সূরা আল-আ‘লা (আয়াত: 19)
হরকত ছাড়া:
صحف إبراهيم وموسى ﴿١٩﴾
হরকত সহ:
صُحُفِ اِبْرٰهِیْمَ وَ مُوْسٰی ﴿۱۹﴾
উচ্চারণ: সুহুফি ইবরা-হীমা ওয়া মূছা।
আল বায়ান: ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: ইবরাহীম ও মূসার কিতাবে।
আহসানুল বায়ান: ১৯। ইব্রাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।
মুজিবুর রহমান: (বিশেষতঃ) ইবরাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।
ফযলুর রহমান: ইবরাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।
মুহিউদ্দিন খান: ইব্রাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে।
জহুরুল হক: ইব্রাহীম ও মূসার ধর্মগ্রন্থে।
Sahih International: The scriptures of Abraham and Moses.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৯. ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে।(১)
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ এই সূরার সব বিষয়বস্তু অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (আখেরাত উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী ইবরাহীম ও মূসা আলাইহিস সালাম-এর সহীফাসমূহে লিখিত আছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ১৯। ইব্রাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: নামকরণ ও ফযীলত:
الْأَعْلَي মহান আল্লাহর একটি সিফাত বা গুণবাচক নাম, যার অর্থ সুউচ্চ। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত গুণবাচক নাম থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সাহাবী বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : নাবী (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে প্রথম যারা আমাদের নিকট মদীনায় আসেন তারা হলেন মুসআব বিন উমাইর, ইবনু উম্মে মাকতুম । তারা আমাদেরকে কুরআন পড়াতে শুরু করেন। তারপর আম্মার, বেলাল, সা‘দ আগমন করেন। অতঃপর উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বিশজন সাহাবীসহ আগমন করেন। তারপর নাবী (সাঃ) আসেন। আমি মদীনাবাসীকে অন্য কোন ব্যাপারে এতো বেশি খুশি হতে দেখিনি যতটা খুশি তারা নাবী (সাঃ) এবং তাঁর সহচরদের আগমনে হয়েছিল। ছোট ছোট শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকরা পর্যন্ত আনন্দে কোলাহল শুরু করে যে, ইনি হলেন আল্লাহ তা‘আলার রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমনের পূর্বেই আমি
(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَي)
সূরাটি এ ধরনের অন্যান্য সূূরাগুলোর সাথে মুখস্থ করেছিলাম। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৪১)
সূরা ইনফিতারে এ সূরার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে নাবী (সাঃ) দু ঈদ ও জুমু‘আর সালাতে সূরা আ‘লা ও সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিতরের সালাতে সূরা আ‘লা, সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। আয়িশাহ (রাঃ) বৃদ্ধি করে বলেন : সূরা ফালাক ও সূরা নাসও পাঠ করতেন। (তিরমিযী হা. ৪৬২-৬৩, মিশকাত হা. ১২৬৯, সহীহ)
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَي)
পাঠ করার পর
سبحان ربي الأعلي
(পবিত্র আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বোচ্চ) বলতেন। (আবূ দাঊদ হা. ৮৮৩, মিশকাত হা. ৮৮৩, সহীহ)
১-১৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
উকবা বিন আমের আল জুহানী (রাঃ) বলেন : যখন
(فسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ العَظِيم)
অবতীর্ণ হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন :
اجعلوها في ركوعكم
এটা তোমরা রুকূতে (পাঠ করার জন্য) গ্রহণ করে নাও। তারপর যখন
(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَي)
অবতীর্ণ হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন :
اجعلوها في سجودكم
এটা তোমরা সিজদায় (পাঠ করার জন্য) গ্রহণ করে নাও। (আহমাদ ৪/১৫৫, আবূ দাঊদ হা. ৮৬৯, দুর্বল)
نزه اسم ربك الأعلي عن الشريك والنقائص تنزيها يليق بعظمته
অর্থ:
‘তোমার সর্বোচ্চ প্রভুর নামের পবিত্রতা ঘোষণা কর সব শরীক ও অপূর্ণাঙ্গ গুণাবলী হতে তাঁর শান মহত্ত্বের উপযোগী। (তাফসীর মুয়াসসার), ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : এর অর্থ হল তোমার মহান পালনকর্তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। (কুরতুবী) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সকল দোষত্রুটি, অপূর্ণতা থেকে ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর নাম, গুণাবলী, কাজ ও কথায় পরিপূর্ণ, সর্বোচ্চ। এখানে নাবী (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দেওয়া হলেও মূলত সব উম্মতকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম আল্লাহ তা‘আলাকে যাবতীয় শিরক এবং তাঁর শানে ও মহত্ত্বে অশোভনীয় এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে। শব্দ এটাও প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা সুউচ্চ ও সুমহান, তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। বরং তিনি স্বসত্তায় আরশের সমুন্নত আছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাসবীহ পাঠ সম্পর্কে বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য হল চারটি: সুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। (সহীহ মুসলিম হা. ২১৩৭, মিশকাত হা. ২২৯৪) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন : যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী পাঠ করবে, তার সকল (সগীরাহ) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৬৪০৫, সহীহ মুসলিম হা. ২৬৯১) তিনি আরো বলেছেন: আল হামদুল্লিাহ মিযানের পাল্লা ভরে দেয়, সুবহানাল্লাহ ও আল হামদুলিল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে নেকী দিয়ে পূর্ণ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম হা. ২২৩, মিশকাত হা. ২৮১)
পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা চারটি বিষয় তুলে ধরেছেন সৃষ্টি করা, সুবিন্যস্ত করা, পরিমিত করা এবং পথ প্রদর্শন করা। মানুষসহ সকল মাখলূকের মাঝে এ চারটি বিষয় বিদ্যমান। প্রত্যেক প্রাণীর দৈহিক গঠন, আকার-আকৃতি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে বিশেষ মিল ও সামঞ্জস্য বিধান করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। সাথে সাথে তাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাকে পরিমাণ মত সে কাজের যোগ্যতা দান করেছেন ও সে কাজের জন্য পথ প্রদর্শন করেছেন।
فَسَوّٰي সূরা ইনফিতারের ৭ নম্বর আয়াতের টীকায় আলোচনা করা হয়েছে।
(وَالَّذِيْ قَدَّرَ فَهَدٰي)
অর্থাৎ তিনি মানুষের তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং ভাল মন্দের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ আয়াত আল্লাহ তা‘আলার ঐ কথার মত যেমন মূসা (আঃ) ফির‘আউনকে বলেছিলেন:
(قَالَ رَبُّنَا الَّذِيْٓ أَعْطٰي كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَه۫ ثُمَّ هَدٰي)
“মূসা বলল : ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন।” (সূরা ত্ব-হা ২০ : ৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة، قال : وعرشه علي الماء
আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাকদীর নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তখন তার আরশ ছিল পানির ওপর। (সহীহ মুসলিম হা. ২৬৫৩)
(أَخْرَجَ الْمَرْعٰي)
অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে বিভিন্ন প্রকারের তৃণলতা উৎপন্ন করেছেন।
(غُثَا۬ءً أَحْوٰي)
ঘাস শুকিয়ে গেলে তাকে غُثَا۬ءً বলা হয়। أَحْوٰي শব্দের অর্থ হলো কালো করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তাজা সবুজ ঘাসকে শুকিয়ে কালো করে দিয়েছেন। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন: অতীব শুষ্ক হওয়ায় বা পুড়ে যাওয়ার কারণে সবুজ ঘাসপাতা যখন কালো রং ধারণ করে।
(سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسٰيٓ)
অত্র আয়াতে স্বীয় রাসূলকে কুরআন মুখস্থ করানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন বলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আশ্বস্ত করেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরআন ভুলবেন না, মানুষ যেমন সাধারণত মুখস্থ বিদ্যা ভুলে যায়। জিবরীল (আঃ) যখন ওয়াহী নিয়ে আসতেন তখন তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাড়াতাড়ি পড়তে শুরু করতেন যাতে ভুলে না যান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لاَ تُحَرِّكْ بِه۪ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِه۪ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَه۫ وَقُرْاٰنَه۫ فَإِذَا قَرَأْنٰهُ فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَه۫)
“তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা ওর সাথে দ্রুত সঞ্চালন কর না।” তা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা (জিবরীল-এর মাধ্যমে) পাঠ করি তুমি তখন সেই পাঠের অনুসরণ কর। (সূরা কিয়ামাহ ৭৫: ১৬)
অতএব কুরআন হেফাযত করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। ফলে তিনি তা ভুলবেন না। তবে আল্লাহ তা‘আলার হিকমত যা চাইবে ভুলে যাওয়ার তা ভুলে যাবেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এরূপ চাননি যার কারণে সমস্ত কুরআন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখস্থ ছিল। কেউ কেউ বলেছেন : এর অর্থ হলো যা আল্লাহ তা‘আলা রহিত করার ইচ্ছা করবেন কেবল তাই ভুলিয়ে দেবেন। (ফাতহুল কাদীর)
(يَعْلَمُ الْـجَهْرَ وَمَا يَخْفٰي)
অর্থাৎ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু জানেন। তাই কোন্ কথা রাসূলকে ভুলিয়ে দিলে তা জনসাধারণের কল্যাণ হবে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
(وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرٰي)
এটাও নাবী (সাঃ)-এর জন্য আরো একটি সুসংবাদ যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের জন্য সকল কাজ সহজ করে দেবেন এবং তার দীন ও শরীয়তকেও সহজ করে দেবেন। সে কথাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন :
إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ
নিশ্চয়ই দীন সহজ, কেউ দীনের ব্যাপারে কঠোরতা করলে দীন তার ওপর জয়ী হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী হা. ৩৯) এ অনুগ্রহ শুধু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রত্যেক নেককার বান্দার জন্যও উন্মুক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَأَمَّا مَنْ أَعْطٰي وَاتَّقٰي وَصَدَّقَ بِالْـحُسْنٰي فَسَنُيَسِّرُه۫ لِلْيُسْرٰي)
“অতএব যে দান করে, আল্লাহভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব।” (সূরা লাইল ৯২: ৫-৭) হাদীসে এসেছে : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা কাজ করে যাও কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঐ কাজ সহজ করে দেওয়া হয় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ২৬৪৭) অর্থাৎ যারা সঠিক তাওহীদ ও ঈমানের ওপর অটল থাকবে তাদের জন্য এ সুসংবাদ।
(فَذَكِّرْ إِنْ نَّفَعَتِ الذِّكْرٰي)
অর্থাৎ যতক্ষণ উপদেশ কাজে আসে ততক্ষণ মানুষকে উপদেশ দাও। চাই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ অর্জন হোক আর না হোক। (তাফসীর সাদী) অর্থাৎ নবীর দায়িত্ব হল দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও মানুষকে নসীহত করা যতক্ষণ তা কাজে আসবে। যত নসীহত বর্জন করে ততই তাদেরকে সৎ পথে আনার জন্য নসীহত করেই যেতে হবে এমন নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِيْنَ يَخُوْضُوْنَ فِيْٓ اٰيٰتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتّٰي يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِه۪)
“তুমি যখন দেখ, তারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন তখন তুমি তাদের হতে সরে পড়, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয়” (সূরা আন‘আম ৬: ৬৮) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: দীন হল নসীহত করা। (সহীহ মুসলিম হা. ২০৫) সুতরাং স্থান-কাল ও পাত্র ভেদে নসীহত করা কখনও ফরয, কখনও মুস্তাহাব হয়ে থাকে। তবে সাধারণ নির্দেশ হল সকলকে নসীহত করতে হবে। হিদায়াতের মালিক আল্লাহ তা‘আলা।
(وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقَي)
অর্থাৎ যারা দীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তারাই হতভাগা তাদের জন্যই জাহান্নাম।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاَمَّا الَّذِیْنَ شَقُوْا فَفِی النَّارِ لَھُمْ فِیْھَا زَفِیْرٌ وَّشَھِیْقٌ﮹ خٰلِدِیْنَ فِیْھَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَا۬ئَ رَبُّکَﺚ اِنَّ رَبَّکَ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیْدُ﮺ وَاَمَّا الَّذِیْنَ سُعِدُوْا فَفِی الْجَنَّةِ خٰلِدِیْنَ فِیْھَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَا۬ئَ رَبُّکَﺚ عَطَا۬ئً غَیْرَ مَجْذُوْذٍ)
“অতঃপর যারা হতভাগা তারা থাকবে অগ্নিতে এবং সেথায় তাদের জন্য থাকবে চীৎকার ও আর্তনাদ, সেথায় তারা স্থায়ী হবে যতদিন আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। পক্ষান্তরে যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে জান্নাতে সেথায় তারা স্থায়ী হবে, যত দিন আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; এটা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” (সূরা হূদ ১১: ১০৬-১০৮)
(النَّارَ الْكُبْرٰي)
‘মহা অগ্নি’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ
তোমাদের এ আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। (সহীহ বুখারী হা. ৩২৬৫) অর্থাৎ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে তা ৬৯ গুণ বেশি উত্তাপের অধিকারী এবং সে কারণে এখানে জাহান্নামের আগুনকে মহা অগ্নি বলা হয়েছে। সুতরাং এমন আগুনে যাতে যেতে না হয় সেজন্য সাধ্যমত সৎকাজ করতে হবে।
(لَا يَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْيٰي)
অর্থাৎ যেসব দুর্ভাগা উপদেশ বর্জন করবে তারা জাহান্নামে যাবে, যেখানে তারা মারাও যাবেনা, জীবিতও থাকে না। অর্থাৎ মারা যাবে না যাতে শাস্তি থেকে বেঁচে যায় বা আরাম না পায়, আবার ভালভাবে জীবিতও থাকবে না যাতে আরাম পায়। মোট কথা সবর্দা আযাবে হাবুডুবু খাবে। এ সম্পর্কে সূরা ত্বহার ৭৪ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
تَزَكّٰي অর্থাৎ যারা নিজেদের আত্মাকে খারাপ চরিত্র এবং পাপ ও শিরক থেকে পবিত্র করতে পেরেছে তারাই সফলকাম।
(وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّه۪ فَصَلّٰي)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে মগ্ন থাকে, তাঁর একত্বতা ঘোষণা করে, একমাত্র তাঁকেই ডাকে এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য আমল করে। فَصَلّٰي অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য শরীয়ত বাস্তবায়ন লক্ষ্যে যথাসময়ে সালাত আদায় করে। (তাফসীর মুয়াসসার)
আর যারা তাফসীর করে থাকেন تَزَكّٰي অর্থ ফিতরা আদায় করা এবং আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করা, আর فَصَلّٰي অর্থ ঈদের সালাত আদায় করাÑতাদের কথা যদিও শব্দের অর্থের মাঝে অন্তর্ভুক্ত এবং আংশিকের ওপর প্রমাণ বহন করে কিন্তু শুধু এটুকুর মাঝে আয়াতের অর্থ সীমাবদ্ধ নয়। (তাফসীর সা‘দী)
সুতরাং যে ব্যক্তি সকল প্রকার দুনিয়াবী স্বার্থ মানুষের সন্তুষ্টি হাসিল থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারল এবং সকল প্রকার শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সঠিক পদ্ধতিতে আমল করল সে ব্যক্তিই সফলকাম।
(بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْـحَيٰوةَ الدُّنْيَا)
অর্থাৎ হে মানব জাতি! তোমরা দুনিয়ার চাকচিক্যময় জীবনকেই আখেরাতের নেয়ামতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে থাকো অথচ আখেরাত ও তার নেয়ামতরাজি সব চিরস্থায়ী এবং দুনিয়া থেকে উত্তম। আনাস (রাঃ) বলেন : আমরা একদা আবূ মূসা আশআরী (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি সবাইকে বললেন : এসো আমরা কিছুক্ষণ আমাদের প্রভুকে স্মরণ করি। অতঃপর তিনি বলেন : হে আনাস! তুমি কি জান কোন বস্তু মানুষকে আখিরাত থেকে আটকে রাখে? আমি বললাম; দুনিয়া, শয়তান ও কুপ্রবৃত্তি। তিনি বলেন : না। বরং দুনিয়া নগদ পাওয়া যায় আর আখেরাত অদৃশ্যে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার কসম! যদি তারা আখেরাতকে চোখের সামনে দেখতে পেত তাহলে তারা পিঠ ফেরাতো না বা ইতস্তত করত না। (তাফসীর কুরতুবী) আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّهُمْ يَرَوْنَه۫ بَعِيْدًا وَّنَرَاهُ قَرِيْبًا)
“নিশ্চয়ই তারা ঐ দিনকে অনেক দূরে মনে করে, কিন্তু আমি তা দেখছি নিকটে।” (সূরা মাআরিজ ৭০ : ৬-৭)
সুতরাং আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াকে প্রাধ্যান্য দেওয়া ঈমানের দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া অনুরূপ তুচ্ছ, যেরূপ তোমাদের কেউ সাগরে আঙ্গুল ডুবালে তাতে যৎসামান্য পানি উঠে আসে। (সহীহ মুসলিম হা. ২৮৫৮, মিশকাত হা. ৫১৫৬)
(اِنَّ ھٰذَا لَفِی .....)
অর্থাৎ অত্র সূরায় যেসব উত্তম বিধি-বিধান ও সংবাদ উল্লেখ করা হলো এ সব কিছুর অর্থ ইবরাহীম ও মূসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ সহীফায় উল্লেখ ছিল। ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : ১৪-১৭ নম্বর আয়াতে বর্ণিত বক্তব্য হল বিগত ইলাহী ধর্ম ও আসমানী কিতাবসমূহের শিক্ষার সারনির্যাস। যা মানুষকে দুনিয়াবী লোভ-লালসার কলুষ হতে মুক্ত করে এবং আখেরাতের স্বচ্ছ গুণাবলীতে আলোকিত করে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সূরার গুরুত্ব জানতে পারলাম।
২. মাখলূক সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাকদীর নির্ধারণ করে রেখেছেন।
৩. সূরার প্রথম আয়াত পড়ে سبحان ربي الأعلي বলা মুস্তাহাব।
৪. অত্র সূরা ও সূরা গাশিয়াহ জুমু‘আ ও ঈদের সালাতে এবং বিতর সালাতে পাঠ করা সুন্নাত।
৫. যতক্ষণ দাওয়াতী কাজে উপকার আসবে ততক্ষণ তা বহাল রাখা আবশ্যক।
৬. দুনিয়ার চাকচিক্যকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয়া ঈমানের দুর্বলতা।
৭. আল্লাহ তা‘আলাকে যাবতীয় শির্ক, ত্রুটিপূর্ণ গুণ ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা থেকে পবিত্র করা আবশ্যক। তাঁর শানে অশোভনীয় কোন কথা বলা উচিত নয়।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১৪-১৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি চরিত্রহীনতা হতে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে, ইসলামের হুকুম আহকামের পুরোপুরি তাবেদারী করেছে এবং নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, সে মুক্তি ও সাফল্য লাভ করেছে।
হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করেছে, সে মুক্তি ও সাফল্য লাভ করেছে। আর (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “এটা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া এবং এর উপর পুরোপুরি যত্নবান থাকা।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে দৈনন্দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে বুঝানো হয়েছে।
হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) একবার ঈদের পূর্বের দিন আবূ খালদা (রঃ)-কে বলেনঃ “কাল ঈদগাহে যাওয়ার সময় আমার সাথে সাক্ষাৎ করে যেয়ো।” আবূ খালদা' (রঃ) বলেনঃ আমি তার কথামত তাঁর কাছে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি কি কিছু খেয়েছো?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা (খেয়েছি)। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “গোসল করেছো?” আমি জবাব দিলামঃ হ্যা (করেছি)। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ফিত্রা’ আদায় করেছো?” আমি জবাবে বললামঃ হ্যা (করেছি)। তিনি তখন বললেনঃ “আমি তোমাকে এ কথা বলার জন্যেই ডেকেছিলাম। এ আয়াতের অর্থও এটাই বটে।` মদীনাবাসী ফিত্রা’ আদায় করা এবং পানিপান করানোর চেয়ে উত্তম কোন সাদকার কথা জানতেন হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীযও (রঃ) লোকদেরকে ফিত্রা’ আদায়ের আদেশ করতেন এবং এ আয়াত পাঠ করে শুনাতেন।
হযরত আবুল আহওয়াস (রঃ) বলতেনঃ “যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নামায পড়ার ইচ্ছা করে এবং এই অবস্থায় কোন ভিক্ষুক এসে পড়ে তবে যেন সে তাকে কিছু দান করে।” অতঃপর তিনি (আরবি) আয়াত দু’টি পাঠ করতেন।
হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতদ্বয়ের ভাবার্থ হলোঃ যে নিজের মালকে পবিত্র করেছে এবং স্বীয় সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করেছে (সে সফলকাম হয়েছে)।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অর্থাৎ তোমরা আখেরাতের উপর পার্থিব জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়ার মধ্যেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। দুনিয়া তো হলো ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর অমর্যাদাকর। পক্ষান্তরে, আখেরাতের জীবন হলো চিরস্থায়ী ও মর্যাদাকর। কোন বুদ্ধিমান লোক অস্থায়ীকে স্থায়ীর উপর এবং মর্যাদাহীনকে মর্যাদাসম্পন্নের উপর প্রাধান্য দিতে পারে না। দুনিয়ার জীবনের জন্যে আখেরাতের জীবনের প্রস্তুতি পরিত্যাগ করতে পারে না।
মুসনাদে আহমদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর যার (আখেরাতে কেনি) ঘর নেই, দুনিয়া ঐ ব্যক্তির সম্পদ যার (আখেরাতে কোন) সম্পদ নেই এবং দুনিয়ার জন্যে ঐ ব্যক্তি (মালধন) জমা করে যার বিবেক বুদ্ধি নেই।”
হযরত আ’রফাজা’ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কাছে (আরবি) এই সূরাটির পাঠ শুনতে শুনতে চাচ্ছিলাম। যখন তিনি (আরবি) পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন তিনি এর পাঠ ছেড়ে দিয়ে স্বীয় সঙ্গীদেরকে বললেনঃ “আমরা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়েছি। তার এ কথায় জনগণ নীরব থাকলে তিনি বলেনঃ আমরা দুনিয়ার মোহে পড়ে গেছি। দুনিয়ার সৌন্দর্য নারী, খাদ্য ও পানীয় ইত্যাদি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আর আখেরাত আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছে। তাই আমরা আমাদের সামনের জিনিসের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি এবং দূরের জিনিস হতে চক্ষু ফিরিয়ে নিয়েছি।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ কথাগুলো বিনয় প্রকাশের জন্যে বলেছেন, না মানুষের স্বভাব হিসেবে বলেছেন তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন।
মুসনাদে আহমদে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালবেসেছে সে তার আখেরাতের ক্ষতি করেছে, আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে ভালবেসেছে, সে তার দুনিয়ার ক্ষতি করেছে। হে জনমণ্ডলী! যা বাকী থাকবে তাকে যা বাকী থাকবে না তার উপর প্রাধান্য দাও।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এটা তো পূর্ববর্তী সহীফাসমূহে ইবরাহীম (আঃ) এবং মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন (আরবি) এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন নবী করীম (সঃ) বলেনঃ “এর প্রত্যেকটাই হযরত ইবরাহীম (আঃ)ও হযরত মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে বিদ্যমান ছিল।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সুনানে নাসাঈতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন(আরবি) অবতীর্ণ হয় তখন বলেন “এর প্রত্যেকটাই হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে রয়েছে। আর যখন (আরবি) (৫৩:৩৭) অবতীর্ণ হয় তখন বলেনঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছিলেন। (আরবি) (কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। (১৭:১৫) অর্থাৎ এই আয়াত সুরা নাজমের নিম্নের আয়াতগুলোর মতঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তাকে কি অবগত করা হয়নি যা আছে মূসা (আঃ) এর কিতাবে? এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর কিতাবে, যে পালন করেছিল তার দায়ীত্ব? তা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে। অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান। আর এই যে, সবকিছুর সমাপ্তি তো তোমার প্রতিপালকের নিকট [শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলো]।” (৫৩ ৪ ৩৬-৪২) অর্থাৎ সমস্ত হুকুম-আহকাম পূর্ববর্তী আয়াতসমূহেও লিপিবদ্ধ ছিল। একইভাবে (আরবি) সূরার আয়াতগুলোতেও ঐ সব হুকুম আহকামের কথা বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, সমগ্র সূরাটিতেই এগুলোর বর্ণনা রয়েছে। আবার কারো কারো মতে(আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলোতে এর বর্ণনা রয়েছে। প্রথম উক্তিটিই বেশী সবল। এটাকেই হাসান (রঃ) পছন্দ করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।