আল কুরআন


সূরা আন-নাবা (আয়াত: 40)

সূরা আন-নাবা (আয়াত: 40)



হরকত ছাড়া:

إنا أنذرناكم عذابا قريبا يوم ينظر المرء ما قدمت يداه ويقول الكافر يا ليتني كنت ترابا ﴿٤٠﴾




হরকত সহ:

اِنَّاۤ اَنْذَرْنٰکُمْ عَذَابًا قَرِیْبًا ۬ۚۖ یَّوْمَ یَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ یَدٰهُ وَ یَقُوْلُ الْکٰفِرُ یٰلَیْتَنِیْ کُنْتُ تُرٰبًا ﴿۴۰﴾




উচ্চারণ: ইন্নাআনযারনা-কুম ‘আযা-বান কারীবাইঁ ইয়াওমা ইয়ানযু রুল মারউ মা-কাদ্দামাত ইয়াদা-হু ওয়া ইয়াকূলুল কা-ফিরু ইয়া-লাইতানী কুনতুতুরা-বা।




আল বায়ান: নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একটি নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলাম। যেদিন মানুষ দেখতে পাবে, তার দু’হাত কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কাফির বলবে ‘হায়, আমি যদি মাটি হতাম’!




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪০. নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে আসন্ন শান্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফির বলবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: আমি তোমাদেরকে নিকটবর্তী শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করছি, যেদিন মানুষ দেখতে পাবে তার হাতগুলো আগেই কী (‘আমাল) পাঠিয়েছে আর কাফির বলবে- ‘হায়! আমি যদি মাটি হতাম (তাহলে আমাকে আজকের এ ‘আযাবের সম্মুখীন হতে হত না)।




আহসানুল বায়ান: ৪০। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম;[1] সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে [2] এবং অবিশ্বাসী বলবে, হায় আফসোস! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম।[3]



মুজিবুর রহমান: আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফির বলতে থাকবেঃ হায়রে হতভাগা আমি! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম!



ফযলুর রহমান: আমি তোমাদেরকে এক নিকটবর্তী শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফের বলবে, “হায়, আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!”



মুহিউদ্দিন খান: আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যেক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবেঃ হায়, আফসোস-আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।



জহুরুল হক: নিশ্চয় আমরা তোমাদের সতর্ক করছি এক নিকটবর্তী শাস্তি সন্বন্ধে, -- যেদিন মানুষ দেখতে পাবে তার হাত দুখানা কী আগবাড়িয়েছে, আর অবিশ্বাসী ব্যক্তি বলবে -- "হায় আমার আফসোস! আমি যদি ধুলো হয়ে যেতাম!"



Sahih International: Indeed, We have warned you of a near punishment on the Day when a man will observe what his hands have put forth and the disbeliever will say, "Oh, I wish that I were dust!"



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৪০. নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে আসন্ন শান্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফির বলবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।(১)


তাফসীর:

(১) আবদুল্লাহ ইবনে আমর, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত আছে, কেয়ামতের দিন সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব জিন, গৃহপালিত জন্তু এবং বন্য জন্তু সবাইকে একত্রিত করা হবে। জন্তুদের মধ্য কেউ দুনিয়াতে অন্য জন্তুর উপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া হবে। এমন কি কোন শিংবিশিষ্ট ছাগল কোন শিংবিহীন ছাগলকে মেরে থাকলে সেদিন তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। এই কর্ম সমাপ্ত হলে সব জন্তুকে আদেশ করা হবেঃ মাটি হয়ে যাও। তখন সব মাটি হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে কাফেররা আকাজক্ষা করবে – হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম। এরূপ হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আযাব থেকে বেঁচে যেতাম। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩৪৫ ৪/৫৭৫, মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই: ৩২২, সিলসিলা সহীহা: ১৯৬৬]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: ৪০। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম;[1] সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে [2] এবং অবিশ্বাসী বলবে, হায় আফসোস! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম।[3]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিবসের আযাব সম্পর্কে যা অতি নিকটেই। কেননা, তার আগমন সুনিশ্চিত সত্য। আর প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটেই। যেহেতু যে কোন প্রকারে তা আসবেই আসবে।

[2] অর্থাৎ, ভাল ও মন্দ যে আমলই সে পার্থিব জীবনে করেছে তা আল্লাহর নিকট পৌঁছে গেছে। কিয়ামতের দিন তা তার সামনে এসে যাবে এবং সে তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। ‘‘তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে।’’ (সূরা কাহ্ফ ৪৯ আয়াত) ‘‘সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যে, সে কী অগ্রে পাঠিয়েছে ও কী পশ্চাতে রেখে গেছে।’’ (সূরা ক্বিয়ামাহ ১৩ আয়াত)

[3] অর্থাৎ, যখন সে নিজের ভয়ঙ্কর আযাব দেখে নেবে, তখন সে এই আকাঙ্ক্ষা করবে। কোন কোন আলেম বলেন, আল্লাহ তাআলা পশুদের মাঝেও ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের সাথে ফায়সালা করবেন। এমনকি যদি কোন শিংবিশিষ্ট পশু কোন শিংবিহীন পশুর প্রতি অত্যাচার করে থাকে তাহলে তারও বদলা দেওয়া হবে। তারপর আল্লাহ পশুদেরকে বলবেন, তোমরা মাটিতে পরিণত হও। তখন তারা মাটি হয়ে যাবে। আর সেই সময় কাফেররাও বাসনা করবে যে, তারাও যদি পশু হতো এবং তাদের মত আজ মাটি হয়ে যেতে পারত! (তাফসীর ইবনে কাসীর)


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৩৭-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:



এখানে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব ও বড়ত্ব বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তাঁর সামনে কিয়ামত দিবসে কথা বলার কেউ সাহস পাবে না। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২৫৫ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

الرُّوْحُ দ্বারা জিবরীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।



(ذٰلِکَ الْیَوْمُ الْحَقُّ.....)



অর্থাৎ সেই দিন সত্য। অবশ্যই তা সংঘঠিত হবে। অতএব যে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসকে ভয় করে সে যেন দুনিয়াতে তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে আশ্রয় স্থল অর্জন করে নেয়।



(عَذَابًا قَرِيْبًا)



অর্থাৎ কিয়ামত দিবসের শাস্তিকে নিকটতম আযাব বলা হয়েছে। কারণ কিয়ামত অবশ্যই সংঘঠিত হবে আর যা অবশ্যই সংঘঠিত হবে তা তো মূলত নিকটেই। তাছাড়া নাবী (সাঃ) বলেন: আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে আর কিয়ামত এমন কাছে। এই বলে মধ্য ও শাহাদাত আঙ্গুল তুলে দেখালেন। অর্থাৎ দুই আঙ্গুলের মাঝে যেমন দূরত্ব আমার প্রেরণ ও কিয়ামতের মাঝে ততটুকু সময় অবশিষ্ট আছে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৩০১)



(يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ)



অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে তার কৃত আমল আখিরাতে দেখতে পাবে। কাফিররা তাদের খারাপ আমলগুলো দেখে আফসোস করে বলবে: হায় যদি মাটি হয়ে যেতাম। কিন্তু কোন দিন তা সম্ভব হবে না এবং সে আফসোস কোন কাজে আসবে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. আকাশ জমিনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার।

২. যাদেরকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে কেবল তারাই সুপারিশ করতে পারবে।

৩. কাফিররা কিয়ামত দিবসে আফসোস করবে, কিন্তু এ আফসোস কোন কাজে আসবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৩৭-৪০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা'আলা স্বীয় শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, একমাত্র তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। তিনি রহমান বা পরম দয়াময়। তাঁর রহমত বা করুণা সব কিছু পরিবেষ্টন করে আছে। তার সামনে কেউ মুখ খুলতে পারবে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “কে সে, যে তার অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?” (২:২৫৫) আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যেই দিন ঐ সময় আসবে সেই দিন কেউই তার অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে মুখ খুলতে বা কথা বলতে সাহস পাবে না।” (১১:১০৫)।

রূহ দ্বারা হয়তো উদ্দেশ্য সমস্ত মানুষের রূহ বা সমস্ত মানুষ, অথবা এক প্রকারের বিশেষ মাখলূক যারা মানুষের মত আকার বিশিষ্ট, পানাহার করে থাকে, যারা ফেরেশতাও নয়, মানুষও নয়। অথবা রূহ দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে অন্য জায়গাতেও রূহ বলা হয়েছে। যেমনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “ওটাকে বিশ্বস্ত আত্মা তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছে যাতে তুমি ভয় প্রদর্শকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।` (২৬:১৯৩-১৯৪) এখানে রূহ দ্বারা নিশ্চিত রূপেই হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। হযরত মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, সমস্ত ফেরেশতার মধ্যে বুযুর্গতম, অহী বাহক, আল্লাহর নৈকট্যলাভে

সমর্থ হয়েছেন এমন ফেরেশত হলে এই জিবরাঈল (আঃ)। অথবা রূহ দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এর প্রমাণ হিসেবে নিম্নের আয়াতটি পেশ করা। যেতে পারেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “এভাবেই আমি আমার আদেশে তোমার প্রতি অহী অবতীর্ণ কবি।” (২৫২) এখানে রূহ দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য। ষষ্ঠ উক্তি এই যে, এই রুহ হলেন সমগ্র মাখকের সম আয়তন বিশিষ্ট এক ফেরেশতা।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই ফেরেশতা সমস্ত ফেরেশতা হতে বহু গুণে বড়।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, রূহ নামক এই ফেরেশতা চতুর্থ আসমানে রয়েছেন। তিনি সমস্ত আকাশ, সমগ্র পাহাড়-পর্বত এবং সমস্ত ফেরেশতা হতে বড়। প্রত্যহ তিনি বারো হাজার তাসবীহ পাঠ করে থাকেন। প্রত্যেক তাসবীহ হতে একজন করে ফেরেশতা জন্ম লাভ করে থাকেন। কিয়ামতের দিন তিনি একাই একটি সারিরূপে আসবেন। কিন্তু এই উক্তিটি হাদীসের সংজ্ঞায় খুবই গরীব বা দুর্বল।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “ফেরেশতাদের মধ্যে এমন এক ফেরেশতাও রয়েছেন যে, যদি তাকে বলা হয়ঃ আকাশ ও পৃথিবীকে এক গ্রাসে নিয়ে যাও, তবে তিনি এক গ্রাসেই সবকে নিয়ে নিবেন। তার তাসবীহ হলোঃ(আরবি) অর্থাৎ “আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি আপনি যেখানেই থাকুন না কেন।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল হাদীস। এমনকি এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্তি হওয়া সম্পর্কেও সমালোচনা করা হয়েছে। সম্ভবতঃ এটা হযরত আল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি হবে। আর ওটাও হয় তো তিনি বানী ইসরাঈল হতেহণ করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন)

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এসব উক্তি আনয়ন করেছেন, কিন্তু কোন ফায়সালা করেননি। আমার মতে তো এখানে রূহ দ্বারা সমস্ত মানুষকেই বুঝানো হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতীত (ৱে কথা বলবে না)।” আল্লাহ পাকের এই উক্তিটি তাঁর নিম্নের উক্তির মতো (আরবি) অর্থাৎ “যখন ঐ দিন আসবে তখন তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ছাড়া কেউই। কথা বলবে না।” (১১:১০৫) সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “ সেইদিন রাসূলগণ ছাড়া কেউই কথা বলবে না।”

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ “এবং সে যথার্থ বলবে।' সর্বাধিক সত্য কথা হলোঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।`

মহান আল্লাহর উক্তিঃ ‘এই দিবস সুনিশ্চিত। অর্থাৎ অবশ্যই এটা সংঘটিত হবে। অতএব যার অভিরুচি সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক।' অর্থাৎ যে ইচ্ছা করবে সে তার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যাবার পথ তৈরী করুক, যে পথে চলে সে সোজাভাবে তার কাছে পৌঁছে যাবে।

মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি হতে সতর্ক করলাম।' অর্থাৎ কিয়ামতের শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করলাম। যা আসবে তাকে এসেই গেছে মনে করা উচিত। কারণ যা আসার তা আসবেই। সেই দিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে। ঐদিন নতুন, পুরাতন, ছোট, বড় এবং ভাল ও মন্দ সমস্ত আমল মানুষের সামনে থাকবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ তারা যে আমল করেছে তা উপস্থিত পাবে।” (১৮:৪৯) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সেই দিন মানুষকে অবহিত করা হবে যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও যা পশ্চাতে রেখে গেছে সে সম্পর্কে।” (৭৫:১৩)

“আর কাফির বলবেঃ হায়, আমি যদি মাটি হতাম।” অর্থাৎ দুনিয়ায় যদি আমরা মাটিরূপে থাকতাম, যদি আমাদেরকে সৃষ্টিই না করা হতো এবং আমাদের কোন অস্তিত্বই না থাকতো তবে কতই না ভাল হতো! তারা সেদিন আল্লাহর আযাব স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে। নিজেদের মন্দ ও পাপকর্মগুলো সামনে থাকবে যেগুলো পবিত্র ফেরেশতাদের ন্যায়পূর্ণ হস্তে লিখিত হয়েছে।

সুতরাং একটি অর্থ তো এই হলো যে, তারা দুনিয়াতেই মাটি হবার আকাঙ্ক্ষা করবে। অর্থাৎ সৃষ্টি না হওয়া কামনা করবে। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, যখন জীবজন্তুগুলোর ফায়সালা হয়ে যাবে এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করিয়ে দেয়া হবে, এমন কি যদি শিংবিহীন বকরীকে শিংবিশিষ্ট বকরী মেরে থাকে তবে তারও প্রতিশোধ নিয়ে দেয়া হবে। তারপর তাদেরকে (জন্তুগুলোকে) বলা হবেঃ তোমরা মাটি হয়ে যাও, তখন তারা মাটি হয়ে যাবে। তখন এই কাফির লোকও বলবেঃ হায়, যদি আমি (এদের মত) মাটি হয়ে যেতাম! অর্থাৎ যদি আমিও জন্তু হতাম এবং এভাবে মাটি হয়ে যেতাম তবে কতই না ভাল হতো!

সূরের (শিংগার) সুদীর্ঘ হাদীসেও এই বিষয়টি এসেছে এবং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী হতেও এটা বর্ণিত হয়েছে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।