আল কুরআন


সূরা আল-বালাদ (আয়াত: 13)

সূরা আল-বালাদ (আয়াত: 13)



হরকত ছাড়া:

فك رقبة ﴿١٣﴾




হরকত সহ:

فَکُّ رَقَبَۃٍ ﴿ۙ۱۳﴾




উচ্চারণ: ফাক্কুরাকাবাহ ।




আল বায়ান: তা হচ্ছে, দাস মুক্তকরণ।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. এটা হচ্ছেঃ দাসমুক্তি(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: (তা হচ্ছে) দাসমুক্তি।




আহসানুল বায়ান: ১৩। তা হচ্ছে ক্রীতদাসকে মুক্তি প্রদান।



মুজিবুর রহমান: এটা হচ্ছে দাসকে মুক্তি প্রদান।



ফযলুর রহমান: একটি ঘাড় (একজন দাস) মুক্ত করে দেওয়া;



মুহিউদ্দিন খান: তা হচ্ছে দাসমুক্তি



জহুরুল হক: দাসকে মুক্তি দেওয়া,



Sahih International: It is the freeing of a slave



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৩. এটা হচ্ছেঃ দাসমুক্তি(১)


তাফসীর:

(১) এসব সৎকর্মের মধ্যে প্রথমে দাসমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটা খুব বড় ইবাদত এবং একজন মানুষের জীবন সুসংহত করার নামান্তর। বিভিন্ন হাদীসে এর অনেক সওয়াবের উল্লেখ এসেছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ কোন দাসকে মুক্ত করবে সেটা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিপণ হিসেবে বিবেচিত হবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৪৭, ১৫০]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: ১৩। তা হচ্ছে ক্রীতদাসকে মুক্তি প্রদান।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:



الْعَقَبَةَ বলা হয় পাহাড়ের মাঝে মাঝে রাস্তা বা গিরিপথকে। সাধারণত এ ধরনের পথ বন্ধুর। এটা মানুষের সেই শ্রম ও কষ্টকে স্পষ্ট করে বুঝানোর জন্য একটি উদাহরণ যা নেক কাজ করার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মনের কামনা বাসনার বিরুদ্ধে করতে হয়। যেমন পাহাড়ের ঐ পথের চূড়া অত্যন্ত কঠিন, তেমনি নেক কাজ করাও বড় কঠিন। (ফাতহুল কাদীর)। তবে আয়াতের অর্থ হলো: সম্পদ ব্যয় করে তারা কেন আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট পার হওয়ার চেষ্টা করে না? ফলে সে নিরাপদে থাকবে।



(وَمَآ أَدْرَاكَ مَا الْعَقَبَةُ)



অর্থাৎ তুমি কি জান, আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট কী এবং কিসে তা অতিক্রমে সহযোগিতা করবে? তাহলো : মু’মিন দাস আযাদ করা অথবা ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো। দাস আযাদ করার ফযীলত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো : আবূ নাজীহ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে মুসলিম কোন মুসলিম দাসকে আযাদ করল আল্লাহ তা‘আলা তার এক একটি হাড়ের বিনিময়ে ঐ মুক্তকারীর এক একটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। আর যে মুসলিম নারী কোন মুসলিম দাসীকে আযাদ করল আল্লাহ তা‘আলা তার এক একটি হাড়কে ঐ মুক্তিপ্রাপ্ত দাসীর এক একটি হাড়ের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। (ইবনু জারীর ৩০/১২৯, হাদীসটি মুরসাল।) তাই ইসলাম দাস প্রথার প্রতি উৎসাহ দেয় না বরং বিলুপ্তির জন্য উৎসাহ দেয়।



(يَوْمٍ ذِيْ مَسْغَبَةٍ)



অর্থাৎ ক্ষুধার দিন। ذَا مَقْرَبَةٍ অর্থাৎ এমন ইয়াতীম যে সম্পর্কের দিক হতে আত্মীয় হয়। এমনিতেই তো ইয়াতীমদের প্রতিপালন করা ও তাদের সহযোগিতা করা নেকীর কাজ কিন্তু এখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে সে ইয়াতীম যদি নিকটাত্মীয় ও বিপদগ্রস্থ হয় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা আরো নেকীর কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মিসকীনকে দান করায় সাদকাহর নেকী রয়েছে। আর নিকটাত্মীয় হলে দ্বিগুণ নেকীÑ একটি দান করার জন্য অপরটি আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য। (তিরমিযী হা. ৬৫৮, ইবনু মাযাহ হা. ১৮৪৪, সনদ সহীহ) অন্যত্র তিনি বলেন: হে মানুষ! সালাম প্রসার কর, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখ, তোমরা খাদ্য খাওয়াও, মানুষ ঘুমিয়ে গেলে সালাত আদায় কর তাহলে শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযী হা. ২৪৮৫, সহীহ)



ذَا مَتْرَبَةٍ অর্থ : মাটি মাখা বা ধূলোয় ধূসরিত। অর্থাৎ এমন দরিদ্র যে নিঃস^ হওয়ার কারণে মাটি বা ধূলোর ওপর পড়ে থাকে। তার নিজ ঘর বাড়ি বলেও কিছু নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাস্তায় পতিত ব্যক্তি, যার নিজস্ব কোন ঘর-বাড়ি নেই, ইকরিমা (রহঃ) বলেন : সে হল ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : সবগুলোই কাছাকাছি অর্থ দিয়ে থাকে।



(ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا)



অর্থাৎ উপরোল্লিখিত সৎ আমলগুলো যখন ঈমানের সাথে করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকীর আশা রাখবে।



যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:



(وَمَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَسَعٰی لَھَا سَعْیَھَا وَھُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰ۬ئِکَ کَانَ سَعْیُھُمْ مَّشْکُوْرًا)



“আর যারা মু’মিন অবস্থায় আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।” (সূরা ইসরা ১৭: ১৯)



আর যারা পরস্পর ধৈর্য ধারণের ও সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়ার উপদেশ দেয় তারাই কিয়ামত দিবসে ডান হাতে আমলনামা পাবে। ধৈর্য ধারণ তিন প্রকার : বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করা। এরূপ ধৈর্যশীলদের পুরস্কারের শেষ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(أُولٰ۬ئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلٰمًا خٰلِدِيْنَ فِيْهَا ط حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا)



“তাদেরকে প্রতিদানস্বরূপ দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানা যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেথায় অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। সেথায় তারা চিরস্থায়ী থাকবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে তা কতই না উৎকৃষ্ট!” (সূরা ফুরকান ২৫: ৭৫)



রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মুসলিম দুনিয়াতে যেসব বিপদ, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট বা মনোবেদনা ভোগ করে এমনকি যদি তার শরীরে কোন কাঁটাও ফুটে (আর সে যদি তাতে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির ওপর থাকে) তাহলে এর দ্বারা তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম হা. ২৫৭২)



সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ، ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ



দয়াশীলদেরকে দয়াময় আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর, আকাশের ওপর যিনি আছেন তিনি তোমাদের ওপর দয়া করবেন। (আবূ দাঊদ হা. ৪৯৪১, সহীহ) মূলত পরস্পরকে দয়া করা এবং ধৈর্য ধারণ করা ও সৎকাজের উপদেশ দেয়া ঈমানের অন্যতম একটি প্রধান দাবী।



(أَصْحٰبُ الْمَيْمَنَةِ)



অর্থাৎ ডান হাতে আমলনামা পাবে। এরা জান্নাতী। সূরা ওয়াকিয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর যারা কাফির তারাই বাম সারির লোক, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।



مُؤْصَدَةٌ অর্থ مغلقة বা বদ্ধ। অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন তাদের আবদ্ধ করে নেবে ফলে কখনও তা হতে বের হতে পারবে না। মু’মিনদের জন্য দুনিয়ার জীবন কষ্টের আধার। শত কষ্টের মধ্যেও তাকে ঈমান ও সৎআমলে অটল থাকতে হবে। সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং মানুষের প্রতি দয়াশীল হতে হবে। তাহলে সফলকাম ও সৌভাগ্যবান বান্দা হওয়া সম্ভব অন্যথায় হতভাগা ছাড়া কিছুই হওয়া যাবে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. দাস আযাদ করার ফযীলত জানলাম।

২. গরীব-মিসকীন বিশেষ করে নিকটাত্মীয় ইয়াতীমদেরকে খাবার খাওয়ানো ঈমানের দাবী এবং ফযীলতের কাজ।

৩. ডান হাতে যারা আমলনামা পাবে তাদের বৈশিষ্ট্য জানলাম।

৪. ধৈর্য ধারণের প্রতিদান অনেক মহৎ।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-২০ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, আকাবা হলে জাহান্নামের একটি পাহাড়ের নাম। হযরত কাব আহবার (রাঃ) বলেন যে, ওটা হলো জাহান্নামের সত্তরটি সোপান। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ এটা প্রবেশ করার শক্ত ঘাঁটি, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের মাধ্যমে তাতে প্রবেশ কর। এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ তোমার কি জানা আছে, এ ঘাঁটি কি? অতঃপর বলেনঃ গোলাম আযাদ করা এবং আল্লাহর নামে অন্নদান করা।

ইবনে যায়েদ বলেনঃ অর্থাৎ ওরা মুক্তি ও কল্যাণের পথে চলেনি কেন? তারপর মানুষকে সর্তক করতে গিয়ে বলা হচ্ছেঃ তোমরা কি জান আকাবা কি? কোন গর্দানকে মুক্ত করা বা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা। আয়াতাংশ (আরবি) অথবা (আরবি) দু'ভাবে পড়াই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ (আরবি) এর সাথেও পড়া হয়েছে, আবার (আরবি) কে (আরবি) এবং (আরবি) সর্বনামকে এবং কে করেও পড়া হয়েছে। এই দুটো কিরআতই বিশুদ্ধ।

মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মু'মিন গর্দান কে অর্থাৎ কোন মু'মিন গোলামকে মুক্ত করে, আল্লাহ তা'আলা ঐ গোলামের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। এমন কি, হাতের বিনিময়ে হাত, পায়ের বিনিময়ে পা এবং লজ্জাস্থানের বিনিময়ে লজ্জাস্থান।”

হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) এ হাদীসটি শোনার পর এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মারজানা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি স্বয়ং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর মুখে এ হাদীসটি শুনেছেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা।” তখন হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) তার গোলাম মাতরাফকে ডেকে বলেনঃ “যাও, তুমি আল্লাহর নামে মুক্ত।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী এবং সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত আছে) সহীহ্ মুসলিমে এ কথাও রয়েছে যে ঐ গোলামটিকে দশ হাজার দিরহামে ক্রয় করা হয়েছিল।

হযরত আবু নাজীহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যে মুসলমান কোন মুসলমান (দাস) কে মুক্ত করে, আল্লাহ্ তা'আলা তার এক একটি হাড়ের বিনিময়ে ঐ মুক্তকারীর এক একটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন। আর যে মুসলমান নারী কোন মুসলমান নারী (দাসী) কে আযাদ করে, আল্লাহ্ তা'আলা তার এক একটি হাড়কে ঐ মুক্তি প্রাপ্তা দাসীর এক একটি হাড়ের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

মুসনাদে আহমদে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকরের উদ্দেশ্যে মসজিদ বানিয়ে দেয়, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে ঘর বানিয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমান দাসকে মুক্ত করে, আল্লাহ ওটাকে ঐ মুক্তকারীর ফিদইয়া (মুক্তিপণ) হিসেবে গণ্য করেন এবং তাকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। যে ব্যক্তি ইসলামে বার্ধক্যে উপনীত হয় তাকে কিয়ামতের দিন নূর দেয়া হবে।”

অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করবে, ঐ তীর (লক্ষ্য স্থলে) লাগুক বা নাই লাগুক, সে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরের মধ্য হতে একটি দাস মুক্ত করার সওয়াব লাভ করবে।”

আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমানের তিনটি সন্তান বালেগ হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, আল্লাহ্ তাকে স্বীয় রহমতের গুণে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দুই জোড়া দান করবে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দিবেন, যে দরজা দিয়ে সে খুশি প্রবেশ করবে।” ২. এ হাদীসগুলো মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর সনদ খুবই উত্তম।

সুনানে আবী দাউদে হযরত আ’রীফ ইবনে আইয়াশে দাইলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা হযরত ওয়ায়েলা’ ইবনে আশকা’র (রাঃ) কাছে গিয়ে বললামঃ আমাদেরকে এমন একটি হাদীস শুনিয়ে দিন যাতে বেশি কম কিছু না থাকে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ঘরে রক্ষিত কুরআন মাজীদ পাঠ করে তবে সে কি তাতে কম-বেশী করে? আমরা বললামঃ জনাব! আমরা এরূপ বলতে চাইনি, বরং আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হতে যে হাদীস শুনেছেন তা আমাদেরকে শুনান। তিনি তখন বললেনঃ একবার আমি আমার এক সঙ্গীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করি। আমার ঐ সঙ্গী হত্যার মাধ্যমে নিজের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “তার পক্ষ থেকে দাস মুক্ত করে দাও। আল্লাহ্ তা'আলা ঐ দাসের এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে মুক্তকারীর একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। অর্থবোধক (এ হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত হয়েছে)

অন্য একটি হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি কারো গর্দান মুক্ত করবে, আল্লাহ্ তা'আলা ঐ কাজকে তার জন্যে ফিদিয়া’ রূপে গণ্য করবেন। এ ধরনের আরও বহু হাদীস রয়েছে।

মুসনাদে আহমদে হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবে।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “অল্প কথায় তুমি খুব বড় প্রশ্ন করে বসেছো। দাস মুক্ত কর, গর্দান মুক্ত কর।” বেদুইন বললোঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! এ দু’টি কি একাৰ্থবোধক নয়?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “না। দাস মুক্ত করার অর্থ হলো এই যে, তুমি একাকী একটি দাস মুক্ত করে দিবে। আর (আরবি) এর অর্থ হলোঃ দাসমুক্ত করার ব্যাপারে কম বেশী সাহায্য করা, দুধেল পশু দুধ পানের জন্যে কোন মিসকীনকে দেয়া, অত্যাচারী আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা, এসবই হলো জান্নাতে প্রবিষ্ট করার মত কাজ। যদি তুমি এসব করতে সক্ষম না হও তবে ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, পিপাসার্তকে পানি দাও, ন্যায়ের আদেশ কর এবং অন্যায় হতে বিরত রাখো। যদি তুমি এতেও সক্ষম না হও তবে পুণ্য ও ন্যায়ের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা মুখ হতে বের করো না।”

(আরবি) এর অর্থ হলো ক্ষুধাতুর। অর্থাৎ ক্ষুধার সময়ে খাদ্য খাওয়ানো। এটাও আবার ঐ শিশুকে যে ইয়াতীম বা পিতৃহীন হয়েছে। আর তার সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমদে হযরত সালমান ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “মিসকীনকে সাদকা দেয়া হলো শুধু সাদকা আর আত্মীয় স্বজনকে সাদকা করলে একই সাথে দু’টি কাজের সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হলো সাদকার সওয়াব এবং আর একটি হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক মিলিত রাখার সওয়াব।”

অথবা এমন মিসকিনকে আহার্যদান করা যে ধূলালুণ্ঠিত, পথের উপর পড়ে আছে, বাড়িঘর নেই, বিছানাপত্র নেই। ক্ষুধার জ্বালায় পেট মাটির সাথে লেগে আছে। যে নিজের গৃহ হতে দূরে রয়েছে। যে মুসাফির, ফকীর, মিসকীন, পরমুখাপেক্ষী, ঋণী, কপর্দকহীন, খবরাখবর নেয়ার মত যার কেউ নেই। যার পরিবার-সদস্য অনেক অথচ সম্পদ কিছুই নেই। এসবই প্রায় একই

তদুপরি এই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেইসব কাজের জন্যে আল্লাহর কাছে বিনিময় প্রত্যাশা করে। সেই পুরস্কৃত হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি আখেরাতের ইচ্ছা রাখে এবং সে জন্য চেষ্টা করে, আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়, তার প্রচেষ্টাসমূহ আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ, “বিশ্বাসীদের মধ্যে যে নারী-পুরুষ পুণ্য কাজ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে জান্নাতের রিযক লাভ করবে।” (৪০:৪০)

তারপর তাদের আরো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তারা লোকদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার এবং তাদের প্রতি পরস্পর সহানুভূতি এবং অনুগ্রহ করার জন্যে একে অপরকে নসীহত করে। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছেঃ “তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি অনুগ্রহ কর, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।” অন্য এক হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হয় না।”

সুনানে আবি দাউদে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি অনুগ্রহ করে এবং আমাদের বড়দের অধিকার উপলব্ধি করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ এ সব লোক তারাই যাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। আর আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলে অবিশ্বাস করেছে তাদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তারা অগ্নি পরিবেষ্টিত হবে। ঐ অগ্নি হতে কোন দিন মুক্তিও পাওয়া যাবে না এবং অব্যাহতিও মিলবে না। ঐ আগুনের দরজা তাদের উপর অবরুদ্ধ থাকবে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা সূরা (আরবি) এর মধ্যে আসবে ইনশাআল্লাহ। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তার মধ্যে কোন জানালা। থাকবে না, ছিদ্র থাকবে না। সেই জায়গা হতে কখনো বের হওয়া সম্ভব হবে না।

হযরত আবু ইমরান আলী জুদী (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বিদ্রোহীকে, প্রত্যেক শয়তানকে এবং ঐ ব্যক্তিকে, যাদের অত্যাচারে পৃথিবীতে মানুষ ভীত ও অতিষ্ঠ থাকতো, তাদের প্রত্যেককে লোহার শিকলে শক্ত করে বেঁধে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিবেন। তারপর জাহান্নামকে অবরুদ্ধ করে দেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তারা তা থেকে কখনো স্থানান্তরিত হবে না। আল্লাহর কসম! তারা কখনো আকাশ দেখতে পাবে না। আল্লাহর কসম! কিছুটা আরামে কখনো তাদের দু'চোখের পাতা বন্ধ হবে না (অর্থাৎ ক্ষণিকের জন্যেও তারা এমন শান্তি লাভ করবে না যার ফলে তাদের নিদ্রা আসতে পারে) আল্লাহর শপথ! তারা কখনো সুস্বাদু খাবার খেতে পাবে না।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।