সূরা আল-হজ্জ (আয়াত: 14)
হরকত ছাড়া:
إن الله يدخل الذين آمنوا وعملوا الصالحات جنات تجري من تحتها الأنهار إن الله يفعل ما يريد ﴿١٤﴾
হরকত সহ:
اِنَّ اللّٰهَ یُدْخِلُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَفْعَلُ مَا یُرِیْدُ ﴿۱۴﴾
উচ্চারণ: ইন্নাল্লা-হা ইউদখিলুল্লাযীনা আ-মানূওয়া আমিলুসসা-লিহা-তি জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আহা-রু ইন্নাল্লা-হা ইয়াফ‘আলুমা-ইউরীদ।
আল বায়ান: নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৪. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত(১); নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছে তা-ই করেন।(২)
তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, আল্লাহ যা করতে চান, তাই করেন।
আহসানুল বায়ান: (১৪) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।
মুজিবুর রহমান: যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।
ফযলুর রহমান: যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে স্থান দেবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তাই করেন।
মুহিউদ্দিন খান: যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
জহুরুল হক: যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করছে আল্লাহ্ তাদের অবশ্যই প্রবেশ করাবেন স্বর্গোদ্যানে যার নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন।
Sahih International: Indeed, Allah will admit those who believe and do righteous deeds to gardens beneath which rivers flow. Indeed, Allah does what He intends.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৪. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ্– তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত(১); নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছে তা-ই করেন।(২)
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠাণ্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরষ্কার ঝরে পড়ুক সর্বাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে। তারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, খারাপ কাজ থেকে দূরে থেকেছে। সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের সেই উঁচু বাগ-বাগিচার ওয়ারিশ বানিয়েছেন। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান ছিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করারও কেউ নেই। যেহেতু তিনি কাউকে হিদায়াত করেছেন আর কাউকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাই আয়াতের শেষে বলেছেন, “তিনি যা ইচ্ছে তা করেন।” [ইবন কাসীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৪) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১১-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যাদের ঈমান খুব দুর্বল, অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি, ঈমানের সজীবতা ও স্বাদ পায়নি বরং হয়তো কোন ভয়ের কারণে ইসলাম গ্রহণ করেছে বা কোন কিছু পাওয়ার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছে। এসকল ব্যক্তিরা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে عَلٰي حَرْفٍ বা এক কিনারে দাঁড়িয়ে। حَرْفٍ অর্থ কিনারা, প্রান্ত। অর্থাৎ কিনারায় দাঁড়িয়ে মানুষ যেমন স্থিতিশীল ও অটল থাকতে পারে না, যে কোন মুহূর্তে গর্তে পড়ে যেতে পারে, ঠিক এসকল ব্যক্তিরা ইসলাম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহে পতিত। নিভু নিভু ঈমান নিয়ে আমল করতে থাকে, যখন কোন ভাল কিছু পায় তখন খুব খুশি থাকে, মনে মনে বলে ঈমান এনে লাভই হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি কোন বিপদাপদ আক্রান্ত করে, জিহাদে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বা কোন অভাব-অনটনে পড়ে, তখন মনে মনে বলে, ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আমাদের এ বেহাল দশা। তখন তারা আবার কুফরীতে ফিরে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এদের দুনিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত, আখেরাতও ক্ষতিগ্রস্ত।
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি মদীনায় আগমন করত, অতঃপর তার যদি স্ত্রী, পুত্র-সন্তান প্রসব করত এবং তার ঘোড়া বাচ্চা দিত তখন বলত, এ দীন ভাল। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান না জন্মাতো এবং তার ঘোড়া বাচ্চা না দিত তখন বলত, এটা মন্দ দীন। গৃহপালিত পশুর মধ্যে যদি বরকত হত তখন সে বলত, ইসলাম ভাল ধর্ম। আর যদি এমনটি না হত তাহলে সে বলত যে, ইসলাম হল মন্দ ধর্ম। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪২)
সুতরাং ইসলামের কোন বিধানকে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই। যারা ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে সন্দেহ করবে সে মুসলিম থাকবে না, এমনকি ইসলামের সকল ইবাদত করার পরেও যদি কোন ইবাদত বা বিধানকে ঘৃণা করে তাহলেও সে মুসলিম থাকবে না। তাই আমাদের উচিত ইসলামের পথে অটল থাকা, কোন বিপদাপদ আসলে এ সন্দেহ না করা যে ইসলামের কারণে এ বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। বরং তা আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, এ বিপদ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা এবং শেষ পর্যন্ত এতে মঙ্গল বিদ্যমান রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এসব লোকদের আরো বিবরণ তুলে ধরে বলেন: তারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া এমন বাতিল মা‘বূদদেরকে কল্যাণ লাভের আশায় এবং অকল্যাণ থেকে বাঁচতে আহ্বান করে যারা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰٓؤُلَا۬ءِ شُفَعَا۬ؤُنَا عِنْدَ اللّٰهِ ط قُلْ أَتُنَبِّئُوْنَ اللّٰهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمٰوٰتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ط سُبْحٰنَه۫ وَتَعٰلٰي عَمَّا يُشْرِكُوْنَ)
“তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল: ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।” (সূরা ইউনুস ১০:১৮) এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসে আরো আলোচনা করা হয়েছে।
(مَنْ كَانَ يَظُنُّ أَنْ لَّنْ يَّنْصُرَهُ اللّٰهُ...)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাহায্য করবেন না দুনিয়াতে ও আখিরাতে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলেন, সে যেন তার ঘরের কাছে রশি লটকিয়ে দিয়ে নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় এবং এভাবে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। তথাপি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাহায্য করেই যাবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(اِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَیَوْمَ یَقُوْمُ الْاَشْھَادُﮂﺫیَوْمَ لَا یَنْفَعُ الظّٰلِمِیْنَ مَعْذِرَتُھُمْ وَلَھُمُ اللَّعْنَةُ وَلَھُمْ سُوْ۬ئُ الدَّارِ)
“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে ও যেদিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে। যেদিন যালিমদের কোন আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্য রয়েছে লা‘নত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।” (সূরা মু’মিন ৪০:৫১-৫২)
তার এ সকল রাগের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন দিনও সাহায্য করা বন্ধ করবেন না। (ইবনু কাসীর ৫/৪১২) বরং আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যথারীতি সাহায্য করেই যাবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। সন্দেহের ভিত্তিতে ইবাদত করা যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো ইবাদত করা যাবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মানুষের অহঙ্কারের কারণে যে সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছেন এমনটি নয়। বরং সবর্দাই তাকে সাহায্য করবেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: মন্দ লোকদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা ভাল লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন। যাদের অন্তরে বিশ্বাসের জ্যোতি রয়েছে এবং যাদের আমলে সুন্নাত প্রকাশ পায়, যারা সৎকার্যের দিকে অগ্রসর হয় ও মন্দ কার্য হতে দূরে থাকে। তারা সুউচ্চ প্রাসাদ লাভ করবে এবং উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হবে। কেননা, তারা সুপথ প্রাপ্ত। তাদের ছাড়া অন্যেরা হলো অচেতন। মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা-ই করে থাকেন। তার কাজে বাধা দেয়ার কেউই নেই।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।