সূরা ইউসুফ (আয়াত: 108)
হরকত ছাড়া:
قل هذه سبيلي أدعو إلى الله على بصيرة أنا ومن اتبعني وسبحان الله وما أنا من المشركين ﴿١٠٨﴾
হরকত সহ:
قُلْ هٰذِهٖ سَبِیْلِیْۤ اَدْعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیْرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیْ ؕ وَ سُبْحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِکِیْنَ ﴿۱۰۸﴾
উচ্চারণ: কুল হা-যিহী ছাবীলীআদ‘ঊইলাল্লা-হি ‘আলা-বাসীরাতিন আনা ওয়া মানিত্তাবা‘আনী ওয়া ছুবহা-নাল্লা-হি ওয়ামাআনা মিনাল মুশরিকীন।
আল বায়ান: বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১০৮. বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি(১) এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও(২)। আর আল্লাহ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।(৩)
তাইসীরুল ক্বুরআন: বল, ‘এটাই আমার পথ, আল্লাহর পথে আহবান জানাচ্ছি, আমি ও আমার অনুসারীরা, স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে। আল্লাহ মহান, পবিত্র; আমি কক্ষনো মুশরিকদের মধ্যে শামিল হব না।
আহসানুল বায়ান: (১০৮) তুমি বল, ‘এটাই আমার পথ। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে আমি এবং আমার অনুসারীবৃন্দও।[1] আল্লাহ পবিত্র। [2] আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’
মুজিবুর রহমান: তুমি বলঃ এটাই আমার (আল্লাহর) পথ; প্রতিটি মানুষকে আমি আহবান করি সজ্ঞানে, আমি এবং আমার অনুসারীগণও; আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে আমি তাদের অন্তভুর্ক্ত নই।
ফযলুর রহমান: বল, “এই আমার পথ। আমি জেনে বুঝে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি ও আমার অনুসারীরা; আল্লাহ মহিমান্বিত! আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।”
মুহিউদ্দিন খান: বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।
জহুরুল হক: তুমি বল -- "এই হচ্ছে আমার পথ, আমি আল্লাহ্র প্রতি আহ্বান করি, আমি ও যারা আমাকে অনুসরণ করে তারা জ্ঞানালোকের উপরে রয়েছি। আর আল্লাহ্রই সব মহিমা, আর আমি বহুখোদাবাদীদের মধ্যেকার নই।"
Sahih International: Say, "This is my way; I invite to Allah with insight, I and those who follow me. And exalted is Allah; and I am not of those who associate others with Him."
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১০৮. বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি(১) এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও(২)। আর আল্লাহ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।(৩)
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ আপনি তাদেরকে বলে দিন, আমার তরীকা এই যে, মানুষকে সম্পূর্ণ জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতে থাকব -আমি এবং আমার অনুসারীরাও। এটাই আমার পথ, পদ্ধতি ও নিয়ম যে আমি আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই একমাত্র তিনিই মা’বুদ, তাঁর কোন শরীক নেই, এ সাক্ষ্য দানের দিকে মানুষকে আহবান জানাব। জেনে বুঝে, বিশ্বাস ও প্রমাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে এ পথে আহবান জানাবো। অনুরূপভাবে যারা আমার অনুসরণ করবে তারা সবাই এ পথের দাওয়াত দিবে। যে পথে তাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিয়েছেন। তারাও এটা করবে সম্পূর্ণরূপে জেনে-বুঝে, শরীআত ও বিবেক অনুমোদিত পদ্ধতিতে। [ইবন কাসীর] উদ্দেশ্য এই যে, আমার দাওয়াত আমার কোন চিন্তাধারার উপর ভিত্তিশীল নয়; বরং এটা পরিপূর্ণ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার ফলশ্রুতি। আমার উপর যারা ঈমান আনবে এবং আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে তারাও এ দাওয়াতের কাজ করবে। [বাগভী]
(২) যারা আমার অনুসরণ করেছে এখানে তার অনুসরণকারী কারা তা নির্ধারণে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এতে সাহাবায়ে কেরামকে বোঝানো হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জ্ঞানের বাহক। আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ। তাদের অন্তর পবিত্র এবং জ্ঞান সুগভীর। তাদের মধ্যে লৌকিকতার নাম-গন্ধও নেই। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে স্বীয় রাসূলের সংসর্গ ও সেবার জন্য মনোনীত করেছেন। তোমরা তাদের চরিত্র অভ্যাস ও তরীকা আয়ত্ত কর। কেননা, তারা সরল পথের পথিক। কলবী ও ইবনে যায়েদ বলেনঃ এ আয়াত থেকে আরো জানা গেল যে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের দাবী করে, তার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তার দাওয়াতকে ঘরে ঘরে পৌছানো এবং কুরআনের শিক্ষাকে ব্যাপকতর করা। [বাগভী; কিওয়ামুস সুন্নাহ আল-ইসফাহানী, আল-হুজ্জাহ কী বায়ানিল মাহাজ্জাহঃ ৪৯৮]
(৩) অর্থাৎ আল্লাহ শির্ক থেকে পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। উপরে বর্ণিত হয়েছিল যে, অধিকাংশ লোক ঈমানের সাথে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শির্ককেও যুক্ত করে দেয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শির্ক থেকে নিজের সম্পূর্ণ পবিত্রতার প্রকাশ করেছেন। সারকথা এই যে, আমার দাওয়াতের উদ্দেশ্য মানুষকে নিজের দাসে পরিণত করা নয়; বরং আমি নিজেও আল্লাহর দাস এবং মানুষকেও তার দাসত্ব স্বীকার করার দাওয়াত দেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১০৮) তুমি বল, ‘এটাই আমার পথ। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে আমি এবং আমার অনুসারীবৃন্দও।[1] আল্লাহ পবিত্র। [2] আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, এই তাওহীদের পথই আমার পথ; বরং তা সকল নবীর পথ। এ দিকেই আমি এবং আমার অনুবর্তীরা শরয়ী দলীল সহ পূর্ণ প্রত্যয়ের সাথে মানুষকে আহবান করে থাকি।
[2] অর্থাৎ, আমি ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ অংশীদার, সমকক্ষ, মন্ত্রী, পরামর্শদাতা, সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রী থেকে পবিত্র।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১০৮-১১১ নং আয়াতের তাফসীর:
ইউসুফ (عليه السلام) এর জীবনী বিস্তারিত তুলে ধরার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীকে নির্দেশ দিচ্ছেন বলে দাও পূর্বের নাবীরা যেমন সঠিক জ্ঞান ও তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে তাঁর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন আমিও তাওহীদের পথ অবলম্বন করে তাঁর দিকে দাওয়াত দিচ্ছি। তবে এ দাওয়াতী কাজ শুধু আমি একাই করি না, বরং আমি ও আমার অনুসারী যারা সবাই এ কাজ করে।
সুতরাং যারাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মত বলে দাবি করবে তাদের উচিত ও আবশ্যক হল নিজে সৎ আমল করা এবং মানুষদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে ডাকা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা। আর তাঁকে সর্বপ্রকার দোষ-ত্র“টি থেকে পবিত্র রাখা। এটাই ছিল সকল নাবীগণের কাজ। তাঁরা মানুষদেরকে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের দিকে আহ্বান করতেন।
উক্ত আয়াতে একজন দাঈ ইলাল্লাহ বা আল্লাহ তা‘আলার পথে আহ্বানকারীর পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে:
(১) (الدَّعْوَةُ إِلَي اللّٰهِ)
আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান; অর্থাৎ কোন দল, মত, পথ ও মাযহাব বা তরীকার প্রতি দাওয়াত নয়, বরং দাওয়াত হতে হবে সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার দিকে তথা আল্লাহ তা‘আলার দীন ইসলামের প্রতি। আর দীন ইসলামের প্রতি দাওয়াতের প্রথম পদক্ষেপ হবে তাওহীদ বা আল্লাহ তা‘আলার একত্ব ও আকীদাহ বিশ্বাস এর প্রতি দাওয়াত। অতঃপর ইসলামের অন্যান্য ইবাদতের প্রতি। এটাই হল নাবী-রাসূলদের দাওয়াতী নীতি ও পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ পদ্ধতি তাঁর সাহাবী তথা উম্মাতকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানে দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করেন তখন তাকে নির্দেশ দেন: “সর্বপ্রথম তুমি যে বিষয় দাওয়াত দেবে তাহল এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ বা একত্বতার প্রতি যেন তোমার প্রথম দাওয়াত হয়। তারা যদি তোমার এ তাওহীদের দাওয়াত পূর্ণভাবে মেনে নেয় অতঃপর তাদের জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাত ও দিনে তোমাদের ওপর পাচঁ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন, এভাবে যাকাত ও অন্যান্য কথা বললেন। (সহীহুল বুখারী হা: ১৩৯৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৯)
অতএব আলিমদের দাওয়াত হতে হবে সর্বপ্রথম তাওহীদ বা আকীদা বিশ্বাসের দিকে, কারণ আকীদাহ বিশ্বাসই হলো সবকিছুর মূল, আকীদাহ বাতিল হলে সবকিছু বাতিল হয়ে যায়।
(২) (عَلٰي بَصِيْرَةٍ)
“জ্ঞান-বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণসহকারে” অর্থাৎ যে বিষযের প্রতি দাওয়াত দেব সে বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। না জেনে, না বুঝে প্রমাণহীন আমল-আখলাক ও ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি দাওয়াত দিলে হিদায়াতের পরিবর্তে গুমরাহির বেশি সম্ভাবনা থাকে।
(৩) (أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ)
“আমি এবং আমার অনুসারীরা” অতএব যে আলিম দাওয়াত দেবেন, তাকে সকল পীর মুরশিদ ও দল, তরীকার অনুসরণ বর্জন করে ব্যক্তি হিসেবে ও দাওয়াতের বিষয়ে একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসারী হতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুকরণ ইবাদত কবূলের অন্যতম শর্ত, তা লঙ্ঘিত হলে এ দাওয়াত আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হতে পারে না। অতএব কোন মুজতাহিদ, মুফতী, পীর-মুর্শিদ ও বুজুর্গের অনুসরণ নয় বরং অনুসরণ হবে শুধু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের।
(৪) (وَسُبْحٰنَ اللّٰهِ)
“আল্লাহ তা‘আলা পূত পবিত্র” দাওয়াতের প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহ তা‘আলাকে শির্কমুক্ত ও পূত পবিত্র রাখতে হবে এবং সে সঠিক বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দিতে হবে।
(৫) (وَمَآ أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ)
“আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই” অতএব একজন আলিম বা দাঈকে আকীদাহ-বিশ্বাস, আমল-আখলাক ও ইবাদত-বন্দেগী সকল ক্ষেত্রে শির্ক মুক্ত হতে হবে। আলিম সমাজের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আহ্বান করা। আর এক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়সমূহ অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে নচেৎ দাওয়াতে সার্থক ও সফল হওয়া সম্ভব হবে না।
(إِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْ إِلَيْهِمْ)
অর্থাৎ সকল নাবী-রাসূলই পুরুষ ছিলেন, কোন নাবী-রাসূল মহিলা ছিলেন না।
(حَتّٰي إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ)
অর্থাৎ যখন রাসূলগণ তাদের সম্প্রদায়ের লোকেদের থেকে ঈমানের আশা থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এরূপ বিশ্বাস তাদের চলে আসল তখন তাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য এসেছিল। অতএব যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকেসহ আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আর যারা অপরাধী, আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হয় তাদের থেকে তিনি শাস্তি প্রত্যাহার করেন না। বরং তিনি কিছু সময়ের অবকাশ দেন, যখন তিনি শাস্তি দেয়া উপযুক্ত মনে করেন তখন শাস্তি দেন।
(مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰي)
ইউসুফ (عليه السلام) এর জীবন কাহিনী শুনে অনেকে মনে করতে পারে যে, এটা একটা মিথ্যা ঘটনা যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রচনা করেছেন। না, এটা কোন মিথ্যা ঘটনা নয় এবং বাণীও নয়, বরং এ কিতাব পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং সকল কিছুর বিশদ বর্ণনাকারী। যারা এ কুরআন নিয়ে গবেষণা করবে তাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা এবং যারা ঈমান আনবে তাদেরকে এ কিতাব সঠিক পথ দেখাবে ও তাদের প্রতি করুনা হয়ে থাকবে।
সুতরাং আমরা যদি দৃঢ় ঈমানের সাথে কুরআনের মর্মার্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি তাহলে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারব এবং তা আমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেবে ও রহমত হয়ে থাকবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সহ সকল নাবীর দাওয়াতী মূলনীতি ছিল একটাই যে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রতি আহ্বান ও শির্ক হতে বিরত রাখা।
২. পুরুষের ওপর মহিলার নেতৃত্ব দেয়া ঠিক নয়। কারণ তা অশান্তি ও ব্যর্থতার কারণ। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা কোন মহিলাকে নবুওয়াতের দায়িত্ব দেননি।
৩. দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় অতি নগণ্য, আখিরাতই স্থায়ী এবং মু’মিনের জন্য চির সুখের স্থান। সুতরাং আখিরাতকেই সর্বাবস্থায় প্রাধান্য দেয়া উচিত।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: সমস্ত দানব ও মানবের প্রতি প্রেরিত রাসূলকে (সঃ) আল্লাহ তাআ’লা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ জনগণকে তুমি খবর দিয়ে দাওঃ আমার নীতি, আমার পন্থা এবং আমার সুন্নাত এই যে, আমি সাধারণভাবে আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করবো। পরিপূর্ণ বিশ্বাস, দলীল প্রমাণ এবং বিচক্ষণতার সাথে আমি সকলকে ঐ দিকে আহবান করছি। আমার যতগুলি অনুসারী রয়েছে তারাও সবাই ঐ দিকেই আহবান করছে। তারা সবাই মিলে শরীয়ত সম্মত ও জ্ঞান সম্মত দলীল প্রমাণের মাধ্যমে ঐ দিকে ডাক দিচ্ছে। আমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি। আমরা তারই মর্যাদা, পবিত্রতা এবং গুণগান বর্ণনা করে থাকি। আমরা তাকে শরীক, তুলনীয়, সমকক্ষ, উযীর, পরামর্শদাতা এবং সর্বপ্রকারের দুর্বলতা ও ক্রটি থেকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, তার কোন সন্তান নেই, স্ত্রী নেই এবং কোন সমকক্ষ নেই। তিনি এসব জঘন্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। আসমান ও যমীন এবং এতোদুভয়ের সমস্ত মাখলুক তার প্রশংসা ও গুণ কীর্তন করে থাকে। কিন্তু মানুষ এ গুলি বুঝতে পারে না। আল্লাহ অত্যন্ত সহনশীল ও ক্ষমাশীল।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।