সূরা আল-জাসিয়া (আয়াত: 19)
হরকত ছাড়া:
إنهم لن يغنوا عنك من الله شيئا وإن الظالمين بعضهم أولياء بعض والله ولي المتقين ﴿١٩﴾
হরকত সহ:
اِنَّهُمْ لَنْ یُّغْنُوْا عَنْکَ مِنَ اللّٰهِ شَیْئًا ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ۚ وَ اللّٰهُ وَلِیُّ الْمُتَّقِیْنَ ﴿۱۹﴾
উচ্চারণ: ইন্নাহুম লাইঁ ইউগনূ‘আনকা মিনাল্লা-হি শাইআওঁ ওয়া ইন্নাজ্জা-লিমীনা বা‘দুহুম আওলিয়াউ বা‘দিওঁ ওয়াল্লা-হু ওয়ালিইয়ুল মুত্তাকীন।
আল বায়ান: তারা আল্লাহর মুকাবিলায় তোমার কোন কাজে আসবে না। আর নিশ্চয় যালিমরা মূলত একে অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. নিশ্চয় তারা আল্লাহ্র মুকাবেলায় আপনার কোনই কাজে আসবে না; আর নিশ্চয় যালিমরা একে অন্যের বন্ধু; এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।
তাইসীরুল ক্বুরআন: আল্লাহ হতে তারা তোমার কোনই উপকার করতে পারবে না। যালিমরা একে অপরের বন্ধু, আর আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।
আহসানুল বায়ান: (১৯) আল্লাহর কাছে অবশ্যই ওরা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না; নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ সাবধানীদের বন্ধু।
মুজিবুর রহমান: আল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবেনা; যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।
ফযলুর রহমান: তারা আল্লাহর সামনে তোমার কোনই উপকারে আসবে না। জালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর মোত্তাকীদের বন্ধু আল্লাহ।
মুহিউদ্দিন খান: আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু।
জহুরুল হক: নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্র কাছ থেকে কোনো কিছুতেই তোমাকে আদৌ লাভবান করবে না। আর আলবৎ অন্যায়াচারীরা -- তাদের কেউ-কেউ অপর কারোর বন্ধু, আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ধর্মভীরু-দের বান্ধব।
Sahih International: Indeed, they will never avail you against Allah at all. And indeed, the wrongdoers are allies of one another; but Allah is the protector of the righteous.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৯. নিশ্চয় তারা আল্লাহ্–র মুকাবেলায় আপনার কোনই কাজে আসবে না; আর নিশ্চয় যালিমরা একে অন্যের বন্ধু; এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৯) আল্লাহর কাছে অবশ্যই ওরা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না; নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ সাবধানীদের বন্ধু।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১৬-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
বানী ইসরাঈলকে যে সকল নেয়ামত দান করা হয়েছিল উক্ত আয়াতগুলোতে তার কয়েকটি উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব অর্থাৎ তাওরাত দান করেছিলাম এবং দিয়েছিলাম রাজত্ব বা শাসন ক্ষমতা অথবা বিবেক ও বিচার করার এমন যোগ্যতা, যা মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য জরুরী ছিল। তাদেরকে দান করা হয়েছিল নবুওয়াত, আকাশ হতে মান্না-সালওয়াসহ আরো উত্তম রিযিক এবং তাদেরকে বিশ্ববাসীর ওপর তথা তৎকালীন বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। এছাড়াও তাদেরকে দেয়া হয়েছিল হালাল-হারাম বিবৃত স্পষ্ট বিধান। তাদের নিকট সঠিক জ্ঞান আসার পর তারা পদ-মর্যাদার জন্য পরস্পর হিংসা ও বিদ্বেষবশত দীনের ব্যাপারে মতবিরোধ করতে শুরু করে এবং রাসূলের রিসালাতকে অস্বীকার করে, ফলে তারা শাস্তির হকদার হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তারা যেন বানী ইসরাঈলের মতো না হয়। তারা যেন কোন ব্যক্তির বা অজ্ঞ-মুশরিকদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ না করে।
(بَغْيًاۭ بَيْنَهُمْ) অর্থ আপোসে একে অপরের প্রতি হিংসা বা বিদ্বেষ পোষণ করা।
شريعة আভিধানিক অর্থ হলো- রাস্তা, ধর্মাদেশ, বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতি। রাজপথ বা প্রধান সড়ককে شارع বলা হয়। কারণ তা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়। তাই শরীয়ত বলতে সে দীনের বিধানকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে সে পথে চলে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে।
(فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَا۬ءَ)
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাতকে এ শরীয়তের অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কারণ শরীয়তের বাইরে কিছুই নেই, কোন ব্যক্তির আল্লাহ তা‘আলার কাছে পৌঁছতে ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য শরীয়তের যথাযথ অনুসরণই যথেষ্ট। সুতরাং যাদের শরীয়ত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই, যাদের বিশ্বাস কেবল শরীয়তের অনুসরণ করেই একজন ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারবে না, বরং তরীকত, মারেফত ধারাক্রম অতিক্রম করে হাকিকত পর্যায়ে পৌঁছতে হবে তারা সঠিক বিষয়ের অনুসারী নয়, বরং তারা ভ্রান্ত ও রাসূলুল্লাহ এর আনীত শরীয়ত বর্হিভূত বিষয়ের অনুসারী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. বানী ইসরাঈলের যে মর্যাদা ছিল তা জানা গেল।
২. এমন ব্যক্তি যে শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে অজ্ঞ তার অনুসরণ করা যাবে না।
৩. মু’মিনদের বন্ধু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা।
৪. আল-কুরআন মানব জাতির জন্য পথ-নির্দেশ।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর:
বানী ইসরাঈলের উপর পরম করুণাময় আল্লাহর যেসব নিয়ামত ছিল এখানে তিনি তারই বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি তাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলেন এবং তাদেরকে হুকুমত দান করেছিলেন। আর ঐ যুগের লোকদের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। দ্বীন সম্পর্কীয় উত্তম ও স্পষ্ট দলীল তিনি তাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের উপর আল্লাহর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষ বশতঃ বিরোধিতা করেছিল এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ ‘তোমার প্রতিপালক আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ঐ বিষয়ের ফায়সালা করে দিবেন। এর দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সতর্ক করা হয়েছে যে, তাদের চলনগতি যেন বানী ইসরাঈলের মত না হয়। এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি তোমার প্রতিপালকের অহীর অনুসরণ কর, অজ্ঞ মুশরিকদের খেয়াল অনুসরণ করো না। তাদের সাথে তোমরা বন্ধুত্ব স্থাপন করো না। তারা তো পরস্পর বন্ধু। আর তোমাদের বন্ধু স্বয়ং আল্লাহ। অর্থাৎ মুত্তাকীদের বন্ধু হলেন আল্লাহ। তিনি তাদেরকে অজ্ঞতার অন্ধকার হতে সরিয়ে জ্ঞানের আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের বন্ধু হলো শয়তান। সে তাদেরকে জ্ঞানের আলো হতে সরিয়ে অজ্ঞতার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই কুরআন মানব জাতির জন্যে সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্যে পথ-নির্দেশ ও রহমত।'
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।