সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 50)
হরকত ছাড়া:
وهذا ذكر مبارك أنزلناه أفأنتم له منكرون ﴿٥٠﴾
হরকত সহ:
وَ هٰذَا ذِکْرٌ مُّبٰرَکٌ اَنْزَلْنٰهُ ؕ اَفَاَنْتُمْ لَهٗ مُنْکِرُوْنَ ﴿۵۰﴾
উচ্চারণ: ওয়া হা-যা-যিকরুমমুবা-রাকুন আনযালনা-হু আফাআনতুম লাহূমুনকিরূন।
আল বায়ান: আর এটা বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫০. আর এ হচ্ছে বরকতময়(১) উপদেশ, এটা আমরা নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার কর?
তাইসীরুল ক্বুরআন: এ হচ্ছে কল্যাণময় উপদেশ বাণী, আমি তা নাযিল করেছি: তবুও কি তা তোমরা প্রত্যাখ্যান করবে?
আহসানুল বায়ান: (৫০) আর এ হল কল্যাণময় উপদেশ; যা আমি অবতীর্ণ করেছি; তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? [1]
মুজিবুর রহমান: এটি কল্যাণময় উপদেশ; আমিই এটি অবতীর্ণ করেছি; তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে?
ফযলুর রহমান: এটা আমারই নাযিল-করা এক বরকতময় উপদেশ। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?
মুহিউদ্দিন খান: এবং এটা একটা বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। অতএব তোমরা কি একে অস্বীকার কর?
জহুরুল হক: আর এটি এক কল্যাণময় স্মারকগ্রন্থ যা আমরা অবতারণ করেছি। তোমরা কি তবে এটির প্রতি অমান্যকারী হবে?
Sahih International: And this [Qur'an] is a blessed message which We have sent down. Then are you with it unacquainted?
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৫০. আর এ হচ্ছে বরকতময়(১) উপদেশ, এটা আমরা নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার কর?
তাফসীর:
(১) বরকত সংক্রান্ত আলোচনা সূরা মারইয়ামের ৩১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৫০) আর এ হল কল্যাণময় উপদেশ; যা আমি অবতীর্ণ করেছি; তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? [1]
তাফসীর:
[1] এই কুরআন যা স্মরণকারীদের জন্য স্মারকগ্রন্থ, উপদেশ, কল্যাণ ও মঙ্গলময়; এটিকেও আমিই অবতীর্ণ করেছি। তোমরা আল্লাহর পক্ষ হতে তা অবতীর্ণ হওয়াকে কেমন করে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা স্বীকার কর যে, তাওরাত আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ কিতাব।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৪৮-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام) সর্ম্পকে আলোচনা করা হয়েছে। মূসা (عليه السلام)-কে মূল হিসেবে আর হারূন (عليه السلام)-কে তাঁর অনুগামী হিসেবে তাওরাত প্রদান করা হয়েছে। الْفُرْقَانَ অর্থ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী, ضِيَا۬ءً অর্থ মানবাত্মার জন্য আলো, ذِكْرًا মানুষের জন্য উপদেশ। এ তিনটিই তাওরাতের গুণ। এ তাওরাত হল মুত্তাক্বীদের জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, তাদের জন্য আলো এবং উপদেশ। ‘মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশ’ এ কথা বিশেষভাবে বলার কারণ হল যাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার ভয় নেই তারা আসমানী কিতাব দ্বারা কোন উপকার পেতে পারে না, কারণ তারা দীন ধর্মের কোন পরওয়া করে না। সুতরাং কেবল মুত্তাক্বীরা ইলম ও আমলের মাধ্যমে উপকৃত হয়। পরের আয়াতে মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে; মুত্তাক্বী হল যারা আল্লাহ তা‘আলাকে না দেখেই ভয় করে এবং কিয়ামতের ব্যাপারে শংকিত। কিয়ামত কখন হবে, কিয়ামতের দিন তাদের পরিস্থিতি কী হবে, তারা নাজাত পাবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে তারা শংকিত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এটা কল্যাণময় উপদেশ, যারা এ কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় কুরআন তাদেরকে কল্যাণের পথ দেখাবে। সুতরাং কুরআন কল্যাণের পথ দেখানোর পরেও তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলাকে না দেখে তাঁর প্রতি ঈমান রাখা ও ভয় করা মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য।
২. প্রত্যেক আসমানী কিতাব সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী ছিল।
৩. কুরআন বরকতময় কিতাব।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৪৮-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
আমরা পূর্বেও একথা বলেছি যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণের (আঃ) বর্ণনা মিলিতভাবে এসেছে এবং অনুরূপভাবে কুরআন ও তাওরাতের বর্ণনায়ই এক সাথে দেয়া হয়েছে। ফুরকান দ্বারা কিতাব অর্থাৎ তাওরাত উদ্দেশ্য, যা সত্য ও মিথ্যা এবং হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্যকারী ছিল। এর দ্বারা হযরত মূসা (আঃ) সাহায্য প্রাপ্ত হন। সমস্ত আসমানী কিতাবই হক ও বাতিল, হিদায়াত ও গুমরাহী ভাল ও মন্দ ও হারাম হালালের মধ্যে পার্থক্যকারী।
এর দ্বারা অন্তরে জ্যোতি, আমলে সত্যতা, আল্লাহর ভয় এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি লাভ হয়। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ মুত্তাকীন বা খোদাভীরুদের জন্যে এটা জ্যোতি ও উপদেশ।
এরপর আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের গুণাবলী বর্ণনা করছেন যে, তারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে তারা সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। যেমন জান্নাতীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয়।` (৫০:৩৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।` (৬৭:১২) মুত্তাকীদের দ্বিতীয় বিশেষণ এই যে, তারা কিয়ামত সম্পর্কে সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। ওর ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করে তারা প্রকম্পিত হয়।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই মহান ও পবিত্র কুরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি। এর আশে পাশেও মিথ্যা আসতে পারে না। এটা বিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ হতে অবতারিত। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় যে, এতো স্পষ্ট, সত্য ও জ্যোতিপূর্ণ কুরআনকেও তোমরা অস্বীকার করছো?
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।