আল কুরআন


সূরা আল-বুরুজ (আয়াত: 19)

সূরা আল-বুরুজ (আয়াত: 19)



হরকত ছাড়া:

بل الذين كفروا في تكذيب ﴿١٩﴾




হরকত সহ:

بَلِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فِیْ تَکْذِیْبٍ ﴿ۙ۱۹﴾




উচ্চারণ: বালিল্লাযীনা কাফারূফী তাকযীব ।




আল বায়ান: বরং কাফিররা মিথ্যারোপে লিপ্ত।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. তবু কাফিররা মিথ্যারোপ করায় রত;




তাইসীরুল ক্বুরআন: তবুও কাফিররা সত্য প্রত্যাখ্যান করেই চলেছে।




আহসানুল বায়ান: ১৯। তবুও কাফেররা মিথ্যাজ্ঞান করায় রত।



মুজিবুর রহমান: তবু কাফিরেরা মিথ্যা আরোপ করায় রত,



ফযলুর রহমান: বরং যারা কাফের, তারা অবিশ্বাসে অনড় রয়েছে।



মুহিউদ্দিন খান: বরং যারা কাফের, তারা মিথ্যারোপে রত আছে।



জহুরুল হক: বস্তুত যারা অবিশ্বাস করেছে তারা মিথ্যারোপ করায় রত;



Sahih International: But they who disbelieve are in [persistent] denial,



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৯. তবু কাফিররা মিথ্যারোপ করায় রত;


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: ১৯। তবুও কাফেররা মিথ্যাজ্ঞান করায় রত।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১-২২ নম্বর আয়াতের তাফসীর:



আল্লাহ তা‘আলা তার মু’মিন বান্দাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তাদের জন্য এমন জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। পক্ষান্তরে তাঁর শত্রুদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন জাহান্নাম।



(إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُوْدٌ)



অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার শত্রু, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাঁর নির্দেশ অমান্য করেছে তাদের জন্য (হে মুহাম্মাদ) তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি খুবই কঠিন।



(إِنَّه۫ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيْدُ)



অর্থাৎ তিনি একাই নিজ শক্তি ও কুদরতে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামতের দিন পুনর্বার ঠিক সেভাবেই সৃষ্টি করবেন যেভাবে তিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন, এতে তাঁর সাথে কেউ শরীক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُه۫ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ ط وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلٰي فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ج وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)



“তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তা পুনরাবৃত্তি করবেন; এটা তার জন্য খুবই সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী মহাবিজ্ঞ।” (সূরা রূম ৩০ : ২৭)



(ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيْدُ)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মর্যাদাপূর্ণ আরশের মালিক যা সকল মাখলুকের ঊর্ধ্বে এবং সবকিছু থেকে বড়। হাদীসে আরশের বড়ত্ব বুঝানোর জন্য এসেছে : আরশের তুলনায় কুরসী এমন ছোট যেমন বিশাল মরুভূমিতে একটি লোহার বালা ফেলে দিলে যেমন দেখা যাবে। অথচ কুরসী এত বিশাল যে, সাত আকাশ ও জমিনকে জালের মত বেষ্টন করে আছে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ, কিতাবুল আরশ)



(فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার কোন প্রতিবন্ধক নেই। যখন ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন “হও” সাথে সাথে তা হয়ে যায়। এ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কারো নেই।





(هَلْ أَتَاكَ حَدِيْثُ الْـجُنُوْدِ)



অর্থাৎ ফির‘আউন ও সামূদ জাতি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে তাদের ওপর শাস্তি নেমে এসেছিল সে সংবাদ কি আপনার কাছে এসেছে? এটা জানানোর একটি মাধ্যম, রাসূূলকে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রশ্নাকারে জিজ্ঞাসা করছেন। সুতরাং এ সকল জালিমরা মু’মিনদেরকে শত নির্যাতন করার পরেও মু’মিনদেরকে ঈমান থেকে সরাতে পারেনি, তারা কষ্ট সহ্য করেছে। তাই আপনি মক্কার কাফিরদের কষ্টে মনবল হারাবেন না বরং আপনার দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যান।



(وَّاللّٰهُ مِنْ وَّرَآئِهِمْ مُّحِيْطٌ)



অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে তাঁর জ্ঞান ও কুদরত দ্বারা বেষ্টন করে আছেন।

(فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ)



অর্থাৎ কোন প্রকার পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও কম-বেশি থেকে সংরক্ষিত এবং শয়তান থেকেও সংরক্ষিত। এর মধ্যে মু’মিনদের প্রতি উপদেশ রয়েছে : তারা যেন কুরআনকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং সার্বিক জীবনে সে অনুসারী দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হয়।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. সৎ আমলকারী মু’মিনদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে জান্নাত।

২. কাফিরদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও বড় কঠিন।

৩. সকল কর্ম পরিচালনা করেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

৪. আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তিনি ভালবাসেন এবং তিনি ক্ষমাশীলÑএ তিনটি গুণের প্রমাণ পেলাম।

৫. কুরআন লাওহে মাহফূজে সকল দোষত্রুটি থেকে সংরক্ষিত।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-২২ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা'আলা নিজ শত্রুদের পরিণাম বর্ণনা করার পর তার বন্ধুদের পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তাদের জন্যে বেহেশত রয়েছে তার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত রয়েছে। তাদের মত সফলতা আর কে লাভ করতে পারে? এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমার প্রতিপালকের মারা বা শাস্তি বড়ই কঠিন। তাঁর যে সব শত্রু তাঁর রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দেয় তাদেরকে তিনি ব্যাপক শক্তির সাথে পাকড়াও করবেন, যে পাকড়াও থেকে মুক্তির কোন পথ তারা খুঁজে পাবে না। তিনি বড়ই শক্তিশালী। তিনি যা চান তাই করেন। যা কিছু করার তাঁর ইচ্ছা হয় এক নিমেষের মধ্যে তা করে ফেলেন। তার কুদরত বা শক্তি এমনই যে, তিনি মানুষকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন, তারপর মৃত্যুমুখে পতিত করার পর পুনরায় জীবিত করবেন। পুনরায় জীবিত করার ব্যাপারে তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারবে না, তাঁর সামনেও কেউ আসতে পারবে না।

তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ ক্ষমা করে থাকেন, তবে শর্ত হলো যে, তাদেরকে তার কাছে বিনীতভাবে তাওবা করতে হবে। তাহলে যত বড় পাপ বা অন্যায় হোক না কেন তিনি তা মার্জনা করে দিবেন।

তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়। স্বীয় বান্দাদের প্রতি তিনি অত্যন্ত স্নেহশীল। তিনি আরশের মালিক, সেই আরশ সারা মাখলুকাত অপেক্ষা উচ্চতর এবং সকল মাখলুক তথা সৃষ্টির উপরে অবস্থিত।

(আরবি) শব্দের দুটি কিরআত রয়েছে। একটি কিরআতে মীম’ এর উপর যবর দিয়ে অর্থাৎ (আরবি) এবং অপর কিরআতের ‘মীম’ এর উপর পেশ দিয়ে অর্থাৎ (আরবি) রয়েছে। (আরবি) উচ্চারণ করলে তাতে আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে। আর উচ্চারণ করলে প্রকাশ পাবে আরশের গুণ বৈশিষ্ট্য। উভয় কিরআতই নির্ভুল ও বিশুদ্ধ।

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা যে কোন কাজ যখন ইচ্ছা করতে পারেন, করার ক্ষমতা রাখেন। শ্রেষ্ঠত্ব, সুবিচার এবং নৈপুণ্যের ভিত্তিতে কেউ তাকে বাধা দেয়ার বা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ক্ষমতা রাখেন না।

হযরত আবু বকর (রাঃ) যে রোগে মৃত্যুবরণ করেন ঐ রোগের সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “চিকিৎসক আপনার চিকিৎসা করেছেন কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যা, করেছেন। জনগণ তখন তাঁকে বললেনঃ “চিকিৎসক আপনাকে (রোগের ব্যাপারে) কি বলেছেন?` তিনি জবাব দিলেনঃ “চিকিৎসক বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি যা ইচ্ছা করি তা-ই করে থাকি। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (হে নবী (সঃ)! তোমার নিকট কি ফিরাউন ও সামুদের সৈন্যবাহিনীর বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? এমন কেউ ছিল না যে সেই শাস্তি থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে পারে, তাদেরকে সাহায্য করতে পারে বা শাস্তি প্রত্যাহার করাতে পারে। অর্থাৎ আল্লাহর পাকড়াও খুবই কঠিন। যখন তিনি কোন পাপী, অত্যাচারী, দুষ্কৃতিকারী ও দুবৃত্তকে পাকড়াও করেন তখন অত্যন্ত ভয়াবহভাবেই পাকড়াও করে থাকেন।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আমর ইবনে মায়মুন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) কোথাও গমন করছিলেন এমন সময় তিনি শুনতে পান যে, একটি মহিলা। (আরবি) এ আয়াতটি পাঠ করছেন। তিনি তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং কান লাগিয়ে শুনতে লাগলেন। অতঃপর বললেনঃ(আরবি) অর্থাৎ হ্যাঁ এ খবর এসেছে।” আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তবু কাফিররা মিথ্যা আরোপ করায় রত। অর্থাৎ তারা সন্দেহ, কুফরী এবং হঠকারিতায় রত রয়েছে।

আর আল্লাহ তাদের অলক্ষ্যে তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের উপর বিজয়ী ও শক্তিমান। তারা তাঁর নিকট হতে কোথাও আত্মগোপন করতে পারে না। অথবা তাকে পরাজিত করতে পারে না।

কুরআন কারীম সম্মান ও কারামত সম্পন্ন। তা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের মধ্যে রয়েছে, কুরআন হ্রাস বৃদ্ধি হতে মুক্ত। এর মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হবে না।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, এই লাওহে মাহফুয হযরত ইসরাফীল (আঃ)-এর ললাটের উপর রয়েছে। আবদুর রহমান ইবনে সালমান (রঃ) বলেন যে, পৃথিবীতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে তা সবই লাওহে মাহফুযে মওজুদ রয়েছে এবং লাওহে মাহফুয হযরত ইসরাফীল (আঃ)-এর দু’চোখের সামনে বিদ্যমান রয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তা দেখতে পারেন না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, লাওহে মাহফুযের কেন্দ্রস্থলে লিখিত রয়েছেঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, একক। তার দ্বীন ইসলাম, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল! যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান আনবে, তাঁর অঙ্গীকারসমূহকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর রাসূলদের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন।

এ লাওহে মাহফুয সাদা মুক্তা দিয়ে নির্মিত। এর দৈর্ঘ্য আসমান জমীনের মধ্যবর্তী স্থানের সমান। এর প্রস্থ মাশরিকও মাগরিবের মধ্যবর্তী জায়গার সমান। এর উভয় দিক মুক্তা এবং ইয়াকুত দ্বারা নির্মিত। এর কলম নূরের তৈরী। এর কালাম আরশের সাথে সম্পৃক্ত। এর মূল ফেরেশতাদের ক্রোড়ে অবস্থিত। মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এ কুরআন আরশের ডানদিকে বিদ্যমান। তিবরানীর (রঃ) হাদীসে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফুজকে সাদা মুক্তা দ্বারা নির্মান করেছেন। এর পাতা লাল ইয়াকূতের এর কলম নূরের, এর মধ্যকার লিখাও নূরের আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ তিনশ ষাটবার করে আরশকে দেখে থাকেন। তিনি সৃষ্টি করেন রিযক দেন, মৃত্যু ঘটান, জীবন দান করেন, সম্মান দেন, অপমানিত করেন এবং যা চান তাই করে থাকেন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।