আল কুরআন


সূরা আল-আ‘রাফ (আয়াত: 67)

সূরা আল-আ‘রাফ (আয়াত: 67)



হরকত ছাড়া:

قال يا قوم ليس بي سفاهة ولكني رسول من رب العالمين ﴿٦٧﴾




হরকত সহ:

قَالَ یٰقَوْمِ لَیْسَ بِیْ سَفَاهَۃٌ وَّ لٰکِنِّیْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعٰلَمِیْنَ ﴿۶۷﴾




উচ্চারণ: কা-লা ইয়া-কাওমি লাইছা বী ছাফা-হাতুওঁ ওয়া লা-কিন্নী রাছূলুম মিররাব্বিল ‘আ-লামীন।




আল বায়ান: সে বলল, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই; কিন্তু আমি সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল’।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৬৭. তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসূল।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মাঝে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রেরিত রসূল।’




আহসানুল বায়ান: (৬৭) সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, আমি তো বিশ্ব-জগতের প্রতিপালকের (প্রেরিত) একজন রসূল।



মুজিবুর রহমান: সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি হলাম সারা জাহানের রবের মনোনীত রাসূল।



ফযলুর রহমান: সে বলেছিল, “হে আমার সমপ্রদায়! আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই; তবে আমি বিশ্বপ্রভুর পক্ষ থেকে একজন রসূল।”



মুহিউদ্দিন খান: সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি মোটেই নির্বোধ নই, বরং আমি বিশ্ব প্রতিপালকের প্রেরিত পয়গম্বর।



জহুরুল হক: তিনি বললেন -- "হে আমার লোকেরা! আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই, বরং আমি হচ্ছি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল।



Sahih International: [Hud] said, "O my people, there is not foolishness in me, but I am a messenger from the Lord of the worlds."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৬৭. তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসূল।(১)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ সম্প্রদায়ের নেতা গোছের লোকেরা বললঃ “আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধারণা তুমি একজন মিথ্যাবাদী।” এটা প্রায় নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের প্রত্যুত্তরের মতই– শুধু কয়েকটি শব্দের পার্থক্য মাত্র। হুদ আলাইহিস সালাম এর উত্তরে বললেনঃ আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই। ব্যাপার শুধু এতটুকুই যে, আমি বিশ্ব পালনকর্তার কাছ থেকে রাসূল হয়ে এসেছি। তার বার্তা তোমাদের কাছে পৌছাই। আমি সুস্পষ্টভাবে তোমাদের হিতাকাংখী। তাই তোমাদের পৈত্রিক মুর্খতায় তোমাদের সঙ্গী হওয়ার পরিবর্তে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য কথা তোমাদের কাছে পৌছে দেই। কিন্তু তা তোমাদের মনঃপুত নয়।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৬৭) সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, আমি তো বিশ্ব-জগতের প্রতিপালকের (প্রেরিত) একজন রসূল।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৬৫-৭২ নং আয়াতের তাফসীরঃ



অত্র আয়াতগুলোতে হূদ (আঃ) ও আদ জাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যাঁকে নূহ (আঃ)-এর পর প্রেরণ করা হয়েছিল।



আল্লাহ তা‘আলার গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহ (আঃ)-এর পরে আদ ছিল দ্বিতীয় জাতি। এরা খুবই দুর্ধর্ষ, শক্তিশালী, সুঠামদেহী ও বিরাট বপুস¤পন্ন ছিল। আদ ও সামূদ ছিল নূহ (আঃ)-এর পুত্র সামের বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। ইরামের পুত্র আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ উলা বা প্রথম আদ’ এবং অপর পুত্রের সন্তান সামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ সানী বা দ্বিতীয় আদ’ বলে খ্যাত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আ‘দ ও সামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সে-কারণে ইরাম নামটি আদ ও সামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। তাই কুরআনে কোথাও ‘আদ উলা’ (সূরা নাজম ৫৩:৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম’ (সূরা ফাজর ৮৯:৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আদ জাতির ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান হতে শুরু করে হাজরামাউত ও ইয়ামান পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। (কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর)



আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি নাবী হিসেবে হূদ (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন। তিনি স্বীয় জাতিকে শির্ক বর্জন করে সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে পূর্তিপূজা ত্যাগ করার এবং জুলুম ও অত্যাচার পরিহার করে ন্যায়-বিচারের পথে চলার উদাত্ত আহ্বান জানান। এমনকি তিনি এ-কথাও বলেন, ‘আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে।’ (সূরা শুআরা ২৬:১২৭) সূরা হূদের ৫০-৫১নং আয়াতেও এ কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে অপরাধের ক্ষমা চাইতে এবং তাওবা করতে বললেন। এ কাজ করলে ‘তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষাবেন। তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সূরা হূদ ১১:৫২) তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার যে সকল নেয়ামত রয়েছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তিনি তাদেরকে দান করেছেন চতুষ্পদ জন্তু ও সন্ত‎ান-সন্ত‎তি, উদ্যান ও ঝর্ণাধারা। (সূরা শুআরা ২৬:১৩৩-১৩৪)



এসব কথা উল্লেখ করে তিনি যখনই তাওহীদ, তাওবা-ইস্তিগফার ও ন্যায়-নিষ্ঠার দাওয়াত দিতে শুরু করলেন তখনই লোকেরা তাকে নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করতে লাগল। তারা বলল: ‘তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক ‘আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার ইবাদত করত তা বর্জন করি? তারা আরো বলতে লাগল, ‘হে হূদ! তুমি আমাদের নিকট কোন স্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর‎নি, তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব না এবং আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি না। ‘আমরা এটাই বলি: আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দৃষ্টি দ্বারা আবিষ্ট করেছে।” (সূরা হূদ ১১:৫৩-৫৪) তারা আরো বলল: তুমি কি আমাদের মা‘বূদদের থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এসেছ? তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তুমি যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আহকাফ ৪৬:২৬) তারা বলেছিল: আমাদের প্রতিপালকের এরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা অবতীর্ণ করতেন। অতএব, তুমি যেসব বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা প্রত্যাখান করছি। (সূরা ফুসসিলাত ৪১: ১৪)



তিনি তাদের এসব কথার জবাবে বলেন:



(يٰقَوْمِ لَيْسَ بِيْ سَفَاهَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَ)



‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রাসূল।’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৬৭) তিনি তাদের জবাবে আরো বলেন: ‘আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর; এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্বাধীন নয়; নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আছেন সরল পথে। ‘এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও (তবে জেনে রেখ) আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, অবশ্যই তা তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি; এবং আমার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে কোন সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সমস্ত‎ কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (সূরা হূদ ১১: ৫৬-৫৭)



(رَجُلٍ مِّنْکُمْ)



‘তোমাদের মধ্য হতে একজন ব্যক্তি’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্য হতে একজনকে আল্লাহ তা‘আলা বাছাই করে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন- এতে তোমরা আশ্চর্যবোধ করছ। মূলতঃ এটা আশ্চর্যের কথা নয় বরং প্রত্যেক জাতির সম্প্রদায় থেকে একজনকে বাছাই করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল হিসেবে মনোনিত করেন।



(مِنْۭ بَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ)



‘নূহের সম্প্রদায়ের পরে’ অর্থাৎ নূহ (আঃ)-এর অবাধ্য জাতিকে মহা প্লাবনে ধ্বংসের পর তোমরা জমিনে বাস করছ, সেকথা বেশি দূরে নয়।



(وَّزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً)



‘এবং তোমাদের দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট-বলিষ্ঠ করেছেন।’ অর্থাৎ শক্তি, সামর্থ্যে ও দৈহিক গঠনে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অতএব আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতগুলো স্মরণ কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(الَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ)



“যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃষ্টি করা হয়নি” (সূরা ফাজর ৮৯:৮)



(فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا)



‘আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো’ এরূপ মক্কার কুরাইশরাও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর কাছে দাওয়াতের উত্তরে বলেছিল:



(اللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ هٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَا۬ءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)



“স্মরণ কর, যখন তারা বলছিল- ‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের ওপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দাও।” (সূরা আনফাল ৮:৩২)



رجس এর প্রকৃত অর্থ নাপাকী, এখানে অর্থ হল শাস্তি।



যখন নিজেদের ধনৈশ্বর্যের মোহে এবং দুনিয়াবী শক্তির অহংকারে মত্ত হয়ে তারা নাবীর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল, বাপ-দাদার দোহায় দিয়ে দেব-দেবীর উপাসনায় মগ্ন রইল এবং অহংকার করে বলল: ‘আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী কে আছে?’ (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৫) তখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি অবধারিত হয়ে গেল।



(وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا)



‘আর আমার নিদর্শনকে যারা অস্বীকার করেছিল এবং যারা মু’মিন ছিল না তাদেরকে নির্মূল করেছি।’ অর্থাৎ এ জাতির ওপর প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়েছিল। যা সাত রাত ও সাত দিন ধারাবাহিকভাবে বয়ে চলছিল। ফলে তাদের লাশগুলো কাটা খেজুর গাছের কাণ্ডের মত মাটিতে পড়ে ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(فَاَرْسَلْنَا عَلَیْھِمْ رِیْحًا صَرْصَرًا فِیْٓ اَیَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِیْقَھُمْ عَذَابَ الْخِزْیِ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَاﺚ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰی وَھُمْ لَا یُنْصَرُوْنَ)



“অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে অপমানজনক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অশুভ দিনে প্রেরণ করেছিলাম প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়। পরকালের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদের সাহায্যও করা হবে না।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৬৬ নং আয়াত) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَاَمَّا عَادٌ فَاُھْلِکُوْا بِرِیْحٍ صَرْصَرٍ عَاتِیَةٍﭕ سَخَّرَھَا عَلَیْھِمْ سَبْعَ لَیَالٍ وَّثَمٰنِیَةَ اَیَّامٍﺫ حُسُوْمًاﺫ فَتَرَی الْقَوْمَ فِیْھَا صَرْعٰیﺫ کَاَنَّھُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِیَةٍﭖفَھَلْ تَرٰی لَھُمْ مِّنْۭ بَاقِیَةٍ)



“আর আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় দ্বারা। যা তিনি তাদের ওপর প্রবাহিত করেছিলেন বিরামহীনভাবে সাত রাত ও আট দিন, তুমি (উপস্থিত থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে খেজুর কান্ডের ন্যায় সেখানে ছিন্ন ভিন্নভাবে পড়ে আছে। তুমি কি তাদের কাউকেও অবশিষ্ট দেখতে পাও?” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৬-৮) এদের সম্পর্কে সূরা আহকাফের ২১-২৬, শুআরার ১২৩-১৪০, ক্বামারের ১৮-২২ ও সূরা হাক্কাহর ৪-৮ নং আয়াতের আলোচনা করা হয়েছে।



সুতরাং এ আদ জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, এরা শক্তি-সামর্থে ও দৈহিক গঠনে পৃথিবীতে অতুলনীয় ছিল। কিন্তু তাদের নাবী যখন তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে আসলেন আর তারা তা প্রত্যাখ্যান করল, নাবীকে পাগল বলতে লাগল এবং সকল মা‘বূদকে বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা অসম্ভব মনে করল তখন তাদের দৈহিক শক্তি তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রেহাই দিতে পারেনি ।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. শির্ক, অন্যায়-অবিচার ও অহংকার প্রদর্শন করাই হল আল্লাহ তা‘আলার গযবের প্রধান কারণ।

২. যুগে যুগে যারাই নাবীদের আনিত বিধান প্রত্যাখ্যান করেছে তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, আদ সম্প্রদায় তাদের অন্যতম।

৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত গযব বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; তা মোকাবেলা করার কেউ নেই। অনেকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলাকেই উপেক্ষা করা হয় যা ঈমানের পরিপন্থী।

৪. সকল ইবাদত পাওয়ার একমাত্র হকদার আল্লাহ তা‘আলা। সুতরাং সকল বাতিল মা‘বূদ বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করলে দুনিয়াতে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে আর পরকালেও নাজাত পাওয়া যাবে।

৫. বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে সত্য প্রত্যাখ্যান করা পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির আলামত।

৬. ইসলামী রীতি-নীতি ও অনুশাসন মেনে চলে সৎ আমল করলে দুনিয়ার সম্পদ ও সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পাবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৬৫-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যেমনভাবে আমি নূহ (আঃ)-এর কওমের কাছে। রাসূল পাঠিয়েছিলাম তেমনিভাবে হূদ (আঃ)-কে আ’দ সম্প্রদায়ের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম। তারা আ’দ ইবনে ইরামের বংশধর ছিল। তারা বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করতো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তোমার প্রতিপালক আ’দ সম্প্রদায়ের সাথে কি ব্যবহার করেছিলেন তা তোমার জানা নেই? অর্থাৎ ইরামদের সাথে, যারা সুউচ্চ ও বড় বড় প্রাসাদের মালিক ছিল? যার তুল্য (প্রাসাদ) কোন নগরে তৈরী হয়নি। এটা ছিল তাদের ভীষণ দৈহিক শক্তির প্রকৃষ্ট প্রমাণ। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “কিন্তু আ’দ সম্প্রদায় ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে অহংকারে ফেটে পড়লো এবং বললো-আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর কে আছে? তারা কি চিন্তা করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? তারা আমার আয়াতসমূহ ও মু'জিযাসমূহকে অস্বীকার করতো। তাদের বাসভূমি ছিল ইয়ামান দেশের আহকাফ নামক জায়গায়। তারা ছিল মরুচারী ও পাহাড়ীয় লোক। হযরত আলী (রাঃ) হারামাউতের একজন অধিবাসীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি হারা মাউতের সরযমীনে এমন কোন রঙ্গীন পাহাড় দেখেছো যার মাটি লাল বর্ণের? সেই পাহাড়ের অমুক অমুক ধারে কুল (বরই) ও পীলুর বহু গাছ রয়েছে লোকটি উত্তরে বললোঃ “হ্যা। হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর শপথ! আপনি এমনভাবে বললেন যে, যেন আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি স্বচক্ষে দেখিনি বটে, কিন্তু এরূপ হাদীস আমার কাছে। পৌঁছেছে।” লোকটি বললোঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যাপারে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “সেখানে হূদ (আঃ)-এর সমাধি রয়েছে। এ হাদীস দ্বারা এটা জানা গেল যে, আ’দ সম্প্রদায়ের বাসস্থান ইয়ামানেই ছিল। হযরত হূদ (আঃ) সেখানেই সমাধিস্থ হয়েছিলেন। হযরত হূদ (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। সমস্ত রাসূলই মর্যাদা সম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। হযরত হূদ (আঃ)-এর কওম দৈহিক ও অবয়বের দিক দিয়ে যেমন ছিল কঠিন তেমনই তাদের অন্তরও ছিল অত্যন্ত কঠিন। সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে তারা অন্যান্য সমস্ত উম্মতের ঊর্ধ্বে ছিল। এ কারণেই হূদ (আঃ) তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর সেই কাফির দলটি তাকে বলে- “হে হূদ (আঃ)! আমরা তো তোমাকে বড়ই নির্বোধ ও পথভ্রষ্ট দেখছি, তুমি আমাদেরকে প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের পরামর্শ দিচ্ছ!” যেমন কুরাইশরা নবী (সঃ) -এর এরূপ দাওয়াতের উপর বিস্ময় বোধ করে বলেছিলঃ “তিনি কি বহু মা'বুদকে একই মা'বুদ বানিয়ে দিয়েছেন?” মোটকথা, হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে লোক সকল! আমার মধ্যে নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর রাসূল। আমি আল্লাহর নিকট হতে সত্য বাণী নিয়ে এসেছি। সমস্ত কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁরই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। সঠিক অর্থে আমি তোমাদের হিতাকাক্ষী।” এটা হচ্ছে ঐ গুণ যে গুণে রাসূলগণ ভূষিত থাকেন। অর্থাৎ সদুপদেশদাতা ও আমানতদার। তিনি আরো বলেনঃ “তোমরা কি এতে বিস্ময়বোধ করছো যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার বিধান ও উপদেশ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে এসেছে?” অর্থাৎ তোমাদের তো এতে বিস্মিত হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের তো এজন্যে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি নূহ (আঃ)-এর কওমকে ধ্বংস করে দেয়ার পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি সেই কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা তাদের রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া তোমাদের এ জন্যেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি তোমাদেরকে সবচেয়ে বেশী দৈহিক শক্তি প্রদান করেছেন। তোমরা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে বেশী লম্বা ও চওড়া। এ ধরনের বর্ণনা তালুতের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, ইলমী ও দৈহিক শক্তিতে তালূত (আঃ) বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছেন।

ইরশাদ হচ্ছে-তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। অর্থাৎ তোমাদের উপর আল্লাহর যে নিয়ামত ও অনুগ্রহরাশি রয়েছে সেগুলোর কথা স্মরণ করে তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (আরবী) অর্থাৎ সম্ভবতঃ তোমরা সফলকাম হবে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।