সূরা ফাতির (আয়াত: 29)
হরকত ছাড়া:
إن الذين يتلون كتاب الله وأقاموا الصلاة وأنفقوا مما رزقناهم سرا وعلانية يرجون تجارة لن تبور ﴿٢٩﴾
হরকত সহ:
اِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ کِتٰبَ اللّٰهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً یَّرْجُوْنَ تِجَارَۃً لَّنْ تَبُوْرَ ﴿ۙ۲۹﴾
উচ্চারণ: ইন্নাল্লাযীনা ইয়াতলূনা কিতা-বাল্লা-হি ওয়াআকা-মুসসালা-তা ওয়াআনফাকূ মিম্মারাযাকনা-হুম ছিররাওঁ ওয়া‘আলা-নিয়াতাইঁ ইয়ারজূনা তিজা-রাতাল্লান তাবূর।
আল বায়ান: নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিয্ক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৯. নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নেই।
তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আল্লাহ তাদেরকে যে রিযক দিয়েছেন তাথেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসায়ের আশা করে যাতে কক্ষনো লোকসান হবে না।
আহসানুল বায়ান: (২৯) নিশ্চয় যারা আল্লাহর গ্রন্থ পাঠ করে,[1] যথাযথভাবে নামায পড়ে,[2] আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; [3] তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যাতে কখনোই নোকসান হবে না। [4]
মুজিবুর রহমান: যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে তাদের এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই –
ফযলুর রহমান: যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে আর আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারা এমন এক ব্যবসা আশা করে যা নষ্ট হবে না;
মুহিউদ্দিন খান: যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।
জহুরুল হক: নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্র গ্রন্থ পাঠ করে আর নামায কায়েম করে, আর আমরা তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে তারা গোপনে ও প্রকাশ্যভাবে খরচ করে থাকে, তারা এমন একটি বাণিজ্যের আশা রাখে যা কখনো বিনষ্ট হবে না, --
Sahih International: Indeed, those who recite the Book of Allah and establish prayer and spend [in His cause] out of what We have provided them, secretly and publicly, [can] expect a profit that will never perish -
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ২৯. নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নেই।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (২৯) নিশ্চয় যারা আল্লাহর গ্রন্থ পাঠ করে,[1] যথাযথভাবে নামায পড়ে,[2] আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; [3] তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যাতে কখনোই নোকসান হবে না। [4]
তাফসীর:
[1] ‘আল্লাহর গ্রন্থ’র অর্থ হল কুরআন কারীম। ‘পাঠ করে’ অর্থাৎ, নিয়মিত তা গুরুত্ব সহকারে পাঠ করে।
[2] ইক্বামাতে স্বালাতের অর্থ হল, নামায যেভাবে কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ, তার সময়ের যথাযথ খেয়াল রাখা, আরকানসমূহ পূর্ণভাবে ধীর-স্থিরতার সাথে আদায় করা এবং বিনয় ও নম্রতার সাথে যত্ন সহকারে তা আদায় করা।
[3] অর্থাৎ, দিবারাত্রি প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয় পদ্ধতিতে প্রয়োজন মত খরচ করে। অনেকের নিকট গোপনে বলতে নফল দান এবং প্রকাশ্যে বলতে ওয়াজেব দান (যাকাত)-কে বুঝানো হয়েছে।
[4] অর্থাৎ, এই শ্রেণীর মানুষদের প্রতিদান আল্লাহর নিকট সুনিশ্চিত, যাতে নোকসান ও হ্রাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে দীনের এমন একটি ব্যবসায়ের সংবাদ দিয়েছেন, যে ব্যবসায় কোন লোকসান নেই। তা হল সৎ আমল ও উত্তম গুণাবলী অর্জন করা। যথা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যা রিযিক দেয়া হয়েছে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ করে। এর দ্বারা তারা এমন এক ব্যবসা করে যে ব্যবসায় কখনো লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلٰي تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ - تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِه۪ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ بِأَمْوٰلِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ط ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
“হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেষ্ঠতম যদি তোমরা জানতে!” (সূরা সফ ৬১:১১-১২)
সুতরাং ঈমান আনার পর আল্লাহ তা‘আলার কিতাব তেলাওয়াত, সালাত কায়েম, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা বিরাট লাভজনক ব্যবসা।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তাদেরকে তাদের এ ব্যবসায়ের প্রতিদান তিনি পুরোপুরিভাবে দেবেন এমনকি তাদেরকে আরো বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বড় ক্ষমাশীল ও গুণগ্রাহী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মু’মিনদের ঈমান ও অন্যান্য সৎ আমল একজন ব্যবসায়ীর মূলধনের মতোই যার মাধ্যমে তারা অধিক পরিমাণে লাভবান হবে।
২. আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করলে তা অধিক পরিমাণে পাওয়া যাবে। এর ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা তার মুমিন বান্দাদের উত্তম গুণাবলীর বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়নে রত থাকে, ঈমানের সাথে তা পাঠ করে, ভাল আমল ছেড়ে দেয় না, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় ও দান-খয়রাত করে, গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, আল্লাহর বান্দাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে এবং এসবের সওয়াবের আশা শুধু আল্লাহর কাছে করে, আর তা পাওয়া নিশ্চিতরূপেই সত্য। যেমন এই তাফসীরের শুরুতে ফাযায়েলে কুরআনের বর্ণনায় আমরা আলোচনা করেছি যে, কুরআন কারীম ওর পাঠককে বলবেঃ “প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসার পিছনে লেগে থাকে, আর তুমি আজ সমস্ত ব্যবসার পিছনে রয়েছ।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী দিবেন যা তাদের কল্পনায়ও থাকবে না। আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল এবং বড় গুণগ্রাহী। ছোট ছোট আমলেরও তিনি মর্যাদা দিয়ে থাকেন।
হযরত মাতরাফ (রঃ) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলতেন যে, এটা কারীদের আয়াত।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা তাঁর যে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন তার এমন সাত প্রকারের সকার্যের তিনি প্রশংসা করেন যা সে করেনি। আর যে বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হন তার এমন সাত প্রকারে দুষ্কার্যের তিনি নিন্দে করেন যা সে করেনি।”
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।