সূরা আল-হজ্জ (আয়াত: 32)
হরকত ছাড়া:
ذلك ومن يعظم شعائر الله فإنها من تقوى القلوب ﴿٣٢﴾
হরকত সহ:
ذٰلِکَ ٭ وَ مَنْ یُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَی الْقُلُوْبِ ﴿۳۲﴾
উচ্চারণ: যা-লিকা ওয়া মাইঁ ইউ‘আজজিম শা‘আইরাল্লা-হি ফাইন্নাহা-মিন তাকওয়াল কুলূব।
আল বায়ান: এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩২. এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীকে(১) সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাকওয়াপ্রসূত।(২)
তাইসীরুল ক্বুরআন: এই (তার অবস্থা), আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।
আহসানুল বায়ান: (৩২) এটাই আল্লাহর বিধান। আর কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ। [1]
মুজিবুর রহমান: এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেহ (আল্লাহর) নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ।
ফযলুর রহমান: এটাই (করণীয়)। আর যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করবে, নিঃসন্দেহে সেটা হবে (তাদের) অন্তরের তাকওয়ার পরিচায়ক।
মুহিউদ্দিন খান: এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।
জহুরুল হক: এইটিই। আর যে কেউ আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে সেটি তাহলে নিশ্চয়ই হৃদয়ের ধর্মনিষ্ঠা থেকে উদ্ভূত।
Sahih International: That [is so]. And whoever honors the symbols of Allah - indeed, it is from the piety of hearts.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৩২. এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহ্–র নিদর্শনাবলীকে(১) সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাকওয়াপ্রসূত।(২)
তাফসীর:
(১) شَعَائِر শব্দটি شعيرة এর বহুবচন। এর অর্থ আলামত, চিহ্ন। আল্লাহর শা’য়ীরা বা চিহ্ন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে। [কুরতুবী] সাধারণের পরিভাষায় যে যে বিধানকে মুসলিম হওয়ার আলামত মনে করা হয়, সেগুলোকে ‘শা’আয়েরে ইসলাম’ বলা হয়। [দেখুন, সা’দী] এগুলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি যেমন, হজের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। [কুরতুবী; সা'দী] হাদঈর জন্য হাজীদের সংগে নেয়া উট ইত্যাদি। [ইবন কাসীর]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন বা চিহ্ন সম্মান করার দ্বারা হাদঈর জন্তুটি মোটাতাজা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদাতে কালো রঙ্গ মিশ্রিত শিং বিশিষ্ট ছাগল দিয়ে কুরবানী করেছেন। [আবু দাউদ: ২৭৯৪] তাছাড়া তিনি চোখ, কান, ভালভাবে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। [ইবন মাজাহঃ ৩১৪৩] সুতরাং যারা এ নির্দেশ গুলো উন্নত মানের জন্তু হাদঈ ও কুরবানীতে প্ৰদান করবে সেটা তাদের মধ্যে তাকওয়ার পরিচায়ক। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ আল্লাহর আলামতসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আন্তরিক আল্লাহভীতির লক্ষণ যার অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকে, সে-ই এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারে। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয় অভ্যন্তরের তাকওয়ার ফল এবং মানুষের মনে যে কিছু না কিছু আল্লাহর ভয় আছে তা এরই চিহ্ন। [সা'দী] তাইতো কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অমর্যাদা করলে এটা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তার মনে আল্লাহর ভয় নেই। এতে বোঝা গেল যে, মানুষের অন্তরের সাথেই তাকওয়ার সম্পর্ক। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকলে তার প্রতিক্রিয়া সব কাজকর্মে পরিলক্ষিত হয়। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তাকওয়া এখানে, আর তিনি বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন” [মুসলিম: ২৫৬৪]
আপাতদৃষ্টিতে এটা একটা সাধারণ উপদেশ। আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সকল মর্যাদাশালী জিনিসের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য একথা বলা হয়েছে। কিন্তু মসজিদে হারাম, হজ্জ, উমরাহ ও মক্কার হারামের যে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এ বক্তব্যে সেগুলোই প্রধানতম উদ্দেশ্য। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৩২) এটাই আল্লাহর বিধান। আর কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ। [1]
তাফসীর:
[1] شَعَائر শব্দটি شَعيرة এর বহুবচন। যার অর্থ বিশেষ চিহ্ন ও নিদর্শন। যেমন যুদ্ধের জন্য একটি প্রতীক চিহ্ন (বিশেষ শব্দ নিদর্শনরূপে) বেছে নেওয়া হয়। যার দ্বারা একে অপরকে চিনতে পারে। এই অর্থে আল্লাহর নিদর্শন বা প্রতীক হল তাই, যা দ্বীনের বিশেষ চিহ্ন অর্থাৎ ইসলামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধান যার দ্বারা একজন মুসলিমের সবাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিত্ব বিশেষরূপে প্রকাশ পায় এবং অন্য ধর্মাবলম্বী হতে তাকে সহজে পৃথকভাবে চেনা যায়। সাফা-মারওয়া পাহাড়কেও এই কারণেই আল্লাহর নিদর্শন বলা হয়েছে, যেহেতু মুসলিমরা হজ্জ বা উমরাতে এই দুয়ের মাঝে সাঈ করে থাকেন। এখানে হজ্জে অন্যান্য কর্মসমূহের মধ্যে কুরবানীর পশুকে আল্লাহর নিদর্শন বা প্রতীক বলা হয়েছে। আর কুরবানীর পশুর তা’যীম বা সম্মান বলতে তা খুব ভালো ও মোটাতাজা দেখে পছন্দ করা, (তাকে তোয়াজ করে খাওয়ানো, তার যাতে কোন ক্ষতি না হয়, তার বিশেষ খেয়াল রাখা ইত্যাদি)। ওর সম্মানকে অন্তরের ‘তাকওয়া’ (পরহেযগারী) বলা হয়েছে, অর্থাৎ তা অন্তরের এমন এক কাজ যার বুনিয়াদ হল তাকওয়া।
(প্রকাশ থাকে যে, তার পা ধুয়ে দেওয়া বা শিং ও ক্ষুরে তেল মাখিয়ে দেওয়া অতিরঞ্জনের পর্যায়ভুক্ত। -সম্পাদক)
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ২৬-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيْمَ):
আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে যারা কাবা ঘরে মূর্তি পূজা করত তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমরা কাবাগৃহে মূর্তিপূজা করছ, যারা ঐ গৃহে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করছ, তোমরা জেনে রাখ! আমি ইবরাহীম (عليه السلام) -কে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম কাবাগৃহের স্থান আর সেখানে তার বংশধরের জন্য বসতি স্থাপন করলাম। তখন তাকে এ নির্দেশ দিলাম, তুমি এ ঘর তাক্বওয়া ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের ভিত্তির ওপর নির্মাণ কর। ফলে ইবরাহীম (عليه السلام) ও তাঁর সন্তান নাবী ইসমাঈল তা নির্মাণ করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, নূহ (عليه السلام)-এর প্লাবনে কাবা ঘরের ভিত্তি ভেঙ্গে গিয়েছিল। আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তিনি যেন এ গৃহকে তাওয়াফকারী, সালাত আদায়কারী, রুকু ও সাজদাকারীদের জন্য শিরক, অপবিত্রতা, বিদ‘আত থেকে মুক্ত রাখেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَعَهِدْنَآ إِلٰٓي إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّا۬ئِفِيْنَ وَالْعٰكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ)
“আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিক্বাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখ।” (সূরা বাক্বারাহ ২:১২৫)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তাকে আরো নির্দেশ দিলাম যে, তুমি হজ্জের ঘোষণা মানুষের মধ্যে দিয়ে দাও যে, তারা যেন দূর-দূরান্ত থেকে এসে এ ঘরের তাওয়াফ করে। আর তারা তথায় আসবে পায়ে হেঁটে অথবা সাওয়ারীর ওপর আরোহণ করে। এর সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাও বলেছেন যে, এ স্থানে উপস্থিত হওয়াতে তাদের কোন ক্ষতি নেই বরং এতে রয়েছে তাদের জন্য কল্যাণ। এ কল্যাণ দীনি হতে পারে। যেমন সেখানে গিয়ে মানুষ সালাত, তাওয়াফ ও হজ্জ-উমরার কার্যাবলী দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করবে। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে:
ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন কোন দিনের আমল নেই যা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং অধিক প্রিয় (হাজ্জের) দশ দিনের আমলের চেয়ে। সুতরাং তোমরা বেশি বেশি করে
اَللّٰهُ أَكْبَرُ ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ এবং اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ
পাঠ কর। (মুসানাদ আহমাদ হা: ৫৪৪৬)
আবার এ কল্যাণ দুনিয়াবীও হতে পারে। যেমন হাজ্জের মৌসুমে হজ্জ করতে গিয়ে তার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জন করা। কেননা হাজ্জের মৌসুমে ব্যবসা করা বৈধ।
(أَيَّامٍ مَّعْلُوْمٰتٍ)
দ্বারা মূলত যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ এবং পরবর্তী তিন দিনকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো হল: কুরবানীর দিন এবং পরবর্তী তিন দিন। (তাফসীর মুয়াস্সার)
(بَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ)
দ্বারা মূলত উট, গরু, ছাগল এবং ভেড়া বা দুম্বাকে বুঝানো হয়েছে। এদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার নাম স্মরণ করা বলতে বুঝানো হয়েছে যে, তাদের জবাইকালে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে জবাই করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলার নাম ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করলে তা হালাল হবে না।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ)
“অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও বিনয়ের সাথে ভিক্ষাকারীকে।” এখান থেকে অনেকে দলীল গ্রহণ করেন যে, কুরবানীর গোশত তিনভাগ করতে হবে। একভাগ নিজের জন্য, দ্বিতীয়ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং তৃতীয়ভাগ ফকির-মিসকীনদের জন্য। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এরূপ কোন নির্দেশই জারী করে দেননি। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি তোমাদের তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমাদেরকে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা খাও, প্রয়োজন মত জমা রাখ। অন্য বর্ণনায় এসেছেন খাও, সদাকা কর এবং জমা রাখ। অন্য আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছেন খাও, খাওয়াও ও সদকা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫৬৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭১)
সঠিক মত এই যে, কোন আয়াত বা সহীহ হাদীসে এরূপ ভাগাভাগি করতেই হবে এমনটি প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই কেউ যদি ভাগ নাও করে তাতে সে গুনাহগার হবে না। মূলত দেখা হবে তার অন্তরে কী ছিল। তাই আমাদেরকে প্রথমত আমাদের নিয়ত ঠিক করা একান্ত কর্তব্য, তা না হলে কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা হাজীদেরকে অনুমতি দিলেন তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে। অর্থাৎ যিলহজ্জের ১০ তারিখে জামরাতুল কুবরায় পাথর মারার পর হাজীরা প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যায়। তার পর ইহরাম খুলে ফেলে। এক কথায় স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ঐ সব কাজ যা ইহরাম অবস্থায় হারাম ছিল তা হালাল হয়ে যায়। আর অপরচ্ছিন্নতা বলতে চুল, নখ কেটে নিয়ে তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করা, সেলাই করা কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি। আর যদি কেউ কোন মানত করে থাকে তাহলে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর তারা যেন সর্বশেষ তাওয়াফ তাওয়াফে ইফাযাহ করে যাকে তাওয়াফে যিয়ারাহও বলা হয়। এটি হাজ্জের একটি রুকন যা আরাফায় অবস্থান ও জামরাতুল কুবরায় পাথর মারার পর করা হয়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এগুলোই হল, (যা আলোচনা করা হয়েছে) আল্লাহ তা‘আলার বিধান। যে এগুলো পালন করবে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট উত্তম ব্যক্তি বলে গণ্য হবে। হাজ্জের এ সকল বিধি-বিধান সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আল ইমরানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তারা যেন চতুষ্পদ জন্তু যা হালাল করা হয়েছে তা ভক্ষণ করে আর যা হারাম তা থেকে বিরত থাকে। এ সম্পর্কে সূরা মায়িদায়ও আলোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশও দিয়েছেন, তারা যেন অপবিত্র জিনিস যেমন মূর্তিপূজো থেকে এবং মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّـيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللّٰهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِه۪ سُلْطٰنًا وَّأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَي اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)
“বল: নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ ও অন্যায় বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করা যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি, এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৩)
হাদীসে বলা হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন: আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? সাহাবারা উত্তরে বললেন: হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করা, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। ঐ সময় তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এ কথা বলার সময় তিনি সোজা হয়ে বসলেন: অতঃপর বললেন: জেনে রেখে যে, সেটি হল মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। তিনি এ কথা বারবার বলতে থাকেন শেষ পর্যন্ত সাহাবীরা বলেন, আমরা বলতে লাগলাম, যদি তিনি চুপ থাকতেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম হা: ৮৭)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঙ্গে শির্ককারীর একটি উপমা পেশ করেছেন, তার দৃষ্টান্ত যে আমার সঙ্গে শরীক স্থাপন করে এমন যে, সে যেন আকাশ হতে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল এক দূরবর্তী স্থানে।) উক্ত দুই অবস্থাতেই যেমন মৃত্যু বা ধ্বংস অবধারিত, ঠিক অনুরূপ যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে সে সুস্থ প্রকৃতি ও আন্তরিক পবিত্রতার দিক দিয়ে পবিত্রতা ও নির্মলতার এক উচ্চাসনে আসীন হয়। কিন্তু যখনই সে শির্কের পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখনই সে নিজেকে উঁচু হতে একদম নীচে, পবিত্রতা হতে অপবিত্রতায় এবং নির্মলতা হতে কর্দমাতে নিক্ষেপ করে। যার ফলে সে ধ্বংস হয়।
شعائر এটি شعيرة এর বহুবচন। অর্থ বিশেষ চিহ্ন বা নিদর্শন। অর্থাৎ ইসলামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধান যার দ্বারা প্রকাশ পায় এবং অন্য ধর্মাবলম্বী হতে তাকে সহজে পৃথকভাবে চেনা যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা চতুষ্পদ জন্তুর উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন যা আমরা ইতোপর্বে সূরা নাহলে আলোচনা করেছি।
المخبتين অর্থ হল متواضنعين لله অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য বিনয়ী হয় তাদের مخبتين বলা হয়।
بدن শব্দটি بدنة এর বহুবচন, এর অর্থ হল: মোটা-তাজা দেহবিশিষ্ট পশুটা। এ উটগুলো হল আল্লাহ তা‘আলার দ্বীনের যে সকল নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নিদর্শন।
صواف শব্দটি مصفوفة অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায়। কেননা উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় নহর করা হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
২. হাজ্জের কিছু বিধি-বিধান জানতে পারলাম।
৩. মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাকতে হবে।
৪. মূর্তি বা এ জাতীয় কোন কিছুরই পূজা করা যাবে না।
৫. প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই কুরবানীর বিধান ছিল।
৬. মু’মিনদের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে প্রকম্পিত হয়।
৭. কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা জরুরী নয়, তবে ভাগ করা উত্তম।
৮. যারা প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম।
৯. শির্রকারীর অবস্থা কেমন হবে তা জানা গেল।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৩২-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মর্যাদার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে, কুরবানীর জন্তুও যার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার আহকামের উপর আমল করার অর্থই হলো ওগুলিকে শ্রদ্ধা করা। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নিদর্শনকারীকে শ্রদ্ধা করার অর্থ হলো কুরবানীর জন্তুগুলিকে মোটা তাজা ও সুন্দর করা। হযরত সাহল (রাঃ) বলেনঃ “মদীনায় আমরা কুরবানীর জন্তু গুলিকে লালন পালন করে মোটা তাজা করতাম। সমস্ত মুসলমানের মধ্যে এই প্রচলণই ছিল।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দু'টো কালো বর্ণের জন্তুর রক্ত অপেক্ষা একটি সাদা বর্ণের জন্তুর রক্ত আল্লাহ তাআলার নিকট বেশী প্রিয় ও পছন্দনীয়।` (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম ইলু মাজাহ্ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাদা কালো মিশ্রিত রঙ এর বড় বড় শিং বিশিষ্ট দুটো ভেড়া কুরবানী করেন।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাদাকালো মিশ্রিত রঙ এর বড় শিং বিশিষ্ট একটি ভেড়া কুরবানী করেন যার মুখের উপর চোখের পার্শ্বে এবং পাগুলির উপর কালো দাগ ছিল। (এ হাদীসটি সুনান গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে সঠিক বলেছেন)
হযরত আবু রাফে (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দু'টি খুব মোটা তাজা, চিক্কন, সাদা-কালো রঙ মিশ্রিত অণ্ডকোষ কর্তিত ভেড়া কুরবানী করেন।” (এ হাদীসটি সুনানে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত আছে)
হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কুরবানীর জন্তু ক্রয় করার সময় চোখ ও কান ভাল করে দেখে নিই এবং সামনের দিক থেকে কান বিশিষ্ট, লম্বাভাবে ফাটা কান বিশিষ্ট ও ছিদ্র যুক্ত কান বিশিষ্ট জন্তু যেন কুরবানী না করি।` (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আহলুস সুনান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ)
এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন) অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) শিং ভাঙ্গা ও কান কাটা জন্তু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। এর ব্যাখ্যায় হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়া (রঃ) বলেন যে, যদি অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশী কান বা শিং না থাকে (তবে ঐ জন্তু কুরবানী করা চলবে না, এর কম হলে চলবে)।
কোন কোন ভাষাবিদ বলেন যে, কোন জানোয়ারের শিং যদি উপর থেকে ভাঙ্গা থাকে তবে আরবীতে ওটাকে (আরবী) বলে। আর নীচে থেকে ভাঙ্গা থাকলে ওটাকে (আরবী) বলে হাদীসে (আরবী) শব্দ রয়েছে। আর কানের কিছু অংশ কাটা থাকলে ওটাকেও (আরবী) বলে। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন যে, এরূপ জাননায়ারের কুরবানী জায়েয হবে বটে, কিন্তু মাকরূহ হবে। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, এটার কুরবানী জায়েযই নয়। বাহ্যতঃ এই উক্তিটিই হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইমাম মালিক (রঃ) বলেন যে, শিং হতে যদি রক্ত প্রবাহিত হয় তবে কুরবানী জায়েয হবে না, অন্যথায় জায়েয হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
রাসূলুল্লাহর (সঃ) হাদীস রয়েছে যে, চার প্রকারের দোষযুক্ত জন্তু কুরবানীর জন্যে জায়েয নয়। ঐ কানা জন্তু যার চোখের টেরা ভাব প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। ঐ খোড়া পশু যার খোড়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ঐ দুর্বল ও ক্ষীণ পশু যার মজ্জা নষ্ট হয়ে গেছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আহলুস সুনান হযরত বারা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন) এ গুলি এমনই দোষ যার ফলে পশুর গোশত কমে যায়। বকরী তো সাধারণতঃ চরেই খায়। কিন্তু অতি দুর্বলতার কারণে সে ঘাস পাতা পায় না। এ কারণেই এই হাদীসের মর্মানুযায়ী ইমাম শাফেয়ী (রঃ) প্রভৃতি মনীষীদের নিকট এই ধরনের পর কুরবানী জায়েয নয়। হাঁ, তবে যেই রুগ্ন পশুর রোগ ততো মারাত্মক নয়, বরং খুবই কম, এরূপ পশুর ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ীর (রঃ) দুটোই উক্তি রয়েছে।
হযরত উবা ইবনু আবদিস সালামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিষেধ করেছেন সম্পূর্ণ শিং কাটা পশু হতে, শিং ভাঙ্গা পশু হতে, কানা জন্তু হতে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল প্রাপ্ত হতে যা দুর্বলতার কারণে বা অতি বার্ধক্যের কারণে সদা পশু পালের পিছনে পড়ে থাকে এবং খোড়া জন্তু। হতে।
সুতরাং এই সমুদয় দোষযুক্ত পশুর কুরবানী জায়েয নয়। তবে যদি কুরবানীর জন্যে নিখুঁত জন্তু নির্ধারণ করে দেয়ার পর ঘটনাক্রমে ওর মধ্যে কোন দোষ এসে পড়ে, যেমন খোড়া ইত্যাদি হয়ে যায় তা হলে ইমাম শাফেয়ীর (রঃ) মতে এর কুরবানী নিঃসন্দেহে জায়েয। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেন। ইমাম শাফিয়ীর (রঃ) দলীল হলো নিম্নের হাদীসটিঃ
হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ “আমি কুরবানীর জন্যে একটি ভেড়া ক্রয় করি। ওর উপর একটি নেকড়ে বাঘ আক্রমণ করে এবং ওর একটি রান ভেঙ্গে দেয়। আমি ঘটনাটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট বর্ণনা করি। তিনি বলেনঃ “তুমি ওটাকেই কুরবানী করতে পার।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সুতরাং ক্রয় করার সময় জন্তু মোটা তাজা ও নিখুঁত হতে হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেনঃ “তোমরা (কুরবানীর পশু কিনবার সময়) ওর চোখ, কান দেখে নাও।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার ফারূক (রাঃ) একটি অত্যন্ত সুন্দর উষ্ট্রকে কুরবানীর জন্যে নির্দিষ্ট করেন। জনগণ ওর মূল্যায়ণ করে তিন শ' স্বর্ণমুদ্রা। তখন তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি কুরবানীর নামে একটি উট রেখেছি। লোকেরা ওর মূল্যায়ণ করছে। তিনশ’ স্বর্ণ মুদ্রা। আমি কি ওটা বিক্রী করে ওর মূল্যের বিনিময়ে কয়েকটি কুরবানীর জন্তু ক্রয় করতে পারি ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, বরং তুমি ওটাই কুরবানী কর।” (এটাও মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কুরবানীর উট এর অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মদ ইবনু আবি মূসা (রঃ) বলেন যে, আরাফার মাঠে অবস্থান করা, মুযদালাফায় গমন করা, জুমরাকে কংকর মারা, মাথা মুণ্ডন করা এবং কুরবানীর উট, এ সব গুলি (আরবী) এর মধ্যে গণ্য। হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বলেন যে, এসব অপেক্ষা অগ্রগণ্য হলো মক্কা শরীফ।
মহান আল্লাহ বলেনঃ এ সমস্ত আনআমে তোমাদের জন্যে নানাবিধ উপকার রয়েছে। যেমন এগুলির পশমে তোমাদের জন্যে উপকরি রয়েছে। তোমরা এগুলির উপর সওয়ার হয়ে থাকে। এগুলির চামড়া তোমরা কাজে লাগিয়ে থাকে। এটা একটা নির্দিষ্ট কালের জন্যে। অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত এই জন্তু গুলিকে তোমরা আল্লাহর নামে না রেখে দাও ততদিন পর্যন্ত তোমরা ওগুলির দুধ পান কর এবং বাচ্চা লাভ কর। যখন কুরবানীর জন্যে এগুলিকে নির্দিষ্ট করে দেবে তখন এগুলি আল্লাহর জিনিস হয়ে যাবে। অন্যান্য বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ বলেন যে, প্রয়োজনবোধে এই সময়েও এগুলির উপর আরোহণ করা চলবে। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে তার কুরবানীর জন্তু হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে তাকে বলেনঃ “এর উপর সওয়ার হয়ে যাও।` লোকটি তখন বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি একে কুরবানী করার নিয়ত করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার বলেনঃ “হায় আফসোস! তুমি এর উপর সওয়ার হচ্ছে না কেন? (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রয়োজন হলে তোমরা উত্তম পন্থায় (কুরবানীর জন্তুর উপর) সওয়ার হয়ে যাও।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
একটি লোকের কুরবানীর উস্ত্রী বাচ্চা প্রসব করে। তখন হযরত আলী • (রাঃ) লোকটিকে বলেনঃ “বাচ্চাটিকে পেট ভরে দুধপান করাও। যদি এ বাচ্চা বেঁচে থাকে তবে তো ভালই। তুমি একে নিজের কাজে লাগাও। কুরবানীর দিন আসলে এ উষ্ট্রীকে ও এর বাচ্চাকে আল্লাহর নামে যবাহ করে দেবে।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর এগুলির কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট। যেমন এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) এবং অন্য এক স্থানে রয়েছে (আরবী) এর অর্থ ইতিপূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, বায়তুল্লাহর তাওয়াফকারী ইহরাম হতে হালাল হয়ে যায়। দলীল হিসেবে তিনি। এটাই পাঠ করেন।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।