সূরা আল-লাইল (আয়াত: 14)
হরকত ছাড়া:
فأنذرتكم نارا تلظى ﴿١٤﴾
হরকত সহ:
فَاَنْذَرْتُکُمْ نَارًا تَلَظّٰی ﴿ۚ۱۴﴾
উচ্চারণ: ফাআনযারতুকুম না-রান তালাজ্জা-।
আল বায়ান: অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি লেলিহান আগুন সম্পর্কে,
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৪. অতঃপর আমি তোমাদেরকে লেলিহান আগুন(১) সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
তাইসীরুল ক্বুরআন: কাজেই আমি তোমাদেরকে দাউ দাউ ক’রে জ্বলা আগুন সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।
আহসানুল বায়ান: ১৪। অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
মুজিবুর রহমান: আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের লেলিহান আগুন হতে সতর্ক করে দিয়েছি।
ফযলুর রহমান: তাই আমি তোমাদেরকে (জাহান্নামের) শিখায়িত আগুন সম্পর্কে সতর্ক করে দিলাম।
মুহিউদ্দিন খান: অতএব, আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
জহুরুল হক: সেজন্য তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি লেলিহান আগুন সন্বন্ধে,
Sahih International: So I have warned you of a Fire which is blazing.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৪. অতঃপর আমি তোমাদেরকে লেলিহান আগুন(১) সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
তাফসীর:
(১) এ লেলিহান আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কিয়ামতের দিন যে জাহান্নামীর সবচেয়ে হাল্কা আযাব হবে তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার পায়ের নীচে আগুনের কয়লা রাখা হবে এতেই তার ঘিলু উৎরাতে থাকবে।” [বুখারী: ৬৫৬১, মুসলিম: ২১৩]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ১৪। অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১২-২১ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
(إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدٰي)
অর্থাৎ হালাল-হারাম, ভাল-মন্দ, হিদায়াত ও ভ্রষ্টতা সব কিছু বর্ণনা করার দায়িত্ব আমার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّا هَدَيْنٰهُ السَّبِيْلَ إِمَّا شَاكِرًا وَّإِمَّا كَفُوْرًا)
“আমি তাকে পথ দেখিয়েছিÑ এরপর হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, নয়তো হবে অকৃতজ্ঞ।” (সূরা দাহর ৭৬ : ৩)
মূলত এ সঠিক পথ দেখানোর জন্যই আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাদের সাথে দিয়েছেন পথনির্দেশক কিতাব। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হাজ্জে বলেছেন : আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তা আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও আমার সুন্নাহ। (মিশকাত হা. ১৮৬, সহীহ)
(وَاِنَّ لَنَا لَلْاٰخِرَةَ وَالْاُوْلٰی)
অর্থাৎ উভয় জগতের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র তিনি। এতে কেউ শরীক নেই। অতএব যারা আখিরাতের আশা করে তারা যেন তাঁর কাছে হিদায়াত অন্বেষণ করে। এখানে আখেরাতকে আগে আনা হয়েছে তার গুরুত্ব ও স্থায়ীত্ব বুঝানোর জন্য।
(نَارًا تَلَظّٰي)
‘প্রজ্জ্বলিত অগ্নি’ অর্থাৎ জাহান্নাম, যা এখনো বিদ্যমান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি দাহ্যশক্তিসম্পন্ন। (সহীহ বুখারী হা. ৩২৬৫) যার সর্বনিম্ম শাস্তি হল, পাপীকে আগুনের জুতো পরিধান করানো হবে; ফলে মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে। (সহীহ বুখারী হা. ১৪১১)
الْأَشْقَي ‘হতভাগ্য ব্যক্তি’-এর তাফসীর পরের আয়াতে উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(الَّذِيْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰي)
“যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।” অর্থাৎ যে নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে অস্বীকার করে এবং ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (তাফসীর মুসায়সসার)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
لَا يَدْخُلُ النَّارَ إِلَّا شَقِيٌّ
দুর্ভাগা ছাড়া কেউ জাহান্নামে যাবে না। বলা হলো : দুর্ভাগা কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন :
مَنْ لَمْ يَعْمَلْ لِلّٰهِ بِطَاعَةٍ، وَلَمْ يَتْرُكْ لَهُ مَعْصِيَةً
যে আনুগত্যপরায়ণ নয় এবং আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে পাপ কাজ হতে বিরত থাকে না। (আহমাদ ২/৩৪৯, ইবনু মাযাহ হা. ৪২৯৮, সনদ সহীহ।)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তিই জান্নাতে যাবে তবে যারা ابي বা অবাধ্য তারা ব্যতীত। বলা হলো আবা বা অবাধ্য কারা? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : যারা আমার আনুগত্য করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা আমার অবাধ্য তারাই হলো আবা। (সহীহ বুখারী হা. ৭২৮০)
(وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَي)
অর্থাৎ মুত্তাকী জাহান্নামে যাবে না। তাক্বওয়ার ফলাফল ও গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা বাক্বারার শুরুর দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
(الَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَه)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজ সম্পদ আল্লাহ তা‘আলার হুকুম অনুযায়ী ব্যয় করে যাতে তার অন্তর ও সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়।
يَتَزَكّٰي অর্থাৎ কেউ উপকার করেছে তার বদলাস্বরূপ দান করে না, বরং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য দান করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির মানুষ আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবে। তার মধ্যে একশ্রেণি হলো, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় এমনভাবে ব্যয় করে যে, ডান হাত কী ব্যয় করল বাম হাত তা জানে না। অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে না। (সহীহ বুখারী হা. ১৪২৩) আর যদি মানুষকে দেখানোর জন্য কিম্বা দানবীর হিসাবে খ্যাতি লাভ করার জন্য দান করে তাহলে এ নেকী পাবে না, বরং গুনাহগার হবে।
(وَلَسَوْفَ يَرْضٰي)
অর্থাৎ যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাদের আমলসমূহ সম্পাদন করে থাকে তাদের আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত দেবেন যা পেয়ে তারা সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ کَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْۭبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِیْ کُلِّ سُنْۭبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍﺚ وَاللہُ یُضٰعِفُ لِمَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَاللہُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ)
“যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি শস্যদানা যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে। প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা থাকে আর আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ প্রশস্তকারী, মহাজ্ঞানী।” (সূরা বাক্বারাহ ২ : ২৬১)
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে অত্র আয়াতগুলো আবূ বকর (রাঃ)-এর শানে নাযিল হয়েছে। তবে আয়াতগুলো ব্যাপক, যাতে আবূ বকর (রাঃ)-ও শামিল। এর সপক্ষে একটি হাদীসও রয়েছে : একদা নাবী (সাঃ) বললেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় কোন বস্তুর জোড়া দান করবে উক্ত ব্যক্তিকে জান্নাতের প্রত্যেক দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে। আবূ বকর বললেন : সকল দরজা দিয়ে আহ্বান করার প্রয়োজন নেই (এক দরজা দিয়ে আহ্বান করলেই যথেষ্ট)। তবে এমনকি কেউ আছে যাকে সব দরজা হতে আহ্বান করা হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : আশা করি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ বুখারী হা. ৩৬৬৬)
সুতরাং সব ধনবান মুসলিম ভাইদের আবূ বকর (রাঃ)-এর মত দানবীর হওয়া উচিত। তাহলে জান্নাতের পথ অনেক সুগম হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়া ও আখিরাতের কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার।
২. জাহান্নামীদের পরিচয় জানতে পারলাম।
৩. যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমল করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে জানলাম।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১২-২১ নং আয়াতের তাফসীর
কাতাদা (রঃ) বলেন যে,(আরবি) এর ভাবার্থ হলোঃ আমার কাজ তো শুধু হালাল হারাম প্রকাশ করে দেয়া। এটাও অর্থ হয় যে, যে ব্যক্তি হিদায়াতের পথে চলেছে নিশ্চয়ই তার আল্লাহর সঙ্গে মিলন ঘটবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তো পরলোকের ও ইহলোকের মালিক। আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
মুসনাদে আহমদে হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে ভাষণে বলতে শুনেনঃ “(হে জনমণ্ডলী!) আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করছি।” তিনি একথা এতো উচ্চস্বরে বলছিলেন যে, বাজার থেকেও লোক তাঁর কথা শুনতে পাচ্ছিল। তিনি একথা বারবার বলছিলেন এমন কি তাঁর চাদর মুবারক তাঁর কাঁধ থেকে লুটিয়ে পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে।
হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন যে জাহান্নামী ব্যক্তি সবচেয়ে কম শাস্তি প্রাপ্ত হবে তার পদদ্বয়ের নিচে দু'টুকরো অগ্নি স্ফুলিঙ্গ রাখা হবে, ঐ আগুনের তাপে লোকটির মগজ ফুটতে থাকবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সহীহ মুসলিমে হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যেই জাহান্নামীকে সবচেয়ে হালকা শাস্তি দেয়া হবে তার পদদ্বয়ে আগুনের এক জোড়া ফিতাযুক্ত সেণ্ডেল পরিয়ে দেয়া হবে, সেই আগুনের তাপে তার মাথার মগজ উনুনের উপরের হাঁড়ির পানির মত টগবগ করে ফুটতে থাকবে। যদিও তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেয়া হবে তবুও সে মনে করবে যে, তার চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কাউকেও দেয়া হচ্ছে না।` মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, তাতে প্রবেশ করবে সেই নিতান্ত যে হতভাগা। অর্থাৎ এই জাহান্নামে শুধু ঐ লোকদেরকে পরিবেষ্টিত করে শাস্তি দেয়া হবে যারা অস্বীকার করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। যারা ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমল করে না।
মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ শুধু শকী বা বদকার লোক ছাড়া কেউ জাহান্নামে যাবে না।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ “শকী বা বদকার লোক কে?` উত্তরে তিনি বললেনঃ যে আনুগত্যপরায়ণ নয় এবং আল্লাহর ভয়ে যে পাপ কাজ হতে বিরত থাকে।”
মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, শুধু তারা প্রবেশ করবে না যারা অস্বীকার করে।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অস্বীকারকারী কারা? তিনি উত্তরে বললেনঃ “যারা আমার আনুগত্য করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যারা আমার নাফরমানী করেছে তারাই অস্বীকারকারী।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আর জাহান্নাম হতে বহু দূরে রাখা হবে পরম ' মুত্তাকীকে। যে নিজেকে ও নিজের ধন সম্পদকে পবিত্র করার জন্যে, দ্বীন দুনিয়ার পবিত্রতা লাভের জন্যে নিজের ধন মালকে আল্লাহর পথে দান করে। আর সে কারো সাথে এই জন্যে সদ্ব্যবহার করে না যে, তার উপর তার অনুগ্রহ রয়েছে, বরং ঐ ক্ষেত্রেও সে পরকালে জান্নাত লাভের আশা পোষণ করে এবং সেখানে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার সন্তুষ্টি ও সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “অচিরেই এই ধরনের গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তি সন্তোষ লাভ করবে।” অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে এই আয়াত হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর শানে নাযিল হয়। এমনকি কোন কোন তাফসীরকার বলেন যে, এ ব্যাপারে সবারই মতৈক্য রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এসবগুণ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) অবশ্যই রয়েছেন। কিন্তু এখানে সাধারণভাবে সকল উম্মতের কথা বলা হয়েছে। তবে হযরত আবু বকর (রাঃ) সবারই প্রথমে রয়েছেন। কেননা, তিনি ছিলেন সিদ্দীক, পরহেযগার ও দানশীল। নিজের ধন মাল তিনি মহান প্রতিপালকের আনুগত্যে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহায্যার্থে মন খুলে দান করতেন। প্রত্যেকের সাথে তিনি সদ্ব্যবহার করতেন। এতে পার্থিব কোন লাভ বা উপকার আশা করতেন না। কোন বিনিময় তিনি চাইতেন না। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আনুগত্য। ছোট হোক আর বড় হোক প্রত্যেকেরই উপর হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর অনুগ্রহের ছোঁয়া ছিল। শকীফ গোত্রপতি উরওয়া ইবনে মাসউদকে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) কিছু কড়া কথা শুনিয়ে ছিলেন। এবং ধমকিয়ে ছিলেন। তখন উরওয়া বলেছিলঃ “আমার উপর আপনার এমন কিছু অনুগ্রহ রয়েছে যার প্রতিদান দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি তা না হতো তবে আপনাকে অবশ্যই আমি জবাব দিতাম।” একজন বিশিষ্ট গোত্রপতির উপরও যখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর এমন অনুগ্রহ ছিল যে, তার সামনে তার মাথা উঁচু করে কথা বলার ক্ষমতা ছিল, তখন অন্যদের কথা আর কি বলা যাবে? এজন্যেই বলা হয়েছে যে, কারো প্রতি অনুগ্রহের বিনিময়ে পার্থিব কোন উপকার বা প্রতিদান তিনি চাইতেন না। শুধু আল্লাহর দীদার লাভই ছিল তার কাম্য।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জোড়া দান করবে তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের রক্ষক ডাক দিয়ে বলবেনঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এ দিকে আসুন। এই দরজা সবচেয়ে উত্তম।” তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কোন ব্যক্তিকে কি সকল দরজা থেকে আহ্বান করা হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যাঁ, আর আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, তুমিও হবে তাদের অন্তর্ভুক্ত।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।