে খুশী হবে। জান্নাতের উঁচু উঁচু অট্টালিকায় তারা অবস্থান করবে। সেখানে কোন প্রকারের বাজে কথা ও অশ্লীল আলাপ থাকবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
“সেথায় তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য” (৫৬:২৫-২৬) সালাম আর সালাম’ বানী ব্যতীত।” আর এক জায়গায় বলেন (আরবি) অর্থাৎ “তথায় নেই কোন অসার কথা পাপবাক্য।” (৫২:২৩)
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সেথায় থাকবে বহমান প্রস্রবণ।' এখানে একটি ঝর্ণার কথা বুঝানো হয়নি। বরং ঝর্ণা সমূহের কথা বুঝানো হয়েছে।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ মিশক এর পাহাড় এবং মিশকের টিলা হতে প্রবাহিত হবে।
তথায় থাকবে উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা। অর্থাৎ জান্নাতীদের জন্যে জান্নাতে উঁচু উঁচু পালঙ্ক রয়েছে এবং ঐ সব পালঙ্কে উঁচু উঁচু আরামদায়ক বিছানা তোষকসমূহ রয়েছে। সেই বিছানার পাশে হুরগণ বসে আছে। এ সব বিছানাগুলো উঁচু উঁচু গদিবিশিষ্ট হলেও যখনই আল্লাহর বন্ধুরা ওগুলোতে শোবার ইচ্ছা করবে তখন ওগুলো অবনত হয়ে যাবে এবং নুয়ে পড়বে। রকমারী সুরা থাকবে, যে রকম. সুরা যতটুকু পরিমাণ ইচ্ছা করবে পান করতে পারবে। সারি সারি পালঙ্ক ও বিছানা সুসজ্জিত থাকবে, যখন যেখানে খুশী উপবেশন ও শয়ন করতে পারবে।
হযরত উসমান ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কেউ আছে কি যে জান্নাতের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে? এমন জান্নাত যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বেহিসাব। কা'বার প্রতিপালকের শপথ! সেটা এক চমকিত নুর বা জ্যোতি, সেটা এক উপচে পড়া সবুজ সৌন্দর্য, সেখানে উঁচু উঁচু মহল ও বালাখানা রয়েছে। রয়েছে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা, রেশমী পোশাক, নরম নরম গালিচা এবং পাকা পাকা উন্নত মানের ফল। সেটা চিরস্থায়ী স্থান, আরাম আয়েশ ও নিয়ামতে পরিপূর্ণ।” তখন সাহাবীগণ বলে উঠলেনঃ “আমরা সবাই এ জান্নাতের আকাংখী এবং আমরা এর জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের একথা শুনে বললেন! ইনশাআল্লাহ (যদি আল্লাহ চান) বল।” তখন তারা ইনশাআল্লাহ বললেন।” (এ হাদীসটি আবু বকর ইবনে আবী দাউদ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।