আল কুরআন


সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (আয়াত: 30)

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (আয়াত: 30)



হরকত ছাড়া:

إلى ربك يومئذ المساق ﴿٣٠﴾




হরকত সহ:

اِلٰی رَبِّکَ یَوْمَئِذِۣ الْمَسَاقُ ﴿ؕ۳۰﴾




উচ্চারণ: ইলা-রাব্বিকা ইয়াওমাইযিনিল মাছা-ক।




আল বায়ান: সেদিন তোমার রবের কাছেই সকলকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩০. সেদিন আপনার রবের কাছেই সকলকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে।




তাইসীরুল ক্বুরআন: সেদিন (সব কিছুর) যাত্রা হবে তোমার প্রতিপালকের পানে।




আহসানুল বায়ান: (৩০) সেদিন তোমার প্রতিপালকের দিকেই যাত্রা হবে।



মুজিবুর রহমান: সেদিন তোমার রবের নিকট সমস্ত কিছু প্রত্যানীত হবে।



ফযলুর রহমান: সেদিন তোমার প্রভুর দিকেই হবে (সবকিছুর) গতিপথ।



মুহিউদ্দিন খান: সেদিন, আপনার পালনকর্তার নিকট সবকিছু নীত হবে।



জহুরুল হক: তোমার প্রভুর দিকেই সেইদিন হবে চালিয়ে নেওয়া।



Sahih International: To your Lord, that Day, will be the procession.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৩০. সেদিন আপনার রবের কাছেই সকলকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৩০) সেদিন তোমার প্রতিপালকের দিকেই যাত্রা হবে।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২৬-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



মানুষের মৃত্যু যখন কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যাবে তখন তার যে ভয়ানক অবস্থা হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।



التَّرَاقِيَ হল ترقوة এর বহুবচন, অর্থ : কণ্ঠমূল, কণ্ঠনালী। অর্থাৎ মৃত্যু যখন কণ্ঠনালীতে এসে পৌঁছে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(فَلَوْلَآ إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ ‏ وَأَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ ‏ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ)



“তবে কেন নয়- প্রাণ যখন কণ্ঠাগত হয়। এবং তখন তোমরা তাকিয়ে থাকবে। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা (জানার দিক দিয়ে) তার নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না।” (সূরা ওয়াকিয়া ৫৬ : ৮৩)



(وَقِيْلَ مَنْ رَاقٍ)



অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত ব্যক্তিদের বলা হবে- কেউ কি আছো যারা ঝাড় ফুঁক করে একে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবে? মূলত মানুষের অক্ষমতাকে এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। কেননা কোনক্রমেই মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : বলা হবে- এ মৃত ব্যক্তির আত্মা কোন্ ফেরেশতা বহন করে নেবে? রহমতের ফেরেশতা না আযাবের ফেরেশতা?



(وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ)



এ থেকে মৃত্যুর সময় পদনালীর সাথে পদনালীর জড়িয়ে দেওয়াকে বুঝানো হয়েছে। অথবা এখানে কষ্টের পর কষ্ট হবে সে কথা বুঝোনো হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মতটি অধিক সঠিক।



(فَلَا صَدَّقَ.... فَأَوْلٰي)



এ সবই কাফিরদের বদগুণ। এদের সম্পর্কে সূরা মুতাফফিফীনে ও ইনশিক্বাকে আলোচনা করা হবে। ইনশা-আল্লাহ।



(أَنْ يُّتْرَكَ سُدًي)



অর্থাৎ মানুষকে অদেশ-নিষেধ দ্বারা পরীক্ষা করা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হবে? আখিরাতে কর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে না? না, বরং সবকিছুর হিসাব-নিকাশ ও ফলাফল দেওয়ার জন্য সবাইকে একত্রিত করবেন। এখানে মানুষের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তারা সতর্ক হয়ে যায়। মানুষের বিবেকও বলে, উপযুক্ত একটি বিচার-ফায়সালার দিন হওয়া দরকার। কারণ পৃথিবীতে সবল ও দুর্বল উভয় শ্রেণির মানুষ রয়েছে। যুগে যুগে সবলরা দুর্বলদের ওপর অত্যাচার ও অবিচার চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্বলরা কোন যথাযথ বিচার পাচ্ছে না।



পৃথিবীতে কেউ এসব সবলের বিচার করার ক্ষমতা রাখেনা। তাহলে কি এ সবলরা আজীবন অত্যাচার ও অন্যায় করেই যাবে? না, যারা দুর্বল ব্যক্তিদের ওপর অত্যাচার করছে যদিও পৃথিবীতে তাদের বিচার হয় না কিন্তু তাদের কর্মের উপযুক্ত বিচারের জন্য অবশ্যই একটি বিচারের দিন হওয়া দরকার। সেদিন হল কিয়ামতের দিন।



(أَلَيْسَ ذٰلِكَ بِقَادِرٍ)



হ্যাঁ আল্লাহ তা‘আলা মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম। এ সূরার শেষে بلي পড়ার বিধান সূরা মুরসালাতে আলোচনা হবে। সুতরাং যেহেতু পুনর্জীবিত হতে হবে সেহেতু পরপারের জন্য পাথেয় সাথে নিয়ে যাওয়া প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য। এ অকাট্য প্রত্যয় দীপ্ত উপসংহার দ্বারা মানুষের চেতনাকে পরিতৃপ্ত করা এবং মানুষের জন্ম রহস্য ও তার ব্যাপারে মহান আল্লাহর অতুলনীয় দক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার তথ্য উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে সূরাটির সমাপ্তি টানা হয়েছে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. মৃত্যুর সময় মানুষ খুব যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়।

২. যারা মিথ্যুক ও আখিরাতে অবিশ্বাসী তাদের জন্য উভয় জগতে দুর্ভোগ।

৩. মানুষকে পরীক্ষা করা ছাড়াই এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে না।

৪. আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই সব মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২৬-৪০ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে মৃত্যু ও মৃত্যু-যাতনার খবর দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ্ আমাদেরকে ঐ কঠিন অবস্থায় সত্যের উপর স্থির থাকার তাওফীক দান করুন! (আরবি) শব্দটিকে এখানে ধমকের অর্থে নেয়া হলে অর্থ হবেঃ হে আদম সন্তান! তুমি যে আমার খবরকে অবিশ্বাস করছে তা ঠিক ও উচিত নয়, বরং তার কাজ-কারবার তো তুমি দৈনন্দিন প্রকাশ্যভাবে দেখতে রয়েছে। আর যদি এটা (আরবি) অর্থে নেয়া হয় তবে তো ভাবার্থ বেশী প্রতীয়মান হবে। অর্থাৎ যখন তোমার রূহ্ তোমার দেহ থেকে বের হতে লাগবে এবং তোমার কণ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহু বচন। এটা ঐ অস্থিগুলোকে বলা হয় যেগুলো বক্ষ এবং কাঁধের মাঝে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “পরন্তু কেন নয়- প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত হয় এবং তোমরা তাকিয়ে থাকো, আর আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতর, কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। তোমরা যদি কর্তৃত্বাধীন না হও, তবে তোমরা ওটা ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও!” (৫৬:৮৩-৮৭)

এখানে ঐ হাদীসটিও লক্ষ্যণীয় যা বিশর ইবনে হাজ্জাজ (রাঃ)-এর রিওয়াইয়াতে সূরা ইয়াসীনের তাফসীরে গত হয়েছে। (আরবি) যা (আরবি)-এর বহুবচন, ঐ হাড় যা হলকূমের কাছে রয়েছে। বলা হবেঃ কে তাকে রক্ষা করবে? হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হলোঃ কোন ঝাড়-ফুঁককারী আছে কি? আবূ কালাবা (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হলোঃ কোন ডাক্তার ইত্যাদির দ্বারা কি আরোগ্য দান করা যেতে পারে? হযরত কাতাদাহ্ (রঃ), হযরত যহ্‌হাক (রঃ) এবং ইবনে যায়েদ (রঃ)-এরও এটাই উক্তি। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এটা ফেরেশতাদের উক্তি। অর্থাৎ এই রূহকে নিয়ে কোন্ ফেরেশতারা আকাশের উপর উঠে যাবে, রহমতের ফেরেশতারা, না আযাবের ফেরেশতারা?

মহান আল্লাহ্‌ উক্তিঃ পায়ের সঙ্গে পা জড়িয়ে যাবে। এর একটি ভাবার্থ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখিরাত তার উপর জমা হয়ে যাবে। ওটা দুনিয়ার শেষ দিন হয় এবং আখিরাতের প্রথম দিন হয়। সুতরাং সে কঠিন হতে কঠিনতম অবস্থার সম্মুখীন হয়, তবে কারো উপর আল্লাহ্ রহম করলে সেটা স্বতন্ত্র কথা।

দ্বিতীয় ভাবার্থ হযরত ইকরামা (রঃ) হতে এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক বড় ব্যাপার অন্য এক বড় ব্যাপারের সাথে মিলিত হয়। বিপদের উপর বিপদ এসে পড়ে।

তৃতীয় ভাবার্থ হযরত হাসান বসরী (রঃ) প্রমুখ মনীষী হতে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বয়ং মরণোন্মুখ ব্যক্তির কঠিন যন্ত্রণার কারণে তার পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য। পূর্বে সে তো এই পায়ের উপর চলাফেরা করতো, কিন্তু এখন এতে জীবন কোথায়? আবার এও বর্ণিত হয়েছে যে, কাফন পরানোর সময় পদনালীর সাথে পদনালী মিলে যাওয়াকে বুঝানো হয়েছে। হযরত যহহাক (রঃ) হতে এও বর্ণিত আছে যে, দু’টি কাজ দু’দিকে জমা হয়ে যায়। এক দিকে তো মানুষ তার মৃতদেহ ধুয়ে-মুছে মাটিকে সমর্পণ করতে প্রস্তুত, অপরদিকে ফেরেশতারা তার রূহ নিয়ে যেতে ব্যস্ত। নেককার হলে তো ভাল প্রস্তুতি ও ধুমধামের সাথে নিয়ে যান এবং বদকার হলে অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থার সাথে নিয়ে যান।

মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেই দিন আল্লাহর নিকট সব কিছু প্রত্যানীত হবে। রূহ আকাশের দিকে উঠে যায়। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেনঃ তোমরা এই রূহকে পুনরায় যমীনেই নিয়ে যাও। কারণ আমি তাদের সবকে মাটি হতেই সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবো এবং তা হতেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করবো। যেমন এটা হযরত বারা (রাঃ) বর্ণিত সুদীর্ঘ হাদীসে এসেছে। এ বিষয়টিই অন্য জায়গায় বর্ণিত হয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর বিজয়ী, তিনিই তোমাদের হিফাযতের জন্যে তোমাদের নিকট ফেরেশতা পাঠিয়ে থাকেন, শেষ পর্যন্ত যখন তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় এসে যায় তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে এবং এ ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না। তারপর তাদের সকলকেই তাদের সত্য মাওলা আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জেনে রেখো যে, হুকুম তারই এবং তিনিই সত্বরই হিসাব গ্রহণকারী।” (৬:৬১-৬২)

এরপর ঐ কাফির ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, নিজের আকীদায় সত্যকে অবিশ্বাসকারী এবং স্বীয় আমলে সত্য হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শনকারী ছিল। কোন মঙ্গলই তার মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। না সে আল্লাহর কথাকে আন্তরিয্‌কভাবে বিশ্বাস করতো, না শারীরিকভাবে তার ইবাদত করতো, এমনকি সে নামাযও কায়েম করতো না। বরং সে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। অতঃপর সে তার পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়েছিল দম্ভভরে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তারা তাদের আপন জনের নিকট ফিরে আসতো তখন তারা ফিরতো উফুল্ল হয়ে।” (৮৩:৩১) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “সে তার পরিজনের মধ্যে তো আনন্দে ছিল। যেহেতু সে ভাবতো যে, সে কখনই ফিরে যাবে না।” (৮৪:১৩-১৪) এর পরেই মহান আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ফিরে যাবে। তার প্রতিপালক তার উপর সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।” (৮৪:১৫)।

এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা ধমক ও ভয় প্রদর্শনের সুরে বলেনঃ দুর্ভোগ তোমার জন্যে, দুর্ভোগ! আবার দুর্ভোগ তোমার জন্যে, দুর্ভোগ! আল্লাহ্‌ সঙ্গে কুফরী করেও তুমি দম্ভ প্রকাশ করছো! যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “(বলা হবেঃ) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত।” এটা তাকে ঘৃণা ও ধমকের সুরে কিয়ামতের দিন বলা হবে। আরো বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা অল্প কিছুদিন খাও ও সুখ ভোগ করে নাও, নিশ্চয়ই তোমরা তো অপরাধী।” (৭৭:৪৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাও, আল্লাহ ছাড়া যার ইচ্ছা ইবাদত করতে থাকো।” (৩৯:১৫) এ সমুদয় স্থানে এসব কথা ধমকের সুরেই বলা হয়েছে।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ)- কে (আরবি)-এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, নবী পাক (সঃ) আবূ জেহেলকে এই কথাগুলো বলেছিলেন। তখন আল্লাহ্ তা'আলা কুরআন কারীমে হুবহু এই শব্দগুলো অবতীর্ণ করেন। সুনানে নাসাঈতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও প্রায় এরূপই বর্ণিত আছে।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই ফরমানের পর আল্লাহর ঐ দুশমন বলেছিলঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি আমাকে ধমকাচ্ছ? জেনে রেখো যে, তুমি ও তোমার প্রতিপালক আমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। এই দুই পাহাড়ের মাঝে চলাচলকারীদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি আমিই।”

মহা মহিমান্বিত আল্লাহ এরপর বলেনঃ মানুষ কি মনে করে যে, তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হবে? অর্থাৎ সে কি এটা ধারণা করে যে, তাকে মৃত্যুর পরে পুনর্জীবিত করা হবে না? তাকে কোন হুকুম ও কোন কিছু হতে নিষেধ করা হবে না? এরূপ কখনো নয়, বরং দুনিয়াতেও তাকে আদেশ ও নিষেধ করা হবে এবং পরকালেও তার কৃতকর্ম অনুসারে তাকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া হবে। এখানে উদ্দেশ্য হলো কিয়ামতকে সাব্যস্ত করা এবং কিয়ামত অস্বীকারকারীদের দাবী খণ্ডন করা। এ জন্যেই এর দলীল হিসেবে বলা হচ্ছেঃ মানুষ তো প্রকৃত পক্ষে শুক্রের আকারে প্রাণহীন ও ভিত্তিহীন পানির এক নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ ফোটা ছাড়া কিছুই ছিল না। অতঃপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা ওটাকে রক্তপিণ্ডে পরিণত করেন, তারপর তা গোশতের টুকরায় পরিণত হয়, এরপর মহান আল্লাহ্ ওকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। অতঃপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন যুগল নর নারী। যে আল্লাহ্ এই তুচ্ছ শুক্রকে সুস্থ ও সবল মানুষে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি কি তাকে ধ্বংস করে দিয়ে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন না? অবশ্যই যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে আরো বেশী সক্ষম হবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আল্লাহ্ তিনিই যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, আবার ওকে ফিরিয়ে আনবেন (মৃত্যুর পর পুনরায় সৃষ্টি করবেন) এবং এটা তাঁর কাছে খুবই সহজ।” (৩০:২৭) এই আয়াতের ভাবার্থের ব্যাপারেও দু’টি উক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী প্রসিদ্ধ। যেমন সূরা রুমের তাফসীরে এর বর্ণনা ও আলোচনা গত হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত মূসা ইবনে আবী আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক স্বীয় ঘরের ছাদের উপর উচ্চস্বরে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। যখন তিনি এই সূরার (আরবি)-এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন তখন তিনি (আরবি)পাঠ করেন অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র ও মহান। হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই এতে সক্ষম।” জনগণ তাঁকে এটা পাঠ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এটা পাঠ করতে শুনেছি।” (এ হাদীসটি সুনানে আবী দাউদেও রয়েছে। কিন্তু দু’টি কিতাবেই ঐ সাহাবী (রাঃ) -এর নাম উল্লেখ করা হলেও কোন ক্ষতি নেই)

সুনানে আবূ দাউদেই হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সূরা (আরবি) পাঠ করবে এবং (আরবি) (৯৫:৮) এই আয়াত পর্যন্ত পড়বে সে যেন পাঠ করেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হ্যাঁ, (আপনি বিচারকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক) এবং সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে আমি নিজেও একজন সাক্ষী।” (৯৫:১) আর যে, ব্যক্তি (আরবি) এ সূরাটি পাঠ করবে এবং (আরবি) এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছবে তখন যেন সে (আরবি) (হ্যাঁ) পাঠ করে। আর যে ব্যক্তি (আরবি)-এ সূরাটি পাঠ করবে এবং (আরবি) (অর্থাৎ “সুতরাং তারা কুরআনের পরিবর্তে আর কোন্ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে!”) (৭৭:৫০) এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছবে তখন যেন সে (আরবি) (আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি) বলে। এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ এবং জামে তিরমিযীতেও রয়েছে।

তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) এই সূরা কিয়ামাহর শেষ আয়াতের পরে (আরবি) বলতেন।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) (আরবি) পাঠ করার পর (আরবি) বলেছেন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।