আল কুরআন


সূরা আল-আনকাবূত (আয়াত: 5)

সূরা আল-আনকাবূত (আয়াত: 5)



হরকত ছাড়া:

من كان يرجو لقاء الله فإن أجل الله لآت وهو السميع العليم ﴿٥﴾




হরকত সহ:

مَنْ کَانَ یَرْجُوْا لِقَآءَ اللّٰهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللّٰهِ لَاٰتٍ ؕ وَ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ ﴿۵﴾




উচ্চারণ: মান কা-না ইয়ারজুলিকাআল্লা-হি ফাইন্না আজালাল্লা-হি লাআ-তিওঁ ওয়া হুওয়াছ ছামী‘উল ‘আলীম।




আল বায়ান: যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে (সে জেনে রাখুক) অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবে। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫. যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে সে জেনে রাখুক, আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই।(১) আর তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(২)




তাইসীরুল ক্বুরআন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা করে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহর নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে, তিনি সব কিছু শোনেন, সব কিছু জানেন।




আহসানুল বায়ান: (৫) যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে (সে জেনে রাখুক,) আল্লাহর নির্ধারিত কাল নিশ্চয় আসবে।[1] আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।[2]



মুজিবুর রহমান: যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ কামনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।



ফযলুর রহমান: যে আল্লাহর সাক্ষাৎ আশা করে সে জেনে রাখুক, আল্লাহর নির্ধারিত সময় অবশ্যই আসবে। তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।



মুহিউদ্দিন খান: যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।



জহুরুল হক: যারাই আল্লাহ্‌র সঙ্গে মোলাকাতের কামনা করে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত কাল তবে নিশ্চয়ই আগতপ্রায়। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।



Sahih International: Whoever should hope for the meeting with Allah - indeed, the term decreed by Allah is coming. And He is the Hearing, the Knowing.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৫. যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে সে জেনে রাখুক, আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই।(১) আর তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(২)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আখেরাতের জীবনে বিশ্বাসই করে না এবং মনে করে, কারো সামনে নিজের কাজের জবাবদিহি করতে হবে না এবং এমন কোন সময় আসবে না যখন নিজের জীবনের যাবতীয় কাজের কোন হিসেবা-নিকেশ দিতে হবে, তার কথা আলাদা। সে নিজের গাফলতির মধ্যে পড়ে থাকুক এবং নিশ্চিন্তে যা করতে চায় করে যাক। নিজের আন্দাজ-অনুমানের বিপরীত নিজের পরিণাম সে নিজেই দেখে নেবে। কিন্তু যারা আশা রাখে, এক সময় তাদেরকে তাদের মা’বুদের সামনে হাজির হতে হবে এবং নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার ও শাস্তি পেতে হবে, তাদের এ ভুল ধারণায় ডুবে থাকা উচিত নয় যে, মৃত্যুর সময় অনেক দূরে৷ তাদের তো মনে করা উচিত, সে সময় অতি নিকটেই এসে গেছে এবং কাজের অবকাশ খতম হবারই পথে। তাই নিজের শুভ পরিণামের জন্য তারা যা কিছু করতে চায় করে ফেলুক। [বাগভী; জালালাইন; ফাতহুল কাদীর] দীর্ঘ জীবন-কালের ভিত্তিহীন নির্ভরতার ওপর ভরসা করে নিজের সংশোধনে বিলম্ব করা উচিত নয়। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে”। [সূরা আল-কাহাফ: ১১০]


(২) অর্থাৎ তাদের এ ভুল ধারণাও পোষণ করা উচিত নয় যে, এমন কোন বাদশাহর সাথে তাদের ব্যাপার জড়িত, যিনি বিভিন্ন ব্যাপারের কোন খোঁজ খবর রাখেন না। যে আল্লাহর সামনে তাদের জবাবদিহি করার জন্য হাজির হতে হবে তিনি বেখবর নন বরং সবকিছু শোনেন ও জানেন। তাঁর কাছে তাদের কোন কথা গোপন নেই। [দেখুন, ইবন কাসীর] তিনি জানেন কে কোন নিয়তে কাজ করে, আরও জানেন কে তাঁর মহব্বতের উপযুক্ত আর কে উপযুক্ত নয়। [সা’দী]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৫) যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে (সে জেনে রাখুক,) আল্লাহর নির্ধারিত কাল নিশ্চয় আসবে।[1] আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।[2]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, যারা পরকালে বিশ্বাস করে এবং নেকী ও পুণ্যের আশায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদের আশা পূর্ণ করবেন। তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দান করবেন। কেননা কিয়ামত অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে এবং তাঁর ন্যায় বিচার নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত হবে।

[2] তিনি বান্দার কথা ও দু’আ শ্রবণকারী এবং গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল কর্ম সম্পর্কে অবগত। তিনি সেই অনুযায়ী ফলাফল অবশ্যই দান করবেন।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর:



(لِقَا۬ءَ اللّٰهِ) ‘আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাত’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার ভালবাসা, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও সৎ বান্দা হয়ে যে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাত কামনা করে সে জেনে রাখুক, আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই আসবে এবং তা খুবই নিকটে। কেননা



كُلُّ مَا آتٍ فَهُوَ قَرِيْبٌ



যা অবশ্যই হবে তা খুবই নিকটে। তাই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য যথাসম্ভব সকল অসৎ আমল থেকে বিরত থেকে সৎ আমল ও নেকীর কাজ চালিয়ে যেতে থাক।



جَاهَدَ শব্দের অর্থন প্রচেষ্টা করা, এখানে ঈমান আনা থেকে শুরু করে যাবতীয় সৎ আমল করা ও অসৎ আমল থেকে বিরত থাকা এমনকি আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা পর্যন্ত সবই শামিল। ঈমান আনতেও প্রচেষ্টা করতে হয়, কেননা শয়তান তাতে কঠিনভাবে বাধা দেয়। কারণ একজন ব্যক্তি ঈমান আনলে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ط وَإِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ)



“যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎ কর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৯)



যে ব্যক্তি ঈমান ও সৎ আমলের পথে প্রচেষ্টা করল সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই করল। ‘নিশ্চয়ই‎ আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বজগত হতে অমুখাপেক্ষী।’ কে সৎ আমল করল আর কে অসৎ আমল করল সে জন্য তাঁর কিছু আসে যায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِه۪ ج وَمَنْ أَسَا۬ءَ فَعَلَيْهَا ز ثُمَّ إِلٰي رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ)‏



“যে সৎ আমল করে সে তার নিজের (কল্যাণের) জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কর্ম করলে তার প্রতিফল তার ওপরই বর্তাবে, অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা জাসিয়া ৪৫:১৫) যেহেতু আল্লাহ সৎ আমল ও সৎ আমলকারীদেরকে ভালবাসেন সেহেতু তিনি তাদের দ্বারা যে সকল পাপ কাজ হয়ে গেছে তা মিটিয়ে দেবেন এবং তাদের কর্মের উত্তম প্রতিদান দেবেন।



অতএব প্রত্যেক ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে যা আমল করবে তার প্রতিদান সে পাবে ভাল বা মন্দ হোক। তবে যারা সর্বদা ভাল আমল করে তাদের দ্বারা যদি কোন অন্যায় কাজ হয়ে যায় আর তৎক্ষণাৎ যদি তারা তাদের ভুলের কথা স্বীকার করে তাওবা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের মন্দ আমলগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। মূলত তাদের কর্মফল কখনো নষ্ট করা হবে না। বরং তারা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে আরো দ্বিগুণ পাবে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. মানুষ যা আমল করে তা আমলকারীর ওপর বর্তাবে, ভাল করলে ভাল আর মন্দ করলে মন্দ।

২. ঈমানদার সৎ ব্যক্তিদের দ্বারা কোন পাপ কাজ হয়ে গেলে তা থেকে তাওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন এমনকি আরো উত্তম প্রতিদান দেন।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর

যাদের আখিরাতে বিনিময় লাভের আশা রয়েছে এবং ওটাকে সামনে রেখে তারা পুণ্যের কাজ করে থাকে তাদের আশা পূর্ণ হবে। তারা এমন পুরস্কার লাভ করবে যা কখনো শেষ হবার নয়। আল্লাহ তা'আলা প্রার্থনা শ্রবণকারী। তিনি জগতসমূহের সব খবরই রাখেন। তার নির্ধারিত সময় টলবার নয়।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যে কেউ ভাল আমল করে সে নিজের লাভের জন্যেই তা করে। আল্লাহ তাআলা মানুষের আমলের মুখাপেক্ষী নন। যদি সমস্ত মানুষ আল্লাহভীরু হয়ে যায় তবুও তাঁর সাম্রাজ্য সামান্য পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে ।

হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, শুধু তরবারী চালনা করার নামই জিহাদ নয়। মানুষ পুণ্যময় কাজের চেষ্টায় লেগে থাকবে এটাও এক প্রকারের জিহাদ। মানুষ ভাল কাজ করলে তা আল্লাহ তাআলার কোন উপকারে আসবে না, তবুও এটা তার বড় মেহেরবানী যে, তিনি মানুষকে তার ভাল কাজের পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। এই কারণে তিনি তার গুনাহ মাফ করে দেন। ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম পুণ্যেরও তিনি মর্যাদা দিয়ে থাকেন এবং এর জন্যে বড় রকমের পুরস্কার প্রদান করেন। একটি পুণ্যের বিনিময়ে তিনি সাতশগুণ পর্যন্ত প্রতিদান দিয়ে থাকেন।

আর পাপকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দেন। অথবা ওর সমপরিমাণ শাস্তি প্রদান করেন। তিনি যুলুম হতে সম্পূর্ণ পবিত্র। তিনি পুণ্যকে বাড়িয়ে দেন এবং নিজের নিকট হতে বিরাট প্রতিদান প্রদান করেন। তাই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা ঈমান আনে ও সত্যার্যাবলী সম্পাদন করে, আমি নিশ্চয়ই তাদের মন্দ কর্মগুলো মিটিয়ে দিবো এবং তাদের কর্মের উত্তম ফল দান করবো।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।