সূরা আল-ফুরকান (আয়াত: 40)
হরকত ছাড়া:
ولقد أتوا على القرية التي أمطرت مطر السوء أفلم يكونوا يرونها بل كانوا لا يرجون نشورا ﴿٤٠﴾
হরকত সহ:
وَ لَقَدْ اَتَوْا عَلَی الْقَرْیَۃِ الَّتِیْۤ اُمْطِرَتْ مَطَرَ السَّوْءِ ؕ اَفَلَمْ یَکُوْنُوْا یَرَوْنَهَا ۚ بَلْ کَانُوْا لَا یَرْجُوْنَ نُشُوْرًا ﴿۴۰﴾
উচ্চারণ: ওয়া লাকাদ আতাও ‘আলাল কারয়াতিল্লাতীউমতিরাত মাতারাছছাওই আফালাম ইয়াকূনূইয়ারাওনাহা- বাল কা-নূলা-ইয়ারজূনা নুশূরা-।
আল বায়ান: আর অবশ্যই তারা সে জনপদ দিয়ে অতিক্রম করেছে, যাতে অকল্যাণের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। তবে কি তারা তা দেখেনি? বরং তারা পুনরুত্থানের প্রত্যাশা করত না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪০. আর তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তবে কি তারা এসব দেখতে পায় না?(১) বস্তুত তারা পুনরুত্থানের আশাই করে না।
তাইসীরুল ক্বুরআন: তারা (অর্থাৎ কাফিররা) তো সে জনপদ দিয়েই অতিক্রম করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তারা কি তা দেখে না? আসলে তারা পুনরুত্থানের কথা চিন্তা করে না।
আহসানুল বায়ান: (৪০) তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে, যার উপর অকল্যাণের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, [1] তবে কি ওরা এ প্রত্যক্ষ করে না? বস্তুতঃ ওরা পুনরুত্থানের আশংকা করে না। [2]
মুজিবুর রহমান: তারাতো সেই জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি; তাহলে কি তারা এটা প্রত্যক্ষ করেনা? বস্তুতঃ তারা পুনরুত্থানের আশংকা করেনা।
ফযলুর রহমান: তারা তো (লূতের) সেই জনপদের ওপর দিয়েই এসেছে যার ওপর খারাপ বৃষ্টি পড়েছিল। তারা কি তা দেখেনি? আসলে তারা পুনরুত্থান প্রত্যাশা করে না।
মুহিউদ্দিন খান: তারা তো সেই জনপদের উপর দিয়েই যাতায়াত করে, যার ওপর বর্ষিত হয়েছে মন্দ বৃষ্টি। তবে কি তারা তা প্রত্যক্ষ করে না? বরং তারা পুনরুজ্জীবনের আশঙ্কা করে না।
জহুরুল হক: আর তারা তো সে জনপদের পাশ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপরে আমরা বর্ষণ করেছিলাম এক অশুভ বৃষ্টি। তারা কি তবে এটি দেখতে পায় নি? না, তারা পুনরুত্থানের প্রত্যাশা করে না।
Sahih International: And they have already come upon the town which was showered with a rain of evil. So have they not seen it? But they are not expecting resurrection.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৪০. আর তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তবে কি তারা এসব দেখতে পায় না?(১) বস্তুত তারা পুনরুত্থানের আশাই করে না।
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ লুত জাতির জনপদ। নিকৃষ্টতম বৃষ্টি মানে পাথর বৃষ্টি। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় একথা বলা হয়েছে। হিজায বাসীদের বানিজ্য কাফেলা ফিলিস্তিন ও সিরিয়া যাবার পথে এ এলাকা অতিক্রম করতো। সেখানে তারা কেবল ধ্বংসাবশেষ দেখতো না বরং আশপাশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মুখে লুত জাতির শিক্ষণীয় ধ্বংস কাহিনীও শুনতো। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৪০) তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে, যার উপর অকল্যাণের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, [1] তবে কি ওরা এ প্রত্যক্ষ করে না? বস্তুতঃ ওরা পুনরুত্থানের আশংকা করে না। [2]
তাফসীর:
[1] ‘জনপদ’ বা বসতি বলতে লূত জাতির বসতি সাদূম ও আম্মূরাহকে বোঝানো হয়েছে। এবং ‘অকল্যাণের বৃষ্টি’ বলতে পাথরের বৃষ্টি বুঝানো হয়েছে। ঐ সমস্ত গ্রামকে উল্টে দেওয়া হয়েছিল ও পরে তাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষানো হয়েছিল। যেমন সূরা হুদ ৮২নং আয়াতে বলা হয়েছে। এই সমস্ত জনপদ সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের রাস্তায় অবস্থিত ছিল, যে রাস্তা দিয়ে মক্কার লোকেরা যাতায়াত করত।
[2] সেই কারণে এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া বসতি ও তার ধ্বংসাবশেষ দেখেও তারা উপদেশ গ্রহণ করে না এবং আল্লাহর আয়াত ও রসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হতে বিরত থাকে না।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৩৫-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
আলোচ্য আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মূসা, নূহ, হূদ, সালেহ (عليهم السلام)-এর সম্প্রদায়ের পাপাচারের কথা ও তাদের কী শাস্তি দেয়া হয়েছিল সে কথা বর্ণনা করেছেন। যাদের সম্পর্কে সূরা আ‘রাফ, হূদসহ পূর্বে একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে এবং সূরা নামলের ৪৫-৫৩ নং আয়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের এ সকল শাস্তিমূলক কাহিনী বর্ণনা করার পেছনে উদ্দেশ্য একটাই যাতে এ উম্মাতের লোকেরা ঐ সকল ঘটনা ও শাস্তির কথা শুনে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, তাক্বওয়া অবলম্বন করে চলে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার বিধান অমান্য করলে অবশ্যই শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে।
২. পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৩৫-৪০ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে তাঁর কওমের মুশরিক ও বিরোধী লোকেরা যে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদেরকে তিনি তার যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছেন এবং অতীতের উম্মতদের যারা তাদের রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল তাদেরকে যেমন তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, তেমনিভাবে মক্কার এই মুশরিকদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। হযরত মূসা (আঃ) থেকেই তিনি শুরু করছেন। তাকে তিনি কিতাব দিয়েছিলেন এবং তাঁর ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে তাঁর সাহায্যকারী করেছিলেন। অতঃপর তাঁদের দুজনকে তিনি ফিরাউন ও তার অধীনস্থ লোকদের নিকট পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাদেরকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। তখন তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং কাফিরদের জন্যে রয়েছে অনুরূপ পরিণাম। আল্লাহ তা'আলা অনুরূপ ব্যবহার হযরত নূহ (আঃ)-এর কওমের সাথেও করেছিলেন যখন তারা হযরত নূহ (আঃ)-কে অবিশ্বাস করেছিল। যারা একজন রাসূলকে অবিশ্বাস করে তাদের সমস্ত রাসূলকেই অবিশ্বাস করা হয়। কারণ রাসূলদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে সমস্ত রাসূলকেও প্রেরণ করতেন তবে তারা সকলকেই অবিশ্বাস করতো। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো (শেষ পর্যন্ত)। অথচ আল্লাহ তাআলা তাদের নিকট শুধুমাত্র হযরত নূহ (আঃ)-কেই নবীরূপে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাদের মধ্যে সাড়ে নয়শ বছর অবস্থান করেছিলেন। তাদেরকে তিনি আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছিলেন এবং তাদেরকে তার শাস্তির ভয় দেখিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া তার উপর কেউ ঈমান আনেনি। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকেই নিমজ্জিত করেছিলেন এবং তাদের কাউকেও বাকী রাখেননি। হযরত নূহ (আঃ)-এর নৌকার আরোহীগণ ছাড়া ভূ-পৃষ্ঠে তিনি কোন আদম সন্তানকে জীবিত ছাড়েননি। মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে আমি মানব জাতির জন্যে নিদর্শন স্বরূপ করে রাখলাম। অর্থাৎ তাদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় করলাম যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যখন জলোচ্ছাস হয়েছিল তখন আমি তোমাদেরকে আরোহণ করিয়েছিলাম নৌযানে। আমি এটা করেছিলাম তোমাদের শিক্ষার জন্যে এবং এই জন্যে যে, শ্রুতিধর কর্ণ এটা সংরক্ষণ করে।” (৬৯: ১১-১২) অর্থাৎ তরঙ্গপূর্ণ সমুদ্রে নৌকায় আরোহণ করিয়ে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করলাম যাতে তোমরা আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর যে, তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করলেন এবং তোমাদের ভাবী বংশধরদের এটা শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে গেল যে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁর হুকুমকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে তারা এভাবে মুক্তি পাবে।
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি) আদ ও সামূদের ঘটনা অন্য সূরায়, যেমন সূরায়ে আরাফে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এখানে তাদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এখানে রাস্সবাসী সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তারা সামূদ সম্প্রদায়ের গ্রামসমূহের একটি গ্রামের অধিবাসী। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, আসহাবুস রাস্স হলো ফালজের অধিবাসী এবং তারা হলো আসহাবে ইয়াস।
কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ফালজ হচ্ছে ইয়ামামার গ্রামসমূহের একটি গ্রাম। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাস্স হচ্ছে আযারবাইজানের একটি কূপ। সাওরী (রঃ) আবূ বকর (রঃ) হতে এবং তিনি ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাস হলো একটি কূপ যাতে ওর মালিকরা তাদের নবী (আঃ)-কে দাফন করেছিল। ইবনে ইসহাক (রঃ) মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে যে লোকটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে সে হলো কালো দাস। ঘটনা এই যে, আল্লাহ তা'আলা এক গ্রামবাসীর নিকট একজন নবী প্রেরণ করেন। ঐ কালো দাসটি ছাড়া ঐ গ্রামের আর কেউই তার উপর ঈমান আনেনি। গ্রামবাসী নবীর সাথে শত্রুতা করতে শুরু করলো। তারা তার জন্যে একটা কূপ খনন করলো। অতঃপর তারা তাঁকে ঐ কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে কঠিন ভারী পাথর দ্বারা ওর মুখ বন্ধ করে দিলো। ঐ দাসটি বনে গিয়ে কাঠ কাটততা এবং কাঠ পিঠে বহন করে এনে বাজারে বিক্রী করতো। ঐ মূল্য দ্বারা সে খাদ্য ও পানীয় ক্রয় করতো। তারপর ঐগুলো সে ঐ কূপটির নিকট নিয়ে আসতো। অতঃপর সে কূপের মুখ হতে ঐ শক্ত পাথরটি উঠিয়ে নিতে এবং ওটা ওঠাতে আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করতেন। তারপর তার খাদ্য ও পানীয় সে ঐ কূপের মধ্যে নামিয়ে দিতে এবং পরে ওর মুখ পূর্বের ন্যায় বন্ধ করে দিতো। আল্লাহ যতদিন চাইলেন ঐরূপ হতে থাকলো।
এরপর একদিন সে অভ্যাসমত কাঠ কাটতে গেল এবং কাঠ কেটে বোঝা বাঁধলো। অতঃপর বোঝাটি বহন করার ইচ্ছা করলো। কিন্তু তন্দ্রা এসে যাওয়ায় সে শুয়ে পড়লো এবং অবশেষে গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো। আল্লাহ তাআলা তাকে দীর্ঘ সাত বছর রাখলেন। অতঃপর সে জেগে উঠলো এবং গা মোচড় দিয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করলো। আবার আল্লাহ তাকে সাত বছর ঘুমিয়ে রাখলেন। অতঃপর সে জেগে উঠলো এবং কাঠের বোঝাটি বহন করে নিয়ে চললো। সে ধারণা করলো যে, সে দিনের এক ঘন্টাকাল ঘুমিয়েছে। সে গ্রামে আসলো এবং তার কাঠের বোঝাটি বিক্রী করলো। তা দিয়ে সে খাদ্য ও পানীয় কিনলো যেমন সে ইতিপূর্বে করতো। তারপর যে জায়গায় কূপটি ছিল তা সে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু জায়গাটি সে পেলো না। তার ঘুমের অবস্থায় তাদের কওমের শুভজ্ঞান ফিরে এসেছিল। তাই কূপের মধ্য হতে তারা তাদের নবীকে বের করেছিল এবং তার উপর ঈমান এনে তার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। তাদের নবী তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “ঐ কালো দাসটির কি হয়েছে বা সে কোথায় গেছে তারা উত্তরে বলেছিলঃ “আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানি না বা বলতে পারবো না।” অবশেষে আল্লাহ তা'আলা ঐ নবীর রূহ কবয করে নেন। এরপর ঐ কালো দাসটি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লহ (সঃ) বলেনঃ “নিশ্চয়ই ঐ কালো দাসটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটা এভাবে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে বড়ই অস্বাভাবিকতা ও অস্বীকৃতি রয়েছে এবং সম্ভবতঃ এ ব্যাপারে একটির মধ্যে অপরটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)
ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ এ লোকগুলোকে ঐ আসহাবুর রাস্স-এর উপর স্থাপন করা বৈধ নয় যাদের বর্ণনা কুরআন কারীমে দেয়া হয়েছে। কেননা, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা খবর দিয়েছেন যে, তাদেরকে তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন। বরং এরা হলো ওরাই যারা তাদের পূর্বপুরুষদের ধ্বংসের পর তাদের নবীর উপর ঈমান এনেছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ মতটি পছন্দনীয় মনে করেছেন যে, আসহাবুর রাস দ্বারা ঐ আসহাবুল উখদূদ (কুণ্ডের অধিপতিদের) -কে বুঝানো হয়েছে যাদের ঘটনা কুরআন কারীমের সূরায়ে বুরূজে বর্ণিত হয়েছে। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আমি ধ্বংস করেছিলাম) তাদের অন্তর্বর্তীকালের বহু সম্প্রদায়কেও। -এর অর্থ হলো সম্প্রদায় বা জাতি। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ তাদের পরে আমি সৃষ্টি করেছি অন্যান্য জাতি বা সম্প্রদায়সমূহকে।” (২৩:৪২) কারো কারো মতে (আরবি)-এর সীমা হলো একশ বিশ বছর। কেউ কেউ একশ বছরও বলেছেন। কারো মতে আশি বছর। আবার কারো কারো উক্তি চল্লিশ বছরও রয়েছে। কারো কারো এগুলো ছাড়া অন্য উক্তিও আছে। প্রকাশমান উক্তি এই যে, (আরবি) বলা হয় পরস্পর একই যুগে বসবাসকারী জাতি বা সম্প্রদায়সমূহকে। অতঃপর যখন তারা বিদায় গ্রহণ করে এবং ছেড়ে যায় তাদের পিছনে তাদের বংশধরকে, তখন সেটা হয় অপর যুগ। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছেঃ “আমার যুগ সর্বোত্তম যুগ। তারপর উত্তম হলো ওর নিকটবর্তী যুগ এবং তারপর ওর নিকটবর্তী যুগ।”
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা তো সেই জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি। অর্থাৎ হযরত লূত (আঃ)-এর কওমের গ্রাম, যেটাকে সুদূম বলা হয়, যাকে আল্লাহ উল্টিয়ে দেয়া এবং প্রস্তর-কংকর বৃষ্টির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, সুতরাং যাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের উপর বর্ষিত বৃষ্টি ছিল অকল্যাণকর।” (২৭: ৫৮) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তোমরা তো তাদের ধ্বংসাবশেষগুলো অতিক্রম করে থাকো সকালে ও সন্ধ্যায়, তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না?” (৩৭:১৩৭-১৩৮) এজন্যেই আল্লাহ তাআলা এখানে বলেনঃ তবে কি তারা এটা প্রত্যক্ষ করে না? অর্থাৎ প্রত্যক্ষ করলে ঐ লোকদের তাদের রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে তাদের উপর যে শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল তার দ্বারা এই লোকগুলো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতো।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ বস্তুতঃ তারা পুনরুত্থানের আশংকা করে না। অর্থাৎ এই কাফিরদের যারা ঐ জনপদ দিয়ে গমনাগমন করে তারা ঐ লোকদের ধ্বংসাবশেষ দ্বারা শিক্ষা গ্রহণ করে না। কেননা, তারা কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়াকে বিশ্বাসই করে না।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।