আল কুরআন


সূরা ইউনুস (আয়াত: 32)

সূরা ইউনুস (আয়াত: 32)



হরকত ছাড়া:

فذلكم الله ربكم الحق فماذا بعد الحق إلا الضلال فأنى تصرفون ﴿٣٢﴾




হরকত সহ:

فَذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمُ الْحَقُّ ۚ فَمَا ذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلٰلُ ۚۖ فَاَنّٰی تُصْرَفُوْنَ ﴿۳۲﴾




উচ্চারণ: ফাযা-লিকুমুল্লা-হু রাব্বুকুমুল হাক্কু ফামা-যা-বা‘দাল হাক্কিইল্লাদ্দালা-লু ফাআন্না-তুসরাফূন।




আল বায়ান: অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে?




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩২. অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য রব(১)। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী থাকে(২)? কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে?(৩)




তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। প্রকৃত সত্যের পর গুমারাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তোমাদেরকে কোনদিকে ঘুরানো হচ্ছে?




আহসানুল বায়ান: (৩২) সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? তবে তোমরা (সত্য ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ? [1]



মুজিবুর রহমান: সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রকৃত রাব্ব, অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি রইল? তাহলে তোমরা (সত্যকে ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ?



ফযলুর রহমান: এই হচ্ছে তোমাদের সঠিক প্রভু আল্লাহ। অতএব, সত্যের পরে (বাইরে) বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী থাকতে পারে? অতএব, (এই সত্য থেকে) তোমরা কীভাবে বিচ্যুত হচ্ছ?



মুহিউদ্দিন খান: অতএব, এ আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা। আর সত্য প্রকাশের পরে (উদভ্রান্ত ঘুরার মাঝে) কি রয়েছে গোমরাহী ছাড়া? সুতরাং কোথায় ঘুরছ?



জহুরুল হক: এই তবে আল্লাহ্‌, -- তোমাদের আসল প্রভু, সত্যের পরে তবে মিথ্যা ভিন্ন আর কি থাকে? সুতরাং কোথায় তোমরা ফিরে যাচ্ছ?



Sahih International: For that is Allah, your Lord, the Truth. And what can be beyond truth except error? So how are you averted?



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৩২. অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য রব(১)। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী থাকে(২)? কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে?(৩)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ যদি এসবই আল্লাহর কাজ হয়ে থাকে, যেমন তোমরা নিজেরাও স্বীকার করে থাকো, তাহলে তো প্রমাণিত হলো যে, একমাত্র আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত মালিক, রব, প্রভু এবং তোমাদের বন্দেগী ও ইবাদাতের হকদার। [ইবন কাসীর] কাজেই অন্যের, যাদের এসব কাজে কোন অংশ নেই তারা কেমন করে রবের দায়িত্বে শরীক হয়ে গেলো। কিভাবে তারা ইবাদত পেতে পারে?


(২) ইনিই হলেন সেই মহান সত্তা যাঁর গুণ-পরাকাষ্ঠার বিবরণ এইমাত্র বর্ণিত হলো, তারপরে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি থাকতে পারে? অর্থাৎ যখন আল্লাহ্ তা'আলার নিশ্চিত উপাস্য হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন প্রমাণিত হলো যে, তিনি ছাড়া আর সবই বাতিল। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। [ইবন কাসীর] সুতরাং সেই নিশ্চিত সত্যকে পরিহার করে অন্যান্যদের প্রতি মনোনিবেশ করা কঠিন নির্বুদ্ধিতার কাজ। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যায় যে, ঈমান ও কুফরির মাঝে কোন সংযোগ নেই। যা ঈমান হবে না, তাই কুফর হবে। [কুরতুবী]


(৩) বলা হচ্ছে, “তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে?” অর্থাৎ যখন তোমরা জানতে পারলে যে, আল্লাহই একমাত্র রব, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন,সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন তখন কিভাবে তাঁর ইবাদত ছেড়ে অন্যের ইবাদতের দিকে তোমাদের ফেরানো হয়? [ইবন কাসীর] এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, এমন কিছু বিভ্রান্তকারী রয়েছে যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে টেনে নিয়ে ভুল দিকে ফিরিয়ে দেয়। তাই মানুষকে আবেদন জানানো হচ্ছে, তোমরা অন্ধ হয়ে ভুল পথপ্রদর্শনকারীদের পেছনে ছুটে যাচ্ছে কেন? নিজেদের বুদ্ধ ব্যবহার করে চিন্তা করছে না কেন যে, প্রকৃত সত্য যখন এই, তখন তোমাদেরকে কোন দিকে চালিত করা হচ্ছে?


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৩২) সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? তবে তোমরা (সত্য ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ? [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ প্রভু ও উপাস্য তো তিনিই, যাঁর জন্য তোমরা নিজেরাই স্বীকার কর যে, তিনি সমস্ত বস্তুর স্রষ্টা, মালিক এবং পরিচালক। এরপরে সেই উপাস্যকে ছেড়ে তোমরা যে উপাস্য মনগড়াভাবে তৈরী করছ, তা ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা তোমাদের বুঝে আসছে না কেন? তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ?


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:



আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন সে সকল মুশরিকদেরকে জিজ্ঞাসা করার জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যদের ইবাদত করে, যে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কোন দলীল-প্রমাণ দেননি, তোমরা বল, যারা আকাশ-জমিনে রয়েছে তাদের রিযিক কে দিয়ে থাকেন? তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তির মালিক কে? কে জীবিতকে মৃত করেন এবং মৃতকে জীবিত করেন এবং কে সব কিছু পরিচালনা করেন? এসব প্রশ্নের উত্তর তারা একটিই দেবে তা হল সব কিছু আল্লাহ তা‘আলা করেন। যেমন সূরা যুখরুফের ৯ ও ৮৭ নং, সূরা মু’মিনূনের ৮৪-৮৯ নং, ইত্যাদি আয়াতে তাদের এ স্বীকারোক্তি উল্লেখ রয়েছে। তারা আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করেও আল্লাহ তা‘আলার উলুহিয়্যাহকে স্বীকার না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যের ইবাদত করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তাদেরকে বল: এরপরেও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে শির্ক বর্জন করবে না?



(فَذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمُ)



সুতরাং যাকে তোমরা সকল জিনিসের মালিক বলে স্বীকার কর তিনিই প্রকৃত পক্ষে ইবাদতের যোগ্য এবং তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত প্রভু আর তাকে ব্যতীত যে সমস্ত মা‘বূদদের তোমরা ইবাদত কর তারা সকলই ভ্রান্ত। তাই তাদের উপাসনা করা ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়।



(كَذٰلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ)



অর্থাৎ যেরূপ এ মুশরিকরা সবকিছু স্বীকার করার পরেও নিজেদের শির্কের ওপর অটল আছে এবং তা বর্জন করতে প্রস্তুতই নয়, অনুরূপ তোমার প্রভুর এ কথাও সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, এরা ঈমান আনবে না। কারণ এরা ভ্রষ্টতার পথ ছেড়ে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য প্রস্তুতই নয়। সুতরাং হিদায়াত ও ঈমান তাদের নাসীবে জুটবে কিভাবে? এ কথা অন্য স্থানে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে



(وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَي الْكٰفِرِيْنَ)‏



“প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে।” (সূরা যুমার ৩৯:৭১) সুতরাং কেউ তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করলেই মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সম্পাদন করে। কারণ মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলাকে সব কিছুর মালিক বলে স্বীকার করত, কিন্তু ইবাদতের সময় আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে সংযুক্ত করে ইবাদত করত। ফলে তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. সমস্ত কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

২. আল্লাহ তা‘আলা জীবিত থেকে মৃত আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন।

৩. সমস্ত কার্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই পরিচালনা করেন।

৪. সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য করতে হবে, কোন মাযহাব বা বাবা ও পীরের জন্য বৃথা যাবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের উপর হুজ্জত পেশ করছেন যে, তাদেরকে তাঁর প্রভুত্ব ও একত্ব স্বীকার করতেই হবে। অর্থাৎ (হে নবী সঃ)! মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ হতে যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন তিনি কে? যিনি নিজের ক্ষমতাবলে যমীনের মধ্য থেকে আঙ্গুর, নাশপাতি, যায়তুন, খেজুর, ঘন ঘন বাগান এবং গুচ্ছযুক্ত ফল সৃষ্টি করে থাকেন, তার সাথে অন্য কোন মাবুদ আছে। কি? উত্তরে তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে যে, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহরই কাজ। যদি তিনি তার রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে এমন আছে যে তা খুলতে পারে? যিনি এই শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছেন এবং ইচ্ছা করলে যিনি এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, তিনি কে? যিনি স্বীয় বিরাট ক্ষমতাবলে জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত হতে, তিনি কে? এরূপ প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই জবাব দিতে বাধ্য হবে যে, এগুলো করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আল্লাহর। তিনিই এসব কাজ করে থাকেন। এই আয়াতের ব্যাপারে মতভেদ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে এবং এটা সাধারণ ও সবকেই পরিবেষ্টনকারী। সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপনা আল্লাহ পাকেরই দায়িত্বে রয়েছে। যা কিছু হচ্ছে সকলই তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে। তিনিই সকলকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কাউকেও আশ্রয় দিতে পারে না। সবারই উপর তিনি হাকিম। তাঁর হুকুমের পর কারো হুকুমের কোনই মূল্য নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন, কিন্তু তাঁকে কেউই কোন প্রশ্ন করতে পারে না । আসমান ও যমীনের সমস্ত মাখলুক তাঁরই রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সব সময়েই তিনি একাই সব। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত রাজত্ব তারই। ফিরিশতা, দানব ও মানব তাঁরই মুখাপেক্ষী এবং তাঁরই দাস। তাঁর কাছে সবারই জবাব এটাই যে, এ সমুদয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার মধ্যেই রয়েছে। কাফির ও মুশরিকরাও এটা জানে এবং স্বীকারও করে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! (তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ) আচ্ছা! তাহলে তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করছো না কেন? কেন অজ্ঞতা প্রকাশ করতঃ তাঁকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা করছো? প্রকৃত মা'বূদ তো সেই আল্লাহ যাকে তোমরাও স্বীকার করছো। অতএব, একমাত্র তিনিই তো ইবাদতের হকদার। সত্য ও সঠিক কথা বুঝে নেয়ার পরেও এরূপ ভ্রষ্টতার অর্থ কি? তিনি ছাড়া সমস্ত মাবুদই মিথ্যা ও বাতিল। প্রকৃত মাবুদের ইবাদত ছেড়ে কোন দিকে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছো?

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “এইভাবে সমস্ত অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল।” অর্থাৎ যেমনভাবে এই মুশরিকরা কুফরী করেছে এবং কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তেমনিভাবে তারা এ কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যে, আল্লাহই হচ্ছেন মহান ও পবিত্র প্রতিপালক, তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা, সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপক তিনি একাই এবং তিনি রাসূলদেরকে তাওহীদসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং এই অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, তারা জাহান্নামী । যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “(রাসূলগণ তাদের কাছে এসেছিলেন কি-না, আল্লাহ তাআলার এই প্রশ্নের উত্তরে) তারা বলবেঃ হ্যা (এসেছিলেন), কিন্তু (আমরা অমান্য করেছিলাম, ফলে) কাফিরদের জন্যে আযাবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে রইলো।” (৩৯:৭১)





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।