সূরা আল-হাক্কাহ (আয়াত: 13)
হরকত ছাড়া:
فإذا نفخ في الصور نفخة واحدة ﴿١٣﴾
হরকত সহ:
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوْرِ نَفْخَۃٌ وَّاحِدَۃٌ ﴿ۙ۱۳﴾
উচ্চারণ: ফাইযা- নুফিখা ফিসসুরি নাফখাতুওঁ ওয়া- হিদাহ।
আল বায়ান: অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. অতঃপর যখন শিংগায়(১) ফুঁক দেয়া হবে—একটি মাত্ৰ ফুঁক(২),
তাইসীরুল ক্বুরআন: অতঃপর যখন সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে- মাত্র একটি ফুঁৎকার।
আহসানুল বায়ান: (১৩) যখন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার। [1]
মুজিবুর রহমান: যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, একটি মাত্র ফুৎকার,
ফযলুর রহমান: যখন শিঙ্গায় একবার (প্রথমবার) ফুঁ দেওয়া হবে
মুহিউদ্দিন খান: যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার
জহুরুল হক: সুতরাং যখন শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে -- একটি মাত্র ফুৎকার, --
Sahih International: Then when the Horn is blown with one blast
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৩. অতঃপর যখন শিংগায়(১) ফুঁক দেয়া হবে—একটি মাত্ৰ ফুঁক(২),
তাফসীর:
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, صور কী? জবাবে তিনি বললেন, “শিং এর আকারে কোন বস্তুকে বলা হয় যাতে ফুক দেয়া হবে।” [তিরমিযী: ২৪৩০, আবু দাউদ: ৪৭৪২]
(২) পবিত্র কুরআনের কোথাও কোথাও এ দুই শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার কথা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ফুৎকারের সময় গোটা বিশ্ব-জাহানের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার যে অবস্থা সূরা আল-হাজ্জের ১ ও ২ আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪৯ ও ৫০ আয়াতে এবং সূরা আত-তাকভীরের ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকবে। পক্ষান্তরে সূরা ত্বা-হার ১০২ থেকে ১১২ আয়াত, সূরা আল আম্বিয়ার ১০১ থেকে ১০৩ আয়াত, সূরা ইয়াসীনের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াত এবং সূরা কাফ এর ২০ থেকে ২২ আয়াতে শুধু শিংগায় দ্বিতীয়বার ফুৎকারের কথা উল্লেখিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৩) যখন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার। [1]
তাফসীর:
[1] মিথ্যাবাদীদের পরিণাম উল্লেখ করার পর এখন বলা হচ্ছে যে, এই (الْحَاقَّةُ) ‘অবশ্যম্ভাবী ঘটনা’ (কিয়ামত) কিভাবে সংঘটিত হবে। ইস্রাফীল (আঃ)-এর এক ফুৎকারে তা সংঘটিত হয়ে যাবে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১৩-১৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এখানে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন। প্রথমে ভয়ের কারণ হবে শিংগায় ফুঁ দেওয়া। এতে সবারই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। তারপর পুনরায় শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে, যার ফলে আকাশ-জমিনের সমস্ত মাখলুক অজ্ঞান হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করবেন তিনি ব্যতীত। এরপর শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে যার আওয়াজ শুনে সমস্ত মাখলুক কবর থেকে উঠে তাদের প্রতিপালকের সামনে এসে দাঁড়াবে। এখানে ঐ প্রথম ফুঁৎকারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এখানে আরো গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এ কথা দ্বারা যে, উঠে দাঁড়ানোর ফুঁৎকার মাত্র একটি। রাবী (রহঃ) বলেছেন : এটা শেষ ফুঁৎকার। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলছেন প্রথটাই সঠিক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
(وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً)
“আর পৃথিবী ও পর্বত মালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯ : ১৪৪)
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং সকল দরজা খুলে দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَفُتِحَتِ السَّمَا۬ءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا)
“আসমান খুলে দেওয়া হবে, ফলে তাতে বহূ দরজা হয়ে যাবে।” (সূরা নাবা ৭৮ : ১৯)
أرجاءها অর্থ : علي جوانب السماء وأركانها
প্রতিপালকের আনুগত্যস্বরূপ ফেরেশতারা আকাশের পার্শ্বে অবস্থান করবে।
(وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহন করবে আট জন ফেরেশতা।
রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহন করে আছে তাদের বিবরণ দিতে আমাকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তাদের কানের অগ্রভাগ থেকে কাঁধ পর্যন্ত দূরত্ব হল ৭০০ বছরের রাস্তার সমান। (আবূ দাঊদ হা. ৪৭২৭, সিলসিলা সহীহাহ : ১৫১)
সেদিন মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং আমলনামাও উপস্থিত করা হবে। ফলে কিছুই গোপন থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামতের পূর্বাবস্থা জানলাম।
২. আরশ বহণকারী ফেরেশতাদের দৈহিক আকৃতির ধারণা পেলাম।
৩. কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে আমলনামা দেওয়া হবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১৩-১৮ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন। সর্ব প্রথম ভয়ের কারণ হবে শিংগায় ফুৎকার দেয়া। এতে সবারই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। তারপর পুনরায় শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, যার ফলে আসমান ও যমীনের সমস্ত মাখলূক অজ্ঞান হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাঁকে চাইবেন তিনি অজ্ঞান হবেন না। এরপর সূরে ফুৎকার দেয়া হবে, যার শব্দের কারণে সমস্ত মাখলূক তাদের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়িয়ে যাবে। এখানে ঐ প্রথম ফুৎকারেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে গুরুত্ব আরোপের জন্যে একথাও বলে দিয়েছেন যে, এই উঠে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ফুৎকার মাত্র একটি। কেননা, যখন আল্লাহ তা'আলার হুকুম হয়ে গেছে তখন না এর কোন ব্যতিক্রম হতে পারে, না তা টলতে পারে, না দ্বিতীয়বার আদেশ প্রদানের প্রয়োজন হতে পারে, না তাগীদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। ইমাম রাবী’ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা শেষ ফুৎকারকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রকাশমান উক্তি ওটাই যা আমরা বলেছি। এ জন্যে এর পরেই বলেছেনঃ পর্বতমালা সমেত পৃথিবী উৎক্ষিপ্ত হবে এবং চামড়ার মত ছড়িয়ে দেয়া হবে। যমীন পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। আসমান প্রত্যেক ভোলার জায়গা হতে ফেটে যাবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আকাশ উন্মুক্ত করা হবে, ফলে ওটা হয়ে যাবে বহু দ্বার বিশিষ্ট।” (৭৮:১৯) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আকাশে ছিদ্র ও গর্ত হয়ে যাবে এবং ওটা ফেটে যাবে। আর ওর সামনে থাকবে এবং ফেরেস্তাগণ ওর প্রান্তদেশে থাকবেন, যে প্রান্তদেশ তখন পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়েনি। তাঁরা দরজার উপর থাকবেন এবং আকাশের দৈর্ঘ্যের মধ্যে ছড়িয়ে থাকবেন। তাঁরা পৃথিবীবাসীদেরকে দেখতে থাকবেন।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতের দিন আটজন ফেরেশতা তাদের প্রতিপালকের আরশকে ধারণ করবে তাদের ঊর্ধ্বে। এর দ্বারা হয় তো আরশে আযীমকে উঠানো উদ্দেশ্য অথবা ঐ আরশকে উঠানো উদ্দেশ্য যার উপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা লোকদের ফায়সালার জন্যে অধিষ্ঠিত থাকবেন। সঠিকতার কথা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন।
হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন যে, এ ফেরেশতাগণ পাহাড়ী বকরীর আকৃতি ধারণ করবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, তাঁদের চক্ষুর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তের ব্যবধান হবে একশ বছরের পথ।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে যে, আমি তোমাদের কাছে আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের মধ্যে একজন ফেরেশতা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করবো। ঐ ফেরেশতার স্কন্ধ ও কানের নিম্ন ভাগের মধ্যকার ব্যবধান এতোটা যে ওর মধ্যে উড়ন্ত পাখী সাতশ বছর পর্যন্ত উড়তে থাকবে। (এ হাদীসের সনদ খুবই উওম এবং সমস্ত বর্ণনাকারীই নির্ভরযোগ্য। এটাকে ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও স্বী সুনানে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এরূপই বলেছেন)
হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, আটজন ফেরেশতা দ্বারা ফেরেশতাদের আটটি সারিকে বুঝানো হয়েছে। আরো বহু গুরুজন হতে এটা বর্ণিত আছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সমুন্নত ফেরেশতাদের আটটি অংশ রয়েছে। প্রতিটি অংশের সংখ্যা সমস্ত মানুষ, জ্বিন, শয়তান এবং ফেরেশতার সমান।
এরপর ঘোষণা করা হচ্ছেঃ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে যিনি গোপনীয় ও প্রকাশ্য সব কিছুই অবগত আছেন। তিনি প্রকাশমান জিনিস সম্পর্কে যেমন পূর্ণ অবহিত, অনুরূপভাবে গোপনীয় জিনিস সম্পর্কেও তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। এ জন্যেই মহান আল্লাহ্ বলেনঃ সেই দিন তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না।
হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! তোমাদের হিসাব নেয়া হবে এর পূর্বেই নিজেরাই নিজেদের হিসাব নিয়ে নাও। আর তোমাদের আমলসমূহ ওযন করা হবে। এর পূর্বেই তোমরা তোমাদের আমলসমূহ অনুমান করে নাও, যাতে কাল কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্যে সহজ হয়ে যায়, যেই দিন তোমাদের পুরোপুরি হিসাব নেয়া হবে এবং তোমাদেরকে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে।”
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জনগণকে তিনবার আল্লাহ্ তা'আলার সামনে পেশ করা হবে। প্রথম দু’বার তো ঝগড়া, তর্ক-বিতর্ক ও ওযর-আপত্তি চলবে। কিন্তু তৃতীয়বারে আমলনামা উড়ানো হবে। ঐ আমলনামা কারো ডান হাতে আসবে এবং কারো বাম হাতে আসবে।” (এ হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহতেও রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর মাধ্যমেও এই রিওয়াইয়াতটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতেও মুরসালরূপে এরকমই রিওয়াইয়াত)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।