আল কুরআন


সূরা আল-বাকারা (আয়াত: 144)

সূরা আল-বাকারা (আয়াত: 144)



হরকত ছাড়া:

قد نرى تقلب وجهك في السماء فلنولينك قبلة ترضاها فول وجهك شطر المسجد الحرام وحيثما كنتم فولوا وجوهكم شطره وإن الذين أوتوا الكتاب ليعلمون أنه الحق من ربهم وما الله بغافل عما يعملون ﴿١٤٤﴾




হরকত সহ:

قَدْ نَرٰی تَقَلُّبَ وَجْهِکَ فِی السَّمَآءِ ۚ فَلَنُوَلِّیَنَّکَ قِبْلَۃً تَرْضٰهَا ۪ فَوَلِّ وَجْهَکَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ؕ وَ حَیْثُ مَا کُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَکُمْ شَطْرَهٗ ؕ وَ اِنَّ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْکِتٰبَ لَیَعْلَمُوْنَ اَنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّهِمْ ؕ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا یَعْمَلُوْنَ ﴿۱۴۴﴾




উচ্চারণ: কাদ নারা-তাকাল্লুবা ওয়াজহিকা ফিছছামাই ফালানুওয়ালিলয়ান্নাকা কিবলাতান তারদাহা-ফাওয়ালিল ওয়াজহাকা শাতরাল মাছজিদিল হারা-মি ওয়া হাইছুমা-কুনতুম ফাওয়াললূ উজূহাকুম শাতরাহূ ওয়া ইন্নাল্লাযীনা ঊতুল কিতা-বা লাইয়া‘লামূনা আন্নাহুল হাক্কুমির রাব্বিহিম ওয়ামাল্লা-হু বিগা-ফিলিন ‘আম্মা-ইয়া‘মালূন।




আল বায়ান: আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও। আর নিশ্চয় যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তারা অবশ্যই জানে যে, তা তাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৪৪. অবশ্যই আমরা আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানো লক্ষ্য করি(১)। সুতরাং অবশ্যই আমরা আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব যা আপনি পছন্দ করেন(২)। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের দিকে(৩) চেহারা ফিরান(৪)। আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের চেহারাসমূহকে এর দিকে ফিরাও এবং নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে, এটা তাদের রব এর পক্ষ হতে হক। আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌ গাফেল নন।




তাইসীরুল ক্বুরআন: নিশ্চয়ই আমি তোমার আকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখাকে লক্ষ্য করেছি, যে ক্বিবলা তুমি পছন্দ কর, আমি তোমাকে সেদিকে ফিরে যেতে আদেশ করছি। তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, ওরই দিকে মুখ ফিরাও; বস্তুতঃ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের জানা আছে যে, ক্বিবলার পরিবর্তন তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রকৃতই সত্য এবং তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে মোটেই গাফিল নন।




আহসানুল বায়ান: (১৪৪) আকাশের দিকে তোমার বারংবার মুখ ফিরানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে এমন ক্বিবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব (নামাযে) তুমি মাসজিদুল হারামের (পবিত্র কা’বাগৃহের) দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, (নামাযে) সেই (কা’বার) দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ (বিধান) তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত সত্য। [1] তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ উদাসীন নন।



মুজিবুর রহমান: নিশ্চয়ই আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমন্ডল উত্তোলন অবলোকন করেছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলাহমুখীই করাচ্ছি যা তুমি কামনা করছো। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমন্ডল ফিরিয়ে দাও এবং তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের আনন সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর; এবং নিশ্চয়ই যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই অবগত আছে যে, নিশ্চয়ই এটি তাদের রবের নিকট হতে প্রেরিত সত্য; এবং তারা যা করছে তদ্বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন।



ফযলুর রহমান: আমি তোমাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। তাই অবশ্যই আমি তোমাকে তোমার পছন্দের এক কেবলার দিকে ফেরাব। তুমি মসজিদে হারামের (মক্কার পবিত্র মসজিদের) দিকে তোমার মুখ ফিরাও। আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন এই মসজিদের দিকেই তোমাদের মুখ ফিরাবে। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তারা (ইহুদি/খ্রিষ্টানরা) অবশ্যই জানে যে, এটাই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সঠিক বিধান। তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন।



মুহিউদ্দিন খান: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।



জহুরুল হক: আমরা নিশ্চয়ই দেখেছি আকাশের দিকে তুমি মুখ তোলে রয়েছ, তাই আমরা নিঃসন্দেহ তোমাকে কর্তৃত্ব দেবো কিবলাহ্‌র যা তুমি পছন্দ কর। কাজেই হারাম মসজিদের দিকে তোমার মুখ ফেরাও। আর যেখানেই তোমরা থাক তোমাদের মুখ এর দিকেই ফেরাবে। আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে নিঃসন্দেহ এটি তাদের প্রভুর কাছ থেকে আসা ধ্রুব-সত্য। আর তারা যা করছে আল্লাহ্ সে-সন্বন্ধে বেখেয়াল নন।



Sahih International: We have certainly seen the turning of your face, [O Muhammad], toward the heaven, and We will surely turn you to a qiblah with which you will be pleased. So turn your face toward al-Masjid al-Haram. And wherever you [believers] are, turn your faces toward it [in prayer]. Indeed, those who have been given the Scripture well know that it is the truth from their Lord. And Allah is not unaware of what they do.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৪৪. অবশ্যই আমরা আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানো লক্ষ্য করি(১)। সুতরাং অবশ্যই আমরা আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব যা আপনি পছন্দ করেন(২)। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের দিকে(৩) চেহারা ফিরান(৪)। আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের চেহারাসমূহকে এর দিকে ফিরাও এবং নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে, এটা তাদের রব এর পক্ষ হতে হক। আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ্– গাফেল নন।


তাফসীর:

(১) কেবলা পরিবর্তনের আদেশ আসার আগে থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি নিজেই অনুভব করছিলেন ইসরাঈল বংশীয়দের নেতৃত্বের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং তার সাথে সাথে বায়তুল-মুকাদ্দাসের কেন্দ্রীয় মর্যাদা লাভেরও অবসান ঘটেছে। এখন আসল ইবরাহিমী কেবলার দিকে মুখ ফিরানোর সময় হয়ে গেছে। কা'বা মুসলিমদের কেবলা সাব্যস্ত হোক - এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আন্তরিক বাসনা। তিনি এর জন্য দোআও করছিলেন। এ কারণেই তিনি বার বার আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন যে, ফেরেশতা নির্দেশ নিয়ে আসছেন কি না।


(২) এ আয়াতাংশটি হচ্ছে কেবল পরিবর্তন সম্পর্কিত মূল নির্দেশ। এ নির্দেশটি তৃতীয় হিজরীর রজব বা শাবান মাসে নাযিল হয়। ইবনে সা’আদ বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দাওয়াত উপলক্ষে উম্মে বিশ্বর ইবনে বারা' ইবনে মা’রুর-এর ঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে যোহরের সময় গিয়েছিল। তিনি সেখানে সালাতে লোকদের ইমামতি করতে দাঁড়িয়েছিলেন। দু’রাকাআত সালাত আদায় হয়ে গিয়েছিল। এমনি সময় তৃতীয় রাকাআতে ওহীর মাধ্যমে এ আয়াতটি নাযিল হল। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ও তার সঙ্গে জামা'আতে শামিল সমস্ত লোক বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। [তাবাকাতে ইবনে সা'দ: ১/২৪২]

এরপর মদীনা ও মদীনার আশেপাশে এ নির্দেশটি সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়া হল। বারা ইবনে আযেব বলেন, এক জায়গায় ঘোষকের কথা এমন অবস্থায় পৌছল, যখন তারা রুকূ করছিল। নির্দেশ শোনার সাথে সাথেই সবাই সে অবস্থাতেই কাবার দিকে মুখ ফিরালো। আনাস ইবনে মালেক বলেন, এ খবরটি কুবায় পৌছল পরের দিন ফজরের সালাতের সময়। লোকেরা এক রাকাআত সালাত শেষ করেছিল, এমন সময় তাদের কানে আওয়াজ পৌছলঃ ‘সাবধান! কেবলা বদলে গেছে। এখন কাবার দিকে কেবলা নির্দিষ্ট হয়েছে। এ কথা শোনার সাথে সাথেই সমগ্র জামাআত কাবার দিকে মুখ ফিরালো। [অনুরূপ বর্ণনা, বুখারী ৪৪৮৬]


(৩) ‘মসজিদুল হারাম’ অর্থ সম্মান ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ। এর অর্থ হচ্ছে এমন ইবাদতগৃহ, যার মধ্যস্থলে কা'বাগৃহ অবস্থিত।


(৪) হিজরতের পূর্বে মক্কা-মুকাররামায় যখন সালাত ফরয হয়, তখন কা'বাগৃহই সালাতের জন্য কেবল ছিল, না বায়তুল-মুকাদ্দাস ছিল - এ প্রশ্নে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেনঃ ইসলামের শুরু থেকেই কিবলা ছিল বায়তুল-মুকাদ্দাস। হিজরতের পরও ষোল/সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল-মুকাদ্দাসই কেবলা ছিল। এরপর কাবাকে কেবলা করার নির্দেশ আসে। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে-ইয়ামানীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যাতে কাবা ও বায়তুল-মুকাদ্দাস উভয়টিই সামনে থাকে। মদীনায় পৌছার পর এরূপ করা সম্ভব ছিল না।

তাই তার মনে কেবলা পরিবর্তনের বাসনা দানা বাঁধতে থাকে। অন্যান্য সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বলেনঃ মক্কায় সালাত ফরয হওয়ার সময় কা'বা গৃহই ছিল মুসলিমদের প্রাথমিক কেবলা। কেননা ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস্ সালাম-এরও কেবলা তাই ছিল। মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে কাবাগৃহের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন। মদীনায় হিজরতের পর তার কেবলা বায়তুল-মুকাদ্দাস সাব্যস্ত হয়। তিনি মদীনায় ষোল/সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল-মোকাদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। এরপর প্রথম কেবল অর্থাৎ কাবাগৃহের দিকে মুখ করার নির্দেশ নাযিল হয়।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৪৪) আকাশের দিকে তোমার বারংবার মুখ ফিরানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে এমন ক্বিবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব (নামাযে) তুমি মাসজিদুল হারামের (পবিত্র কা’বাগৃহের) দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, (নামাযে) সেই (কা’বার) দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ (বিধান) তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত সত্য। [1] তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ উদাসীন নন।


তাফসীর:

[1] আহলে-কিতাবদের বিভিন্ন সহীফা (ধর্মগ্রন্থ)সমূহে কাবা শরীফ যে শেষ নবীর ক্বিবলা হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বিদ্যমান। কাজেই এর সত্যতা সম্পর্কে তাদের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল, কিন্তু তাদের জাতিগত হিংসা ও বিদ্বেষ সত্য গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১৪২ থেকে ১৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:



শানে নুযূল:



সাহাবী বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মদীনায় আগমণ করার পর) বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন আর বারবার আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের অপেক্ষা করতেন। (কখন বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে সালাত আদায় করার নির্দেশ আসবে) তখন



قَدْ نَرَي .... يَعْمَلُونَ এ আয়াত নাযিল হয়। (ইবনু কাসীর)



এরপর বাইতুল্লাহ কেবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। এ সময় সাহাবাগণ বলতে লাগলেন, কেবলা পরিবর্তনের পূর্বে যারা মারা গেছে তাদের অবস্থা কী হবে? যদি আমরা জানতে পারতাম এবং আমরা যে এতদিন বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেছি তার কী হবে? তখন وَمَا كَانَ اللّٰهُ.... আয়াত নাযিল হয়।



যখন কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল তখন আহলে কিতাবের নির্বোধ লোকেরা বলতে লাগল কিসে তাদেরকে পূর্বের কেবলা থেকে ফিরিয়ে নিল? তখন



(سَيَقُولُ السُّفَهَاء مِنَ النَّاسِ... )



আয়াত নাযিল হয়।



বারা বিন আযিব (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় হিজরত করার পর ১৬-১৭ মাস পর্যন্ত বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তিনি পছন্দ করতেন কাবার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে। তখন



(قَدْ نَرَي . يَعْمَلُونَ....)



আয়াত নাযিল হয়।



এ আয়াত অবতীর্ণের পর থেকে মুসলিমগণ কাবামুখী হয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় ইয়াহূদী নির্বোধেরা বলতে লাগল-



(مَا وَلّٰهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمُ الَّتِيْ كَانُوْا عَلَيْهَا)



“কিসে তাদেরকে সেই কেবলা হতে ফিরিয়ে দিল যার দিকে তারা ছিল?” তখন



(قُلْ لِّلّٰهِ الْمَشْرِقُ ...... مُّسْتَقِیْمٍ)



নাযিল হয়। এছাড়া আরো বর্ণনা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৬, ইবনু কাসীর ১খণ্ড, পৃঃ ৪০৬)



কেবলা পরিবর্তন কোন্ সালাতে হয়েছিল তা নিয়ে বেশ মতামত পাওয়া যায়, তবে সঠিক কথা হল, আসর সালাতে (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৬)। অন্যান্য বর্ণনা এর বিপরীত নয়। কারণ যারা যে সালাতের সময় পরিবর্তন পেয়েছিলেন তারা সে সালাতের কথা বলেছেন।



আয়াতে أمة وسطا এর অর্থ أمة خياراً وعدولاً বা সর্বশ্রেষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ ও মধ্যমপন্থী জাতি। যেমন বলা হয়



قريش أوسط العرب نسباً وداراً



বা কুরাইশগণ বংশ ও ঘর বাড়ির দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আরব। আরো বলা হয়:



صلاة العصر صلاة الوسطي



আসরের সালাত উৎকৃষ্ট ও মধ্যম সালাত। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ উৎকৃষ্ট ও মধ্যমপন্থী জাতিকে একটি পরিপূর্ণ শরীয়ত ও সুপ্রতিষ্ঠিত দীন দিয়েছেন।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(ھُوَ اجْتَبٰٿکُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَیْکُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍﺚ مِلَّةَ اَبِیْکُمْ اِبْرٰھِیْمَﺚ ھُوَ سَمّٰٿکُمُ الْمُسْلِمِیْنَﺃ مِنْ قَبْلُ وَفِیْ ھٰذَا لِیَکُوْنَ الرَّسُوْلُ شَھِیْدًا عَلَیْکُمْ وَتَکُوْنُوْا شُھَدَا۬ئَ عَلَی النَّاسِﺊ)



“তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’এবং এ কিতাবেও; যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা সাক্ষী হও মানব জাতির জন্য।”(সূরা হজ্জ ২২:৭৮)



আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামত দিবসে নূহ (আঃ)-কে ডাকা হবে, তিনি বলবেন, হে প্রভু! আমি উপস্থিত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন: হ্যাঁ পৌঁছে দিয়েছিলাম। তখন তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে। নূহ তোমাদের নিকট (নবুওয়াতের বাণী) পৌঁছে দিয়েছে কি? তারা বলবে: আমাদের কাছে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সাক্ষী কে? নূহ (আঃ) বলবেন: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাত। তখন (উম্মাতে মুহাম্মাদী) সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তিনি দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেন:



(وَكذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا)



(সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৭)



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(فَکَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ کُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَھِیْدٍ وَّجِئْنَا بِکَ عَلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِ شَھِیْدًا)



“যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে?”। (সূরা নিসা ৪:৪১)



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মু’মিনের মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন।



এ কেবলা পরিবর্তন এ জন্য করা হয়েছে যাতে আল্লাহ তা‘আলা জেনে নেন কারা প্রকৃতপক্ষে রাসূলের অনুসারী আর কারা মুনাফিক।



ইসলামের কোন আদেশ পালন বা নিষেধকৃত বিষয় বর্জন করা মু’মিন ছাড়া অন্যদের জন্য বড়ই কঠিন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:



(وَاِذَا مَآ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْھُمْ مَّنْ یَّقُوْلُ اَیُّکُمْ زَادَتْھُ ھٰذِھ۪ٓ اِیْمَانًاﺆ فَاَمَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْھُمْ اِیْمَانًا وَّھُمْ یَسْتَبْشِرُوْنَ﯋وَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ)



“যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে ‘এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করলো?’যারা মু’মিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৪-২৫)



(وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُضِيْعَ إِيْمَانَكُمْ)



‘আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান (সালাত) বিনষ্ট করে দিবেন’এখানে ঈমান সালাত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সালাতকে ঈমান বলার কারণ হল সালাত ঈমানের পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:



الْفَرْقُ بَيْنَ الْعَبْدِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ



আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব ও কুফরীর মাঝে পার্থক্য হল সালাত বর্জন করা। (সহীহ মুসলিম হা:৮২)



(فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا)



‘তাই আমি তোমাকে ঐ কেবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ’এ অংশটুকুর তাফসীর হল



(فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)



“তুমি মাসজিদে হারামের দিকে (কা‘বার দিকে) তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও।”



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষকে সালাতে কাবামুখী হবার নির্দেশ দিচ্ছেন। সে ব্যক্তি পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণ দিকের অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোন দিকের অধিবাসীই হোক না কেন।



সালাতের কেবলা হল বাইতুল্লাহ, তবে সফরে নফল সালাত ও যুদ্ধের ময়দানের ফরয সালাত ব্যতীত। কেননা তাতে কেবলামুখী হওয়া কঠিন বিধায় জরুরী নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৪১৫)



আহলে কিতাব বিশেষ করে ইয়াহূদীরা জানে যে, এ কেবলা পরিবর্তন সত্য এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। কিন্তু অহঙ্কারবশত তা প্রত্যাখ্যান করে।



সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কেন এ বিধান দিলেন বা কেন পূর্বের বিধান বাতিল করলেন ইত্যাদি প্রশ্ন করা ঈমানদারদের সমীচীন নয়। বরং ঈমানের পরিচয় হল আল্লাহ তা‘আলা যখন যে বিধান দেবেন তা মাথা পেতে মেনে নেয়া।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. ইসলামে বিধান রহিতকরণ শরীয়তসিদ্ধ। যেমন এখানে বাইতুল মুকাদ্দাসের কেবলা রহিত করে বাইতুল্লাহকে নির্ধারণ করা হল।

২. কেবল মুনাফিক ও কাফিররাই শরীয়তের বিধি-বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকে।

৩. সকল উম্মাতের ওপর উম্মাতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠত্ব সর্ম্পকে জানলাম।

৪. বিভিন্ন সময় বিধি-বিধানের বদল করে আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করেন কারা প্রকৃত ঈমানদার।

৫. শরীয়তের বিধান যত বড়ই হোক না কেন মু’মিনের কাছে তা সহজসাধ্য; পক্ষান্তরে মুনাফিক ও কাফিরের কাছে আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ার মত কঠিন।

৬. অজানার কারণে কেবলার ভিন্নদিকে সালাত আদায় করলে সালাত পুনরাবৃত্তি করতে হবে না।

৭. সারা পৃথিবীবাসীর জন্য একমাত্র কেবলা কাবা, কেউ স্বেচ্ছায় অন্য কেবলা গ্রহণ করলে তা প্রত্যাখ্যাত।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, কুরআন মাজীদের মধ্যে প্রথম ‘নসখ’ হচ্ছে কিবলাহর হুকুম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় হিজরত করেন। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী ছিল ইয়াহূদী। আল্লাহ তাঁকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায পড়ার নির্দেশ দেন। ইয়াহুদীরা এতে খুবই খুশী হয়। তিনি কয়েক মাস পর্যন্ত ঐ দিকেই নামায পড়েন। কিন্তু স্বয়ং তাঁর মনের বাসনা ছিল হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কিবলাহ্। তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানাতেন। প্রায়ই তিনি আকাশের দিকে চক্ষু উত্তোলন করতেন। অবশেষে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এতে ইয়াহূদীরা বলতে থাকেঃ তিনি এই কিবলাহ্ হতে সরে গেলেন কেন? এর উত্তরে বলা হয় যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা আরও বলেনঃ “যে দিকেই তোমাদের মুখ হয়-আল্লাহ সেই দিকেই রয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, পূর্ব কিবলাহ ছিল পরীক্ষামূলক। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামাযের পরে স্বীয় মস্তক আকাশের দিকে উত্তোলন করতেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং মসজিদে হারামের দিকে মুখ করার নির্দেশ দেয়া হয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) ইমামতি করেন।

হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) মসজিদে হারামে' মীযাবের সামনে বসে এই পবিত্র আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ মীযাব কা'বার দিকে রয়েছে। ইমাম শাফেঈ (রঃ)-এরও একটি উক্তি এই রয়েছে যে, ঠিক কাবার দিকে মুখ করাই হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য। তাঁর দ্বিতীয় উক্তি এই যে, মুখ কাবার দিকে হওয়াই যথেষ্ট। আবুল আলিয়া (রঃ) মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ বিন যুবাইর (রঃ), রাবী বিন আনাস (রঃ), প্রভৃতি মণীষীরও উক্তি এটাই। একটি হাদীসের মধ্যেও রয়েছে যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে কিবলাহ্ রয়েছে। ইবনে জুরাইজ-এর গ্রন্থে হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মসজিদে হারামের অধিবাসীদের কিবলাহ্ হচ্ছে বায়তুল্লাহ। হারাম’ বাসীদের কিবলাহ হলো মসজিদ'। আর হারাম কিবলাহ্ হচ্ছে সমগ্র পৃথিবী বাসীর। পূর্বেই থাক বা পশ্চিমেই থাক, আমার সমস্ত উম্মতের কিবলাহ্ এটাই। ‘আবু নাঈম’ নামক পুস্তকে হযরত বারা' (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মোল বা সতেরো মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়লেও বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে নামায পড়াই তিনি পছন্দ করতেন। সুতরাং মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে আসরের
নামায আদায় করেন। অতঃপর তাঁর সাথে নামায আদায়কারীগণের মধ্যে এক ব্যক্তি অন্য একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ মসজিদে নামাযীরা সেই সময় রুকুতে ছিলেন। ঐ লোকটি তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে মক্কা শরীফের দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছি।' একথা শুনা মাত্রই তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থাতেই বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে ফিরে যান। আবদুর রাজ্জাকও কিছু হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে এটা বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসায়ীর মধ্যে হযরত আবু সাঈদ বিন মুআল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে ফজরের সময় মসজিদে নব্বীতে (সঃ) যেতাম এবং তথায় কিছু নফল নামায আদায় করতাম। একদিন আমরা গিয়ে দেখি যে, নবী (সঃ) মিম্বারের উপর বসে আছেন। আমি বলি যে আজ নিশ্চয় কোন নতুন কথা হয়েছে। আমিও বসে পড়ি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। আমি আমার সঙ্গীদেরকে বলি আসুন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বক্তৃতা শেষ করার পূর্বেই এই নতুন নির্দেশকে কার্যে পরিণত করি এবং প্রথমেই আমরা আদেশ মান্যকারী হয়ে যাই। এই বলে আমরা একদিকে চলে যাই এবং সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে নামায আদায় করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) মিম্বার হতে নেমে আসেন এবং কিবলাহর দিকে মুখ করে সর্বপ্রথম যুহরের নামায আদায় করেন। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই' গ্রন্থে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাবার দিকে মুখ করে সর্বপ্রথম যে নামায আদায় করেন তা যুহরের নামায ছিল। আর এই নামাযই হচ্ছে সালাত-ই-ওসতা। কিন্তু কা'বার দিকে মুখ করে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সর্বপ্রথম যে আসরের নামায আদায় করেন এটাই বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এজন্যেই কুবাবাসী পরের দিন ফজরের নামাযে এই সংবাদ পেয়েছিল। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই' গ্রন্থে হযরত নুওয়াইলা’ বিনতে মুসলিম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “আমরা বানু হারিসার মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে যুহর বা আসরের নামায পড়ছিলাম। আমাদের দু'রাকআত নামায পড়া হয়ে গেছে, এমন সময় কে একজন এসে কিবলাহ পরিবর্তনের সংবাদ দেয়। ফলে, আমরা নামাযের মধ্যেই বায়তুল্লাহর দিকে ঘুরে যাই এবং অবশিষ্ট দু'রাকাত ঐ দিকেই মুখ করে আদায় করি। নামাযের মধ্যে এইভাবে ফিরে যাওয়ার ফলে পুরুষ লোকেরা স্ত্রী লোকদের স্থানে এবং স্ত্রী লোকেরা পুরুষ লোকদের স্থানে এসে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এই সংবাদ পৌছলে তিনি খুশি হয়ে বলেনঃ এরাই হচ্ছে অদৃশ্যের উপর ঈমান আনয়নকারী।

‘তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই’ গ্রন্থে হযরত উম্মারাহ্ বিন আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “রুকুর অবস্থায় আমরা কিবলাহ্ পরিবর্তনের সংবাদ পাই এবং আমরা পুরুষ, স্ত্রী ও শিশু সবাই ঐ কিবলাহর দিকেই ফিরে। যাই।' অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ যেখানেই থাকনা কেন, নামাযের সময় তোমরা কাবার দিকে মুখ কর।' তবে সফরে সোয়ারীর উপর যে ব্যক্তি নফল নামায পড়ে সে সোয়ারী যে দিকেই যাবে সে দিকেই মুখ করে নফল নামায আদায় করবে। তার মনের গতি কাবার দিকে থাকলেই যথেষ্ট হবে। এই রকমই যে ব্যক্তি যুদ্ধের মাঠে নামায পড়ে সে যেভাবে পারে এবং যেই দিকে পড়া তার জন্যে সুবিধাজনক হয় সেই দিকেই পড়বে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কিবলাহর দিক ঠিক করতে পারছে না সে অনুমান করে যে দিকেই কিবলাহ হওয়ার ধারণা তার বেশী হবে সে দিকেই সে নামায আদায় করবে। অতঃপর যদি প্রকৃত পক্ষেই তার নামায কিবলার দিকে হয়ে থাকে তবুও সে আল্লাহ তা'আলার নিকট ক্ষমা পেয়ে যাবে।

জিজ্ঞাস্য বিষয়ঃ

মালেকীগণ এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নামাযীকে নামাযের অবস্থায় তার দৃষ্টি সামনের দিকে রাখতে হবে, সিজদার জায়গায় নয়। যেমন ইমাম শাফেঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম আবু হানীফারও (রঃ) এটাই মযহাব। কেননা আয়াতে রয়েছে, মসজিদে হারামের দিকে মুখ কর’, কাজেই যদি সিজদার জায়গায় মুখ করা যায় তবে কিছু নত হতে হবে এবং এই কৃত্রিমতাপূর্ণ বিনয় ও নম্রতার উল্টো। কোন কোন মালেকিয়্যার এটাও উক্তি রয়েছে যে, দাঁড়ান অবস্থায় স্বীয় বক্ষের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। কাযী শুরাইহ (রঃ) বলেন যে, দাঁড়ান অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখতে হবে। জমহুর উলামার এটাই উক্তি। কেননা এটাই হচ্ছে পূর্ণ বিনয় ও নম্রতা। অন্য একটি হাদীসেও এ বিষয়টি এসেছে। রুকুর অবস্থায় দৃষ্টি স্বীয় পায়ের স্থানে, সিজদার অবস্থায় নাকের স্থানে এবং (আরবি)-এর সময় ক্রোড়ের প্রতি রাখতে হবে। অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে যে, ইয়াহুদীরা কথা যতই বানিয়ে বলুক না কেন, তাদের মন বলে যে, কিবলাহ্র পরিবর্তন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই হয়েছে এবং এটা সত্য। কেননা, এটা স্বয়ং তাদের কিতাবেও রয়েছে। কিন্তু এরা একমাত্র কুফর, অবাধ্যতা, অহংকার এবং হিংসার বশবর্তী হয়েই এটা গোপন করছে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম হতে উদাসীন নন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।