আল কুরআন


সূরা আল-মুদ্দাসসির (আয়াত: 40)

সূরা আল-মুদ্দাসসির (আয়াত: 40)



হরকত ছাড়া:

في جنات يتساءلون ﴿٤٠﴾




হরকত সহ:

فِیْ جَنّٰتٍ ۟ؕۛ یَتَسَآءَلُوْنَ ﴿ۙ۴۰﴾




উচ্চারণ: ফী জান্না-তিইঁ ইয়াতাছাআলূন।




আল বায়ান: বাগ-বাগিচার মধ্যে তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবে,




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪০. বাগ-বাগিচার মধ্যে তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করবে—




তাইসীরুল ক্বুরআন: তারা থাকবে জান্নাতে। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করবে




আহসানুল বায়ান: (৪০) তারা থাকবে জান্নাতে এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে--



মুজিবুর রহমান: তারা থাকবে উদ্যানে এবং তারা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে –



ফযলুর রহমান: তারা থাকবে জান্নাতে; (সেখানে তারা) একে অপরের কাছে জানতে চাইবে,



মুহিউদ্দিন খান: তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।



জহুরুল হক: জান্নাতে, তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে --



Sahih International: [Who will be] in gardens, questioning each other



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৪০. বাগ-বাগিচার মধ্যে তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করবে—


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৪০) তারা থাকবে জান্নাতে এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে--


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৩৮-৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



জাহান্নামীরা কী কারণে জাহান্নামে যাবে, সে কারণগুলো এখানে পরিস্ফুটিত হয়েছে।



رَهِيْنَةٌ অর্থ বন্ধক রাখা জিনিসকে বলা হয়। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ তার কৃত আমলের কারণে আটক, বন্ধক ও দায়বদ্ধ থাকবে। মানুষ যেমন একজন অন্যজনের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিস বন্ধক রেখে টাকা বা খাদ্য ধার করে থাকে এবং ধার করা টাকা বা খাদ্য ফেরত দিলে বন্ধক রাখা মূল্যবান জিনিস ফেরত দেওয়া হয় ঠিক তেমনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রতিটি আত্মা কিয়ামতের দিন বন্ধক থাকবে, প্রতিটি কর্মের হিসাব দিলে তা ফেরত দেওয়া হবে। তবে যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা ব্যতীত, কারণ তাদের এমন কোন খারাপ আমল থাকবে না যার কারণে তারা দায়বদ্ধ থাকবে। এ সব জান্নাতীরা পরস্পর অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, কেন তোমরা জাহান্নামে গেলে? জাহান্নামীরা জবাবে বলবে : (১) আমরা সালাত আদায় করতাম না। (২) মিসকীনদের খাবার দিতাম না। (৩) সত্যকে খণ্ডন করার জন্য বাতিল নিয়ে সবর্দা মত্ত থাকতাম। (৪) এমনকি আখিরাতকেও অস্বীকার করতাম।



এ অবস্থা বহাল থাকতে থাকতে আমাদের মৃত্যু চলে আসল। এ কারণে আজ আমরা জাহান্নামী।



الْيَقِيْنُ শব্দের অর্থ : দৃঢ় বিশ্বাস। তবে এখানে অর্থ হল : মৃত্যু, কারণ মৃত্যুর ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



( وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰي يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ)‏



“তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত‎ তুমি তোমার প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর‎।” (সূরা হিজর ১৫ : ৯৯)



(فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ)



সেদিন কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের কাজে আসবে না। কারণ তাদের আমলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট নন। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি রয়েছে এবং সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন কেবল তারাই সুপারিশ দ্বারা উপকৃত হবে। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার আয়াতুল কুরসীতে আলোচনা করা হয়েছে।



قَسْوَرَةٍ অর্থ সিংহ, কেউ বলেছেন তীরন্দাজ। অর্থাৎ এদের সত্যের প্রতি বিদ্বেষ এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা ঐ রকমই যেমন ভীত-সন্ত্রস্ত জংলী গাধা সিংহ দেখে পালায়, যখন সে তাকে শিকার করতে চায়।



(أَنْ يُّؤْتٰي صُحُفًا مُّنَشَّرَةً)



অর্থাৎ ঐ সকল প্রত্যেক মুশরিক চায় যে, তার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করা হোক যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَإِذَا جَا۬ءَتْهُمْ اٰيَةٌ قَالُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ حَتّٰي نُؤْتٰي مِثْلَ مَآ أُوْتِيَ رُسُلُ اللّٰهِ)



“যখন তাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে তারা তখন বলে, ‘আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেওয়া হয়েছিল আমাদেরকেও তা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনও বিশ্বাস করব না।’ (সূরা আনআম ৬ : ১২৪) মূলত তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হিংসা ও বিদ্বেষবশত এ কথা বলত। তাদের কাছে প্রত্যেক নিদর্শন আসলেও তারা আযাব প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। কারণ তাদের কাছে সত্য বর্ণনাকারী নিদর্শনসমূহ এসেছিল কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং যদি তাদের মাঝে কোন কল্যাণ থাকত তাহলে তারা ঈমান আনত। পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ধমক দিয়ে বলছেন- কক্ষনো নয়, তারা যা কামনা করে তা আমি দেব না। কার কাছে ওয়াহী প্রেরণ করা দরকার, কে তার যোগ্য সে আমিই ভাল জানি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(اَللہُ اَعْلَمُ حَیْثُ یَجْعَلُ رِسٰلَتَھ۫ﺚ سَیُصِیْبُ الَّذِیْنَ اَجْرَمُوْا صَغَارٌ عِنْدَ اللہِ وَعَذَابٌ شَدِیْدٌۭ بِمَا کَانُوْا یَمْکُرُوْنَ)



“আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন। যারা অপরাধ করেছে, তাদের চক্রান্তের কারণে আল্লাহর নিকট হতে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি তাদের ওপর পতিত হবেই।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১২৪) প্রকৃতপক্ষে তারা আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে না। যদি ঈমান রাখত তাহলে তাদের অবস্থা এমন হত না।



আল্লাহ তা‘আলা আবার সতর্ক করে বলছেন : যদিও তারা কুরআনকে এড়িয়ে চলে, মুহাম্মাদের বিরোধিতা করে তবুও সকলের জানা উচিত যে, এ কুরআন হলো সাবধানকারী বাণী। সুতরাং যে চায় সে এখান থেকে উত্তম নির্দেশাবলী গ্রহণ করে নিজের দুনিয়াবী ও আখিরাতের জীবন সাফল্যময় করুক। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে সে কেবল নিজেকেই ধ্বংস করল।



(وَمَا يَذْكُرُوْنَ إِلَّآ أَنْ يَّشَا۬ءَ اللّٰهُ)



অর্থাৎ এ কুরআন থেকে কেবল তারাই হিদায়াত নিতে পারবে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন। অতএব বান্দার সকল কাজই আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন এবং বান্দারও ইচ্ছা রয়েছে সে ইচ্ছাও আল্লাহর অধীন। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয় না।



(هُوَ أَهْلُ التَّقْوٰي وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র মা‘বূদ যিনি ভয় ও ইবাদত পাওয়ার অধিকার রাখেন, তিনি ছাড়া এমন কোন মা‘বূদ নেই যিনি ইবাদত পাওযার যোগ্য। আর যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তি কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে।

২. জাহান্নামীদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ জানতে পারলাম।

৩. আল্লাহ তা‘আলা যাকে যার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন কেবল সেই তার জন্য সুপারিশ করতে পারবে।

৪. ‘আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন’ এ গুণের প্রমাণ পেলাম।

৫. হিদায়াত পাওয়ার জন্য মনে-প্রাণে ইসলামকে ভালবাসতে হবে, অন্যথায় হিদায়াত পাওয়া সম্ভব নয়।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৩৮-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই তার আমলের উপর পাকড়াও করা হবে। কিন্তু যাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে তারা স্বর্গোদ্যানে শান্তিতে বসে থাকবে। তারা জাহান্নামীদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তির মধ্যে দেখে তাদেরকে বলবেঃ কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? তারা উত্তরে বলবেঃ আমরা আমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করিনি এবং তাঁর সৃষ্টজীবের সাথে সদ্ব্যবহার করিনি। অজ্ঞতা বশতঃ আমাদের মুখে যা এসেছে তা-ই বলেছি। যেখানেই কাউকেও প্রতিবাদ করতে দেখেছি সেখানেই আমরা তাদের সঙ্গে হয়ে গেছি এবং কিয়ামতকেও অস্বীকার করেছি। শেষ পর্যন্ত আমাদের মৃত্যু হয়ে গেছে। এখানে দ্বারা মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, নিম্নের আয়াতেও মৃত্যু অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “মৃত্যু আসা পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাকবে।` (১৫:৯৯) হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ)-এর মৃত্যু সম্পৰ্কীয় হাদীসেও শব্দটি মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার নিকট মৃত্যু এসে গেছে।”

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না। কেননা, শাফাআতের পাত্রের ব্যাপারেই শুধু শাফাআত ফলদায়ক হয়ে থাকে। কিন্তু যার প্রাণটিও কুফরীর উপরই বের হয়েছে তার জন্যে সুপারিশ কি করে ফলদায়ক হতে পারে? সে চিরতরে হাবিয়াহ জাহান্নামে জ্বলতে থাকবে।

এরপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ তাদের কী হয়েছে যে, তারা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেমন ভীত-এস্ত গর্দভ যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়নপর। ফারসী ভাষায় যাকে (আরবি) বলে, আরবী ভাষায় তাকে (আরবি) বা সিংহ। বলে। আর হাবশী ভাষায় তাকে (আরবি) বলা হয়।

এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ বস্তুতঃ তাদের প্রত্যেকেই কামনা করে যে, তাকে একটি উন্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলেঃ আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেয়া হয়েছে আমাদেরকে তা না দেয়া পর্যন্ত আমরা কখনো বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।` (৬:১২৪)

হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ এও হতে পারেঃ তারা চায় যে, তাদেরকে বিনা আমলেই ছেড়ে দেয়া হোক।

মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রকৃত কারণ এই যে, তারা আখিরাতের ভয় পোষণ করে না। কারণ কিয়ামত যে সংঘটিত হবে এ বিশ্বাসই তাদের নেই। সুতরাং যেটাকে তারা বিশ্বাসই করে না সেটাকে ভয় করবে কি করে?

মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রকৃত কথা এই যে, কুরআনই সকলের জন্যে উপদেশ বাণী। অতএব, যার ইচ্ছা সে এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করুক। তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কেউ উপদেশ গ্রহণ করবে না। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।` (৭৬:৩০) অর্থাৎ তোমাদের চাওয়া আল্লাহর চাওয়ার উপর নির্ভরশীল।

পরিশেষে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ একমাত্র তিনিই (আল্লাহই) ভয়ের যোগ্য এবং তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী।

মুসনাদে আহমাদে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি)-এ আয়াতটি পাঠ করে বলেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “একমাত্র আমিই ভয়ের যোগ্য, সুতরাং একমাত্র আমাকেই ভয় করতে হবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করা চলবে না। যে ব্যক্তি আমার সাথে শরীক করা হতে বেঁচে গেল সে আমার ক্ষমা প্রাপ্তির যোগ্য হয়ে গেল।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।