সূরা ইউনুস (আয়াত: 5)
হরকত ছাড়া:
هو الذي جعل الشمس ضياء والقمر نورا وقدره منازل لتعلموا عدد السنين والحساب ما خلق الله ذلك إلا بالحق يفصل الآيات لقوم يعلمون ﴿٥﴾
হরকত সহ:
هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِیَآءً وَّ الْقَمَرَ نُوْرًا وَّ قَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِیْنَ وَ الْحِسَابَ ؕ مَا خَلَقَ اللّٰهُ ذٰلِکَ اِلَّا بِالْحَقِّ ۚ یُفَصِّلُ الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ ﴿۵﴾
উচ্চারণ: হুওয়াল্লাযী জা‘আলাশশামছা দিয়াআওঁ ওয়ালকামারা নূরাওঁ ওয়াকাদ্দারাহূমানা-যিলা লিতা‘লামূ‘আদাদাছ ছিনীনা ওয়ালহিছা-বা মা-খালাকাল্লা-হু যা-লিকা ইল্লাবিলহাক্কি ইউফাসসিলুল আ-য়া-তি লিকাওমিইঁ ইয়া‘লামূন।
আল বায়ান: তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫. তিনিই সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এগুলোকে যথাযথ ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।(১) তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।
তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
আহসানুল বায়ান: (৫) তিনিই সেই সত্তা যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান ও চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেন[1] এবং ওর (গতির) জন্যে কক্ষসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার।[2] আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন।
মুজিবুর রহমান: আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মানযিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ঐসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান।
ফযলুর রহমান: তিনিই প্রখর কিরণের জন্য সূর্য আর স্নিগ্ধ আলোর জন্য চনদ্র সৃষ্টি করেছেন। এই চনদ্রকে তিনি কতগুলো পরিমাপ-স্তরে বিন্যস্ত করেছেন, যাতে তোমরা বছরের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার। একে আল্লাহ যথার্থই সৃষ্টি করেছেন। তিনি জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শনসমূহ ব্যাখ্যা করে থাকেন।
মুহিউদ্দিন খান: তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।
জহুরুল হক: তিনিই তো সূর্যকে করেছেন তেজস্কর, আর চন্দ্রকে জ্যোতির্ময়, আর তার জন্য নির্ধারিত করেছেন অবস্থানসমূহ যেন তোমরা জানতে পারো বৎসরের গণনা ও হিসাব। আল্লাহ্ এ সৃষ্টি করেন নি সার্থকতা ছাড়া। তিনি নির্দেশাবলী বিশদ-ব্যাখ্যা করেন সেইসব লোকের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।
Sahih International: It is He who made the sun a shining light and the moon a derived light and determined for it phases - that you may know the number of years and account [of time]. Allah has not created this except in truth. He details the signs for a people who know
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৫. তিনিই সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এগুলোকে যথাযথ ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।(১) তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ তিনি এগুলো অনাহুত সৃষ্টি করেননি বরং তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়, তাঁর প্রত্যেকটি কাজই প্রজ্ঞায় পূর্ণ। আসমান ও যমীন সৃষ্টির মাঝে কোন হেকমত নেই এমন কথা শুধুমাত্র কাফেররাই বলতে পারে। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন, সূরা সোয়াদঃ ২৭, সূরা আল-মূমিনূনঃ ১১৫–১১৬]।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৫) তিনিই সেই সত্তা যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান ও চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেন[1] এবং ওর (গতির) জন্যে কক্ষসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার।[2] আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন।
তাফসীর:
[1] ضِيَآءٌ , ضُوْءٌ সমার্থবোধক শব্দ। এখানে ‘মুযাফ’ (সম্বন্ধপদের প্রথমাংশ) উহ্য আছে; অর্থাৎ, ذات ضياء والقمر ذا نور ‘‘সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চন্দ্রকে আলোময় বানিয়েছেন।’’ অথবা তাকে অতিশয়োক্তি বলে ধরা হবে; অর্থাৎ ঠিক যেন তা নিজেই প্রদীপ্ত ও আলো। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তার পরিচালনার কথা বর্ণনার পর উদাহরণ স্বরূপ আরো কিছু বস্তুর বর্ণনা করা হচ্ছে, যা বিশ্ব-পরিচালনার অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে সূর্য ও চন্দ্র অধিক গুরুতত্ত্বপূর্ণ। সূর্যের তাপ ও তার আলোর প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেকেই জানে। অনুরূপ চন্দ্রের মৃদু জ্যোৎস্নালোকের যে মধুরতা ও উপকারিতা আছে, তাও বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। বৈজ্ঞানিকদের মতে সূর্যের নিজস্ব আলো আছে আর চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই বরং সূর্যের আলো থেকে আলো গ্রহণ করে থাকে। (ফাতহুল কাদীর) والله أعلم بالصواب
[2] অর্থাৎ আমি চন্দ্র পরিভ্রমণের কক্ষপথ নির্ধারণ করে দিয়েছি। কক্ষপথ বলতে তার ঐ পরিভ্রমণপথকে বুঝায়, যা চাঁদ এক দিন ও এক রাত্রে তার বিশেষ পরিক্রমণ দ্বারা অতিক্রম করে। উক্ত কক্ষ হল আটাশটি। প্রত্যেক রাত্রে একটি কক্ষ সমাপ্ত করে, তাতে কখনো কোন ব্যতিক্রম হয় না। প্রথম কক্ষগুলিতে চাঁদকে ছোট ও সরু দেখা যায়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এমন কি চৌদ্দ রাত্রি বা চৌদ্দতম কক্ষে গিয়ে তা পূর্ণ (পূর্ণিমার) চন্দ্র রূপে প্রকাশ হয়। তার পর পুনরায় ছোট ও সরু হতে আরম্ভ করে, এমনকি শেষে এক বা দুই রাত্রি লুক্কায়িত থাকে এবং পরে প্রথম দিনের ক্ষীণচন্দ্র রূপে উদিত হয়। চন্দ্রের উপকারিতা এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘‘যাতে তোমরা বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব করতে পার।’’ অর্থাৎ চন্দ্রের সেই কক্ষপথ ও গতি দ্বারাই মাস ও বছর গণনা হয়, যার দ্বারা তোমাদের সকল বস্তুর হিসাব রাখা সহজ হয়। অর্থাৎ বছর বার মাসের, মাস উনত্রিশ বা ত্রিশ দিনের, দিবারাত্রি চবিবশ ঘণ্টার, সমান সমান দিন হলে বার ঘণ্টা করে এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে কমবেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া পার্থিব উপকার ও কাজ-কারবার শুধু সেই চন্দ্রের কক্ষপথের সাথে সম্পৃক্ত নয়; বরং তাতে দ্বীনী লাভও অর্জন হয়। নতুন চাঁদ দ্বারা হজ্জ, রমযানের রোযা, নিষিদ্ধ মাস এবং অন্যান্য ইবাদতের সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়, প্রত্যেক মু’মিন তার গুরুতত্ত্ব দিয়ে থাকে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতার পূর্ণতা ও সাম্রাজ্যের প্রমাণস্বরূপ বহু নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন সে সংবাদ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা মহান স্রষ্টা তার প্রমাণ বহন করে এমন অনেক নিদর্শন তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল চন্দ্র ও সূর্য। আল্লাহ তা‘আলা সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চন্দ্রকে করেছেন আলোকময়। কুরআনে সূর্যকে বুঝাতে الشَّمْسَ (শামস) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার السراج (সিরাজ) শব্দটি দ্বারাও সূর্যকে বুঝানো হয়ে থাকে, যার অর্থ বাতি বা মশাল। অন্যত্র সূর্যকে الشَّمْسَ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো প্রজ্জ্বলিত বাতি। এখানে একই অর্থ বুঝানোর জন্য ضِيَا۬ءً শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে উজ্জ্বল জ্যোতি। তিনটি বর্ণনার সবই সূর্যের জন্য উপযোগী। কারণ, সূর্য নিজ দহনক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচণ্ড তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। আর চাঁদকে বলা হয়েছে الْقَمَرَ (কামার), একে منير (মুনির) ও বলা হয়েছে। যার অর্থ স্নিগ্ধ আলো দানকারী। তাছাড়া চাঁদ হচ্ছে একটি নিষ্ক্রিয় জিনিস, যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে, চাঁদের এ বৈশিষ্ট্যের সাথে কুরআনের বর্ণনা হুবহু মিলে যায়। কুরআনে একবারের জন্যও চাঁদকে السراج (সিরাজ) وهاج (ওয়াহহাজ) বা ضِيَا۬ءً (জিয়া) হিসেবে এবং সূর্যকে نُوْرً (নূর) منير (মুনীর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআন সূর্যের আলো এবং চন্দ্রের আলোর পার্থক্যকে স্বীকার করে। এরূপ আয়াত সূরা ফুরকানের ৬১ নং এবং সূরা নূহের ১৬ নং এ উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো, যা বর্তমান বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে অথচ কুরআন তা ১৪০০ বছর পূর্বে প্রমাণ করেছে।
(وَّقَدَّرَه۫ مَنَازِلَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা চন্দ্র পরিভ্রমণের কক্ষপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কক্ষপথ বলতে তার ঐ পরিভ্রমণ পথকে বুঝায় যা চাঁদ এক দিন ও এক রাতে তার বিশেষ পরিক্রমণ দ্বারা অতিক্রম করে। উক্ত কক্ষ হল আশিটি। প্রত্যেক রাতে একটি কক্ষ সমাপ্ত করে, তাতে কখনো কোন ব্যতিক্রম হয় না। প্রথম কক্ষগুলোতে চাঁদকে ছোট ও সরু দেখা যায়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এমন কি চৌদ্দ রাত্রি বা চৌদ্দতম কক্ষে গিয়ে তা পূর্ণ (পূর্ণিমার) চন্দ্র রূপে প্রকাশ হয়। তার পর পুনরায় ছোট ও সরু হতে আরম্ভ করে, এমনকি শেষে এক বা দুই রাত্রি লুক্কায়িত থাকে এবং পরে প্রথম দিনের ক্ষীণ চন্দ্ররূপে উদিত হয়। চন্দ্রের উপকারিতা এ কারণে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসেব করতে পার। অর্থাৎ চন্দ্রের সে কক্ষপথ ও গতি দ্বারাই মাস ও বছর গণনা হয়, যার দিনের, দিবারাত্রি চব্বিশ ঘন্টার সমান সমান দিন হলে বার ঘন্টা করে এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে কমবেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া পার্থিব উপকার ও কাজ কারবার শুধু সেই চন্দ্রের কক্ষপথের সাথে সম্পৃক্ত নয় বরং তাতে দীনি লাভও অর্জন হয়। নতুন চাঁদ দ্বারা হজ্জ, রমাযানের রোযা, নিষিদ্ধ মাস এবং অন্যান্য ইবাদতের সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়, প্রত্যেক মু’মিন তাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা এ সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করেছেন যাতে করে জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। এগুলোকে অযথা সৃষ্টি করেননি। দিন-রাতের আবর্তন ও আকাশ-জমিন যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মাঝে মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। সূর্য উঠছে, অস্ত যাচ্ছে, দিন-রাত এক এক করে আসছে আর চলে যাচ্ছে। এভাবে একদিন একদিন করে সপ্তাহ, মাস, বছর অতীত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অনুধাবন করতে পারছে না, এর মধ্যে তার জীবনটা অতীত হয়ে যাচ্ছে। একদিন দেখা যাবে সূর্য উঠছে কিন্তু সে মানুষ আর নেই। অর্থাৎ পৃথিবী তার আপন গতিতে চলবে কিন্তু মানুষ একদিন বিদায় নেবে।
আয়াত হতে শিক্ষনীয় বিষয়:
১. চন্দ্র, সূর্য সৃষ্টি করার হিকমত জানতে পারলাম।
২. প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিতে মানুষের জন্য উপকার রয়েছে।
৩. জ্ঞানীদের মর্যাদা জানতে পারলাম।
৪. দিন-রাতের পরিবর্তনের মাঝে ইঙ্গিত রয়েছে পৃথিবী একদিন শেষ হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকেই একদিন বিদায় নেবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার ক্ষমতার পূর্ণতা এবং তার সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের প্রমাণস্বরূপ বহু নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। সূর্যের কিরণ হতে বিচ্ছুরিত আলোকমালাকে তিনি তোমাদের জন্যে দীপ্তি বানিয়েছেন। আর চন্দ্রের কিরণকে তোমাদের জন্যে নূর বানিয়েছেন। সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্য রকম। একই আলো, অথচ দুটোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। একটির কিরণ অপরটির সঙ্গে মোটেই খাপ খায় না বা একটির কিরণের সাথে অপরটির কিরণ মিলিত হয় না। দিবসে সূর্যের রাজত্ব আর রাত্রে চন্দ্রের কর্তৃত্ব। দুটোই আসমানী আলোকবর্তিকা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সূর্যের মঞ্জিল নির্ধারণ করেননি, অথচ চন্দ্রের মঞ্জিল তিনি নির্ধারণ করেছেন। প্রথম তারিখের চাঁদ অতি ক্ষুদ্ররূপে প্রকাশিত হয়। তারপর ওর কিরণও বাড়ে এবং আয়তনও বেড়ে যায় ।
শেষ পর্যন্ত ওটা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং গোল বৃত্তের আকার ধারণ করে। এরপর আবার কমতে শুরু করে এবং পূর্ণ একমাস পর প্রথম অবস্থায় এসে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি চন্দ্রের জন্যে মঞ্জিলসমূহ নির্ণিত করে রেখেছি (এবং ওটা তা অতিক্রম করছে), এমন কি ওটা (অতিক্রম শেষে ক্ষীণ হয়ে) এইরূপ হয়ে যায়, যেন খেজুরের পুরাতন শাখা । সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে গিয়ে ধরবে, আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে; এবং উভয়ে এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করছে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “সূর্য ও চন্দ্রের নিজ নিজ হিসাব রয়েছে। এই আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে যে, সূর্যের মাধ্যমে দিনের পরিচয় পাওয়া যায়, আর চন্দ্রের আবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া যায় মাস ও বছরের হিসাব। আল্লাহ এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। বরং জগত সৃষ্টি মহান আল্লাহর বিরাট নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে এবং এটা তার ব্যাপক ক্ষমতার যে স্পষ্ট প্রমাণ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশ, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে এগুলোকে বৃথা সৃষ্টি করিনি, এটা হচ্ছে কাফিরদের ধারণা, সুতরাং কাফিরদের জন্যে রয়েছে (জাহান্নামের আগুনের শাস্তি।” (৩৮:২৭) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি তোমরা এই ধারণা করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। আর এটাও (ধারণা করেছিলে) যে, তোমাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না? অতএব আল্লাহ অতি উচ্চ মর্যাদাবান, তিনি প্রকৃত বাদশাহ, তিনি ছাড়া কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়, তিনি মহান আরশের মালিক।” (২৩:১১৫-১১৬) আয়াতগুলোর ভাবার্থ হচ্ছে- আমি দলীল প্রমাণাদি খুলে খুলে বর্ণনা করছি যাতে অনুধাবনকারীরা অনুধাবন করতে পারে।
(আরবী) এর ভাবার্থ এই যে, দিন গেলে রাত্রি আসে এবং রাত্রি গেলে দিনের আগমন ঘটে। একে অপরের উপর জয়যুক্ত হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “রাত দিনের উপর ছেয়ে যায় এবং দিন রাতের উপর ছেয়ে যায়, কিন্তু এটা সম্ভব নয় যে, সূর্য চন্দ্রের সাথে টক্কর খায়।” মহান আল্লাহ বলেনঃ “সকাল হয়ে যায় এবং রাত্রি নির্বিঘ্নে অতিক্রান্ত হয়।
আল্লাহ আসমান ও যমীনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, তার ক্ষমতা কতই না ব্যাপক। যেমন তিনি বলেনঃ “আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে আল্লাহর কতই না নিদর্শন রয়েছে।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “তুমি বলে দাও- তোমরা লক্ষ্য কর যে, আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে কতই না নিদর্শন রয়েছে এবং যারা ঈমানদার নয় তাদেরকে সতর্ককারী নিদর্শনের কোনই অভাব নেই। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ “তারা কি আকাশ ও পৃথিবীতে তাদের সামনে ও পিছনে দৃষ্টিপাত করে না?” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃজনে এবং পর্যায়ক্রমে দিবা ও রাত্রির গমনাগমনে নিদর্শনসমূহ রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে। আর এখানে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই নিদর্শনসমূহ রয়েছে ঐ লোকদের জন্যে যারা (আল্লাহর শাস্তির) ভয় করে।”
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।