সূরা আল-মুতাফফিফীন (আয়াত: 12)
হরকত ছাড়া:
وما يكذب به إلا كل معتد أثيم ﴿١٢﴾
হরকত সহ:
وَ مَا یُکَذِّبُ بِهٖۤ اِلَّا کُلُّ مُعْتَدٍ اَثِیْمٍ ﴿ۙ۱۲﴾
উচ্চারণ: ওয়ামা-ইউকাযযিবুবিহীইল্লা-কুল্লুমু‘তাদিন আছীম।
আল বায়ান: আর সকল সীমালঙ্ঘনকারী পাপাচারী ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. আর শুধু প্ৰত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারীই এতে মিথ্যারোপ করে;
তাইসীরুল ক্বুরআন: কেবল সীমালঙ্ঘনকারী, পাপাচারী ছাড়া কেউই তা অস্বীকার করে না।
আহসানুল বায়ান: ১২। আর সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠ ব্যতীত কেউই ওকে মিথ্যা মনে করে না।
মুজিবুর রহমান: আর সীমা লংঘনকারী মহাপাপী ব্যতীত কেহই ওকে মিথ্যা বলতে পারেনা।
ফযলুর রহমান: তবে প্রত্যেক সীমালংঘনকারী, পাপীই কেবল তা অবিশ্বাস করে।
মুহিউদ্দিন খান: প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠই কেবল একে মিথ্যারোপ করে।
জহুরুল হক: আর কেউ একে অস্বীকার করে না কেবল প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠ ব্যতীত --
Sahih International: And none deny it except every sinful transgressor.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১২. আর শুধু প্ৰত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারীই এতে মিথ্যারোপ করে;
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ১২। আর সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠ ব্যতীত কেউই ওকে মিথ্যা মনে করে না।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৭-১৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
যারা কাফির, মুনাফিক ও পাপিষ্ঠ তাদের অবস্থা এবং কিয়ামত দিবসে তাদের কী পরিণতি হবে সে সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
كَـلَّآ অস্বীকার ও ধিক্কারসূচক অব্যয়। অর্থাৎ কখনই না। অর্থাৎ মাপে ও ওজনে কম দিয়ে, মানুষকে ঠকিয়ে যে পাপ অর্জন করেছে সে সকল পাপাচারীরা সফলকাম হয়েছ এমন মনে কর না, বরং এসব পাপীদের আমলনামা অবশ্যই سِجِّيْنٍ এ সংরক্ষিত থাকবে এবং যথোচিত প্রতিদান প্রদান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ)
“যে ব্যক্তি এক সরিষাদানা পরিমাণ ভাল কাজ করবে, সেটাও সে দেখতে পাবে এবং যে ব্যক্তি এক সরিষাদানা পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সেটাও সে দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৯৯ : ৭-৮)
الْفُجَّارِ বলতে কাফির, মুনাফিক ও পাপিষ্ঠ সকলেই শামিল। (তাফসীর সা‘দী)
سِجِّيْنٌ এর তাফসীর পরের দু’টি আয়াতেই আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, তা হলো
(كِتٰبٌ مَّرْقُوْمٌ)
বা এমন কিতাব যাতে খারাপ আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করা আছে। তাছাড়া কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেন : سِجِّيْنٌ শব্দটি سجن থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ : কারাগার। উদ্দেশ্য হলো কারাগারের মত একটি সংকীর্ণ জায়গা। আবার বারা বিন আযেব (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে : আল্লাহ তা‘আলা কাফির আত্মাদের ব্যাপারে বলবেন : তার আমলসমূহ সিজ্জীনে লিখে দাও। سِجِّيْنٌ হলো সাত জমিনের নীচে একটি জায়গার নাম। যেখানে কাফির-মুশরিকদের আত্মা এবং তাদের আমলনামা জমা ও সংরক্ষিত থাকে। এজন্য তাকে “লিপিবদ্ধ পুস্তক” বলা হয়েছে। ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : সঠিক কথা হলো : سِجِّيْنٌ শব্দটি سجن থেকে গৃহিত। অর্থ হলো : সংকীর্ণ। নীচের মাখলুকের মধ্যে সংকীর্ণতা রয়েছে আর ওপরের মাখলুকের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে। আকাশসমূহের মধ্যে প্রতিটি উপরের আকাশ ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত এবং জমিনের মধ্যে প্রতিটি নীচের জমিন ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ। সপ্তম জমিনের মধ্যবর্তী কেন্দ্র সবচেয়ে সংকীর্ণ। কেননা কাফিরদের প্রত্যাবর্তনের জায়গা সেই জাহান্নাম যা সাত জমিনের সবচেয়ে নীচে অবস্থিত। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(ثُمَّ رَدَدْنٰهُ أَسْفَلَ سٰفِلِيْنَ لا إِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ)
“অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরস্কার।” (সূরা তীন ৯৫ : ৫-৬)
لِّلْمُكَذِّبِيْنَ এ মিথ্যাচারী কারা তার তাফসীর পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করে বলেন : যারা কর্মফল বা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে। মূলত তারা সীমালংঘনকারী ও পাপিষ্ঠ লোক, তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার কালাম শুনে তখন মিথ্যা বলে ও ঠাট্টা করে প্রত্যাখান করতঃ বলে, এসব পূর্ববর্তীদের উপকথা মাত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ مَّاذَآ أَنْزَلَ رَبُّكُمْ لا قَالُوْآ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ)
“যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন?’ তখন তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা!’ (সূরা নাহল ১৬ : ২৪)
(كَـلَّا بَلْ رَانَ)
অর্থাৎ তারা যেমন ধারণা করে ও বলে থাকে যে, কুরআন পূর্ববর্তীদের উপকথা, বিষয়টি তেমন নয়। মূলত তাদের অন্তরে মরিচা ধরে গেছে যার কারণে তারা সঠিক পথ খুঁজে পায় না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাঃ) বলেন: বান্দা যখন খারাপ কাজ করে তখন তার মনে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। যদি তাওবা করে তাহলে অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। আর যদি পাপ কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে কালো দাগও বৃদ্ধি পায়। এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার কথা
(كَـلَّا بَلْ رَانَ عَلٰي قُلُوْبِهِمْ.....)
(তিরমিযী হা. ৩৩৩৪ নাসায়ী হা. ১১৬৫৮, হাদীসটি হাসান সহীহ।)
এ সকল কাফির-মুশরিক ও পাপিষ্ঠরা কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না। যেমন মু’মিনরা দেখতে পাবে। মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে পূর্বের সূরাগুলোতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে এবং তাদেরকে তিরস্কারের সাথে বলা হবেÑ এটা সেই জাহান্নাম যা তোমরা অস্বীকার করতে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সিজ্জীনের তাফসীর জানতে পারলাম।
২. যারা আখিরাতে অবিশ্বাসী তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
৩. পাপ কাজ করলে অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়।
৪. কাফিররা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না, অন্যদিকে মু’মিনরা দেখতে পাবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৭-১৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, পাপাচারী ও মন্দ লোকদের ঠিকানা হলো সিজ্জীন। এ শব্দটি (আরবি) এর অনুরূপ ওজনে (আরবি) থেকে নেয়া হয়েছে। (আরবি) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সংকীর্ণতা। যেমন বলা হয় (আরবি) ইত্যাদি। তারপর ওর আরো মন্দ গুণাবলীর বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হচ্ছেঃ তোমরা ওর প্রকৃত অবস্থা অবগত নও। ওটা হলো যন্ত্রণাদায়ক ও চিরস্থায়ী দুঃখ যাতনার স্থান।
বর্ণিত আছে যে, এই জায়গাটি সাত জমীনের তলদেশে অবস্থিত। হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ)-এর সুদীর্ঘ হাদীসে পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাফিরদের রূহ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলে থাকেনঃ তোমরা তার ফিতার সিজ্জীনে লিখে নাও। আর এই সিজ্জীন সাত জমীনের নীচে অবস্থিত। বলা হয়েছে যে, সিজ্জীন হলো সপ্তম জমীনের নীচে একটি সবুজ পাথর। আরো বলা হয়েছে যে, ওটা জাহান্নামের মধ্যস্থিত একটি গর্ত। ইমাম ইবনে জারীর একটি গারীব, মুনকার ও গায়ের সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে রয়েছে যে, ফালাক’ হলো জাহান্নামের একটি কূপ যার মুখ বন্ধ রয়েছে। আর সিজ্জীন হলো উন্মুক্ত মুখ বিশিষ্ট একটি কূপ। সঠিক কথা এই যে, এর অর্থ হলো জেলখানার এক সংকীর্ণ স্থান। নীচের মাখলুকের মধ্যে সংকীর্ণতা রয়েছে এবং উপরের মাখলুকের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে। আকাশসমূহের মধ্যে প্রতিটি উপরের আকাশ ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত এবং জমীনের মধ্যে প্রতিটি নীচের জমীন ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ। সপ্তম জমীনের মধ্যবর্তী কেন্দ্র সবচেয়ে সংকীর্ণ। কেননা, কাফিরদের প্রত্যাবর্তনের জায়গা সেই জাহান্নাম সবচেয়ে নীচে অবস্থিত। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “অতঃপর আমি তাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি, কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মু'মিন এবং সঙ্কর্ম পরায়ণ।” (৯৫:৫-৬) মোট কথা সিজ্জীন হলো একটা অতি সংকীর্ণ এবং নীচু জায়গা। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “এবং যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় ওর কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে।” (২৫:১৩)
(আরবি) ওটা হচ্ছে লিখিত পুস্তক), এটা এই সিজ্জীনের তাফসীর নয়, বরং এটা হলো তাদের জন্যে যা লিখিত হয়েছে তার তাফসীর। অর্থাৎ পরিণামে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তাদের এই পরিণাম লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এতে এখন আর কম বেশী কিছু করা হবে না। বলা হচ্ছে। তাদের পরিণাম যে সিজ্জীনে হবে এটা আমার কিতাবে পূর্বেই লিখে দেয়া হয়েছে। এই লিখাকে যারা অবিশ্বাস করবে সেদিন তাদের মন্দ পরিণাম হবে। তারা জাহান্নামের। অবমানকর শাস্তির সম্মুখীন হবে। মোটকথা, তাদের ধ্বংস ও সর্বনাশ সাধিত হবে। শব্দের অর্থ হলো সর্বনাশ, ধ্বংস এবং মন্দ পরিণাম। যেমন বলা হয়ঃ অর্থাৎ “ধ্বংস ও মন্দ পরিণাম অমুকের জন্যে।” আর যেমন মুসনাদ ও সুনানের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তির জন্যে মন্দ পরিণাম যে মানুষকে হাসাবার জন্য মিথ্যা কথা বলে থাকে। তার জন্যে মন্দ পরিণাম, তার জন্যে মন্দ পরিমাণ।”
এরপর ঐ অবিশ্বাসী পাপী কাফিরদের সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এরা এমন লোক যারা আখিরাতের শাস্তি এবং পুরস্কারকে অস্বীকার করতো। বিবেক বুদ্ধির বিপরীত বলে পরকালের শাস্তি ও পুরস্কারকে বিশ্বাস করতো না। যেমন বলা হয়েছেঃ কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করা। ঐ সব লোকেরই কাজ যারা নিজেদের কাজে সীমা ছাড়িয়ে যায়, হারাম কাজ করতে থাকে অথবা বৈধ কাজে সীমা অতিক্রম করে। যেমন পাপীরা নিজেদের কথায় মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, গালাগালি করে ইত্যাদি। প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেন, যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বলেঃ এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা। অর্থাৎ এগুলো পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ হতে সংকলন ও সংযোজন করা হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন? তারা উত্তরে বলেঃ পূর্ববর্তীদের উপকথা।` (১৬:২৪) আরও বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা বলেঃ এগুলো তো সে কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে, এগুলো সকাল সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।” (২৫:৫) আল্লাহ তা'আলা জবাবে বলেনঃ প্রকৃত ঘটনা তাদের কথা ও ধারণার অনুরূপ নয়। বরং এ কুরআন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কালাম। এটা আল্লাহর অহী যা তিনি তাঁর বান্দাদের উপর নাযিল করেছেন। তবে হ্যা, তাদের অন্তরের উপর তাদের মন্দ কাজসমূহ পর্দা স্থাপন করে দিয়েছে। পাপ এবং অন্যায়ের আধিক্যের কারণে তাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে। কাফিরদের অন্তরের উপর (আরবি) হয় এবং পূণ্যবানদের অন্তরে (আরবি) হয়।। জামে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বান্দা যখন পাপ করে তখন তার মনের কোণে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। যদি তাওবা করে তবে ঐ দাগ মুছে যায়। আর যদি ক্রমাগত পাপে লিপ্ত থাকে তা হলে ঐ কালো দাগ প্রসার লাভ করে।
(আরবি) দ্বারা এ কথাই বুঝানো হয়েছে। সুনানে নাসাঈর শব্দে কিছু রদ বদল রয়েছে। এ হাদীস মুসনাদে আহমদেও বর্ণিত হয়েছে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন বলেন যে, পাপের উপর পাপ করলে মন অন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ঐ মন মরে যায়। তারপর বলেন যে, এ সব লোক উপরোক্ত শাস্তিতে জড়িয়ে পড়ে আর আল্লাহর দীদার হতেও বঞ্চিত হয়।
ইমাম শাফিয়ী (রঃ) বলেনঃ এ আয়াতে প্রমাণ রয়েছে যে, মুমিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে সম্মানিত হবে। ইমাম সাহেবের এই মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে সত্য, আর আয়াতের সারমর্মেও এটাই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (৭৫:২২-২৩) সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দারা নিজেদের সম্মানিত প্রতিপালককে বেহেশতের মনোরম বাগানে বসে প্রত্যক্ষ করবে। হযরত হাসান (রঃ) বলেনঃ পর্দা সরে যাবে এবং মুমিন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে। কাফিরদেরকে পর্দার পিছনে সরিয়ে দেয়া হবে। মুমিন বান্দারা, প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যায় পরওয়ারদিগারে আ’লামের দীদার লাভ করবে।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ অতঃপর তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ কাফিররা শুধু আল্লাহর দীদার লাভ থেকেই বঞ্চিত হবে না, বরং তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর তাদেরকে ধমক, ঘৃণা, তিরস্কার ও ক্রোধের সুরে বলা হবেঃ এটাই ঐ জায়গা যা তোমরা অস্বীকার করতে।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।