সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 34)
হরকত ছাড়া:
وما جعلنا لبشر من قبلك الخلد أفإن مت فهم الخالدون ﴿٣٤﴾
হরকত সহ:
وَ مَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِکَ الْخُلْدَ ؕ اَفَا۠ئِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخٰلِدُوْنَ ﴿۳۴﴾
উচ্চারণ: ওয়ামা-জা‘আলনা-লিবাশারিম মিন কাবলিকাল খুলদা আফাইম মিত্তা ফাহুমুল খা-লিদূ ন।
আল বায়ান: আর তোমার পূর্বে কোন মানুষকে আমি স্থায়ী জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি অনন্ত জীবনসম্পন্ন হয়ে থাকবে ?
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩৪. আর আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি(১); কাজেই আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবি হয়ে থাকবে?
তাইসীরুল ক্বুরআন: তোমার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে চিরস্থায়ী করিনি। তুমি যদি মারা যাও, তাহলে তারা কি চিরস্থায়ী হবে?
আহসানুল বায়ান: (৩৪) আমি তোমার পূর্বে কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? [1]
মুজিবুর রহমান: আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে চিরস্থায়ী জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে?
ফযলুর রহমান: তোমার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দেইনি। অতএব, তুমি যদি মরে যাও তাহলে তারা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?
মুহিউদ্দিন খান: আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?
জহুরুল হক: আর তোমার আগে আমরা কোনো মানুষের জন্য স্থায়িত্ব দিই নি। সুতরাং যদি তোমাকেই মারা যেতে হয় তবে কি তারা চিরজীবী হবে?
Sahih International: And We did not grant to any man before you eternity [on earth]; so if you die - would they be eternal?
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৩৪. আর আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি(১); কাজেই আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবি হয়ে থাকবে?
তাফসীর:
(১) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, খাদির আলাইহিস সালাম মারা গেছেন। কারণ, তিনি একজন মানুষ। মানুষদের মধ্যে কাউকেই আল্লাহ চিরঞ্জাব করেননি। [ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমু ফাতাওয়া ৪/৩৩৭]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৩৪) আমি তোমার পূর্বে কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? [1]
তাফসীর:
[1] মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-এর ব্যাপারে বলত যে, সে তো একদিন মারাই যাবে। এ আয়াত তারই উত্তর। আল্লাহ বললেন, মৃত্যু তো প্রত্যেক মানুষের জন্য অবধারিত। মুহাম্মাদ (সাঃ)ও এই নিয়ম-বহির্ভূত নয়। কারণ সেও একজন মানুষ। আর আমি কোন মানুষকে অমরতা দান করিনি। কিন্তু যারা এ কথা বলে তারা কি মরবে না? এ হতে মুশরিকদের মতবাদেরও খন্ডন হয়ে যায়; যারা দেবতা, আম্বিয়া ও আওলিয়াগণের চিরজীবী থাকার ধারণা পোষণ করে থাকে। আর সেই ভিত্তিতেই তারা তাঁদেরকে নিজেদের সাহায্যকারী ও বিপত্তারণ মনে করে। সুতরাং কুরআন-বিরোধী এই ভ্রষ্ট আকীদা হতে আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
মক্কার কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে বলত যে, সে তো একদিন মারাই যাবে। এ আয়াত তারই উত্তর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মৃত্যু তো প্রত্যেক মানুষের জন্যই অবধারিত। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও এ নিয়ম বহির্ভূত নয়। কারণ সেও একজন মানুষ। আর আমি কোন মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। কিন্তু যারা একথা বলে তারা কি মরবে না? এ হতে মুশরিকদের মতবাদের খণ্ডন হয়ে যায় যারা দেবতা, আম্বিয়া ও আওলিয়াগণের চিরজীবী হওয়ার ধারণা পোষণ করে থাকে। আর সে ভিত্তিতেই তারা তাদেরকে নিজেদের সাহায্যকারী মনে করে। অত্র সূরার ৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে ইতোপূর্বে যত রাসূল এসেছিল তারা সবাই খাবার খেতেন এবং তারা চিরস্থায়ী ছিলেন না। সুতরাং প্রত্যেক আত্মা মারা যাবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও মারা যাবেন এটাই স্বাভাবিক।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(إِنَّكَ مَيِّتٌ وَّإِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ)
“নিশ্চয়ই তুমিও মৃত্যুবরণ করবে আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে।” (সূরা যুমার ৩৯:৩০)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ - وَّيَبْقٰي وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ)
“ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই ধ্বংসশীল। অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার প্রতিপালকের চেহারা (চেহারাবিশিষ্ট সত্তা), যা মহিমাময়, মহানুভব।” (সূরা আর রাহমান-৫৫ঃ২৬-২৭)
(وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ)
কখনো দুঃখ-দুর্দশা দিয়ে, কখনো পার্থিব সুখ-শান্তি দিয়ে, কখনো সুস্বাস্থ্য ও প্রশস্ততা দিয়ে, কখনো অসুস্থতা ও সংকীর্ণতা দিয়ে, কখনো বিলাস-সামগ্রী দিয়ে, কখনো দরিদ্রতা ও অভাব দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করে থাকেন, যাতে কে কৃতজ্ঞ ও কে অকৃতজ্ঞ হয়, কে ধৈর্যশীল হয়, কে অধৈর্য হয়ে যায় তা নির্ণয় করা যায়। অতঃপর দুনিয়ার জীবন অতীত করে প্রত্যেককেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(كُلُّ نَفْسٍ ذَا۬ئِقَةُ الْمَوْتِ قف ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ)
“প্রতিটি প্রাণ মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; অতঃপর তোমরা আমারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা অনকাবুত ২৯:৫৭)
সুতরাং কেউই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী হবে না, প্রত্যেককেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর মৃত্যুর পর সকলকেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যেতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হায়াতুন্নাবী নন, বরং তিনি মারা গেছেন।
২. দুনিয়ার জীবন পরীক্ষার হল, যারা ভাল আমল করতে পারবে তারাই সফলকাম।
৩. আল্লাহ বিভিন্ন সময় ভাল-মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করবেন, যারা ধৈর্য ধারণ করবে তারাই সলফকাম।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! তোমার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে দুনিয়ায় অনন্ত জীবন দান করি নাই। বরং ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর, অবিনশ্বর শুধু তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমময়, মহানুভব। এই আয়াত দ্বারাই আলেমগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, হযরত খিযর (আঃ) মারা গেছেন। তিনি আজ পর্যন্ত জীবিত আছেন এটা ভুল কথা। কেননা, তিনিও মানুষই ছিলেন। হোন তিনি ওয়ালী বা নবী অথবা রাসূল, কিন্তু ছিলেন তো মানুষই।
মহান আল্লাহ বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সাঃ)! তুমি যদি মৃত্যুবরণ কর তবে তারা কি চিরজীবি হয়ে থাকবে? অর্থাৎ তারা কি আশা করছে যে, তোমার মৃত্যুর পর তারা দুনিয়ায় চিরদিন বেঁচে থাকবে? না, এটা হতে পারে না, বরং প্রত্যেকেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। ইমাম শাফিয়ী (রঃ) বলতেনঃ “লোকেরা আমার মৃত্যুর কামনা করে, আমি যদি মারা যাই তবে এই পথে কি আমি একাই রয়েছি? এমন কেউই নেই যে এর স্বাদ গ্রহণ করবে না।”
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দ দ্বারা, সুখ ও দুঃখ দ্বারা, মিষ্ট ও তিক্ত দ্বারা এবং প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতা দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি, যাতে কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যশীল ও হতাশা গ্রস্ত ব্যক্তি প্রকাশ হয়ে পড়ে। ঐশ্বর্য ও দারিদ্র, কঠোরত ও কোমলতা, হালাল ও হারাম, হিদায়াত ও গুমরাহী এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা এ সবগুলিই পরীক্ষামূলক। এর দ্বারা ভাল ও মন্দ প্রকাশ পেয়ে থাকে।
তোমাদের সবারই প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে। ঐ সময় যে যেমন ছিল তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। পাপীরা শাস্তি এবং পুণ্যবারা পুরস্কার লাভ করবে।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।