আল কুরআন


সূরা আত-তারিক (আয়াত: 4)

সূরা আত-তারিক (আয়াত: 4)



হরকত ছাড়া:

إن كل نفس لما عليها حافظ ﴿٤﴾




হরকত সহ:

اِنْ کُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَیْهَا حَافِظٌ ؕ﴿۴﴾




উচ্চারণ: ইন কুল্লুনাফছিল লাম্মা-‘আলাইহা-হা-ফিজ।




আল বায়ান: প্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪. প্রত্যেক জীবের উপরই তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: প্রত্যেক আত্মার সাথে একজন সংরক্ষক আছে।




আহসানুল বায়ান: ৪। প্রত্যেক জীবের জন্য একজন সংরক্ষক রয়েছে। [1]



মুজিবুর রহমান: প্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে।



ফযলুর রহমান: প্রত্যেক মানুষের জন্যই একজন তত্ত্বাবধায়ক আছে।



মুহিউদ্দিন খান: প্রত্যেকের উপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।



জহুরুল হক: প্রত্যেক সার পক্ষেই -- তার উপরে একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।



Sahih International: There is no soul but that it has over it a protector.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৪. প্রত্যেক জীবের উপরই তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।(১)


তাফসীর:

(১) এটা শপথের জওয়াব। حَافِظٌ শব্দের অর্থ তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা। আকাশ ও নক্ষত্রের শপথ করে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের ওপর তত্ত্বাবধায়ক বা আমলনামা লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। সে তার সমস্ত কাজকর্ম ও নড়াচড়া দেখে, জানে। [ফাতহুল কাদীর] এর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চিন্তা করা উচিত যে, সে দুনিয়াতে যা কিছু করছে, তা সবই কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের জন্যে আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই কোন সময় আখেরাত ও কেয়ামতের চিন্তা থেকে গাফেল হওয়া অনুচিত। এখানে حَافِظٌ শব্দ একবচনে উল্লেখ করা হলেও তারা যে একাধিক তা অন্য আয়াত থেকে জানা যায়। অন্য আয়াতে আছে (وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ٭ كِرَامًا كَاتِبِينَ) “নিশ্চয় তোমাদের উপর নিয়োজিত রয়েছে তত্ত্বাবধায়করা, সম্মানিত লেখকরা”। [সূরা আল-ইনফিতার; ১০–১১]

তাছাড়া حافظ এর অপর অর্থ আপদ-বিপদ থেকে হেফাযতকারীও হয়ে থাকে। [ইবন কাসীর] আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক মানুষের হেফাযতের জন্যে ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তারা দিন-রাত মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত থাকে। তবে আল্লাহ তা'আলা যার জন্যে যে বিপদ অবধারিত করে দিয়েছেন, তারা সে বিপদ থেকে হেফাযত করে না। অন্য এক আয়াতে একথা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে, (لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ) অর্থাৎ মানুষের জন্যে পালাক্রমে আগমনকারী পাহারাদার ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। তারা আল্লাহর আদেশে সামনে ও পেছনে থেকে তার হেফাযত করে। [সূরা আর-রাদ: ১১]

অথবা হেফাযতকারী বলতে এখানে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] তিনি আকাশ ও পৃথিবীর ছোট বড় সকল সৃষ্টির দেখাশুনা, তত্ত্বাবধান ও হেফাযত করছেন। তিনিই সব জিনিসকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনিই সবকিছুকে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি সব জিনিসকে ধারণ করেছেন বলেই প্রত্যেকটি জিনিস তার নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি সব জিনিসকে তার যাবতীয় প্ৰায়োজন পূর্ণ করার এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত বিপদমুক্ত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টির জন্য আকাশের ও রাতের অন্ধকারে আন্তঃপ্রকাশকারী প্রত্যেকটি গ্রহ ও তারকার কসম খাওয়া হয়েছে।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: ৪। প্রত্যেক জীবের জন্য একজন সংরক্ষক রয়েছে। [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক জীবের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন। যাঁরা তার নেকী-বদী লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কোন কোন আলেম বলেন, তা হল মানুষের হিফাযতকারী ফিরিশতা; যেমন সূরা রা’দের ১১নং আয়াত থেকে জানা যায় যে, মানুষের হিফাযতের জন্যেও তার সামনে-পিছনে ফিরিশতা মোতায়েন থাকেন; যেমন তার কথা ও কাজ নোট করার জন্য ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: নামকরণ ও গুরুত্ব:



الطَّارِقِ শব্দের অর্থ রাতে আগমনকারী। সূূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الطَّارِقِ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।



খালেদ বিন আবূ জাবাল আল উদওয়ানী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন : তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সাক্বীফের পূর্ব দিকে দেখলেন তিনি (সাঃ) ধনুক বা লাঠির ওপর ভর দিয়ে আছেন। তিনি তাদের নিকট সহযোগিতা চাওয়ার জন্য এসেছিলেন, আমি তাঁর মুখ থেকে সূরা ত্বারিক পাঠ করা শ্রবণ করলাম এবং মুখস্থ করে নিলাম। তখন আমি মুশরিক ছিলাম। অতঃপর মুসলিম হওয়ার পর আমি তা পাঠ করলাম। তারপর সাক্বীফ গোত্রের লোকেরা আমাকে ডেকে বলে : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে কী শুনেছ? আমি তাদের কাছে এ সূরাটি পাঠ করলাম। তখন যেসব কুরাইশ ছিল তারা বলল : আমাদের সাথীর (মুহাম্মাদের) ব্যাপারে আমরা বেশি জানি। যদি আমরা তার কথা সত্য বলে জানতাম তাহলে আমরাই তার আনুগত্য করতাম। (আহমাদ ৩/৩৩৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১৩৬)



জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : মুয়ায (রাঃ) মাগরিবের সালাতে সূরা বাক্বারা ও সূরা নিসা দ্বারা ইমামতি করেন। নাবী (সাঃ) বললেন : হে মুয়ায! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করতে চাও?



(وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَالسَّمَا۬ءِ وَالطَّارِقِ)



ও অনুরূপ সূরাগুলো কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? (সহীহ বুখারী হা. ৭০৫)





১-১৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর:



সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির শপথ করছেন।



الطَّارِقِ-এর তাফসীর পরের আয়াতে উল্লেখ করে বলেন : النَّجْمُ الثَّاقِبُ বা উজ্জ্বল নক্ষত্র।



কাতাদাহ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন : তারকাকে طارِق বলে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, তা রাতের বেলা দেখা যায় আর দিনের বেলা গোপন থাকে। এ শব্দটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন যিনি সারাদিন বা অনেক দিন বাড়ির বাইরে ছিল হঠাৎ করে রাতে পরিবারের কাছে আগমন করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :



(ذَا أَطَالَ أَحَدُكُمُ الغَيْبَةَ فَلاَ يَطْرُقْ أَهْلَهُ لَيْلًا)



যখন তোমাদের কেউ দীর্ঘদিন পরিবার থেকে অনুপস্থিত থাকে তবে সে যেন হঠাৎ করে রাতের বেলায় পরিবারের কাছে প্রবেশ না করে। (সহীহ বুখারী হা. ৫২৪৪)



সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : আকাশ ও সেখানে যা রাতে আগমন করে। পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা الطَّارِقِ এর ব্যাখ্যা আরো সুস্পষ্টভাবে দিয়েছেন।



الثَّاقِبُ শব্দটি জাতিবাচক নাম। এতে সব উজ্জ্বল তারকা শামিল। (তাফসীর সা‘দী) অর্থাৎ الطَّارِقِ হল উজ্জ্বল তারকা যা রাতের বেলায় আগমন করে ও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হয়।



(إِنْ كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ)



প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন যারা ভাল-মন্দ সব আমল লিপিবদ্ধ করে। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হেফাযতকারী নিযুক্ত রয়েছেন যারা বিপদ আপদ থেকে তাদেরকে হেফাযত করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(لَه۫ مُعَقِّبٰتٌ مِّنْ ۭبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِه۪ يَحْفَظُوْنَه۫ مِنْ أَمْرِ اللّٰهِ ‏)‏



“মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী ফেরেশতা থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।” (সূরা রা‘দ ১৩: ১১)



হাদীসেও এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : ফেরেশতাদের দুটি দল তোমাদের কাছে রাতে ও দিনে পালাক্রমে আগমন করে। উভয় দল ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয় এবং একে অপরের দায়িত্ব বদল করে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৫৫, সহীহ মুসলিম হা. ৬৩২)



তারপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার সৃষ্টির মূল উপাদান সম্পর্কে চিন্তা করার কথা বলছেন। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে مَّا۬ءٍ دَافِقٍ বা বীর্য থেকে যা মিলনক্রিয়ার চরম উত্তেজনার মুহূর্তে সবেগে নির্গত হয়। এ বীর্য নারীর গর্ভে পৌঁছনোর পর আল্লাহ তা‘আলার আদেশ হলে গর্ভে সন্তান আসে।



(الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ)



এখানে صلب মেরুদন্ড বলতে পুরুষের মেরুদন্ড আর ترائب বলতে নারীর দুই স্তনের মধ্যখানকে বুঝানো হয়েছে।



যে আল্লাহ তা‘আলা এরূপ কঠিন জায়গা থেকে পানি নির্গত করে মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই পুনরায় পুনরুত্থানের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করতে সক্ষম।



(تُبْلَي السَّرَآئِرُ) অর্থাৎ সেদিন প্রত্যেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাবে। মানুষ গোপনে যত কর্ম করেছে যত কথা বলেছে কিয়ামতের দিন সব প্রকাশ করে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের পিছনে পতাকা গেড়ে দেয়া হবে এবং ঘোষণা দেয়া হবেÑএ হলো বিশ্বাসঘাতক, অমুকের ছেলে অমুক। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৭৮)



এখানে ‘গোপন বিষয়াদি প্রকাশিত হবে’ বলে মুনাফিক ও চক্রান্তকারীদের মনের মধ্যে লুক্কায়িত কপটতাসমূহ বুঝানো হয়েছে। নইলে বাহ্যিক সালাত, সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদতে সবাই সমান। বকর বিন আব্দুল্লাহ আল-মুনাযী (রহঃ) বলেন : আবূ বকর (রাঃ) অন্যদের থেকে সালাত, সিয়ামে অগ্রগামী নয়। বরং অন্যদের চেয়ে তিনি অগ্রণী হলেন তাঁর হৃদয়ে স্থিত ঈমানের কারণে। (হাকীম, তিরমিযী)



(فَمَا لَه۫ مِنْ قُوَّةٍ)



অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষের নিজের কোন ক্ষমতা থাকবে নাÑ যার দ্বারা শাস্তি প্রতিহত করবে এবং অন্য কেউ তাতে সহযোগিতাও করবে না। আল্লাহ তা‘আলা দ্বিতীয়বার শপথ করছেন আকাশের যা



(ذَاتِ الرَّجْعِ)



বা বৃষ্টি বর্ষণকারী। অর্থাৎ আকাশ হতে প্রতি বছর বারবার বৃষ্টি বর্ষণ হয় এবং শপথ করেছেন জমিনের যা



(ذَاتِ الصَّدْعِ)



বা বিদীর্ণ হয়। অর্থাৎ জমিন থেকে ফেটে শস্য উৎপন্ন হয়। শপথ করার পর তার জবাব হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : এ কুরআন অবশ্যই সত্য। কোন ঠাট্টা বা খেল-তামাশার বস্তু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلاً)



“সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ।” (সূরা আনআম ৬ : ১১৫)



(إِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا)



অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা সত্যকে অপসারণ করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : আমিও কৌশল করি। অর্থাৎ তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের অপকৌশলকে প্রতিহত করেন। كَيْدًا গোপন কৌশল অবলম্বন করাকে বলা হয়। এ কৌশল মন্দ উদ্দেশ্যে হলে তা নিন্দনীয়। প্রত্যেক যুগের কাফিররা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত করেছে, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللّٰهِ بِأَفْوَاهِهِمْ ط وَاللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِه۪ وَلَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ)



“তারা আল্লাহর নূর তাদের মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা সফ ৬১: ৮)



কিন্তু তাদের চক্রান্ত সফল হবে না, আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করবেন।



(فَمَهِّلِ الْكٰفِرِيْنَ)



অর্থাৎ তাদের জন্য তড়িঘড়ি শাস্তি প্রার্থনা করো না বরং তাদেরকে কিছু সময় অবকাশ দাও। رُوَيْدًا শব্দটি قليلا অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এ অবকাশ দেয়াটা আল্লাহ তা‘আলার একটি কৌশল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلٰي عَذَابٍ غَلِيْظٍ)



“আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, পুনরায় তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে।” (সূরা লুকমান ৩১ : ২৪)



অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَالَّذِیْنَ کَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُھُمْ مِّنْ حَیْثُ لَا یَعْلَمُوْنَﰅوَاُمْلِیْ لَھُمْﺚ اِنَّ کَیْدِیْ مَتِیْنٌ)



“যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। আমি তাদের অবকাশ দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।” (সূরা আ‘রাফ ৭: ১৮২-৮৩)



অতএব ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু পূর্বেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তারা যতই চক্রান্ত করুক না কেন মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই মুসলিমদের উচিত হবে কাফিরদের শক্তি ও সংখ্যাকে ভয় না করে ইসলামের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।



সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয় শিক্ষা:



১. সূরাটির গুরুত্ব জানতে পারলাম।

২. মানুষ যদি নিজের সৃষ্টি উপাদান নিয়ে চিন্তা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলাকে চিনতে পারবে এবং তাদের জন্য আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা সহজ হবে।

৩. কিয়ামতের দিন কিছুই গোপন থাকবে না, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু উন্মোচন করে দেয়া হবে।

৪. আল্লাহ তা‘আলা কৌশল করেনে গুণটির প্রমাণ পেলাম।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: আবু হাবল উদওয়ানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সাকীফ গোত্রের পূর্ব প্রান্তে ধনুকের উপর অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে , (আরবি); এই সূরাটি সম্পূর্ণ পাঠ করতে শুনেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) সেখানে তাদের নিকট সাহায্যের জন্যে গিয়েছিলেন। হযরত আবু হাবল উদওয়ানী (রাঃ) সূরাটি মুখস্থ করে নেন। ঐ সময় তিনি মুশরিক ছিলেন। পরে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। সাকীফ গোত্রের মুশরিকদেরকে তিনি সূরাটি পাঠ করে শুনান। তারা এটা শুনে বললোঃ “যদি আমরা তার কথা সত্য বলে জানতাম বা বিশ্বাস করতাম তবে তো আমরা তার আনুগত্যই করতাম।”

সুনানে নাসাঈতে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয (রাঃ) মাগরিবের নামাযে সূরা বাকারাহ্ ও সূরা নিসা পাঠ করেন। তখন নবী করীম (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে মুআয (রাঃ)! তুমি (জনগণকে) ফিত্রায় ফেলবে?

(আরবি) এবং এ ধরনের (ছোট ছোট) সূরা পাঠ করাই কি তোমার জন্যে যথেষ্ট ছিল না?”

১-১০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আকাশ এবং উজ্জ্বল নক্ষত্র রাজির শপথ করছেন। (আরবি) এর তাফসীর করা হয়েছে চমকিত তারকা বা নক্ষত্র। কারণ এই নক্ষত্র দিনের বেলায় লুকায়িত থাকে এবং রাত্রিকালে আত্মপ্রকাশ করে। একটি সহীহ্ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “কেউ যেন রাত্রিকালে তার নিজের বাড়ীতে অজ্ঞাতসারে প্রবেশ না করে।

এখানেও (আরবি) শব্দ রয়েছে। অন্য একটি হাদীসে এ শব্দটি দুআ' অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।

(আরবি) বলা হয় চমকিত আলোকপিণ্ডকে যা শয়তানের উপর নিক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে জ্বালিয়ে দেয়। প্রত্যেক লোকের উপর আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে একজন হিফাযতকারী নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি তাকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তার সামনে-পিছনে পালাক্রমে আগমনকারী ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে, তারা আল্লাহর আদেশক্রমে তার হিফাযত করে থাকে।”(১৩:১১)

এরপর মানুষের দুর্বলতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ মানুষের এটা চিন্তা করা উচিত যে, তাকে কি জনিস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছেঃ তাদের সৃষ্টির মূল কি? এখানে অত্যন্ত সূক্ষতার সাথে কিয়ামতের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। লা হয়েছেঃ যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি কেন পুৱখানে সক্ষম হবেন না। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনরুত্থান ঘটাবেন এবং এটা তার জন্যে খুবই সহজ।” (৩০:২৭)

মানুষ সবেগে স্থলিত পানি অর্থাৎ নারী-পুরুষের বীর্যদ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। এই বীর্য পুরুষের পৃষ্ঠদেশ হতে এবং নারীর বক্ষদেশ হতে স্খলিত হয়। নারীদের এই বীর্য হলুদ রঙের এবং পাতলা হয়ে থাকে। উভয়ের বীর্যের সংমিশ্রণে শিশুর জন্ম হয়।

হার পরার জায়গাকে তারীবা' বলা হয়। কাঁধ থেকে নিয়ে বুক পর্যন্ত জায়গাকেও তারীবা বলা হয়ে থাকে। কণ্ঠনালী হতে বুক পর্যন্ত জায়গাকেও কেউ কেউ তারীবা’ বলেছেন। বুক থেকে নিয়ে উপরের অংশকেও তারীবা’ বলা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, নীচের দিকের চারটি পঞ্জরকে তারীবা’ বলা হয়। কেউ কেউ আবার উভয় স্তনের মধ্যবর্তী স্থানকেও তারীবা' বলেছেন। এ কথাও বলা হয়েছে যে, পিঠ ও বুকের মধ্যবর্তী স্থানকে (আরবি) বলা হয়।

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) (নিশ্চয় তিনি তার প্রত্যানয়নে ক্ষমতাবান)। এতে দুটি উক্তি রয়েছে। একটি উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হলোঃ বের হওয়া পানি বা বীর্যকে তিনি ওর জায়গায় ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। এটা মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনের উক্তি। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তাকে পুনরায় সৃষ্টি করে আখেরাতের দিকে প্রত্যাবৃত্ত করতেও তিনি ক্ষমতাবান। এটা হযরত যহ্হাক (রঃ)-এর উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। কেননা, দলীল হিসেবে এটা কুরআন কারীমের মধ্যে কয়েক জায়গায় উল্লিখিত হয়েছে।

এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন গোপন বিষয়সমূহ খুলে যাবে, রহস্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে এবং লুকায়িত সবকিছুই বের হয়ে যাবে।

সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক গাদ্দার-বিশ্বাসঘাতকের নিতম্বের নিকট তার বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা প্রোথিত করা হবে এবং ঘোষণা করা হবেঃ “এই ব্যক্তি হলো অমুকের পুত্র অমুক গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক ও আত্মসাৎকারী। সেই দিন মানুষ নিজেও কোন শক্তি লাভ করবে না এবং তার সাহায্যের জন্যে অন্য কেউও এগিয়ে আসবে না। অর্থাৎ নিজেকে নিজেও আল্লাহ্র আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না এবং অন্য কেউও তাকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে না।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।