আল কুরআন


সূরা আল-ইনসান (আদ-দাহর) (আয়াত: 7)

সূরা আল-ইনসান (আদ-দাহর) (আয়াত: 7)



হরকত ছাড়া:

يوفون بالنذر ويخافون يوما كان شره مستطيرا ﴿٧﴾




হরকত সহ:

یُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَ یَخَافُوْنَ یَوْمًا کَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِیْرًا ﴿۷﴾




উচ্চারণ: ইঊফূনা বিন্নাযরি ওয়া ইয়াখা-ফূনা ইয়াওমান কা-না শাররুহূমুছতাতীরা- ।




আল বায়ান: তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৭. তারা মানত পূর্ণ করে(১) এবং সে দিনের ভয় করে, যে দিনের অকল্যাণ হবে ব্যাপক।




তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা মানত পূরণ করে আর সেই দিনকে ভয় করে যার অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।




আহসানুল বায়ান: (৭) তারা মানত পূর্ণ করে[1] এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। [2]



মুজিবুর রহমান: তারা কর্তব্য পালন করে এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিন বিপত্তি হবে ব্যাপক।



ফযলুর রহমান: তারা (তাদের) মানত পূরণ করে (কর্তব্য পালন করে) এবং এমন একটি দিনকে ভয় করে যার অনিষ্ট হবে ব্যাপক।



মুহিউদ্দিন খান: তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।



জহুরুল হক: তারা মানত পালন করে, এবং ভয় করে সেই দিনটির যার ধ্বংসলীলা হবে সুদূরপ্রসারী।



Sahih International: They [are those who] fulfill [their] vows and fear a Day whose evil will be widespread.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৭. তারা মানত পূর্ণ করে(১) এবং সে দিনের ভয় করে, যে দিনের অকল্যাণ হবে ব্যাপক।


তাফসীর:

(১) এতে বিধৃত হয়েছে যে, সৎকর্মশীল বান্দাগণকে এসব নি'আমত কিসের ভিত্তিতে দেয়া হবে। অর্থাৎ তারা আল্লাহর ওয়াস্তে যে কাজের মানত করে, তা পূর্ণ করে। ‘মানত’ বলা হয় নিজের জন্যে এমন কোন কাজ ওয়াজিব করে নেয়া, যা শরীয়তের তরফ থেকে তার দায়িত্বে ওয়াজিব নয়। এরূপ মানত পূর্ণ করা শরীয়তের আইনে ওয়াজিব। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর কেউ যদি নাফরমানির মানত করে সে যেন নাফরমানি না করে।” [বুখারী: ৬৭০০]

এখানে মানত পূর্ণ করাকে জান্নাতীদের মহান প্রতিদান ও অফুরন্ত নেয়ামত লাভের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এখানে نذر শব্দ দ্বারা ‘কর্তব্য’ বোঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, তারাই জান্নাতের অধিকারী হবে যারা নিজেদের কর্তব্য যেমন সালাত, সাওম, হজ, উমরা ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করেছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৭) তারা মানত পূর্ণ করে[1] এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। [2]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করে। মানত করলেও কেবল আল্লাহর জন্য করে এবং তা পূরণও করে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানত পূরণ করাও জরুরী। তবে শর্ত হল, তা যেন কোন পাপ কাজের না হয়। কেননা, হাদীসে এসেছে যে, ‘‘যে ব্যক্তি এই মানত করল যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মানত করল যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করবে, সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’’

(বুখারীঃ ঈমান অধ্যায়, নেক কর্মে নযর পূরণ করার পরিচ্ছেদ)

[2] অর্থাৎ, সেই দিনকে ভয় করে হারাম কাজ এবং পাপাচারে পতিত হয় না। ‘যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক’ এর অর্থ হল, সেই দিনে আল্লাহর পাকড়াও হতে কেবল সেই বাঁচতে পারবে, যাকে আল্লাহ তাঁর রহমত ও ক্ষমার চাদরে ঢেকে নেবেন। অবশিষ্ট সকলেই বিপত্তির আওতাভুক্ত হবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৪-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করার পর ঈমান ও কুফরীর পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, অতএব যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে কাফির হবে তাদের জন্য পূর্ব প্রতিশ্র“ত পরিণতিস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলার জাহান্নামের শৃংখল, বেড়ি ও লেলিহান আগুনে প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



( إِذِ الْأَغْلٰلُ فِيْٓ أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلٰسِلُ يُسْحَبُوْنَ فِي الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُوْنَ)



“যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে।” (সূরা মু’মিন ৪০ : ৭১-৭২)



পক্ষান্তরে যারা সৎ আমল করত আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।



كأس বলা হয় এমন পান পাত্রকে যা শরাব দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উচ্ছ্বলিত হতে থাকে।



كافور হল সুগন্ধী যা মিশ্রণে স্বাদ আরো বেড়ে যায় এবং তার সুগন্ধ মস্তিষ্ককে সতেজ করে তোলে।



تفجير অর্থ الانباع বা নির্গমন, উদ্ভব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَقَالُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰي تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الْأَرْضِ يَنْـ ـبُوْعًا ‏)‏



“এবং তারা বলে : ‘আমরা কখনই তোমাতে ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে একটি প্রস্রবণ উৎসারিত কর” (সূরা ইসরা ১৭ : ৯০)



অর্থাৎ জান্নাতীদের চাহিদা অনুযায়ী সেই ঝর্ণা ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়া হবে।



(يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা শরীয়তের মাধ্যমে যেসব কাজ করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন এবং নিজেরা যা নযরের মাধ্যমে ওয়াজিব করে নেয় সবকিছু একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই সম্পাদন করে। এ থেকে বুঝা যায়, মানত পূরণ করা ওয়াজিব, যদি সেটা ভাল কাজের জন্য হয়। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশার্থে মানত করবে সে যেন তার আনুগত্য প্রকাশ করে (অর্থাৎ মানত পূর্ণ করে) আর যে ব্যক্তি মানত করে আল্লাহর অবাধ্য কাজে সে যেন মানত পূর্ণ করে আল্লাহর অবাধ্য না হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৬৬৯৬)



অতএব কেউ যদি কোন মাযারে কিছু দেবে, বা কোন পীর, গাউছ কুতুব অথবা শির্ক করা হয় এমন কোন জায়গায় কিছু দেওয়ার মানত করে তাহলে সে যেন তা পূর্ণ না করে। বরং মানতের কাফফারা দিয়ে দেবে।



(عَلٰي حُبِّه....) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাকে ভালবেসে, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ইয়াতীম মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়ায়। আবার এই অর্থও করা হয় যে, খাদ্যের প্রতি লালসা থাকা সত্ত্বেও গরীব-মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَاٰتَي الْمَالَ عَلٰي حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبٰي وَالْيَتٰمٰي وَالْمَسٰكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ لا وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِي الرِّقَابِ)



“এবং তাঁরই ভালবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক ও ভিক্ষুকদেরকে এবং দাসত্ব মোচনের জন্য ধন-সম্পদ দান করে” (সূরা বাকারাহ ২ : ১৭৭)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : উত্তম সাদকাহ হল তুমি আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করবে এমনবস্থায় যে, তুমি সুস্থ এবং সম্পদের প্রতি তোমার আসক্তি রয়েছে। অর্থাৎ ধনী হওয়ার আশাবাদী ও দরিদ্রতার আশংকা কর। হাফেয ইবনু কাসীর (রহঃ) দ্বিতীয় মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (ইবনু কাসীর)



أَسِيْرًا তথা বন্দী। বন্দী ও দাস-দাসীদের সাথে ভাল আচরণ করার প্রতি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এমনকি মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি বলেছেন : সালাত সালাত এবং তোমাদের অধিনস্ত দাস দাসী। (আহমাদ হা. ২৬৪৮৩)



عَبُوْسًا ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : এর অর্থ সংকীর্ণ, কঠিন।



قَمْطَرِيْرًا অর্থ : طويلا বা সুদীর্ঘ। অর্থাৎ আমরা এসব ভাল কাজ করি এ আশায় যে, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা কঠিন ও দীর্ঘ দিনে আমাদের ওপর রহম করবেন। (ইবনু কাসীর)



(نَضْرَةً وَّسُرُوْرًا)



অর্থাৎ উজ্জ্বল হবে তাদের চেহারা এবং প্রফুল্ল হবে তাদের মন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ لا ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ)



“সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে; হাস্যেজ্জল ও প্রফুল্ল।” ( সূরা আবাসা ৮০ : ৩৮-৩৯)



(وَجَزٰـهُمْ بِمَا صَبَرُوْا)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত কাজ পালনে নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকতে এবং দীনের পথে চলতে তোমরা যেসব দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করেছে তার প্রতিদান হল জান্নাত এবং তার আরাম-আয়েশ। অতএব যারা এমন জান্নাতের আশা করে তারা কখনো আল্লাহদ্রোহী কাজ করতে পারে না বরং সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিমূলক কাজে নিজেকে লিপ্ত রাখে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. যারা স্বেচ্ছায় কুফরীর পথ বেছে নেবে তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে জাহান্নাম।

২. যারা ঈমানের পথ বেছে নেবে তাদের জন্য নেয়ামত পূর্ণ জান্নাত প্রস্তুত রয়েছে।

৩. মানত করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, কোন ব্যক্তি বা মাযারের জন্য বা নিকটে নয়।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৪-১২ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর মাখলূকের মধ্যে যে কেউই তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হবে তার জন্যে তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন শৃংখল, বেড়ি ও লেলিহান অগ্নি। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে।” (৪০:৭১-৭২)

হতভাগ্যদের শাস্তির বর্ণনা দেয়ার পর এখন সৎ ও ভাগ্যবানদের পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাদেরকে পান করানো হবে এমন পানীয় যার মিশ্রণ হবে কাফূর। কাফূর একটি নহরের নাম যা হতে আল্লাহর খাস বান্দারা পানি পান করবে এবং শুধু ওর দ্বারাই পরিতৃপ্তি লাভ করবে। এ জন্যেই এখানে এটাকে (আরবি) দ্বারা (আরবি) করা হয়েছে এবং (আরবি) হিসেবে (আরবি)-এর উপর (আরবি) বা যবর দেয়া হয়েছে। কিংবা এই পানি সুগন্ধির দিক দিয়ে কপূরের মত অথবা ওটা আসলই কপূর। আর (আরবি)-এর উপর যবর হয়েছে (আরবি) ক্রিয়াটির কারণে। এই নহর পর্যন্ত যাওয়াও তাদের প্রয়োজন হবে না। তারা তাদের বাগানে, মহলে, মজলিসে, বৈঠকে যেখানেই ইচ্ছা করবে তাদের কাছে ঐ পানি পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।

(আরবি)-এর অর্থ হলো প্রবাহিত করা বা উৎসারিত করা যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা বলে - আমরা কখনো তোমাতে ঈমান আনবো না যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে এক প্রস্রবণ উৎসারিত করবে।” (১৭:৯০) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এবং আমি উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নহর।` (১৮:৩৩)

এখন এই লোকদের পুণ্যময় কাজের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, যে ইবাদতের দায়িত্ব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাদের উপর ছিল তা তো তারা যথাযথভাবে পালন করতোই, এমন কি তারা যেসব দায়িত্ব নিজেরাই নিজেদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল সেগুলোও তারা পুরোপুরিভাবে পালন করতো। অর্থাৎ তারা তাদের নযরও পুরো করতো। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার নযর মানবে বা প্রতিজ্ঞা করবে তা যেন সে পুরো করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করার নযর মানবে সে যেন তা পুরো না করে (অর্থাৎ যেন সে আল্লাহর নাফরমানী না করে)।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ইমাম মালিক (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতে বর্ণনা করেছেন)

আর তারা কিয়ামত দিবসের ভয়ে নিষিদ্ধ কাজগুলোকে পরিত্যাগ করে, যে দিবসের সন্ত্রাস সাধারণভাবে সবকেই পরিবেষ্টন করবে। সেই দিন সবাই ব্যতিব্যস্ত থাকবে, তবে আল্লাহ পাক কারো প্রতি রহম করলে সেটা স্বতন্ত্র কথা। ঐদিন সন্ত্রাস আকাশ ও পৃথিবী পর্যন্ত ছেয়ে যাবে।

(আরবি)-এর অর্থ হলো ব্যাপকভাবে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়া বা চতুর্দিক পরিবেষ্টন করা।

মহান আল্লাহ বলেনঃ এই সৎকর্মশীল লোকগুলো আল্লাহর মহব্বতে হকদার লোকদের উপর সাধ্যমত খরচ করে থাকে। কারো কারো মতে, সর্বনামটি (আরবি)-এর দিকে ফিরেছে। শব্দের দিক দিয়ে এটাই বেশী প্রকাশমানও বটে। অর্থাৎ খাদ্যের প্রতি চরম আসক্তি এবং এর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তারা তা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকে এবং অভাবগ্রস্তদেরকে দিয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “মালের প্রতি আসক্তি এবং ওর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ওটা সে আল্লাহর পথে খরচ করে থাকে।” (২:১৭৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না।” (৩:৯২)

হযরত নাফে (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত ইবনে উমার (রাঃ) রুগ্ন হয়ে পড়েন। আঙ্গুরের মৌসুমে আঙ্গুর পাকতে শুরু করলে তার স্ত্রী হযরত সুফিয়া (রাঃ) লোক পাঠিয়ে এক দিরহামের আঙ্গুর আনিয়ে নেন। ঠিক ঐ সময়েই দরজায় এক ভিক্ষুক এসে পড়ে এবং ভিক্ষা চায়। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) এই আঙ্গুর ভিক্ষুককে দিয়ে দিতে বলেন। সুতরাং তা ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর আবার লোক গিয়ে আঙ্গুর ক্রয় করে আনে। কিন্তু এবারও ভিক্ষুক এসে পড়ে এবং ভিক্ষা চেয়ে বসে। এবারও হযরত ইবনে উমার (রাঃ) তা ভিক্ষুককে দিয়ে দিবার নির্দেশ দেন। সুতরাং এবারও ঐ আঙ্গর ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু হযরত সুফিয়া (রাঃ) এবার ঐ ভিক্ষুককে বলে দেনঃ “আল্লাহর কসম! এর পরেও তুমি ফিরে আসলে তোমাকে আর কিছুই দেয়া হবে না।” অতঃপর আবার তিনি এক দিরহামের আঙ্গুর আনিয়ে নেন।” (এটা ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “উত্তম সাদকা হলো ঐ সাদকা যা তুমি এমন অবস্থায় করছো যে, তুমি সুস্থ শরীরে রয়েছে, মালের প্রতি তোমার ভালবাসা রয়েছে, ধনী হওয়ার তোমার আকাঙ্খা আছে এবং গরীব হয়ে যাওয়ার ভয়ও তোমার রয়েছে (এতদসত্ত্বেও তুমি সাদকা করছে)।” অর্থাৎ মালের প্রতি লোভ-লালসাও রয়েছে, ভালবাসাও আছে এবং অভাব অনটনও রয়েছে, এতদসত্ত্বেও আল্লাহর পথে দান করা হচ্ছে।

ইয়াতীম ও মিসকীন কাকে বলে এর বর্ণনা ও বিশেষণ ইতিপূর্বে গত হয়েছে। আর বন্দী সম্পর্কে হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) হযরত হাসান (রঃ) এবং হযরত যহহাক (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মুসলমান আহলে কিবলা বন্দীকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐ সময় তো শুধু মুশরিক বন্দীরাই ছিল। এর প্রমাণ হলো ঐ হাদীসটি যাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরী বন্দীদের সম্পর্কে তাঁর সাহাবীদেরকে (রাঃ) বলেছিলেন যে, তাঁরা যেন তাদের সম্মান করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই নির্দেশ অনুসারে সাহাবীগণ পানাহারের ব্যাপারে নিজেদের অপেক্ষা ঐ বন্দীদের প্রতিই বেশী লক্ষ্য রাখতেন। হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এখানে বন্দী দ্বারা গোলামকে বুঝানো হয়েছে। আয়াতটি আম বা সাধারণ হওয়ার কারণে ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন এবং মুসলমান ও মুশরিক সবকেই এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। গোলাম ও অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহারের তাগীদ বহু হাদীসেই রয়েছে। এমন কি হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ) স্বীয় উম্মতকে বিদায় উপদেশে বলেনঃ “তোমরা নামাযের হিফাযত করবে এবং তোমাদের অধীনস্থদের (গোলাম ও বাদীদের) সাথে সদ্ব্যবহার করবে।”

মহান আল্লাহ বলেন যে, তারা বলেঃ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। অর্থাৎ তারা এই সদ্ব্যবহারের কোন প্রতিদান মানুষের কাছে চায় না এবং তারা তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক এ কামনাও তারা করে না। বরং তারা নিজেদের অবস্থা দ্বারা যেন এটাই ঘোষণা করে যে, তারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই খরচ করে থাকে। তারা যেন এর বিনিময়ে আল্লাহ পাকের নিকট পারলৌকিক পুণ্য লাভ করতে পারে।

হযরত সাঈদ (রঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! ঐ পুণ্যময় লোকেরা উপরোক্ত কথা মুখে প্রকাশ করেন না, বরং এটা তাদের মনের ইচ্ছা, যা আল্লাহ পাক জানেন এবং তিনি তা প্রকাশ করে থাকেন যাতে এতে জনগণের আগ্রহ জন্মে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই পবিত্র দলটি এই খায়রাত ও সাদকা করে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের আযাব হতে বাঁচতে চায়, যা অত্যন্ত সংকীর্ণ, অন্ধকার এবং সুদীর্ঘ। তাদের বিশ্বাস যে, এর উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তাদের উপর দয়া করবেন এবং ঐ ভীতিপ্রদ ও ভয়ংকর দিনে তাদের এই পুণ্যের কাজগুলো তাদের উপকারে আসবে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি)-এর অর্থ হলো সংকীর্ণতা এবং (আরবি)-এর অর্থ হলো দীর্ঘতা। হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, ঐদিন কাফিরদের মুখ বিকৃত হয়ে যাবে, ভ্রূকুঞ্চিত হবে এবং তাদের চক্ষুদ্বয়ের মাঝখান দিয়ে ঘর্ম বইতে থাকবে যা রওগণ গন্ধকের মত হবে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, তাদের ওষ্ঠ উপরের দিকে উঠে যাবে এবং চেহারা জড় হয়ে যাবে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, ভয় সন্ত্রাসের কারণে তাদের আকৃতি বিকৃত হয়ে যাবে এবং কপাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে। হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, ওটা হবে খুবই মন্দ ও কঠিন দিন। কিন্তু সবচেয়ে উত্তম ও যুক্তিসঙ্গত হলো হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তিটি। ইমাম ইবনে জারীর (রাঃ) বলেন যে, (আরবি)-এর আভিধানিক অর্থ হলো কাঠিণ্য। অর্থাৎ ঐদিন হবে অত্যন্ত কঠিন ও ভয়াবহ।

মহান আল্লাহ বলেন যে, তাদের এ আন্তরিযকতা ও সৎ কর্মের কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ঐ দিনের ভয়ংকর অবস্থা হতে রক্ষা করবেন। শুধু তাই নয়, এমন কি সেই দিনের দুরবস্থার স্থলে তাদেরকে দিবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ। এখানে কতই না অলংকার পূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল সহাস্য ও প্রফুল্ল।` (৮০:৩৮-৩৯) এটা প্রকাশমান কথা যে, মন আনন্দিত ও উৎফুল্ল থাকলে চেহারাও হবে উজ্জ্বল ও হাস্যময়।

হযরত কা'ব ইবনে মালিক (রাঃ)-এর সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন সময় আনন্দিত হলে তার চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠতো এবং মনে হতো যেন চন্দ্রের খণ্ড।

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর দীর্ঘ হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার নিকট আগমন করেন, ঐ সময় তার চেহারা মুবারকের শিরাগুলো আনন্দে উজ্জ্বল ও চমকিত ছিল (শেষ পর্যন্ত)।”

আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদের ধৈর্যশীলতার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে দিবেন উদ্যান ও রেশমী বস্ত্র। অর্থাৎ তাদের বসবাস ও চলাফেরার জন্যে মহান আল্লাহ তাদেরকে দান করবেন প্রশস্ত জান্নাত ও পবিত্র জীবন এবং পরিধান করার জন্যে দিবেন রেশমী বস্ত্র। অর্থাৎ তাদের বসবাস ও চলাফেরার জন্যে মহান আল্লাহ তাদেরকে দান করবেন প্রশস্ত জান্নাত ও পবিত্র জীবন এবং পরিধান করার জন্যে দিবেন রেশমী বস্ত্র।

ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একদা সুলাইমান দারানীর (রঃ) সামনে (আরবি) সূরাটি পাঠ করা হয়। কারী যখন (আরবি)-এ আয়াতটি পাঠ করেন তখন তিনি বলেন যে, তাঁরা পার্থিব কামনা বাসনা পরিত্যাগ করেছিলেন। অতঃপর তিনি নিম্নের কবিতা পাঠ করেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “বড়ই আফসোস যে, প্রবৃত্তির চাহিদা এবং মঙ্গলের স্থলে কামনা বহুজনকে গলাটিপে হত্যা করেছে। প্রবৃত্তির চাহিদা এমনই এক জিনিস যা মানুষকে নিকৃষ্টতম লাঞ্ছনা, অপমান এবং বিপদ আপদের মধ্যে নিক্ষেপ করে থাকে।”





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।