সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 23)
হরকত ছাড়া:
لا يسأل عما يفعل وهم يسألون ﴿٢٣﴾
হরকত সহ:
لَا یُسْـَٔلُ عَمَّا یَفْعَلُ وَ هُمْ یُسْـَٔلُوْنَ ﴿۲۳﴾
উচ্চারণ: লা-ইউছআলু‘আম্মা-ইয়াফ‘আলুওয়া হুম ইউছআলূন।
আল বায়ান: তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৩. তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করা হবে।
তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না, বরং তারা জিজ্ঞাসিত হবে (তাদের কাজের ব্যাপারে)।
আহসানুল বায়ান: (২৩) তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং ওদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
মুজিবুর রহমান: তিনি যা করেন সেই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবেনা; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
ফযলুর রহমান: তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা যায় না, বরং (তারা যা করে সে ব্যাপারে) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
মুহিউদ্দিন খান: তিনি যা করেন, তৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।
জহুরুল হক: তিনি যা করেন যে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু তাদের প্রশ্ন করা হবে।
Sahih International: He is not questioned about what He does, but they will be questioned.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ২৩. তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করা হবে।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (২৩) তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং ওদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অস্বীকৃতিমূলক জিজ্ঞাসা আকারে মুশরিকদেরকে ভর্ৎসনা করছেন যে, তারা এমন নির্বোধ যে, মাটির তৈরি মূর্তিগুলোকে মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে যারা মৃতকে জীবিত করতে পারে না। সুতরাং যারা মৃতকে জীবিত করতে না পারে তারা কেমন করে মা‘বূদ হল। মা‘বূদ হতে হলে তাকে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। তারা তো নিজেদের গা থেকে মাছি সরাতেও সক্ষম না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٰٓ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيٰوةً وَّلَا نُشُوْرًا)
“আর তারা তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থানের ওপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৩)
সুতরাং মা‘বূদ হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আকাশ-জমিনের একাধিক উপাস্য থাকত তাহলে পৃথিবী পরিচালনার ব্যাপারে বিপর্যয় সৃষ্টি হত, পৃথিবীতে শান্তি, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় থাকত না। এক মা‘বূদ চাইতো সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হোক, অন্য মা‘বূদ চাইতো পূর্ব দিকে উদিত হোক। এক মা‘বূদ বৃষ্টি দিতে চাইবে, অন্য মা‘বূদ দিতে চাইবে না ইত্যাদি ইত্যাদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَه۫ مِنْ إلٰهٍ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إلٰهٍۭ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰي بَعْضٍ ط سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক মা‘বূদ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ পবিত্র!” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৯১)
সুতরাং আকাশজমিনে একাধিক মা‘বূদ হতে পারে না। এটা মানুষের বিবেকও বলে। তাই আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য মা‘বূদ রয়েছে এ কথা হতে তিনি পবিত্র। তিনি একক, অদ্বিতীয়।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের মহত্ব্ ও বড়ত্ব এবং ক্ষমতার পূর্ণতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা কারো নেই। কেউ বলতে পারবে না, আপনি এ কাজ করলেন কেন, এ কাজ করেন না কেন? বান্দা যা করে ও বলে, সে সকল কথা ও কাজের জন্য তাদেরকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও এগুতে পারবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ - عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)
“সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই, সে বিষয়ে যা তারা করে।” (সূরা হিজর ১৫:৯২-৯৩)
অতঃপর যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যদের উপাসনা করে তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা যাবে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রমাণসমূহ নিয়ে এস। কিন্তু তারা কোন প্রমাণই পেশ করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, তাদের নিকট এ বিষয়ে কোনই দলীল প্রমাণ নেই। তারা নিজেদের খেয়াল-খুশির বশীভূত হয়ে এ সমস্ত বাতিল মা‘বূদদের উপাসনা করে। তাদের এ উপাসনা আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে কোন কাজে আসবে না।
(ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ)
এখানে যিকির বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।
(وَذِكْرُ مَنْ قَلْبِيْ)
এখানে যিকির বলতে পূর্ববর্তী নাবীদের গ্রন্থসমূহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে তাদের দলিল-প্রমাণ কুরআনে রয়েছে এবং পূর্ববর্তী নাবীদের কিতাবেও তা রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত মুশরিকরা সত্য বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যত নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিধান ছিল একটাই, তা হল এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন সঠিক মা‘বূদ নেই, সুতরাং তাঁরই ইবাদত করতে হবে। তাঁর ইবাদত ব্যতীত মুক্তি পাওয়া যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)
“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” (সূরা নাহল ১৬:৩৬)
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা, আল্লাহ ব্যতীত যত মা‘বূদ রয়েছে সকল মা‘বূদকে ঘৃণা করা ও তাদেরকে অস্বীকার করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. উপাস্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই।
২. সকল নাবী-রাসূলদের দীনের মূলনীতি ছিল একই যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে।
৩. প্রমাণ ছাড়া কোন আমল করা যাবে না।
৪. মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
৫. মা‘বূদ হওয়ার যোগ্যতা অন্য কোন কিছুর নেই, তাই যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে তারা ভ্রান্ত।
৬. আরশের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৭. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ২১-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা শিরকে খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনঃ হে মুশরিকদের দল! আল্লাহ ছাড়া তোমরা যে সবের পূজা করে থাকে। তাদের মধ্যে একজনও এমন নেই যে মৃতকে জীবিত করতে পারে। একজন কেন, সবাই মিলিত হলেও তাদের এ ক্ষমতা হবে না। তা হলে যে আল্লাহ এ ক্ষমতা রাখেন তাদের তার সমান মর্যাদা দেয়া অন্যায় নয় কি?
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আচ্ছা, যদি বাস্তবে এটা মেনে নেয়া হয় যে, বহু মাবুদ রয়েছে তবে আসমান ও যমীনের ধ্বংস অপরিহার্য হয়ে পড়বে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “আল্লাহর সন্তান নেই এবং তাঁর সাথে অন্য কোন মাবুদও নেই; যদি এরূপ হতো তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৃষ্ট বস্তুকে নিয়ে ফিরতে এবং প্রত্যেকেই অন্যের উপর জয়যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতো। আল্লাহ তাআলা তাদের বর্ণনাকৃত বিশেষণ হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।” এখানে তিনি বলেনঃ তারা যা বলে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র ও মহান। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে হতে তিনি পবিত্র ও মুক্ত। অনুরূপভাবে তিনি সঙ্গী সাথী, অংশীদার ইত্যাদি হতেও উর্ধ্বে। তাদের এ সব কিছু তার উপর অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। এগুলি থেকে আল্লাহর সত্ত্বা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তার মাহাত্মতো এই যে, সাধারণভাবে তিনি প্রকৃত শাহানশাহ। তার উপরে শাসনকর্তা হুকুমের কৈফিয়ত চাইতে পারে না এবং কেউ তার কোন ফরমনি টলাতেও পারে না। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা, বড়ত্ব, জ্ঞান, হিকমত, ন্যায় বিচার এবং মেহেরবানী অতুলনীয়। তাই, তার বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ তার সামনে টু শব্দটিও করতে পারে না। সবাই তার সামনে অপারগ ও নিরুপায়। কেউই কোন শক্তি রাখে না। কেউ এমন নেই যে, তার সামনে কথা বলার সাহস রাখে। এ কাজ কেন করলেন এবং কেন এটা হলো এরূপ প্রশ্ন তাঁকে করতে পারে এমন সাধ্য কারো নেই। তিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা এবং সবারই তিনি মালিক বলে তিনি যাকে ইচ্ছা যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন। প্রত্যেকের কাজের তিনি হিসাব গ্রহণ করবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই আমি তাদের সকলকেই তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।” (১৫:৯২-৯৩) যে তার, আশ্রয়ে এসে যাবে সে সমস্ত অকল্যাণ ও বিপদাপদ হতে বেঁচে যাবে। পক্ষান্তরে, এমন কেউ নেই যে তাঁর বিপক্ষে অপরাধীকে আশ্রয় দিতে পারে।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।