সূরা আল-ইনশিকাক (আয়াত: 16)
হরকত ছাড়া:
فلا أقسم بالشفق ﴿١٦﴾
হরকত সহ:
فَلَاۤ اُقْسِمُ بِالشَّفَقِ ﴿ۙ۱۶﴾
উচ্চারণ: ফালাউকছিমুবিশশাফাক।
আল বায়ান: অতঃপর আমি কসম করছি পশ্চিম আকাশের লালিমার।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৬. অতঃপর আমি শপথ করছি(১) পশ্চিম আকাশের লালিমার,
তাইসীরুল ক্বুরআন: আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লালিমার,
আহসানুল বায়ান: ১৬। আমি শপথ করি অস্তরাগের [1]
মুজিবুর রহমান: আমি শপথ করি অস্তরাগের –
ফযলুর রহমান: আমি শপথ করি পশ্চিম দিগন্তের সান্ধ্য লালিমার,
মুহিউদ্দিন খান: আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার
জহুরুল হক: কিন্ত না, আমি সাক্ষী করছি সূর্যাস্তের রক্তিমাভা,
Sahih International: So I swear by the twilight glow
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৬. অতঃপর আমি শপথ করছি(১) পশ্চিম আকাশের লালিমার,
তাফসীর:
(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তিনটি বস্তুর শপথ করে মানুষকে আবার (إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ) আয়াতে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি মনোযোগী করেছেন। শপথের জওয়াবে বলা হয়েছে যে, মানুষ এক অবস্থার উপর স্থিতিশীল থাকে না বরং তার অবস্থা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হতে থাকে। যৌবন থেকে বাৰ্ধক্য, বাৰ্ধক্য থেকে মৃত্যু, মৃত্যু থেকে বরযখ (মৃত্যু ও কিয়ামতের মাঝখানের জীবন), বরযখ থেকে পুনরুজ্জীবন, পুনরুজ্জীবন থেকে হাশরের ময়দান তারপর হিসেব-নিকেশ এবং শাস্তি ও পুরস্কারের অসংখ্য মনযিল মানুষকে অতিক্রম করতে হবে। এ বিভিন্ন পৰ্যায় প্রমাণ করছে যে, একমাত্র আল্লাহই তার মা’বুদ, তিনি বান্দাদের কর্মকাণ্ড নিজস্ব প্রজ্ঞা ও রহমতে নিয়ন্ত্রণ করেন। আর বান্দা মুখাপেক্ষী, অপারগ, মহান প্রবল পরাক্রমশালী দয়ালু আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। [বাদায়ে’উত তাফসীর; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ১৬। আমি শপথ করি অস্তরাগের [1]
তাফসীর:
[1] شفق (অস্তরাগ) সেই লালবর্ণের আভাকে বলা হয় যা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে প্রকাশ পায় এবং তা এশার ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১৬-২৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
الشَّفَق (অস্তরাগ) সেই লাল বর্ণের আভাকে বলা হয় যা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে প্রকাশ পায় এবং ইশার ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।
(وَمَا وَسَقَ) অর্থাৎ অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে প্রতিটি জন্তু নিজ নিজ আবাসস্থলে সমাগত হয়। অর্থাৎ রাতের অন্ধকার যে সকল বস্তুকে নিজের আঁচল দ্বারা ঢেকে নেয়। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : অন্ধকারে যে সকল তারকা ও প্রাণী একত্রিত হয়। (ইবনু কাসীর)
(إِذَا اتَّسَقَ) এর অর্থ: যখন চাঁদ পূর্ণিমাতে পূর্ণতা লাভ করে। যেমন ১৩ তারিখের রাত থেকে নিয়ে ১৬ তারিখের রাত পর্যন্ত তার উক্ত অবস্থা বিদ্যমান থাকে।
এগুলোর শপথ করার পর আল্লাহ তা‘আলা এবার তার জবাবে বলছেন : নিশ্চয়ই তোমরা এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে আরোহণ করবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন :
(لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ)
অর্থাৎ حالا بعد حال বা এক অবস্থার পর অন্য অবস্থা। এটা তোমাদের নাবী (সাঃ) বলেছেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৪০) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: কিয়ামতের দিন মানুষ পর্যায়ক্রমে ভীষণ কঠিনের পর কঠিনতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
(فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ)
অর্থাৎ তাদের নিকট এসব নিদর্শন সবিস্তারিত আলোচনা করার পরেও কোন্ জিনিস তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান আনতে বাধা দিল? আর কেন তাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করলেও তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিজদা করে না এবং আগত সত্য মেনে নেয় না। (তাফসীর মুয়াসসার)
(وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ.....)
এ আয়াত পড়ে সিজদা দিতে হয়, যেমন অত্র সূরার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন : এর অর্থ এই নয় যে, সিজদা দেয়া ফরয। কেননা এর তাৎপর্য হল কাফিররা মাথা নত করে না এবং কুরআনের ওয়াজিবসমূহ প্রতিপালনের মাধ্যমে আনুগত্য প্রদর্শন করে না। (তাফসীর কুরতুবী) সিজদার বিধান সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের শেষ আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
يُوْعُوْنَ কাতাদাহ ও মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : তারা অন্তরে যা কিছু গোপন করে সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন। অর্থাৎ কাফিররাই আখিরাতকে অস্বীকার করে, তাদের সকল কিছু আল্লাহ তা‘আলা অবগত আছেন, আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সুতরাং হে রাসূল! তুমি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।
(غَيْرُ مَمْنُوْنٍ....)
অর্থাৎ غَيْرُ مَنْقُوْصٍ বা কম করে নয়, নিরবচ্ছিন্ন। মুজাহিদ ও যহহাক (রহঃ) বলেন:
غَيْرُ مَمحسوْنٍ
বা বেহিসাব প্রতিদান দেয়া হবে। অর্থাৎ যারা ঈমান এনেছে, সৎআমল করেছে তারা জাহান্নামের অধিবাসী নয়, বরং তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত।
সুতরাং মু’মিননের জন্য জান্নাতে যে অপরিমেয় নেয়ামত রয়েছে তার জন্য আমাদের প্রতিটি মু’মিনের আগ্রহ প্রকাশসহ যথাসম্ভব সৎ আমল করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষ কিয়ামতের দিন কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
২. কোন প্রতিবন্ধক না থাকা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনে না, এটাই আশ্চর্যজনক বিষয়।
৩. সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করে সিজদা করা মুস্তাহাব।
৪. মু’মিনদের জন্য রয়েছে অপরিমেয় প্রতিদান।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১৬-২৫ নং আয়াতের তাফসীর
সূর্যাস্তকালীন আকাশের লালিমাকে শফক বলা হয়। পশ্চিমাকাশের প্রান্তে এ লালিমার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ), হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ), হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত শাদদাদ ইবনে আউস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ), হযরত মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (রঃ), হযরত মাকস্থূল (রঃ), হযরত বকর ইবনে আবদিল্লাহ মাযানী (রঃ), হযরত বুকায়ের ইবনে আশাজ (রঃ), হযরত মালিক (রঃ), হযরত ইবনে আবী যিব (রঃ) এবং হযরত আবদুল আযীম ইবনে আবী সালমা মা, জিশান (রঃ) বলেন ঐ লালিমাকেই শফক বলা হয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, শফক হলো শুভ্রতা। তবে কিনারা বা প্রান্তের লালিমাকে শফক বলা হয় সেটা সূর্যোদয়ের পূর্বেই হোক বা সূর্যোদয়ের পরেই হোক। খলীল (রঃ) বলেন যে, ইশার সময় পর্যন্ত এ লালিমা অবশিষ্ট থাকে। জওহীর (রঃ) বলেন, যে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর যে লালিমা বা আলোক অবশিষ্ট থাকে ওটাকে শফক বলা হয়। এটা সন্ধ্যার পর থেকে নিয়ে ইশার নামাযের সময় পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, মাগরিবের সময় থেকে নিয়ে ইশার সময় পর্যন্ত এটা বাকী থাকে।
সহীহ মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাগরিবের সময় শফক অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকে।” অর্থাৎ এ সময় পর্যন্ত মাগরিবের নামায আদায় করা যেতে পারে।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, শফকের অর্থ হলো সারাদিন। অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, শফকের অর্থ হলো সূর্য। মনে হয় আলো এবং অন্ধকারের কসম খেয়েছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ দিনের প্রস্থান এবং রাত্রির আগমনের শপথ। অন্যরা বলেন যে, সাদা এবং লাল বর্ণের নাম শফক। এই শব্দটি (আরবি) এর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ বিপরীত অর্থবোধক।
(আরবি) শব্দের অর্থ হলোঃ একত্রিত করেছে অর্থাৎ নক্ষত্ররাজি এবং যা কিছু রাত্রে বিচরণ করে | আর শপথ চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণ হয়। অর্থাৎ চন্দ্র যখন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়ে পুর্ণ আলোকময় হয়ে যায় তার শপথ।
(আরবি) এর তাফসীর সহীহ বুখারীতে মারফু হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়ে চলে যাবে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, যে বছর আসবে সেই বছর পূর্বের বছরের চেয়ে খারাপ হবে। হযরত উমার (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজনও এটাই সমর্থন করেন এবং মক্কাবাসী ও কুফাবাসীর কিরআত দ্বারাও এরই সমর্থন পাওয়া যায়।
শাবী (রঃ) বলেন যে, (আরবি) এর অর্থ হলোঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এক আকাশের পর অন্য আকাশে আরোহণ করবে। এর দ্বারা মিরাজকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এক মনযিলের পর অন্য মনযিলে আরোহণ করতে থাকবে। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী মনযিল অতিক্রম করবে। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের নীতি বা পন্থার উপর চলবে। এমন কি তারা যদি গোসাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাই করবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহ রাসূল (সঃ) পূর্ববর্তীদের দ্বারা কি ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে বুঝানো হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা ছাড়া আর কারা হবে?”
মাকহুল (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ প্রতি বিশ বছর পর পর তোমরা কোন না কোন এমন কাজ আবিষ্কার করবে যা পূর্বে ছিল না। আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ আসমান ফেটে যাবে, তারপর ওটা লাল বর্ণ ধারণ করবে এবং এর পরেও রঙ বদলাতেই থাকবে। এক সময় আকাশ ধূম্র হয়ে যাবে, তারপর ফেটে যাবে। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ পৃথিবীতে অবস্থানকারী হীন ও নিকৃষ্ট মর্যাদার বহু লোক আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে। পক্ষান্তরে পৃথিবীর উচ্চ মর্যাদাশীলও প্রভাবশালী বহু লোক আখেরাতে মর্যাদাহীন, অপমানিত ও বিফল মনোরথ হয়ে যাবে। ইকরামা (রঃ) এর অর্থ বর্ণনা করেন যে, প্রথমে দুধপানকারী, তারপর খাদ্য ভক্ষণকারী প্রথমে যুবক ছিল, তারপর বৃদ্ধ হয়েছে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, (আরবি) এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ কোমলতার পর কঠোরতা, কঠোরতার পর কোমলতা, আমীরীর পর ফকীরী ও ফকীরীর পর আমীরী এবং সুস্থতার পর অসুস্থতা ও অসুস্থতার পর সুস্থতা।
হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আদম সন্তান গাফলতী বা উদাসীনতার মধ্যে রয়েছে। তারা যে কি উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছে তার পরোয়া তারা মোটেই করে না।
আল্লাহ্ তা'আলা যখন কাউকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন তখন একজন ফেরেশতাকে বলেনঃ তার বিক, জন্ম-মৃত্যু ও পাপ-পুণ্য লিখে নাও।' আদিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে সেই ফেরেশতা চলে যান এবং অন্য ফেরেশতাকে আল্লাহ তার কাছে পাঠিয়েদেন। তিনি এসে ঐ মানব-শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ করেন। ঐ শিশু বুদ্ধি। বিবেকের অধিকারী হলে ঐ ফেরেশতাকে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তার পাপ-পুণ্য লিখবার জন্যে আল্লাহ্ তার উপর দু'জন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করেন। তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে এরা দুজন চলে যান এবং মালাকুল মাউত (মৃত্যুর ফেরেশতা) তার নিকট আগমন করেন এবং তার রূহ কবয করে নিয়ে চলে যান। তারপর ঐ রূহ্ তার কবরের মধ্যে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তখন মালাকুল মাউত চলে যান এবং তাকে প্রশ্নোত্তর করার জন্যে কবরে দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং নিজেদের কাজ শেষ করে তাঁরাও বিদায় গ্রহণ করেন। কিয়ামতের দিন পাপ-পুণ্যের ফেরেশতাদ্বয় আসবেন এবং তার কাঁধ হতে তার আমলনামা খুলে নিবেন। তারপর তারা তার সাথেই থাকবেন, একজন চালকরূপে এবং অপরজন সাক্ষীরূপে। তারপর আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ(আরবি)
অর্থাৎ তুমি এই দিবস সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে।” (৫০:২২) তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) (আরবি) এ আয়াতটি পাঠ করলেন। অর্থাৎ এক অবস্থার পরে অন্য অবস্থা। তারপর নবী করীম (সঃ) বললেনঃ “(হে জনমণ্ডলী!) তোমাদের সামনে বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যা পালন করার শক্তি তোমাদের নেই। সুতরাং তোমরা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা মুনকার হাদীস এবং এর সনদের মধ্যে দুর্বল বর্ণনাকারী বেশ কয়েকজন রয়েছেন। তবে এর অর্থ বিশুদ্ধ। এসব ব্যাপার আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এসব উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন যে, এর প্রকৃত ভাবার্থ হলোঃ হে মুহাম্মদ (সঃ) তুমি একটার পর একটা কঠিন কঠিন কাজে জড়িয়ে পড়বে। যদিও এখানে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু আসলে সব মানুষকেই সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, তারা কিয়ামতের দিন একটার পর একটা বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করবে।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ তাদের কি হলো যে, তারা ঈমান আনে না? আর কুরআন শুনে সাজদায় অবনত হতে কে তাদেরকে বিরত রাখে? বরং এই কাফিররা তো উল্টো অবিশ্বাস করে মিথ্যা সাব্যস্ত করে এবং সত্য ও হকের বিরোধিতা করে। তারা হঠকারিতা এবং মন্দের মধ্যে ডুবে আছে। তারা মনের কথা গোপন রাখলেও আল্লাহ্ তা'আলা সেসব ভালভাবেই জানেন।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এই কাফিরদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।
তারপর বলেনঃ সেই শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে উত্তম পুরস্কারের যোগ্য তারাই যারা ঈমান এনে সকাজ করেছে। তারা পুরোপুরি, অফুরন্ত ও বেহিসাব পুরস্কার লাভ করবে। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এমন দান যা শেষ হবার নয়।” (১১:১০৮) কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবি) এর অর্থ হলো অর্থাৎ হাসকৃত নয়। কিন্তু এর অর্থ ঠিক নয়। কেননা, প্রতি মুহূর্তে এবং সব সময়েই আল্লাহ্ রাব্বল আলামীন জান্নাতবাসীদের প্রতি ইহসান করবেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। বলা যাবে যে, আল্লাহ্ পাকের মেহেরবানী এবং অনুগ্রহের কারণেই জান্নাতীরা জান্নাত লাভ করেছে, তাদের আমলের কারণে নয়। সেই মালিকের তো নিজের মাখলুকাতের প্রতি একটা চিরস্থায়ী অনুগ্রহ রয়েছে। তার পবিত্র সত্তা চিরদিনের ও সব সময়ের জন্যে প্রশংসার যোগ্য। এ কারণেই জান্নাতবাসীদের জন্যে আল্লাহর হামদ, তাসবীহ্ শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই সহজ করা হবে। কুরআন কারীমে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।”
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।