আল কুরআন


সূরা আল-ইনসান (আদ-দাহর) (আয়াত: 3)

সূরা আল-ইনসান (আদ-দাহর) (আয়াত: 3)



হরকত ছাড়া:

إنا هديناه السبيل إما شاكرا وإما كفورا ﴿٣﴾




হরকত সহ:

اِنَّا هَدَیْنٰهُ السَّبِیْلَ اِمَّا شَاکِرًا وَّ اِمَّا کَفُوْرًا ﴿۳﴾




উচ্চারণ: ইন্না-হাদাইনা- হুছছাবীলা ইম্মা- শা- কিরাওঁ ওয়া ইম্মা- কাফূরা- ।




আল বায়ান: অবশ্যই আমি তাকে পথ প্রদর্শন করেছি, হয় সে শোকরকারী অথবা অকৃতজ্ঞ।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩. নিশ্চয় আমরা তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।




আহসানুল বায়ান: (৩) নিশ্চয় আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। [1]



মুজিবুর রহমান: আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।



ফযলুর রহমান: আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি; এখন (তার ইচ্ছায়) হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ।



মুহিউদ্দিন খান: আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।



জহুরুল হক: নিঃসন্দেহ আমরা তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, -- হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।



Sahih International: Indeed, We guided him to the way, be he grateful or be he ungrateful.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৩. নিশ্চয় আমরা তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।(১)


তাফসীর:

(১) এ আয়াত পূর্বের আয়াতে বর্ণিত পরীক্ষার ফলে মানুষের কি অবস্থা হয়েছে তা বিধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি রাসূল ও আসমানী গ্রন্থের মাধ্যমে তাকে পথ বলে দিয়েছি যে, এই পথ জান্নাতের দিকে এবং ঐ পথ জাহান্নামের দিকে যায়। এরপর তাকে ক্ষমতা দিয়েছি যে কোন পথ অবলম্বন করার। সুতরাং আমি তাকে শুধু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেইনি বরং এগুলো দেয়ার সাথে সাথে তাকে পথও দেখিয়েছি। যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলম্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেই দায়ী। এ বিষয়টিই অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, “আমরা তাকে দুটি পথ (অর্থাৎ ভাল ও মন্দ পথ) স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছি।” [সূরা আল-বালাদ: ১০] অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে, “শপথ (মানুষের) প্রবৃত্তির আর সে সত্তার যিনি তাকে (সব রকম বাহ্যিক) ও আভ্যন্তরীণ শক্তি দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। আর পাপাচার ও তাকওয়া-পরহেজগারীর অনুভূতি দু’টোই তার ওপর ইলহাম করেছেন।” [সূরা আশ-শামস: ৭–৮]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৩) নিশ্চয় আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, উল্লিখিত শক্তি ও যোগ্যতাদি দেওয়ার সাথে সাথে আমি নিজেও আসমানী কিতাব, আম্বিয়া এবং হকপন্থী আহবানকারীদের মাধ্যমে সঠিক পথকে সুস্পষ্ট করে দিয়েছি। এখন তার ইচ্ছা আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা গণ্য হোক অথবা তাঁর অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করে অকৃতজ্ঞ বান্দা হোক। যেমন, এক হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের আত্মার বেচা-কেনা করে। সুতরাং হয় সে তাকে ধ্বংস করে দেয় অথবা তাকে মুক্ত করে নেয়।’’ (মুসলিমঃ পবিত্রতা অধ্যায়, ওযু পরিচ্ছেদ) অর্থাৎ, নিজের আমল ও কর্মাকর্ম দ্বারা হয় তাকে ধ্বংস করে অথবা মুক্ত করে নেয়। যদি সে পাপকাজ করে, তাহলে ধ্বংস করে। আর যদি পুণ্যকাজ করে, তাহলে সে আত্মাকে মুক্ত করে নেয়।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: নামকরণ ও গুরুত্ব :



الدهر শব্দের অর্থ : সময়, যুগ, কাল ইত্যাদি। এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। প্রথম আয়াতে الإنسان (মানুষ) শব্দটি বিদ্যমান। তাই ইনসান নামেও এ সূরাকে অভিহিত করা হয়। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ, না মদীনায় অবতীর্ণ-এ ব্যাপারে মতভেদ পাওয়া গেলেও অধিকাংশ আলেমদের মতে এটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন : শেষের দশ আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা সাজদাহ দ্বিতীয় রাকাতে অত্র সূরা পাঠ করতেন। (নাসায়ী হা. ৯৫৫, ইবনু মাযাহ হা. ৮২১, সহীহ)



সূরার শুরুতেই প্রশ্নাকারে মানুষের সৃষ্টির উৎস ও রহস্য উদঘাটন করে তার সৃষ্টির পেছনে কোন মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, তারপর কাফিরদের শাস্তির কথা সংক্ষিপ্তাকারে বলার পর সৎ, কৃতজ্ঞ ও সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়ালু ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা জান্নাতের নেয়ামত ও তাতে তাদের সাচ্ছন্দ্যে বসবাসের কথা তুলে ধরা হয়েছে।



১-৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



আলোচ্য আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সৃষ্টির প্রাথমিক ও তার পূর্বের অবস্থা বর্ণনা করছেন। মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বে সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। এ আয়াতটি মানুষের বিবেকে আরো অনেক চিন্তা-ভাবনা ও আত্মজিজ্ঞাসার জন্ম দেয়। মানুষের জন্মের উৎস, পার্থিব জীবন ও তার চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে তাকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। এরপর আসে জন্মের পর মানুষের স্থীতি ও প্রজাতিক বিস্তৃতির প্রসংগ। এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর এক কাহিনী। আয়াতে حِيْنٌ مِّنَ الدَّهْرِ বলতে মায়ের গর্ভে রূহ ফুঁকে দেওয়ার পূর্বের সময়কালকে বুঝোনো হয়েছে, যে সময় বীর্য আকারে জরায়ুতে বিদ্যমান ছিল। এ সময়টা ছিল চল্লিশ দিন।



(مِنْ نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ)



“আমশাজ” অর্থ : মিশ্রিত, অর্থাৎ স্বামী ও স্ত্রীর ডিম্বাণু উভয়ের সংমিশ্রণকে বুঝোনো হয়েছে। স্বামীর বীর্য স্ত্রীর ডিম্বাণুর সংমিশ্রণে চল্লিশ দিন বিদ্যমান থাকার পর আল্লাহ তা‘আলা মায়ের জরায়ুতে রূহ ফুঁকে দেন। তারপর স্তরে স্তরে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেন। অসীম শক্তিধর স্রষ্টা এভাবে মিশ্রিত বীর্য থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিছক তামাসাচ্ছলে বা উদ্দেশ্যহীনভাবে নয় বরং তাকে পরীক্ষা করার জন্য যে, কে সৎ আমলে উত্তম। এ কারণেই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করার পর তাকে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিসম্পন্ন করেছেন। তারপর তাকে ভাল ও মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে বিবেকের স্বাধীনতা দান করেছেন। যাতে আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে কোন অভিযোগ করতে না পারে। এ সম্পর্কে সূরা মু’মিনূনে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।



نَّبْتَلِيْهِ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সৎ আমলে উত্তম। যেমন তিনি বলেন :



(الَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيٰوةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ط وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ) ‏



“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (সূরা মুলক ৬৭ : ২)



(إِنَّا هَدَيْنٰهُ السَّبِيْلَ)



অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা ভালমন্দের দুটি পথই দেখিয়ে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَهَدَيْنٰهُ النَّجْدَيْن)



“আর আমি কি তাকে দু’টি পথ দেখাইনি?” (সূরা বালাদ ৯০ : ১০)



অনেকে বলে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা খারাপ পথ না দেখিয়ে শুধু ভাল পথ দেখালে তো মানুষ অন্যায় কাজ করত না। হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা উভয় পথকে দেখিয়ে দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। সাথে সাথে বলে দিয়েছেন যারা ভাল পথে চলবে তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে উত্তম প্রতিদান আর যারা খারাপ পথ অবলম্বন করবে তাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ ও অত্যন্ত খারাপ।



(إِمَّا شَاكِرًا وَّإِمَّا كَفُوْرًا)



অর্থাৎ মানুষকে ভালমন্দের উভয় পথ দেখিয়ে দেওয়ার পর একশ্রেণির মানুষ আল্লাহ তা‘আলার পথে চলে আরেক শ্রেণি আল্ল্হার সাথে কুফরী করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল করে নিজেকে বিক্রিত অবস্থায়। বিক্রি করে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় (অর্থাৎ কুফরী করে জাহান্নামে যায়) অথবা নিজেকে মুক্ত করে। (অর্থাৎ ঈমান এনে জাহান্নাম থেকে নিজেকে মুক্ত করে)। (সহীহ মুসলিম হা. ২২৩)



সুতরাং বিবেক ও মত প্রকাশ ইত্যাদির স্বাধীনতা পেয়ে যেন আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত না হই সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত, কারণ সব কিছুর হিসাব দিতে হবে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. সূরার গুরুত্ব অবগত হলাম।

২. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সাধারণ একটু পানি থেকে, অতএব গর্ব অহংকারের সাথে দম্ভভরে চলার কোন কারণ নেই।

৩. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টির পর ভালমন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।

৪. যারা সৎপথ বেছে নিয়েছে তারা সফলকাম আর যারা সৎপথ বর্জন করেছে তারা হতভাগা।

৫. মানুষকে উভয় পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্য হল পরীক্ষা করা। কে ঈমানের পথে চলে আর কে তা বর্জন করে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: সহীহ্ মুসলিমের হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীস ইতিপূর্বে গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) জুমআ’র দিন ফজরের নামাযে সূরা আলিফ-লাম-তানযীল এবং হাল আতা আলাল ইনসান পাঠ করতেন। একটি মুরসাল গারীব হাদীসে রয়েছে যে, যখন এই সূরাটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তা পাঠ করেন তখন তাঁর নিকট একটি কালো বর্ণের সাহাবী (রাঃ) বসেছিলেন। যখন জান্নাতের গুণাবলীর বর্ণনা আসে তখন হঠাৎ তাঁর মুখ হতে একটা ভীষণ চীৎকার বের হয় এবং সাথে সাথে তাঁর দেহ হতে প্রাণ পাখী উড়ে যায়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেনঃ “তোমাদের সাথী এবং তোমাদের ভাই-এর প্রাণ জান্নাতের আগ্রহে বেরিয়ে গেছে।”

১-৩ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিতে গিয়ে বলেন যে, তিনি মানুষকে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে, তার নিকৃষ্টতা ও দুর্বলতার কারণে সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। তিনি তাকে পুরুষ ও নারীর মিলিত শুক্রের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত করার পর তাকে বর্তমান রূপ ও আকৃতি দান করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আমি তাকে পরীক্ষা করবার জন্যে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন করেছি। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্যে যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম?” (৬৭:২) সুতরাং তিনি তোমাদেরকে কর্ণ ও চক্ষু দান করেছেন যাতে আনুগত্য ও অবাধ্যতার মধ্যে পার্থক্য করতে পার।

মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি। অর্থাৎ অত্যন্ত স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে আমার সরল সোজা পথ তোমার কাছে খুলে দিয়েছি।

যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সামূদ সম্প্রদায়কে আমি পথের নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা অন্ধত্বকে হিদায়াতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিল।” (৪১:১৭) আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি তাকে দু'টি পথই দেখিয়েছি।” (৯০:১০) অর্থাৎ ভাল ও মন্দ দু'টি পথই প্রদর্শন করেছি। (আরবি)-এই আয়াতের তাফসীরে হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত আবূ সালিহ্ (রঃ), হযরত যহহাক (রঃ) এবং হযরত সুদ্দী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, পথ দেখানো দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ আমি তাকে মায়ের পেট হতে বের হবার পথ দেখিয়েছি। কিন্তু এটা গারীব উক্তি। প্রথম উক্তিটিই সঠিক।

(আরবি) এখানে (আরবি) হওয়ার কারণে (আরবি) এবং (আরবি)-এর উপর (আরবি) বা যবর হয়েছে। এর (আরবি) হলো (আরবি) এর সর্বনামটি। অর্থাৎ আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি এমন অবস্থায় যে সে হতভাগ্য বা ভাগ্যবান। যেমন সহীহ মুসলিমে হযরত আবূ মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল বেলায় স্বীয় নফসকে বিক্রিকারী হয়ে থাকে, হয় সে ওকে মুক্তকারী হয়, না হয় ওকে ধ্বংসকারী হয়।”

মুসনাদে আহমাদে হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, নবী (সঃ) হযরত কা'ব ইবনে আজরা (রাঃ)-কে বলেনঃ “আল্লাহ তোমাকে নির্বোধদের নেতৃত্ব হতে রক্ষা করুন!” হযরত কাব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! নির্বোধদের নেতৃত্ব কি?` উত্তরে তিনি বললেনঃ “তারা ঐ সব নেতা যারা আমার পরে নেতৃত্ব লাভ করবে। তারা না আমার সুন্নাতের উপর আমল করবে, না আমার তরীকার উপর চলবে। যারা তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে এবং উৎপীড়নমূলক কার্যে সাহায্য করবে তারা আমার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। জেনে রেখো যে, তারা আমার হাউযে কাওসারের উপরও আসতে পারবে না। পক্ষান্তরে, যারা তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে না এবং তাদের অত্যাচারমূলক কাজে সাহায্য সহযোগিতা করবে না তারা আমার এবং আমি তাদের। তারা আমার হাউযে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হবে। হে কা'ব (রাঃ)! রোযা ঢাল স্বরূপ, সাদকা বা দান-খয়রাত পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয় এবং নামায আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণ অথবা বলেছেনঃ মুক্তির দলীল। হে কাব (রাঃ)! (দেহের) ঐ গোশত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারাম দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছে। ওটা জাহান্নামেরই যোগ্য। হে কা'ব (রাঃ)! মানুষ সকাল বেলায় নিজের নফসকে বিক্রী করে থাকে। কেউ ওকে আযাদকারী হয় এবং কেউ হয় ওকে ধ্বংসকারী।” সূরা রূমের (আরবি) আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। (৩০:৩০) এ আয়াতের তাফসীরে হযরত জাবির (রাঃ)-এর রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের উক্তিটি গত হয়েছেঃ “প্রত্যেক সন্তান ইসলামের ফিতরাত বা প্রকৃতির উপর সৃষ্ট হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তার জিহ্বা চলতে থাকে, হয় সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।”

মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তিই (বাড়ী হতে) বের হয় তারই দরজার উপর দু’টি পতাকা থাকে, একটি থাকে ফেরেশতার হাতে এবং অপরটি থাকে শয়তানের হাতে। যদি সে এমন কাজের জন্যে বের হয়ে থাকে যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট, তবে ফেরেশতা তাঁর পতাকা নিয়ে তার সাথী হয়ে যান এবং তার প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত সে ফেরেশতার পতাকার নীচেই থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কাজে বের হয়, শয়তান তার পতাকা নিয়ে তার সাথে হয়ে যায় এবং তার প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত সে শয়তানের পতাকা তলেই থাকে।”





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।