সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 65)
হরকত ছাড়া:
ثم نكسوا على رءوسهم لقد علمت ما هؤلاء ينطقون ﴿٦٥﴾
হরকত সহ:
ثُمَّ نُکِسُوْا عَلٰی رُءُوْسِهِمْ ۚ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هٰۤؤُلَآءِ یَنْطِقُوْنَ ﴿۶۵﴾
উচ্চারণ: ছু ম্মা নুকিছূ‘আলা-রুঊছিহিম লাকাদ ‘আলিমতা মা-হাউলাই ইয়ানতিকূন।
আল বায়ান: অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৬৫. তারপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।
তাইসীরুল ক্বুরআন: তাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল। (তখন তারা বলল) ‘তুমি তো জানই ওরা কথা বলতে পারে না।’
আহসানুল বায়ান: (৬৫) অতঃপর তাদের মস্তক অবনত হয়ে গেল (এবং তারা বলল), ‘তুমি তো জানই যে, ওরা কথা বলতে পারে না।’[1]
মুজিবুর রহমান: অতঃপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বললঃ তুমিতো জানই যে, এরা কথা বলেনা।
ফযলুর রহমান: এরপর তারা তাদের মাথা নত করল (আর বলল), “(ইবরাহীম! তুমি তো জানই, এরা কথা বলতে পারে না।”
মুহিউদ্দিন খান: অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না
জহুরুল হক: তারপর তাদের হেটঁ করা হ’ল তাদের মাথার উপরে "তুমি তো অবশ্যই জানো যে এরা কথা বলে না।"
Sahih International: Then they reversed themselves, [saying], "You have already known that these do not speak!"
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৬৫. তারপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৬৫) অতঃপর তাদের মস্তক অবনত হয়ে গেল (এবং তারা বলল), ‘তুমি তো জানই যে, ওরা কথা বলতে পারে না।’[1]
তাফসীর:
[1] হে ইবরাহীম! তুমি আমাদেরকে কেন বলছ যে, ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর; যদি ওরা বলতে পারে। অথচ তুমি ভালভাবেই জান যে,ওরা বলতে সক্ষম নয়।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৫১-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
মূসা (عليه السلام) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে আলোচনা করার পর অত্র আয়াতগুলোতে মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহীম (عليه السلام) স¤পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সৎ পথের জ্ঞান দান করেছিলেন। مِنْ قَبْلُ অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করা ও তাঁদেরকে কিতাব দেয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে হিদায়াতের জ্ঞান দান করেছিলেন, ফলে তিনি মানুষকে এদিকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। (وَكُنَّا بِه۪ عٰلِمِيْنَ) অর্থাৎ ইবরাহীম (عليه السلام)-কে সঠিক পথের জ্ঞান দান করা, তাঁকে নাবী হিসেবে চয়ন করা, তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা এবং দুনিয়া ও পরকালে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান ছিল যে, ইবরাহীম (عليه السلام)-এর অধিকারী ও যোগ্য।
ইবরাহীম (عليه السلام) তাঁর পিতা ও সম্প্রদায়কে বললেন: এ মূর্তিগুলো কী? تماثيل শব্দটি تمثال এর বহুবচন। অর্থ কোন জিনিসের হুবহু প্রতিকৃতি। عاكف অর্থ অবস্থান করা, ধরে রাখা। অর্থাৎ এ মূর্তিগুলো কী, যাদের কাছে নিরবে অবস্থান কর? তারা বলল: আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপ পূজা করতে দেখেছি। তখন ইবরাহীম (عليه السلام) বললেন: তোমরা ও তোমাদের বাপ দাদারা প্রকাশ্য গুমরাহীতে লিপ্ত রয়েছ। তখন তারা বলল: তুমি কি আমাদের নিকট সত্য জিনিস নিয়ে এসেছ, না তুমি কৌতুক করছ। তখন তিনি বললেন: না, তোমাদের প্রতিপালক তো তিনি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি এ বিষয়ে অন্যতম সাক্ষী। প্রাথমিক দাওয়াতের কাজ এখানে সমাপ্ত, এরপরও যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! তোমরা অনুষ্ঠানে বা ঈদে চলে যাওয়ার পর আমি এ মূর্তিগুলোর ব্যাপারে কিছু একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যখন তারা চলে গেল তখন তিনি এ মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন। শুধুমাত্র তাদের বড় মূর্তিটি ব্যতীত। অতঃপর যখন তারা ফিরে এসে এরূপ অবস্থা দেখতে পেল তখন তারা বলল: কে আমাদের উপাস্যগুলোর সাথে এরূপ আচরণ করেছে? নিশ্চয়ই সে একজন সীমালঙ্ঘনকারী। তখন তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলল: আমরা এক যুবককে এদের ব্যাপারে সমালোচনা করতে শুনেছি যার নাম ইবরাহীম। তখন তাঁকে নিয়ে আসার জন্য বলা হল। অতঃপর যখন তাঁকে নিয়ে আসা হল তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ? তাদের প্রশ্নের জবাবে ইবরাহীম (عليه السلام) বললেন: তাদের মধ্যে যে বড় সেই তো এ কাজ করেছে, তাকেই জিজ্ঞেস কর যদি তারা কথা বলতে পারে। একথা শুনে তারা লজ্জায় মাথা অবনত করল এবং বলল: তুমি তো জানো যে, এরা কথা বলতে পারে না।
তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে বললেন: তোমরা এমন জিনিসের পূজা করছ যারা তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না? সুতরাং তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের জন্য ভর্ৎসনা।
তখন তাঁর সম্প্রদায় আর কোন জবাব দিতে পারলনা। শুধুমাত্র বলল যে, তাঁকে আগুনে পুড়ে ফেল, তোমাদের মা‘বূদদেরকে রক্ষা কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেনঃ
(فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَنْ قَالُوا اقْتُلُوهُ أَوْ حَرِّقُوهُ)
“অতঃপর তার সম্প্রদায়ের এ কথা বলা ছাড়া কোন উত্তর ছিল না যে, ‘একে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর।” (আনকাবুত ২৯:২৪)
তখন তারা তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য। ইবরাহীম (عليه السلام)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হল তখন তিনি বলেছিলেন: حسبي الله ونعم الوكيل আমার জন্য আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মকর্তা। তখন আল্লাহ তা‘আলা আগুনকে নির্দেশ দিয়ে বললেন: আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। অবশেষে তারা ক্ষতি করতে গিয়ে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। আর ইবরাহীম (عليه السلام) অক্ষত অবস্থায় সে আগুন থেকে পরিত্রাণ পেলেন। ইবরাহীম (عليه السلام) সম্পর্কে আরো আলোচনা সূরা আন‘আমে ও সূরা মারইয়ামে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইবরাহীম (عليه السلام)-এর মত হিকমত নিয়ে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে।
২. মূর্তি ভাঙ্গা নাবীদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিমদের উচিত নাবীদের এ বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করা।
৩. ইবরাহীম (عليه السلام) জানতেন মূর্র্তি ভাঙ্গলে তাকে পাকড়াও করবে, তারপরেও তিনি ভেঙ্গেছেন।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে।
৫. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে অবিচল থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সহযোগিতা করেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৬৪-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কওম সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন, যখন তিনি তাদেরকে যা বলার তা বললেন। তার কওম তার কথা শুনে নিজেদের বোকামীর কারণে নিজেদেরকেও ভৎসনা করতে লাগলো এবং অত্যন্ত লজ্জিত হলো। তারা পরস্পর বলাবলি করলোঃ “আমরা তো আমাদের দেবতাদের হিফাজতের জন্যে কাউকেও রেখে না গিয়ে চরম ভুল করেছি!` অতঃপর তারা চিন্তা ভাবনা করার পর হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) বললোঃ “আমাদের দেবতাদেরকে কে ভেঙ্গেছে এ সম্পর্কে তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে বলছো এটা কেমন কথা? তুমি তো জানই যে, আমাদের দেবতাগুলি কথা বলতে পারে না?” অপারগতা, বিস্ময় ও অত্যন্ত নিরুত্তরতার অবস্থায় তাদেরকে এ কথা স্বীকার করতেই হলো যে, তাদের দেবতাদের কথা বলারও শক্তি নেই। কাজেই তিনি তাদেরকে জন্ধ করার বিশেষ সুযোগ। পেয়ে গেলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ তাদেরকে বললেনঃ “যারা কথা বলতেও পারে না এবং লাভ ও ক্ষতি করারও যাদের কোন ক্ষমতা নেই তাদের পুজা করা কেমন? তোমরা এতো নির্বোধ হচ্ছো কেন? তোমাদেরকে ও তোমাদের বাতিল মাবুদদেরকে ধিক! বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তোমরা এক আল্লাহকে ছেড়ে এসব বাজে জিনিসের ইবাদত করতে রয়েছে। এগুলোই ছিল ঐ দলীল যার বর্ণনা ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিলঃ “আমি ইবরাহীমকে (আঃ) তাঁর কওমের উপর আমার হুজ্জত বা দলীল প্রদান করেছিলাম। (যাতে তার কওম সত্য উপলব্ধি করতে পারে)।`
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।