আল কুরআন


সূরা আল-আন‘আম (আয়াত: 98)

সূরা আল-আন‘আম (আয়াত: 98)



হরকত ছাড়া:

وهو الذي أنشأكم من نفس واحدة فمستقر ومستودع قد فصلنا الآيات لقوم يفقهون ﴿٩٨﴾




হরকত সহ:

وَ هُوَ الَّذِیْۤ اَنْشَاَکُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَۃٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّ مُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یَّفْقَهُوْنَ ﴿۹۸﴾




উচ্চারণ: ওয়া হুওয়াল্লাযীআনশাআকুম মিন নাফছিওঁ ওয়া-হিদাতিন ফামুছতাকাররুওঁ ওয়া মুছতাওদা‘ কাদ ফাসসালনাল আ-য়া-তি লিকাওমিইঁ ইয়াফকাহূন।




আল বায়ান: আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। অতঃপর রয়েছে আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, এমন কওমের জন্য যারা ভালভাবে বুঝে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৯৮. আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রয়েছে দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান(১)। অবশ্যই আমরা অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।




তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন, তারপর প্রত্যেকের জন্য একটা অবস্থান স্থল আছে আর একটি আছে তাকে গচ্ছিত রাখার জায়গা। জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেদের জন্য আমি আমার আয়াতগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি।




আহসানুল বায়ান: (৯৮) আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান রয়েছে।[1] নিশ্চয় আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেছি।



মুজিবুর রহমান: তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর (প্রত্যেকের জন্য) একটি স্থান অধিক দিন থাকার জন্য এবং একটি স্থান অল্প দিন থাকার জন্য রয়েছে, এই নিদর্শনসমূহ আমি তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করলাম যাদের বুদ্ধি বিবেচনা আছে।



ফযলুর রহমান: তিনিই তোমাদেরকে একজন মানুষ (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং (তোমাদের জন্য) একটি আবাসস্থল ও একটি সংগ্রহশালা (স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বাসস্থান) রয়েছে। আমি বুঝমান লোকদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।



মুহিউদ্দিন খান: তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে।



জহুরুল হক: আর তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের উদ্ভব করেছেন একই নফস থেকে, এবং রয়েছে এক বিশ্রাম-স্থল আর এক পাত্রাধার। আমরা নিশ্চয়ই নিদর্শনগুলো ব্যাখ্যা করেছি তেমন লোকের জন্য যারা হৃদয়ম করে।



Sahih International: And it is He who produced you from one soul and [gave you] a place of dwelling and of storage. We have detailed the signs for a people who understand.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৯৮. আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রয়েছে দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান(১)। অবশ্যই আমরা অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।


তাফসীর:

(১) এ আয়াতে দুটি শব্দ বলা হয়েছে, مُسْتَقَرٌّ ও مُسْتَوْدَعٌ তন্মধ্যে مُسْتَقَرٌّ শব্দটি قرار থেকে উদ্ভুত। কোন বস্তুর অবস্থান স্থলকে مستقر বলা হয়। আর مُسْتَوْدَعٌ শব্দটি وديعت থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ কারো কাছে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রেখে দেয়া। অতএব, مستودع ঐ জায়গাকে বলা হবে, যেখানে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রাখা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাই সে পবিত্র সত্তা যিনি মানুষকে এক সত্তা থেকে অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার জন্য একটি দীর্ঘকালীন এবং একটি স্বল্পকালীন অবস্থানস্থল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [সা'দী] কুরআনুল কারীমের ভাষা এরূপ হলেও এর ব্যাখ্যায় বহুবিধ সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এ সম্পর্কে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। কেউ বলেছেন, مُسْتَوْدَعٌ ও مُسْتَقَرٌّ যথাক্রমে মাতৃগর্ভ ও দুনিয়া। আবার কেউ বলেছেন, কবর ও আখেরাত। [ফাতহুল কাদীর]

আবার কেউ বলেছেন, মায়ের পেট হচ্ছে مُسْتَقَرٌّ আর পিতার পিঠ হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ [আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার] এছাড়া আরো বিভিন্ন উক্তি আছে এবং কুরআনের ভাষায় সবগুলোরই অবকাশ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেনঃ مُسْتَقَرٌّ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। আর মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে আখেরাত পর্যন্ত সবগুলো স্তর, তা মাতৃগর্ভই হোক কিংবা পৃথিবীতে বসবাসের জায়গাই হোক কিংবা কবর বা বরযখই হোক-সবগুলোই হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ অর্থাৎ সাময়িক অবস্থানস্থল। [সা’দী] কুরআনুল কারীমের এক আয়াত দ্বারাও এ উক্তির অগ্রগণ্যতা বুঝা যায়। যেখানে বলা হয়েছে, (لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ) অর্থাৎ তোমরা সর্বদা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করতে থাকবে। [সূরা আল-ইনশিকাক: ১৯] এর সারমর্ম এই যে, আখেরাতের পূর্বে মানুষ সমগ্র জীবনে একজন মুসাফিরসদৃশ। বাহ্যিক স্থিরতা ও অবস্থিতির সময়ও প্রকৃতপক্ষে সে জীবন-সফরের বিভিন্ন মনযিল অতিক্রম করতে থাকে।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৯৮) আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান রয়েছে।[1] নিশ্চয় আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেছি।


তাফসীর:

[1] অধিকাংশ মুফাসসিরদের নিকট مُسْتَقَرٌّ বলতে মায়ের গর্ভাশয় এবং مُسْتَوْدَعٌ বলতে বাপের পৃষ্ঠদেশকে বুঝানো হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৯৮-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:



(نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ)



‘একই ব্যক্তি’অর্থাৎ আদম (আঃ) হতে সৃষ্টি করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ)



“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন” (সূরা নিসা ৪:১)



(فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ)



‘প্রত্যেকের জন্য একটি আবাস স্থল আছে আর একটি আছে গচ্ছিত রাখার জায়গা’ স্থায়ী ও অস্থায়ী এর অর্থ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। সঠিক অর্থ হল: مُسْتَقَرٌّ বলতে মায়ের গর্ভাশয় আর مُسْتَوْدَعٌ বলতে পিতার পৃষ্ঠদেশকে বুঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, ইবনু কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৪৩)



مُّتَرَاكِبًا অর্থাৎ



يركب بعضه بعضا



কিছু অংশ কিছু অংশের সাথে সম্পৃক্ত, একেই গুচ্ছ বলা হয়।



قِنْوَانٌ শব্দটি قنو এর বহুবচন। অর্থ: গুচ্ছ। طَلْعِ হল খেজুরের সেই মোচা যা প্রাথমিক অবস্থয় প্রকাশ পায়। এটাই বড় হয়ে কাঁদির আকার ধারণ করে। অতঃপর তা আধাপাকা খেজুরে পরিণত হয়।



دَانِيَةٌ সেই গুচ্ছকে বলা হয় যা নুয়ে থাকে। আর কিছু গুচ্ছ অনেক দূরে থাকে যেখানে হাত পৌঁছে না। অনুগ্রহের প্রকাশস্বরূপ دَانِيَةٌ এর কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ



منها دانية و منها بعيدة



(কিছু গুচ্ছ থাকে কাছে আর কিছু দূরে)। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)



(اُنْظُرُوْآ إِلٰي ثَمَرِه۪)



‘লক্ষ কর, তার ফলের প্রতি যখন তা ফলবান হয়’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার এ সব কুদরত নিয়ে চিন্তা কর কিভাবে তিনি অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্ব দিয়েছেন। একই জমিন থেকে উদ্গত একই পানি দ্বারা সেচপ্রাপ্ত একই আবহাওয়া, আলো-বাতাসে লালিত পালিত। এক ফলের সাথে অন্য ফলের স্বাদে ও রঙে কোন সাদৃশ্য নেই। ==== আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجٰوِرٰتٌ وَّجَنّٰتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰي بِمَا۬ءٍ وَّاحِدٍ ﺤ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰي بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ﺚإِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ)



“পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখণ্ড, এতে (পৃথিবীতে) আছে বিভিন্ন আঙ্গুর-কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, সিঞ্চিত হয় একই পানিতে এবং ফল হিসেবে তাদের কতককে কতকের ওপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” (সূরা রা‘দ ১৩:৪)



এতো কিছু আল্লাহ তা‘আলা দান করেছেন, নিশ্চয়ই এতে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হল বান্দারা এসব নেয়ামত উপভোগ করবে আর শুকরিয়াস্বরূপ একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. মানব সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সকল মানুষই আদম (আঃ) হতে স্পষ্ট।

২. আল্লাহ তা‘আলার কুদরত অসংখ্য বিশেষ করে ফল ও ফসল উৎপাদনে।

৩. আল্লাহ তা‘আলাকে চেনার অন্যতম মাধ্যম তার সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করা।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৯৮-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনিই তোমাদেরকে একটা আত্মা হযরত আদম (আঃ) থেকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা স্বীয় প্রতিপালক (এর বিরোধিতা)কে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই প্রাণী (আদম আঃ) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ প্রাণী হতে তার জোড়া (বিবি হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন, আর এতদুভয় হতে বহু নর ও নারী বিস্তার করেছেন।

(আরবী) -এ দুটি শব্দের ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা মায়ের গর্ভকে বুঝানো হয়েছে। আর (আরবী) শব্দ দ্বারা পিতার পিঠকে বুঝানো হয়েছে। আবার কারো মতে (আরবী) হচ্ছে দুনিয়ার অবস্থান এবং (আরবী) হচ্ছে মৃত্যুর পর পরকালের অবস্থান।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এ দু'টো হচ্ছে দুনিয়ার মাতৃগর্ভে ও ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থান এবং মৃত্যুর পরের অবস্থান। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মৃত্যুর পর আমল বন্ধ হয়ে যাওয়া হচ্ছে (আরবী) এবং দারে আখিরাত হচ্ছে (আরবী)। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম।

(আরবী) আমি নিদর্শনসমূহ ঐসব লোকের জন্যে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দিয়েছি যারা বুঝে অর্থাৎ আল্লাহর কালাম ও ওর অর্থ সম্পর্কে যারা সম্যক জ্ঞান রাখে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনিই সেই আল্লাহ যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, ওর সাহায্যে তিনি সব রকমের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছেন। তারপর তা থেকে সবুজ শাখা বের করেছেন অর্থাৎ চারাগাছ পয়দা করেছেন। অতঃপর তাতে তিনি দানা ও ফল সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ পানি দ্বারাই সমস্ত জিনিস জীবন লাভ করে থাকে। এর ফলেই ভূমির শস্য ও সবুজ উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়ে থাকে। ঐসব গাছে আবার দানা ও ফল পয়দা হয়। ওগুলোর মধ্য থেকে আমি এমন দানা বের করে থাকি যা একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। একে গুচ্ছ লা হয়। খুরমা গাছে গুচ্ছযুক্ত শাখা হয়। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। এর অর্থ হচ্ছে তাজা খেজুরের গুচ্ছ যা কাছাকাছি একে অপরের সাথে জড়িত থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ঐ ছোট ছোট খেজুর গাছ বুঝানো হয়েছে যেগুলোর গুচ্ছ মাটির সাথে লেগে থাকে। হেজাযবাসী তো একে (আরবী) পড়ে থাকে, কিন্তু বানু তামীম গোত্র একে (আরবী) অর্থাৎ (আরবী) -এর সঙ্গে পড়ে। এটা (আরবী) -এর বহু বচন। যেমন (আরবী) শব্দটি (আরবী)-এর বহু বচন।

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘আঙ্গুরের বাগানসমূহ' অর্থাৎ আমি যমীনে আঙ্গুরের বাগান পয়দা করেছি। মহান আল্লাহ খুরমা ও আঙ্গুরের বর্ণনা দিয়েছেন। কেননা, হেজযবাসীদের কাছে এ দু'টো ফলই সর্বোত্তম ফল বলে গণ্য হয়। শুধু হেজাযবাসী নয়, বরং সারা দুনিয়ার লোক এ দু'টো ফলকে সর্বোত্তম ফল মনে করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ইহসানের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, এই সব খুরমা ও আঙ্গুর ফল দ্বারা তোমরা মদ তৈরী করে থাক এবং নিজেদের জন্যে উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর। এটা হচ্ছে মদ হারাম হওয়ার পূর্বেকার আয়াত। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যমীনে আমি খুরমা ও আঙ্গুরের বাগান বানিয়েছি। তিনি আরও বলেনঃ আমি যায়তুন ও আনারেরও বাগান করে দিয়েছি যা পাতা ও আকৃতির দিক দিয়ে একে অপরের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত বটে, কিন্তু ফল, গঠন, স্বাদ এবং স্বভাব ও প্রকৃতির দিক দিয়ে সম্পূর্ণ পৃথক! আল্লাহ পাক বলেনঃ যখন ফল পেকে যায় তখন ঐগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে দেখো! অর্থাৎ হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তা করে দেখো যে, তিনি কিভাবে ওগুলোকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। ফল ধরার পূর্বে গাছগুলো তো জ্বালানী কাষ্ঠ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই কাঠের মধ্য থেকেই মহান আল্লাহ এসব সুমিষ্ট খুরমা, আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফল বের করেছেন! যেমন তিনি বলেনঃ যমীনে ঘন বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং শস্যের বাগানসমূহ রয়েছে, ওগুলোর মধ্যে কিছু কিছু গুচ্ছ বিশিষ্ট এবং কিছু কিছু গুচ্ছবিহীন। সবগুলো একই পানি পেয়ে থাকে অথচ খেতে একটি অপরটি হতে বহুগুণে উত্তম। এ জন্যেই আল্লাহ পাক এখানে বলেনঃ “হে লোকেরা! এগুলো আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতা ও পূর্ণ নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করছে। ঈমানদার লোকেরাই এগুলো বুঝতে পারে এবং তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সত্যতা স্বীকার করে থাকে!”





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।