আল কুরআন


সূরা আল-কাসাস (আয়াত: 16)

সূরা আল-কাসাস (আয়াত: 16)



হরকত ছাড়া:

قال رب إني ظلمت نفسي فاغفر لي فغفر له إنه هو الغفور الرحيم ﴿١٦﴾




হরকত সহ:

قَالَ رَبِّ اِنِّیْ ظَلَمْتُ نَفْسِیْ فَاغْفِرْ لِیْ فَغَفَرَ لَهٗ ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ ﴿۱۶﴾




উচ্চারণ: কা-লা রাব্বি ইন্নী জালামতুনাফছী ফাগফিরলী ফাগাফারা লাহূ ইন্নাহূহুওয়াল গাফূরুর রাহীম।




আল বায়ান: সে বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৬. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।




তাইসীরুল ক্বুরআন: সে বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজের আত্মার উপর যুলম করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।




আহসানুল বায়ান: (১৬) সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’[1] অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।



মুজিবুর রহমান: সে বললঃ হে আমার রাব্ব! আমিতো আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।



ফযলুর রহমান: সে বলল, “হে আমার প্রভু! আমি তো আমার নিজের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।” তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।



মুহিউদ্দিন খান: তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।



জহুরুল হক: তিনি বললেন -- "আমার প্রভু! আমি নিঃসন্দেহ আমার নিজের প্রতি অত্যাচার করে ফেলেছি, সেজন্য আমাকে পরিত্রাণ করো।" সুতরাং তিনি তাঁকে পরিত্রাণ করলেন। নিঃসন্দেহ তিনি -- তিনিই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।



Sahih International: He said, "My Lord, indeed I have wronged myself, so forgive me," and He forgave him. Indeed, He is the Forgiving, the Merciful.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৬. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৬) সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।”[1] অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীর:

[1] এই অনিচ্ছাকৃত আকস্মিক হত্যা যদিও কাবীরাহ গোনাহ ছিল না (কারণ মহান আল্লাহ নবীগণকে তা হতে সুরক্ষা করেন) তা সত্ত্বেও তিনি এই গোনাহকে এমন ভাবলেন, যার ফলে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরী মনে করলেন। দ্বিতীয়তঃ এ আশঙ্কাও তাঁর ছিল যে, ফিরআউন যদি জানতে পারে, তাহলে তার বদলা নিতে সে হয়তো তাঁকেও হত্যা করবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: সূরার নামকরণ:



কাসাস শব্দটি কিস্সা এর বহুবচন। কিস্সা অর্থ ঘটনা, কাহিনী ইত্যাদি। এ সূরাতে একাধিক নাবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, তাই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের মধ্যে সূরা কাসাস সর্বশেষ সূরা। হিজরতের সময় মক্কা ও জুহফা এর মাঝখানে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, হিজরতের সফরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জুহফায় পৌঁছেন, তখন জিবরীল (عليه السلام) আগমন করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন: হে মুহাম্মাদ, আপনার মাতৃভূমির কথা আপনার মনে পড়ে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) তাঁকে এ সূরা শুনালেন। এ সূরার শেষভাগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আপনাকে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার পরিণামে মক্কা বিজিত হয়ে আপনার অধিকারভুক্ত হবে, যেমনটি উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র সূরার ৮৫ নং আয়াতে বলেনন



(إِنَّ الَّذِيْ فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْاٰنَ لَرَآدُّكَ إِلٰي مَعَادٍ)



“যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন জন্মভূমিতে।”



সূরা কাসাসে সর্বপ্রথম মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী সংক্ষেপে ও পরে বিস্তারিত বর্র্ণিত হয়েছে। অর্ধেক সূরা পর্যন্ত মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী ফির‘আউনের সাথে এবং শেষভাগে কারূনের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী সমগ্র কুরআনে কোথাও সংক্ষেপে আবার কোথাও বিস্তারিত আকারে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা কাহফে খাজির (عليه السلام)-এর সাথে তাঁর কাহিনী বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর সূরা ত্বা-হা-য় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এবং এরই কিছু বিবরণ সূরা আন-নামলে অতঃপর সূরা কাসাসে এর পুনরালোচনা রয়েছে।



১-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:



طٰس۬مّ۬ (ত্বা-সীন-মীম) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।



এরপর বলেন, এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত, এ সম্পর্কে সূরা শুআরার প্রথমে অর্থাৎ ২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।



এরপর আল্লাহ তা‘আলা মূসা (عليه السلام)-এর জীবন বৃত্তান্তের বর্ণনা দিচ্ছেন।



(وَأَوْحَيْنَآ إِلٰٓي أُمِّ مُوْسٰٓي)



‘আমি মূসার মায়ের কাছে ওয়াহী করেছি’ এখানে ওয়াহী শব্দটি পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার হয়নি। বরং শাব্দিক অর্থে স্বভাবগত ইলহাম যা মানুষকে করা হয়। এখানে এটাই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-এর মায়ের মনের মাঝে একটি ইলহাম করে দিয়েছিলেন যেন তিনি তার ছেলে মূসা (عليه السلام)-কে বুকের দুধ পান করান। আর যদি ভয় হয় নিজের কাছে থাকলে ফির‘আউন হত্যা করবে তাহলে একটি বাক্সে করে সাগরে ভাসিয়ে দেবে।



الْيَمِّ শব্দের অর্থ সাগর, অর্থাৎ নীল নদে ভাসিয়ে দাও, মারা যাবে বা হারিয়ে যাবে এ ভয় বা আশঙ্কা করবে না। আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং আমি তাকে রাসূল বানাবো।



(فَالْتَقَطَه۫ٓ اٰلُ فِرْعَوْنَ)



অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-কে নীল নদে ভাসিয়ে দিলে ভেসে ভেসে ফির‘আউনের প্রাসাদের কাছে চলে যায়, ফির‘আউনের পরিবার তাকে তুলে নিল এবং ফির‘আউনের স্ত্রী আসিয়া বললন এ শিশু আমাদের নয়ণমনি হবে অতএব তাকে হত্যা করো না। এভাবে আপন গৃহে শত্র“ লালিত পালিত হল কিন্তু তারা বুঝতেও পারল না।



(وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوْسٰي فٰرِغًا)



অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-কে হারিয়ে ফেলে মায়ের মন অস্থির। কিনা কী হয়, মূসা (عليه السلام) যে তার সন্তান এ কথা প্রকাশ করেই দিতেন যদি আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তর ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ না করে দিতেন, যাতে তার এ বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্যে পরিণত হবে। فٰرِغًا অর্থন কেউ বলেছেন: দুনিয়ার সব কিছু থেকে তার মাতা চিন্তামুক্ত, কেবল চিন্তা একটাই মূসা। কেউ বলেছেন: সকল দুশ্চিন্তা থেকে তিনি মুক্ত কারণ তিনি জানেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরত দেবেন, সে ডুবে যাবে না। তারপর মূসা (عليه السلام)-এর বোনকে তার মা বললেন সে যেন তাকে দূর থেকে দেখে দেখে রাখে, কোথা থেকে কোথায় যায়।



(وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ)



অর্থাৎ ফির‘আউনের বাড়িতে মূসা (عليه السلام)-কে নিয়ে যাওয়ার পর দুধ পান করাতে চাইলে কেউ দুধ পান করাতে পারে না। উদ্দেশ্য হল যাতে দুধ পান করানোর জন্য মূসার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে হয়। যা আয়াতেই উল্লেখ রয়েছে।



(وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّه)



অর্থাৎ যখন শক্তি, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তায় পূর্ণ যৌবনে উপনিত হল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত দিলেন। অধিকাংশদের ক্ষেত্রে এ পূর্ণতা চল্লিশ বছর বয়সে হয়ে থাকে। তাই দেখা যায় অধিকাংশ নাবীদেরকে এ বয়সে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে যেমন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।



(عَلٰي حِيْنِ غَفْلَةٍ)



‘অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক’ হয় তা দুপুরের সময় যখন মানুষ বিশ্রাম নেয় অথবা অন্য কোন সময় যখন মানুষ বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হতে বিরত থাকে।



(هٰذَا مِنْ شِيْعَتِه۪)



‘একজন তার নিজ দলের’ অর্থাৎ বানী-ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত, (وَهٰذَا مِنْ عَدُوِّه۪) ‘এবং অপর জন তার শত্র“দলের’ অর্থাৎ কিবতী বংশের।



(فَقَضٰي عَلَيْهِ)



অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-এর ঘুষিতে সে মারা যায়। মূসা (عليه السلام) তাকে মেরে ফেলার জন্য ঘুষি দেননি, কিন্তু ঘটনাক্রমে সে আঘাতে মারা যায়। ফলে মূসা (عليه السلام) অনুতপ্ত হন এবং বলেন, নিশ্চয়ই এটা শয়তানের কাজ, তাই তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন।



(فَأَصْبَحَ فِي الْمَدِيْنَةِ خَا۬ئِفًا)



মূসা (عليه السلام) খুব ভীত-শঙ্কিত অবস্থায় তথায় সকাল করলেন আর খুব খেয়াল করছেন যে, ফির‘আউনের পারিষদের কেউ জানতে পারে কি না; কারণ ফির‘আউন ভাল করেই জানে এ কাজ মূসা (عليه السلام) ছাড়া কেউ করার দুঃসাহস রাখে না। এমন সময় মূসা (عليه السلام) শুনতে পেলেন, যে বানী-ইসরাঈলের লোকটাকে গতকাল সাহায্য করেছিল সে আরেকজন কিবতীকে হত্যা করবে বলে চিৎকার করছে। তখন মূসা (عليه السلام) তাকে তিরস্কার করে আয়াতে উল্লিখিত কথা বললেন।



(فَلَمَّآ أَنْ أَرَادَ أَنْ يَّبْطِشَ بِالَّذِيْ هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا)



অর্থাৎ যখন লোকটি এরূপ চিৎকার করল তখন মূসা ইচ্ছা করলেন তাকে ধরে শাস্তি দেবেন। যখন লোকটি বুঝল তাকে মূসা (عليه السلام) মারবে তখন সে বলল: ‘হে মূসা! তুমি যেমন গতকাল এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছ, শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না।’



(هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا)



অর্থাৎ সে বানী ইসরাঈলের লোকটি মূসা (عليه السلام) ও যে কিবতী লোকটিকে মূসা (عليه السلام) হত্যা করেছেন তাদের দুজনেরই শত্র“ হয়ে গেল।



(وَجَا۬ءَ رَجُلٌ) কেউ বলেছেন, লোকটির নাম হিজকিল; কেউ বলেছেন, শামউন।



(وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَا۬ءَ مَدْيَنَ)



শামদেশের একটি শহরের নাম মাদইয়ান। মাদইয়ান ইবনু ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। এ এলাকা ফির‘আউনের ক্ষমতার বাইরে ছিল। মিশর থেকে এর দূরত্ব ছিল আট মনযিল। মূসা (عليه السلام) ফির‘আউন ও তার বাহিনীকে ভয় করে মিশর থেকে মাদইয়ানে চলে আসার ইচ্ছা করলেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়ন মানুষকে যে বিষয়ে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ভয় করা তাওয়াক্কুল ও ঈমানের পরিপন্থী নয়। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করে ফেলবে এ ভয়ে তিনি মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে গেলেন। মূসা (عليه السلام) নিঃসম্বল অবস্থায় মিসর ত্যাগ করলেন। তাঁর সাথে পাথেয় বলতে কিছু ছিল না এবং তিনি রাস্তাও চিননে না। আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করে রওনা দিলেন এবং বললেন ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’



(وَلَمَّا وَرَدَ مَا۬ءَ مَدْيَنَ) مَا۬ءَ مَدْيَنَ



বলতে একটি কুপকে বুঝানো হয়েছে। অত্র এলাকাবাসীরা এখান থেকে তাদের জন্তুদের পানি পান করাতো। অর্থাৎ দু’জন মহিলা বলতে শু‘আইব (عليه السلام)-এর কন্যাদ্বয়।



(قَالَ مَا خَطْبُكُمَا)



অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) তাদের দাঁড়ানো দেখে বললেন; আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? তারা বলল, পুরুষেরা পানি পান করিয়ে নিয়ে গেলে তারপর আমরা পানি পান করাই। পুরুষদের ভিড়ে পান করাতে পারি না। আমাদের বাবা বৃদ্ধ মানুষ তাই তিনি আসতে পারেন না।



এ ঘটনা থেকে কয়েকটি শিক্ষান ১. দুর্বলদের সাহায্য করা নাবী-রাসূলদের স্ন্নুাত। ২. বেগানা নারীর সাথে প্রয়োজনে কথা বলায় দোষ নেই, যদি কোন ফেতনার আশঙ্কা না থাকে। ৩. প্রয়োজনে নারীরাও বাইরে যেতে পারে তবে অবশ্যই শালিনতা বজায় রাখতে হবে।



(ثُمَّ تَوَلّٰيٓ إِلَي الظِّلِّ)



অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) অনাহারে ও ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিলেন এবং এক আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজের দূরবস্থা ও অভাব পেশ করলেন। এটা দু‘আ করার অন্যতম একটি আদব, আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজেকে অতি তুচ্ছ ও নগন্য করে তুলে ধরা।



(تَمْشِيْ عَلَي اسْتِحْيَا۬ءٍ)



অর্থাৎ কন্যাদ্বয় বাড়িতে ফিরে গিয়ে শু‘আইব (عليه السلام)-কে ঘটনা খুলে বললে তিনি মূসা (عليه السلام)-কে আমন্ত্রণ জানিয়ে মেয়েকে পাঠান যেন তাকে ডেকে নিয়ে আসে। মেয়েটি লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে সেখানে পৌঁছল এবং পিতার আমন্ত্রণের কথা জানাল।



(إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِيْنُ)



অর্থাৎ শু‘আইব (عليه السلام)-এর এক কন্যা তার পিতাকে বলল: গৃহের কাজের জন্য আপনার একজন কর্মচারীর প্রয়োজন আছে, তাহলে তাকেই নিযুক্ত করে দিন। কারণ তার মাঝে আমরা দুটি গুণ লক্ষ্য করেছি। এক. সে শক্তিশালী, দুই. বিশ্বস্ত। আমরা পানি পান করাতে গিয়ে তার শক্তি এবং পথিমধ্যে আমাদেরকে পশ্চাতে রেখে পথচলা দ্বারা তার বিশ্বস্ততার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।



(قَالَ إِنِّيْٓ أُرِيْدُ أَنْ أُنْكِحَكَ)



অর্থাৎ শু‘আইব (عليه السلام) নিজেই নিজের পক্ষ থেকে কন্যাকে মূসা (عليه السلام)-এর সাথে বিবাহ দানের প্রস্তাব করলেন। এ থেকে জানা যায়, উপযুক্ত পাত্র পেলে পাত্রীর অভিভাবকের উচিত পাত্রের প্রস্তাবের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই প্রস্তাব দেয়া। যেমন উমার (رضي الله عنه) নিজ কন্যা হাফসা বিধবা হলে আবূ বকর ও উসমান (رضي الله عنهما) এর কাছে প্রস্তাব দেন। (কুরতুবী)



(فَلَمَّا قَضٰي مُوْسَي الْأَجَلَ)



অর্থাৎ যখন মূসা (عليه السلام) নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ করলেন তখন পরিবার নিয়ে মিসরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।



মূসা (عليه السلام) আট বছর কাজ করেছেন নাকি দশ বছর কাজ করেছেন? ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: অধিক মেয়াদকাল পূর্ণ করেছিলেন। নাবীরা যা বলেন তা পূর্ণ করেন।



এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা ত্বা-হা-র ৯ নং আয়াত থেকে ৯৩ নং আয়াতসহ আরো একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১। মিথ্যার পরাজয় অবশ্যই হবে, তা রক্ষা করার যতই কৌশল করা হোক না কেন।

২। আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, তাঁর ইচ্ছার কোন প্রতিরোধক নেই।

৩। মানুষ স্বভাবতই সন্তানের প্রতি দয়াপরায়ণ, বিশেষ করে যাদের সন্তান নেই তাদের আগ্রহ আরো বেশি।

৪। পুরুষ মহিলাদের পেছনে চলবে না, এতে পর্দা লংঘন হয়। বরং মহিলারা পুরুষের পেছনে পেছনে চলবে।

৫। কন্যার অভিভাবক কাউকে যোগ্য পাত্র মনে করলে সরাসরি প্রস্তাব দিতে পারবে।

৬। অহঙ্কার ও সীমালংঘন ধ্বংস ও পতনের মূল কারণ।

৭। আল্লাহ তা‘আলা উপরে আছেন, এ কথা ফির‘আউনও জানতো। যার ফলে হামানকে সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল ওপরে উঠে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখবে বলে।

৮। কথা বলা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ। আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন যেমন মূসা (عليه السلام)-এর সাথে কথা বলেছেন।

৯। প্রত্যেক নাবী-রাসূলগণ সমসমায়িক ক্ষমতাসীনদের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেছেন।

১০। দীনের কাজে অপরের সহযোগিতা নেয়া ও সহযোগিতা দেয়া উভয়টাই কল্যাণকর।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১৪-১৭ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত মূসা (আঃ)-এর বাল্যকালের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলা তার যৌবনের ঘটনা বর্ণনা করছেন যে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলেন অর্থাৎ তাকে নবুওয়াত দিলেন। সৎ লোকেরা এরূপই প্রতিদান পেয়ে থাকেন।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ ঐ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন যা তার মিসর ত্যাগের কারণ হয়েছিল। তিনি মিসর ছেড়ে মাদইয়ানের পথে যাত্রা শুরু করেন।

ঘটনা এই যে, একদা হযরত মূসা (আঃ) নগরে বের হন মাগরিবের পরে অথবা যোহরের সময়, যখন জনগণ পানাহারে অথবা শয়নে লিপ্ত ছিল। তিনি বেশীদূর পথ অতিক্রম করেননি এমন সময় তিনি দেখতে পান যে, দু'টি লোক ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। একজন ছিল বানী ইসরাঈলের লোক এবং অপরজন ছিল কিবৃর্তীদের লোক। ইসরাঈলী তাঁর নিকট কিতীর অত্যাচারের অভিযোগ করে, যার ফলে তাঁর ক্রোধ এসে যায় এবং তিনি তাকে একটি ঘুষি মারেন। এতেই সে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। হযরত মূসা (আঃ) এতে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন এবং বলেনঃ “এটা শয়তানী কাজ এবং শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।” অতঃপর তিনি মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

এরপর হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না। এটা আমি ওয়াদা করলাম।”





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।