আল কুরআন


সূরা আল-কাসাস (আয়াত: 45)

সূরা আল-কাসাস (আয়াত: 45)



হরকত ছাড়া:

ولكنا أنشأنا قرونا فتطاول عليهم العمر وما كنت ثاويا في أهل مدين تتلو عليهم آياتنا ولكنا كنا مرسلين ﴿٤٥﴾




হরকত সহ:

وَ لٰکِنَّاۤ اَنْشَاْنَا قُرُوْنًا فَتَطَاوَلَ عَلَیْهِمُ الْعُمُرُ ۚ وَ مَا کُنْتَ ثَاوِیًا فِیْۤ اَهْلِ مَدْیَنَ تَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِنَا ۙ وَ لٰکِنَّا کُنَّا مُرْسِلِیْنَ ﴿۴۵﴾




উচ্চারণ: ওয়ালা-কিন্না আনশা’না-কুরূনান ফাতাতা-ওয়ালা ‘আলাইহিমুল ‘উমুরু ওয়ামা-কুনতা ছা-বিয়ান ফীআহলি মাদইয়ানা তাতলূ‘আলাইহিম আ-য়া-তিনা- ওয়া লা-কিন্নাকুন্না-মুরছিলীন।




আল বায়ান: কিন্তু আমি অনেক প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদের উপর বহু যুগ অতিবাহিত হয়েছিল। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থানকারী ছিলে না যে, তাদের নিকট আমার আয়াতগুলো তুমি তিলাওয়াত করবে। কিন্তু আমিই রাসূল প্রেরণকারী।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪৫. বস্তুত আমরা অনেক প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; তারপর তাদের উপর বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর আপনি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন না যে তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন।(১) মূলতঃ আমরাই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।(২)




তাইসীরুল ক্বুরআন: কিন্তু আমি অনেক মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ গত হয়ে গেছে। তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না তাদের কাছে আমার আয়াত আবৃত্তি করার জন্য, কিন্তু (তাদের মাঝে) রসূল প্রেরণকারী আমিই ছিলাম।




আহসানুল বায়ান: (৪৫) বস্তুতঃ (মূসার পর) অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম;[1] অতঃপর ওদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে।[2] তুমি তো মাদ্‌য়্যানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না[3] ওদের নিকট আমার বাক্য আবৃত্তি করার জন্য । কিন্তু আমিই ছিলাম রসূলপ্রেরণকারী। [4]



মুজিবুর রহমান: বস্তুতঃ আমি অনেক মানব গোষ্ঠির আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম, অতঃপর তাদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তুমিতো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেনা, তাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করার জন্য। আমিই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।



ফযলুর রহমান: কিন্তু আমি (মূসার পর) অনেক প্রজন্ম সৃষ্টি করেছি এবং তাদের ওপর দিয়ে অনেক সময়ও অতিবাহিত হয়েছে। আর মাদ্‌ইয়ানবাসীদেরকে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনানোর জন্য তুমি তাদের মধ্যে বসবাস করনি। কিন্তু আমি রসূল প্রেরণকারী ছিলাম।



মুহিউদ্দিন খান: কিন্তু আমি অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছে। আর আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতেন। কিন্তু আমিই ছিলাম রসূল প্রেরণকারী।



জহুরুল হক: বস্তুতঃ আমরা বহু মানববংশের উদ্ভব করেছিলাম, তারপর জীবনটা তাদের কাছে সুদীর্ঘ মনে হয়েছিল। আর তুমি মাদয়ানের অধিবাসীদের সঙ্গে বসবাসকারী ছিলে না তাদের কাছে আমাদের বাণীসমূহ আবৃত্তি করা অবস্থায়, কিন্তু আমরাই তো রসূল প্রেরণ করতে রয়েছিলাম।



Sahih International: But We produced [many] generations [after Moses], and prolonged was their duration. And you were not a resident among the people of Madyan, reciting to them Our verses, but We were senders [of this message].



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৪৫. বস্তুত আমরা অনেক প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; তারপর তাদের উপর বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর আপনি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন না যে তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন।(১) মূলতঃ আমরাই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।(২)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ যখন মূসা মাদইয়ানে পৌঁছেন, তার সাথে সেখানে যা কিছু ঘটে এবং দশ বছর অতিবাহিত করে যখন তিনি সেখান থেকে রওয়ানা দেন তখন সেখানে কোথাও আপনি বিদ্যমান ছিলেন না। আপনি চোখে দেখে এ ঘটনাবলীর উল্লেখ করছেন না বরং আমার মাধ্যমেই আপনি এ জ্ঞান লাভ করছেন। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর]


(২) অর্থাৎ আপনাকে তো আমরা রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। সে কারণেই আপনি এ সমস্ত ঘটনাবলী আপনার কাছে নাযিলকৃত ওহী থেকে বর্ণনা করতে সক্ষম হচ্ছেন। [কুরতুবী] সরাসরি এ তথ্যগুলো লাভ করার কোন উপায় আপনার ছিল না। আজ দু'হাজার বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পরও যে আপনি এ ঘটনাবলীকে এমনভাবে বর্ণনা করছেন যেন চোখে দেখা ঘটনা, আল্লাহর অহীর মাধ্যমে এসব তথ্য তোমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৪৫) বস্তুতঃ (মূসার পর) অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম;[1] অতঃপর ওদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে।[2] তুমি তো মাদ্–য়্যানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না[3] ওদের নিকট আমার বাক্য আবৃত্তি করার জন্য । কিন্তু আমিই ছিলাম রসূলপ্রেরণকারী। [4]


তাফসীর:

[1] قُرُون শব্দটি قَرن শব্দের বহুবচন, যার অর্থ যুগ বা শতাব্দী। কিন্তু এখানে সম্প্রদায় বা জাতির অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, হে মুহাম্মাদ! তোমার ও মূসার মাঝে যে সকল যুগ অতিবাহিত হয়েছে তাতে আমি বেশ কিছু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।

[2] অর্থাৎ, কালের আবর্তনে ধর্মের বিধি-বিধান পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং মানুষ ধর্ম ভুলে বসেছে। যার কারণে তারা আল্লাহর নির্দেশাবলী বর্জন করে এবং তাঁর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভুলে বসে। সুতরাং এক নতুন নবী প্রেরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। অথবা এর অর্থ এই যে, সময়ের ব্যবধান বেশি হওয়ার কারণে আরবের লোকেরা নবুঅত ও রিসালাত সম্পূর্ণভাবে বিস্মৃত হয়। যার কারণে ওরা তোমার নবুঅতের ব্যাপারে আশ্চর্য বোধ করে এবং তোমাকে নবী বলে মেনে নিতে প্রস্তুত হয় না।

[3] যার ফলে তুমি নিজে এই ঘটনার বিস্তারিত সব কিছু জানতে পারতে।

[4] আর সেই নিয়মানুসারেই আমি তোমাকে রসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং পূর্বের অবস্থা ও ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করেছি।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:



উক্ত আয়াতগুলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াত ও রিসালাতের সত্যতার প্রমাণ বহন করে এমন একটি দিক বর্ণনা করা হয়েছে। الْغَرْبِيِ অর্থাৎ পশ্চিম, অর্থাৎ যখন মূসা (عليه السلام) এর সাথে আমি আল্লাহ তা‘আলা কথা বলি এবং তাঁকে নবুওয়াত প্রদান করি তখন তুমি তূর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না। শু‘আইব (عليه السلام)-এর এলাকা মাদইয়ান, যা মূসা (عليه السلام)-এর শশুর বাড়ি, সেখানেও তুমি উপস্থিত ছিলে না, এতদসত্ত্বেও তুমি মূসা (عليه السلام)-এর জীবন বৃত্তান্তসহ পূর্ববর্তীদের জীবন কাহিনী কিভাবে জানলে? নিশ্চয়ই এটা তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যে, তিনি ওয়াহীর মাধ্যমে তোমাকে সব জানিয়েছেন। তোমার কাছে যদি ওয়াহী না করা হত, তুমি যদি রাসূল না হতে তাহলে কখনো তা জানতে পারতে না। এতো পুরনো ঘটনা সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(تِلْكَ مِنْ أَنْۭبَا۬ءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَآ إِلَيْكَ ج مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَآ أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَا ط فَاصْبِرْ ط إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ)‏



“এ সমস্ত‎ অদৃশ্যের সংবাদন আমি তোমাকে ওয়াহী দ্বারা অবহিত করছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়ও জানত না। সুতরাং ধৈর্য ধারণ কর‎, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য।’’ (সূরা হূদ ১১:৪৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:



(كَذٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْۭبَا۬ءِ مَا قَدْ سَبَقَ ج وَقَدْ اٰتَيْنٰكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا)



“পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ।” (সূরা ত্বা-হা- ২০:৯৯)



সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সত্যতায় কোন সংশয় নেই। যারা সংশয় করবে তারা কাফির হয়ে যাবে।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেনন তিনি কোন জাতিকে সতর্ক করার জন্য রাসূল না পাঠিয়ে ধ্বংস করেন না বা শাস্তি প্রদান করেন না। কারণ যদি এভাবে শাস্তি প্রদান করা হত তাহলে তারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী প্রেরণ করা হল না কেন? তাহলে আমরা তার অনুসরণ করতাম।



এ কথা যেন বলতে না পারে তাই তাদের নিকট তোমাকে সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



‏(اَنْ تَقُوْلُوْٓا اِنَّمَآ اُنْزِلَ الْکِتٰبُ عَلٰی طَا۬ئِفَتَیْنِ مِنْ قَبْلِنَاﺕ وَاِنْ کُنَّا عَنْ دِرَاسَتِھِمْ لَغٰفِلِیْنَﯫاَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّآ اُنْزِلَ عَلَیْنَا الْکِتٰبُ لَکُنَّآ اَھْدٰی مِنْھُمْﺆ فَقَدْ جَا۬ءَکُمْ بَیِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّکُمْ وَھُدًی وَّرَحْمَةٌﺆ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ کَذَّبَ بِاٰیٰتِ اللہِ وَصَدَفَ عَنْھَاﺚ سَنَجْزِی الَّذِیْنَ یَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰیٰتِنَا سُوْ۬ئَ الْعَذَابِ بِمَا کَانُوْا یَصْدِفُوْنَ)



“(এটা নাযিল করার কারণ এই যে,) যাতে তোমরা না বলতে পার, (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আমরা তাদের পঠন-পাঠন সম্বন্ধে তো গাফিল ছিলাম’, অথবা যাতে এ কথা বলতে না পার, ‘যদি কিতাব আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত তবে আমরা তো তাদের অপেক্ষা অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম।’ এখন তো তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে, অতএব (এরপর আল্লাহ তা‘আলার) আয়াতকে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তা থেকে এড়িয়ে থাকবে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? যারা আমার আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলবে তাদেরকে আমি এই এড়িয়ে চলার কারণে অতিসত্বর কঠিন শাস্তি দেব।” (সূরা আন‘আম ৬:১৫৬-১৫৭)



সুতরাং ঈমান না আনার পেছনে কোন ওযর আপত্তি পেশ করা যাবে না। আর তা গ্রহণও করা হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পূর্বেই ওযর পেশ করার সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য রাসূল তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।

২. সতর্ককারী প্রেরণ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ধ্বংস করেন না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা'আলা স্বীয় শেষ নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের দলীল দিচ্ছেন যে, তিনি এমন একজন লোক যার কোন আক্ষরিক জ্ঞান নেই, যিনি একটি অক্ষরও কারো কাছে শিক্ষা করেননি, পূর্ববর্তী কিতাবগুলো যাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত, যার কওমের সবাই বিদ্যাচর্চা ও অতীতের ইতিহাস হতে সম্পূর্ণ বে-খবর, তিনি স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে এবং পূর্ণ বাকপটুতার সাথে ও সঠিকভাবে অতীতের ঘটনাবলী এমনভাবে বর্ণনা করছেন যে, যেন তিনি সেগুলো স্বচক্ষে দর্শন করেছেন এবং তিনি যেন সেগুলো সংঘটিত হওয়ার সময় তথায় বিদ্যমান ছিলেন। এটা কি একথার প্রমাণ নয় যে, তাঁকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে শিক্ষাদান করা হয়েছে, স্বয়ং আল্লাহ অহীর মাধ্যমে ওগুলো তাকে জানিয়ে দিয়েছেন? হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়েও এটা পেশ করেছেন এবং বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! মারইয়াম (আঃ)-এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে এর জন্যে যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তুমি তখন তাদের নিকট ছিলে না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না।” (৩:৪৪) সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিদ্যমান না থাকা এবং অবহিত থাকা সত্ত্বেও এ ঘটনাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যেন তিনি তথায় বিদ্যমান ছিলেন এবং তাঁর সামনেই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, এটা তাঁর নবুওয়াতের স্পষ্ট দলীল ও পরিষ্কার নিদর্শন যে, তিনি অহীর মাধ্যমে এগুলোর খবর দিয়েছেন। অনুরূপভাবে হযরত নূহ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “এগুলো অদৃশ্যের সংবাদ যেগুলো আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, ইতিপূর্বে এগুলো না তুমি জানতে, না তোমার কওম জানতো, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং জেনে রেখো যে, শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদেরই।” (১১:৪৯) সূরায়ে ইউসুফেরও শেষে ইরশাদ হয়েছে (আরবি)

অর্থাৎ “এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহীর দ্বারা অবহিত করছি; ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌছেছিল, তখন তুমি তাদের সাথে ছিলে না।” (১২:১০২) সূরায়ে তোয়াহা-তে রয়েছে (আরবি)

অর্থাৎ “পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এইভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি।” (২০:৯৯) অনুরূপভাবে এখানেও হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম, নবুওয়াতের সূচনা ইত্যাদি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বলেনঃ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) যখন আমি মূসা (আঃ)-কে বিধান দিয়েছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না। বস্তুতঃ আমি অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; অতঃপর তাদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না তাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করবার জন্যে। আমিই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী। আর হে নবী (সঃ)! যখন আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম তখন তুমি তূর পর্বত পার্শ্বে হাযির ছিলে না।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আওয়ায দেয়া হয়ঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মত! তোমাদের চাওয়ার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি এবং তোমরা দু'আ করবে তার পূর্বেই আমি ককূল করে নিয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আবদুর রহমান আন নাসাঈ (রঃ) তার সুনান গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন)

হযরত মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমরা যখন তাদের বাপ-দাদাদের পৃষ্ঠদেশে ছিলে তখনই আমি তাদেরকে ডাক দিয়েছিলাম যে, আমি যখন তোমাকে নবী করে প্রেরণ করবো তখন তারা তোমার অনুসরণ করবে।”

কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো: “আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম। এটাই বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা, উপরেও এরই বর্ণনা রয়েছে। উপরে সাধারণভাবে বর্ণনা ছিল এবং এখানে বিশিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তোমার প্রতিপালক মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করলেন।” (২৬:১০) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তার প্রতিপালক যখন তাকে পবিত্র ভূর উপত্যকায় আহ্বান করেন।” (৭৯:১৬) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর একটি আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তাকে আমি আহ্বান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।” (১৯:৫২)

মহান আল্লাহ বলেনঃ এগুলোর মধ্যে একটি ঘটনাও তোমার উপস্থিতকালে এবং তোমার চোখের সামনে সংঘটিত হয়নি, বরং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে দয়া স্বরূপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। এটা এ জন্যেও যে, তাদের কাছে যেন কোন দলীল বাকী না থাকে এবং ওর করারও কিছু না থাকে যে, তাদের কাছে কোন রাসূল আসেননি এবং তাদেরকে কেউ সুপথ প্রদর্শন করেননি, করলে অবশ্যই তারা আল্লাহর নিদর্শন মেনে চলতো এবং তারা মুমিন হতো।

যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় স্বীয় পবিত্র কিতাব কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করার পর বলেনঃ “এটা এই জন্যে যে, তোমরা যেন বলতে না পারকিতাব তো আমাদের পূর্বে দুটি দলের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা তো এর পাঠ ও শিক্ষাদান হতে ছিলাম সম্পূর্ণ উদাসীন। যদি এ কিতাব আমাদের উপর অবতীর্ণ করা হতো তবে অবশ্যই আমরা তাদের চেয়ে বেশী সুপথগামী হতাম। এখন জেনে রেখো যে, তোমাদের কাছেও তোমাদের প্রতিপালকের দলীল, হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে। অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ “এরা হলো সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী রাসূল যাতে লোকদের জন্যে রাসূলদের পরে কোন হুজ্জত বাকী না থাকে। আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে রাসূলশূন্য যুগে আমার রাসূল এসে গেছে যে তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে তোমরা বলতে না পার- আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি, কারণ এখন তো তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী এসে গেছে।” (৫:১৯) এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।