আল কুরআন


সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 22)

সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 22)



হরকত ছাড়া:

لو كان فيهما آلهة إلا الله لفسدتا فسبحان الله رب العرش عما يصفون ﴿٢٢﴾




হরকত সহ:

لَوْ کَانَ فِیْهِمَاۤ اٰلِهَۃٌ اِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا یَصِفُوْنَ ﴿۲۲﴾




উচ্চারণ: লাও কা-না ফীহিমাআ-লিহাতুন ইল্লাল্লা-হু লাফাছাদাতা- ফাছুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল ‘আরশি ‘আম্মা-ইয়াসিফূন।




আল বায়ান: যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত, সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২২. যদি এতদুভয়ের (আসমান ও যমীনের) মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই বিশৃংখল হত।(১) অতএব, তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আরাশের অধিপতি আল্লাহ কতই না পবিত্ৰ।




তাইসীরুল ক্বুরআন: আসমান ও যমীনে যদি আল্লাহ ছাড়া আরো অনেক ইলাহ থাকত তবে (আসমান ও যমীন) উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। কাজেই আরশের অধিপতি আল্লাহ মহান ও পবিত্র সে সব থেকে যা তারা তাঁর প্রতি আরোপ করে।




আহসানুল বায়ান: (২২) যদি আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে বহু উপাস্য থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। [1] সুতরাং ওরা যে বর্ণনা দেয় তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।



মুজিবুর রহমান: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া বহু মা‘বূদ থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে তা হতে আরশের রাব্ব (অধিপতি) আল্লাহ পবিত্র, মহান।



ফযলুর রহমান: যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য উপাস্য থাকত তাহলে উভয়টিই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব, তারা (তাঁর নামে) যা বলে, আরশের মালিক আল্লাহ তা থেকে পবিত্র।



মুহিউদ্দিন খান: যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।



জহুরুল হক: যদি ও দুইয়ের মধ্যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যান্য উপাস্যরা থাকত তবে এ দুটোই বিশৃঙ্খল হয়ে যেত। সুতরাং সকল মহিমা আল্লাহ্‌র, যিনি আরশের অধিপতি, -- তারা যা আরোপ করে তার উর্ধ্বে!



Sahih International: Had there been within the heavens and earth gods besides Allah, they both would have been ruined. So exalted is Allah, Lord of the Throne, above what they describe.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ২২. যদি এতদুভয়ের (আসমান ও যমীনের) মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই বিশৃংখল হত।(১) অতএব, তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আরাশের অধিপতি আল্লাহ কতই না পবিত্ৰ।


তাফসীর:

(১) এটা তাওহীদের প্রমাণ, যা সাধারণ অভ্যাসের উপর ভিত্তিশীল এবং যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের দিকেও ইঙ্গিতবহ। অভ্যাসগত প্রমাণের ভিত্তি এই যে, পৃথিবী ও আকাশে দুই ইলাহ থাকলে উভয়ই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হবে। এমতাবস্থায় উভয়ের নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে পূর্ণরূপে কার্যকরী হওয়া উচিত। অভ্যাসগতভাবে এটা অসম্ভব যে, একজন যে নির্দেশ দেবে, অন্যজনও সেই নির্দেশ দেবে, একজন যা পছন্দ করবে, অন্যজনও তাই পছন্দ করবে। তাই উভয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ ও নির্দেশ বিরোধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যখন দুই ইলাহর নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে বিভিন্নরূপ হবে, তখন এর ফলশ্রুতি পৃথিবী ও আকাশের ধ্বংস ছাড়া আর কি হবে। এক ইলাহ চাইবে যে এখন দিন হোক, অপর ইলাহ চাইবে এখন রাত্রি হোক। একজন চাইবে বৃষ্টি হোক, অপরজন চাইবে বৃষ্টি না হোক।

এমতাবস্থায় উভয়ের পরস্পর বিরোধী নির্দেশ কিরূপে প্রযোজ্য হবে? যদি একজন পরাভূত হয়ে যায়, তবে সে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ও ইলাহ্ থাকতে পারবে না। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, উভয় ইলাহ পরস্পরে পরামর্শ করে নির্দেশ জারি করলে তাতে অসুবিধা কি? তার উত্তর হলো এই যে, যদি উভয়ই পরামর্শের অধীন হয় এবং একজন অন্যজনের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতে না পারে, তবে এতে জরুরী হয়ে যায় যে, তাদের কেউ সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী নয় এবং কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বলাবাহুল্য, স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়ে ইলাহ হওয়া যায় না। সম্ভবতঃ পরবর্তী আয়াতেও এদিকে ইশারা পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি কোন আইনের অধীন, যার ক্রিয়াকর্ম ধরপাকড় যোগ্য, সে ইলাহ হতে পারে না। ইলাহ তিনিই হবেন, যিনি কারও অধীন নয়, যাকে জিজ্ঞাসা করার অধিকার কারও নেই। পরামর্শের অধীন দুই ইলাহ থাকলে প্ৰত্যেকেই অপরিহার্যরূপে অপরকে জিজ্ঞাসা করার ও পরামর্শ বর্জনের কারণে ধরপাকড় করার অধিকারী হবে। এটা ইলাহ হওয়ার পদমৰ্যদার নিশ্চিত পরিপন্থী। [দেখুন, সা’দী]

এটি একটি সরল ও সোজা যুক্তি আবার গভীর তাৎপর্যপূর্ণও। এটি এত সহজ সরল কথা যে, একজন মরুচারী বেদুঈন, সরল গ্রামবাসী এবং মোটা বুদ্ধির অধিকারী সাধারণ মানুষও একথা বুঝতে পারে। এ আয়াতটি অন্য আয়াতের মত, যেখানে বলা হয়েছে, “আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যে গুণে তাকে গুণান্বিত করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র- মহান!” [সূরা আল-মুমিনুন: ৯১] [ইবন কাসীর]

তবে লক্ষণীয় যে, আয়াতে এটা বলা হয়নি যে, যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। বরং বলা হয়েছে যে, ‘বিশৃংখল হত' বা ফাসাদ হয়ে যেত। আর সেটাই প্রমাণ করে যে, এখানে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর ব্যত্যয় ঘটলে কিভাবে দুনিয়াতে ফাসাদ হয় সেটাই বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ, আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদের ইবাদত করলে সেখানেই ফাসাদ অনিবাৰ্য। কিন্তু যদি দুই ইলাহ থাকত, তবে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত। এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, আয়াতটি যেভাবে তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ বা প্রভুত্বে একত্ববাদের প্রমাণ, সাথে সাথে সেটি তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদেরও প্রমাণ। তবে এর দ্বারা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদাতে একত্ববাদের প্রয়োজনীয়তাই বেশী প্রমাণিত হচ্ছে। [বিস্তারিত দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৩৮৭: আন-নুবুওয়াত: ১/৩৭৬; ইবনুল কাইয়্যেম, মিফতাহু দারিস সা’আদাহ: ১/২০৬, ২/১১, ১২২; তরীকুল হিজরাতাইন ৫৭, ১২৫; আল-জাওয়াবুল কাফী ২০৩]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (২২) যদি আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে বহু উপাস্য থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। [1] সুতরাং ওরা যে বর্ণনা দেয় তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।


তাফসীর:

[1] সত্য সত্যই যদি পৃথিবী ও আকাশে একের অধিক উপাস্য থাকত তাহলে বিশ্ব পরিচালনা দুই সত্তার হাতেই থাকত। দুজনের ইচ্ছা, বিবেক ও মর্জি কার্যকর হত। আর যখন দুই সত্তার ইচ্ছা ও ফায়সালা চলত তখন এ বিশ্ব-ব্যবস্থা এভাবে চলতেই পারত না, যেভাবে আদি হতে অবিরাম গতিতে চলে আসছে। কারণ দুজনের ইচ্ছায় সংঘর্ষ বাধত, উভয়ের সিদ্ধান্ত ও সংকল্প, এখতিয়ার ও বিবেক এক অপরের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হত, যার পরিণাম হত ধ্বংস ও বিপর্যয়। কিন্তু এমন আজ পর্যন্ত হয়নি। যার পরিষ্কার অর্থ হল, পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটাই সত্তা আছে, যার ইচ্ছা ও সংকল্প বাস্তবায়িত হয়। যা কিছুই হয় শুধু এবং শুধু তাঁরই আদেশে হয়। তিনি যা প্রদান করেন তাতে বাধা দেওয়ার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন তা দেওয়ার মত কেউই নেই।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:



অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অস্বীকৃতিমূলক জিজ্ঞাসা আকারে মুশরিকদেরকে ভর্ৎসনা করছেন যে, তারা এমন নির্বোধ যে, মাটির তৈরি মূর্তিগুলোকে মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে যারা মৃতকে জীবিত করতে পারে না। সুতরাং যারা মৃতকে জীবিত করতে না পারে তারা কেমন করে মা‘বূদ হল। মা‘বূদ হতে হলে তাকে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। তারা তো নিজেদের গা থেকে মাছি সরাতেও সক্ষম না।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٰٓ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيٰوةً وَّلَا نُشُوْرًا)‏



“আর তারা তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থানের ওপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৩)



সুতরাং মা‘বূদ হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আকাশ-জমিনের একাধিক উপাস্য থাকত তাহলে পৃথিবী পরিচালনার ব্যাপারে বিপর্যয় সৃষ্টি হত, পৃথিবীতে শান্তি, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় থাকত না। এক মা‘বূদ চাইতো সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হোক, অন্য মা‘বূদ চাইতো পূর্ব দিকে উদিত হোক। এক মা‘বূদ বৃষ্টি দিতে চাইবে, অন্য মা‘বূদ দিতে চাইবে না ইত্যাদি ইত্যাদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَه۫ مِنْ إلٰهٍ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إلٰهٍۭ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰي بَعْضٍ ط سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)‏



“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক মা‘বূদ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ পবিত্র!” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৯১)



সুতরাং আকাশজমিনে একাধিক মা‘বূদ হতে পারে না। এটা মানুষের বিবেকও বলে। তাই আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য মা‘বূদ রয়েছে এ কথা হতে তিনি পবিত্র। তিনি একক, অদ্বিতীয়।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের মহত্ব্ ও বড়ত্ব এবং ক্ষমতার পূর্ণতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা কারো নেই। কেউ বলতে পারবে না, আপনি এ কাজ করলেন কেন, এ কাজ করেন না কেন? বান্দা যা করে ও বলে, সে সকল কথা ও কাজের জন্য তাদেরকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও এগুতে পারবে না।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ - عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)‏



“সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই, সে বিষয়ে যা তারা করে।” (সূরা হিজর ১৫:৯২-৯৩)



অতঃপর যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যদের উপাসনা করে তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা যাবে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রমাণসমূহ নিয়ে এস। কিন্তু তারা কোন প্রমাণই পেশ করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, তাদের নিকট এ বিষয়ে কোনই দলীল প্রমাণ নেই। তারা নিজেদের খেয়াল-খুশির বশীভূত হয়ে এ সমস্ত বাতিল মা‘বূদদের উপাসনা করে। তাদের এ উপাসনা আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে কোন কাজে আসবে না।



(ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ)



এখানে যিকির বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।



(وَذِكْرُ مَنْ قَلْبِيْ)



এখানে যিকির বলতে পূর্ববর্তী নাবীদের গ্রন্থসমূহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে তাদের দলিল-প্রমাণ কুরআনে রয়েছে এবং পূর্ববর্তী নাবীদের কিতাবেও তা রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত মুশরিকরা সত্য বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়।



এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যত নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিধান ছিল একটাই, তা হল এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন সঠিক মা‘বূদ নেই, সুতরাং তাঁরই ইবাদত করতে হবে। তাঁর ইবাদত ব্যতীত মুক্তি পাওয়া যাবে না।



আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)



“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” (সূরা নাহল ১৬:৩৬)



সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা, আল্লাহ ব্যতীত যত মা‘বূদ রয়েছে সকল মা‘বূদকে ঘৃণা করা ও তাদেরকে অস্বীকার করা।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. উপাস্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই।

২. সকল নাবী-রাসূলদের দীনের মূলনীতি ছিল একই যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে।

৩. প্রমাণ ছাড়া কোন আমল করা যাবে না।

৪. মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

৫. মা‘বূদ হওয়ার যোগ্যতা অন্য কোন কিছুর নেই, তাই যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে তারা ভ্রান্ত।

৬. আরশের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।

৭. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২১-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা শিরকে খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনঃ হে মুশরিকদের দল! আল্লাহ ছাড়া তোমরা যে সবের পূজা করে থাকে। তাদের মধ্যে একজনও এমন নেই যে মৃতকে জীবিত করতে পারে। একজন কেন, সবাই মিলিত হলেও তাদের এ ক্ষমতা হবে না। তা হলে যে আল্লাহ এ ক্ষমতা রাখেন তাদের তার সমান মর্যাদা দেয়া অন্যায় নয় কি?

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আচ্ছা, যদি বাস্তবে এটা মেনে নেয়া হয় যে, বহু মাবুদ রয়েছে তবে আসমান ও যমীনের ধ্বংস অপরিহার্য হয়ে পড়বে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “আল্লাহর সন্তান নেই এবং তাঁর সাথে অন্য কোন মাবুদও নেই; যদি এরূপ হতো তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৃষ্ট বস্তুকে নিয়ে ফিরতে এবং প্রত্যেকেই অন্যের উপর জয়যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতো। আল্লাহ তাআলা তাদের বর্ণনাকৃত বিশেষণ হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।” এখানে তিনি বলেনঃ তারা যা বলে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র ও মহান। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে হতে তিনি পবিত্র ও মুক্ত। অনুরূপভাবে তিনি সঙ্গী সাথী, অংশীদার ইত্যাদি হতেও উর্ধ্বে। তাদের এ সব কিছু তার উপর অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। এগুলি থেকে আল্লাহর সত্ত্বা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তার মাহাত্মতো এই যে, সাধারণভাবে তিনি প্রকৃত শাহানশাহ। তার উপরে শাসনকর্তা হুকুমের কৈফিয়ত চাইতে পারে না এবং কেউ তার কোন ফরমনি টলাতেও পারে না। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা, বড়ত্ব, জ্ঞান, হিকমত, ন্যায় বিচার এবং মেহেরবানী অতুলনীয়। তাই, তার বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ তার সামনে টু শব্দটিও করতে পারে না। সবাই তার সামনে অপারগ ও নিরুপায়। কেউই কোন শক্তি রাখে না। কেউ এমন নেই যে, তার সামনে কথা বলার সাহস রাখে। এ কাজ কেন করলেন এবং কেন এটা হলো এরূপ প্রশ্ন তাঁকে করতে পারে এমন সাধ্য কারো নেই। তিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা এবং সবারই তিনি মালিক বলে তিনি যাকে ইচ্ছা যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন। প্রত্যেকের কাজের তিনি হিসাব গ্রহণ করবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই আমি তাদের সকলকেই তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।” (১৫:৯২-৯৩) যে তার, আশ্রয়ে এসে যাবে সে সমস্ত অকল্যাণ ও বিপদাপদ হতে বেঁচে যাবে। পক্ষান্তরে, এমন কেউ নেই যে তাঁর বিপক্ষে অপরাধীকে আশ্রয় দিতে পারে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।