সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 49)
হরকত ছাড়া:
الذين يخشون ربهم بالغيب وهم من الساعة مشفقون ﴿٤٩﴾
হরকত সহ:
الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَیْبِ وَ هُمْ مِّنَ السَّاعَۃِ مُشْفِقُوْنَ ﴿۴۹﴾
উচ্চারণ: আল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি ওয়া হুম মিনাছছা-‘আতি মুশফিকূন।
আল বায়ান: যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪৯. যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং তারা কেয়ামত সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত।
তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা না দেখেই তাদের প্রতিপালককে ভয় করে আর তারা কিয়ামাত সম্পর্কে ভীত-শংকিত।
আহসানুল বায়ান: (৪৯) যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত সন্ত্রস্ত। [1]
মুজিবুর রহমান: যারা না দেখেও তাদের রাব্বকে ভয় করে এবং কিয়ামাত সম্পর্কে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।
ফযলুর রহমান: যারা না দেখেও তাদের প্রভুকে ভয় করে; আর কেয়ামত সম্পর্কে তারা ভীত থাকে।
মুহিউদ্দিন খান: যারা না দেখেই তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত।
জহুরুল হক: যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে নিভৃতে আর তারা ঘড়িঘন্টা সন্বন্ধে ভীত সন্ত্রস্ত।
Sahih International: Who fear their Lord unseen, while they are of the Hour apprehensive.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৪৯. যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং তারা কেয়ামত সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৪৯) যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত সন্ত্রস্ত। [1]
তাফসীর:
[1] এগুলি পরহেযগার আল্লাহভীরুদের গুণাবলী। যেমন সূরা বাক্বারার শুরুতে ও অন্যান্য জায়গায় তাঁদের গুণাবলীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৪৮-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام) সর্ম্পকে আলোচনা করা হয়েছে। মূসা (عليه السلام)-কে মূল হিসেবে আর হারূন (عليه السلام)-কে তাঁর অনুগামী হিসেবে তাওরাত প্রদান করা হয়েছে। الْفُرْقَانَ অর্থ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী, ضِيَا۬ءً অর্থ মানবাত্মার জন্য আলো, ذِكْرًا মানুষের জন্য উপদেশ। এ তিনটিই তাওরাতের গুণ। এ তাওরাত হল মুত্তাক্বীদের জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, তাদের জন্য আলো এবং উপদেশ। ‘মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশ’ এ কথা বিশেষভাবে বলার কারণ হল যাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার ভয় নেই তারা আসমানী কিতাব দ্বারা কোন উপকার পেতে পারে না, কারণ তারা দীন ধর্মের কোন পরওয়া করে না। সুতরাং কেবল মুত্তাক্বীরা ইলম ও আমলের মাধ্যমে উপকৃত হয়। পরের আয়াতে মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে; মুত্তাক্বী হল যারা আল্লাহ তা‘আলাকে না দেখেই ভয় করে এবং কিয়ামতের ব্যাপারে শংকিত। কিয়ামত কখন হবে, কিয়ামতের দিন তাদের পরিস্থিতি কী হবে, তারা নাজাত পাবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে তারা শংকিত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এটা কল্যাণময় উপদেশ, যারা এ কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় কুরআন তাদেরকে কল্যাণের পথ দেখাবে। সুতরাং কুরআন কল্যাণের পথ দেখানোর পরেও তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলাকে না দেখে তাঁর প্রতি ঈমান রাখা ও ভয় করা মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য।
২. প্রত্যেক আসমানী কিতাব সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী ছিল।
৩. কুরআন বরকতময় কিতাব।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৪৮-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
আমরা পূর্বেও একথা বলেছি যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণের (আঃ) বর্ণনা মিলিতভাবে এসেছে এবং অনুরূপভাবে কুরআন ও তাওরাতের বর্ণনায়ই এক সাথে দেয়া হয়েছে। ফুরকান দ্বারা কিতাব অর্থাৎ তাওরাত উদ্দেশ্য, যা সত্য ও মিথ্যা এবং হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্যকারী ছিল। এর দ্বারা হযরত মূসা (আঃ) সাহায্য প্রাপ্ত হন। সমস্ত আসমানী কিতাবই হক ও বাতিল, হিদায়াত ও গুমরাহী ভাল ও মন্দ ও হারাম হালালের মধ্যে পার্থক্যকারী।
এর দ্বারা অন্তরে জ্যোতি, আমলে সত্যতা, আল্লাহর ভয় এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি লাভ হয়। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ মুত্তাকীন বা খোদাভীরুদের জন্যে এটা জ্যোতি ও উপদেশ।
এরপর আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের গুণাবলী বর্ণনা করছেন যে, তারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে তারা সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। যেমন জান্নাতীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয়।` (৫০:৩৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।` (৬৭:১২) মুত্তাকীদের দ্বিতীয় বিশেষণ এই যে, তারা কিয়ামত সম্পর্কে সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। ওর ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করে তারা প্রকম্পিত হয়।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই মহান ও পবিত্র কুরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি। এর আশে পাশেও মিথ্যা আসতে পারে না। এটা বিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ হতে অবতারিত। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় যে, এতো স্পষ্ট, সত্য ও জ্যোতিপূর্ণ কুরআনকেও তোমরা অস্বীকার করছো?
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।