আল কুরআন


সূরা আল-আনফাল (আয়াত: 20)

সূরা আল-আনফাল (আয়াত: 20)



হরকত ছাড়া:

يا أيها الذين آمنوا أطيعوا الله ورسوله ولا تولوا عنه وأنتم تسمعون ﴿٢٠﴾




হরকত সহ:

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ لَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَ اَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ ﴿ۚۖ۲۰﴾




উচ্চারণ: ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূআতী‘উল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূওয়ালা-তাওয়াল্লাও ‘আনহু ওয়া আনতুম তাছমা‘ঊন।




আল বায়ান: হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তার কথা শোন তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না(১);




তাইসীরুল ক্বুরআন: ওহে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং আদেশ শোনার পর তা অমান্য কর না।




আহসানুল বায়ান: (২০) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং (তার কথা) শ্রবণ করার পরেও তার (আনুগত্য) হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।



মুজিবুর রহমান: হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তোমরা যখন তার কথা শুনছ তখন তোমরা তার আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিওনা।



ফযলুর রহমান: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে চল এবং (রসূলের কথা) শুনতে থাকা অবস্থায় তার কাছ থেকে চলে যেয়ো না।



মুহিউদ্দিন খান: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।



জহুরুল হক: ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আজ্ঞাপালন করো, আর তাঁর থেকে ফিরে যেও না যখন তোমরা শোনো।



Sahih International: O you who have believed, obey Allah and His Messenger and do not turn from him while you hear [his order].



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ২০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তার কথা শোন তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না(১);


তাফসীর:

(১) মুসলিমগণ (তাদের সংখ্যাল্পতা ও নিঃসম্বলতা সত্বেও) শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলার সাহায্যের মাধ্যমেই এহেন বিপুল বিজয় অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। আর এ সাহায্য আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্যের ফল। এই আনুগত্যের উপর দৃঢ়তার সাথে স্থির থাকার জন্য মুসলিমদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর।” এবং তাতে স্থির থাক। কারণ, তোমরা আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ, অসীয়ত, নসীহত সবই শুনতে পাচ্ছ। সুতরাং কুরআন ও সত্যবাণী শুনে নেবার পরেও তোমরা আনুগত্য-বিমুখ হয়ো না। বিমুখ হলে বর্তমান অবস্থা থেকে তোমাদেরকে নিকৃষ্ট অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে। [সা’দী]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (২০) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং (তার কথা) শ্রবণ করার পরেও তার (আনুগত্য) হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২০-২৩ নং আয়াতের তাফসীরঃ



আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে তাঁর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর ঐ সব জাতির মত হতে নিষেধ করেছেন যারা শুনেও শুনে না। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যারা সত্য শুনে না এবং সত্য প্রকাশও করে না তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি।



অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَا۬ٓءً وَّنِدَا۬ٓءً ط صُمٌّۭ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ)‏



“আর যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায় যাদেরকে কেউ আহ্বান করলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত আর কিছুই শুনে না। তারা বধির, বোবা, অন্ধ। কাজেই তারা বুঝতে পারে না।”(সূরা বাক্বারাহ ২:১৭১)



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ز ﺻﻠﮯ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا ط أُولٰ۬ئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ط أُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ)‏



“আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না, এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করে না, তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফিল।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৭৯) এ আয়াত সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তারা হচ্ছে বানী আবুদ দারর গোষ্ঠীর একটি দল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৬) তবে এরূপ আচরণ যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তাদের সকলের জন্য তা প্রযোজ্য।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবগত করেন: তাদের সঠিক বুঝ নেই এবং সঠিকটা বুঝার ইচ্ছাও নেই। যদি থাকত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিদায়াতের জন্য কুরআনের বাণী শুনাতেন।



সুতরাং সদা-সর্বদা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে হবে, আনুগত্যের নামে প্রহসন করা যাবে না।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. সর্বদা ও সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের আনুগত্য করা ফরয।

২. কাফির মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।

৩. কিছু মানুষ রয়েছে তারা চতুষ্পদ জন্তু থেকেও নিকৃষ্ট।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২০-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করার এবং বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আর তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন না করে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাঁর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।

(আরবী) অর্থাৎ অথচ তোমরা জানছো যে, নবী (সঃ) তোমাদেরকে কোন্ কথার দিকে আহ্বান করছেন। আর তোমরা ঐ লোকদের মত হয়ো না যারা বলে আমরা আপনার কথা শুনলাম, অথচ কার্যতঃ তারা কিছুই শোনে না। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাদের রীতিনীতি এই ছিল যে, তারা মুখে বলতো- আমরা শুনলাম ও কবুল করলাম । কিন্তু আসলে তারা কিছুই শুনতো না।

এরপর জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই প্রকারের আদম সন্তানরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম জীব। চতুষ্পদ জন্তু ও প্রাণীদের মধ্যে ওরাই হচ্ছে নিকৃষ্টতম যারা সত্য কথা শোনার ব্যাপারে বধির ও সত্য কথা বলার ব্যাপারে মূক। তারা কোন জ্ঞানই রাখে না। কেননা, তারা সত্য কথা মোটেই বুঝে না। এরা নিকৃষ্টতম প্রাণী, এরাই কাফির। চতুষ্পদ জন্তু যে প্রকৃতিতে সৃষ্ট হয়েছে ওরা ঐ ভাবেই চলাফেরা করে, কাজেই তারা যেন আল্লাহর অনুগত। কিন্তু মানুষ তো প্রকৃতিগতভাবে ইবাদতের জন্যে সৃষ্ট হয়েছে, অথচ তারা কুফরী করতে রয়েছে। অতএব প্রকৃতির বিপরীতরূপে চলার কারণে তারা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এ জন্যেই তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “কাফিরদের দৃষ্টান্ত ঐ জানোয়ারগুলোর মত যারা আহ্বানকারীদের উদ্দেশ্য কিছুই বুঝে না, শুধু শব্দ শুনে থাকে।” আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “বরং এই কাফিররা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট, এরাই হচ্ছে সীমাহীন গাফেল।” বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা কুরায়েশের বানু আবদিদ দারের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারো কারো ধারণায় এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফিকরা। কিন্তু মুশরিক ও মুনাফিকদের পার্থক্য কিছুই নেই। কেননা, এই দু'দলই হচ্ছে জ্ঞানবিবেকহীন লোক। ভাল কাজ করার মত কোন যোগ্যতাই তাদের মধ্যে নেই। এরপর ইরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কল্যাণকর কিছু নিহিত রয়েছে তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনবার (ও বুঝবার) তাওফীক দিতেন।” অন্তর্নিহিত কথা এই যে, যেহেতু তাদের মধ্যে কোন মঙ্গলই নিহিত নেই সেহেতু তারা কিছুই বুঝে না। আর যদি মহান আল্লাহ তাদেরকে শুনানও তবুও এই হতভাগারা সরল সোজা পথ অবলম্বন করবে না বরং তখনো তারা উপেক্ষা করতঃ মুখ ফিরিয়ে নিবে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।