আল কুরআন


সূরা আল-কাহফ (আয়াত: 108)

সূরা আল-কাহফ (আয়াত: 108)



হরকত ছাড়া:

خالدين فيها لا يبغون عنها حولا ﴿١٠٨﴾




হরকত সহ:

خٰلِدِیْنَ فِیْهَا لَا یَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا ﴿۱۰۸﴾




উচ্চারণ: খা-লিদীনা ফীহা-লা-ইয়াবগূনা ‘আনহা-হিওয়ালা-।




আল বায়ান: সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১০৮. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: সেখানে তারা স্থায়ী হয়ে থাকবে, সেখান থেকে বের হয়ে আর অন্যত্র যেতে চাইবে না।




আহসানুল বায়ান: (১০৮) সেথায় তারা স্থায়ী হবে; এর পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া কামনা করবে না।[1]



মুজিবুর রহমান: সেখানে তারা স্থায়ী হবে; তা হতে স্থানান্তর কামনা করবেনা।



ফযলুর রহমান: সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; (কখনও) সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন কামনা করবে না।



মুহিউদ্দিন খান: সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।



জহুরুল হক: তারা সেখানে থাকবে স্থায়ীভাবে, সেখান থেকে কোনো পরিবর্তন তারা চাইবে না।



Sahih International: Wherein they abide eternally. They will not desire from it any transfer.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১০৮. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।(১)


তাফসীর:

(১) উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতের এ স্থানটি তাদের জন্য অক্ষয় ও চিরস্থায়ী নেয়ামত। যে জান্নাতে প্ৰবেশ করেছে, তাকে সেখান থেকে কখনো বের করা হবে না। কিন্তু এখানে একটি আশংকা ছিল এই যে, এক জায়গায় থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া মানুষের একটি স্বভাব। সে স্থান পরিবর্তনের ইচ্ছা করে। যদি জান্নাতের বাইরে কোথাও যাওয়ার অনুমতি না থাকে, তবে জান্নাতও কি খারাপ মনে হতে থাকবে?  আলোচ্য আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে, জান্নাতের নেয়ামত ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশের সামনে দুনিয়াতে দেখা ও ব্যবহার করা বস্তুসমূহ তার কাছে নগণ্য ও তুচ্ছ মনে হবে। জান্নাত থেকে বাইরে যাওয়ার কল্পনাও কোন সময় মনে জাগবে না। অৰ্থাৎ তার চেয়ে আরামদায়ক কোন পরিবেশ কোথাও থাকবে। না। ফলে জান্নাতের জীবন তার সাথে বিনিময় করার কোন ইচ্ছাই তাদের মনে জাগবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১০৮) সেথায় তারা স্থায়ী হবে; এর পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া কামনা করবে না।[1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ জানণাতবাসীদের জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতসমূহ পেয়ে কখনো তাদের মন একঘেয়েমি অনুভব করবে না, যাতে তারা জান্নাত ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১০৭-১০৮ নং আয়াতের তাফসীর:



আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের কথা বর্ণনা করার পর উক্ত আয়াতগুলোতে যারা সৎ আমল করবে তাদের পুরস্কারের কথা বর্ননা করছেন। যারা ঈমানের সাথে সৎ আমল করবে তাদের আপ্যায়নস্বরূপ জান্নাতুল ফিরদাউস প্রদান করা হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَنُوْدُوْآ أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)‏



“এবং তাদেরকে আহ্বান করে বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৪৩)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে, সালাত কায়েম করবে, রমযান মাসে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর দায়িত্ব হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। সে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করুক, অথবা জন্মস্থানে বসে থাকুক। সাহাবীরা বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি মানুষকে এ সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন: নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি মর্তবা রয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রত্যেক মর্তবার মাঝে পার্থক্য হল আকাশ-জমিনের মত। সুতরাং যখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে জান্নাত চাইবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে। কারণ তা সবার মাঝে ও সর্বোচ্চ জান্নাত। তার ওপরেই দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার আরশ এবং সেখান থেকেই জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৯০)



সুতরাং প্রতিটি মুমিনের উচিত বেশি বেশি সৎ আমল করা। কেননা জান্নাতে যাওয়ার প্রধান উপায় হল ঈমান ও সৎ আমল।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. যারা ভাল কাজ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে ও সেখান থেকে কোথাও যাওয়ার কামনা করবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১০৭-১০৮ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা তার সৎকর্মশীল বান্দাদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন। তারা হচ্ছে, ওরাই যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে, তাঁর রাসূলদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করে এবং তাদের কথা ও নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। তাদের জন্যে রয়েছে ফিরদাউসের উদ্যান। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হচ্ছে রোমীয় বাগান। কা'ব (রাঃ) সুদ্দী (রঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) বলেন, যে, ওটা হলো এমন বাগান যাতে আঙ্গুরের গাছ রয়েছে। আবূ উমামা (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হলো বেহেশতের নাভী স্বরূপ। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ফিরদাউস হলো সর্বোত্তম জান্নাত। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করবে, তখন তাঁর কাছে ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করো। কেননা, ওটাই সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম জান্নাত। ওখান হতেই জান্নাতের নহরগুলি প্রবাহিত হয়।”

এটাই হবে তাদের অতিথিশালা। সেখানে তারা অতিথি হিসেবে চিরকাল অবস্থান করবে। সেখান থেকে তাদেরকে বের করা হবে না এবং বের হবার তারা কামনাও করবে না। কেননা, ওর চেয়ে সুখময় স্থান আর নেই। সেখানে সর্বপ্রকারের উচ্চমানের জীবনোপকরণের সুব্যবস্থা রয়েছে। কোন কিছুরই অভাব নেই। একের পর এক রহমত আসতেই থাকবে। সুতরাং দৈনন্দিন আগ্রহ, প্রেম-প্রীতি এবং আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। মনে কোন বিরক্তি আসবে না বরং ওরই প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেন, তারা এর পরিবর্তে অন্য স্থান কামনা করবে না। অর্থাৎ তারা এটা ছাড়া অন্যটা পছন্দ করবে না এবং এটা ব্যতীত অন্য কিছু ভালবাসবে না। এখান ছেড়ে অন্য কোন জায়গায় তারা যেতেও চাবে না।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।