সূরা আল-মা‘আরিজ (আয়াত: 29)
হরকত ছাড়া:
والذين هم لفروجهم حافظون ﴿٢٩﴾
হরকত সহ:
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَ ﴿ۙ۲۹﴾
উচ্চারণ: ওয়াল্লাযীনাহুম লিফুরূজিহিম হা-ফিজূ ন।
আল বায়ান: আর যারা তাদের যৌনাংগসমূহের হিফাযতকারী।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৯. আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী(১),
তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা নিজেদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে
আহসানুল বায়ান: (২৯) আর যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।
মুজিবুর রহমান: এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
ফযলুর রহমান: যারা তাদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে,
মুহিউদ্দিন খান: এবং যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে
জহুরুল হক: আর যারা নিজেরাই তাদের আঙ্গিক-কর্তব্যাবলী সম্পর্কে যত্নবান, --
Sahih International: And those who guard their private parts
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ২৯. আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী(১),
তাফসীর:
(১) লজ্জাস্থানের হিফাযতের অর্থ ব্যভিচার না করা এবং উলঙ্গপনা থেকেও দূরে থাকা, অনুরূপ যাবতীয় বেহায়াপনাও এর অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন: সা'দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (২৯) আর যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৮-৩৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
(یَوْمَ تَکُوْنُ السَّمَا۬ئُ کَالْمُھْلِ... وَجَمَعَ فَاَوْعٰی)
এ আয়াতগুলোতে কিয়ামতের পূর্বে আকাশ-জমিন ও উভয়ের মধ্যস্থিত বস্তুর যে অবস্থা হবে তার বিবরণ এবং অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সন্তান, স্ত্রী, ভাই এমনকি পৃথিবীর সব কিছু দিতে প্রস্তুত থাকবে কিন্তু তার বিনিময়েও শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না সে বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
الْمُهْل অর্থ : ইবনু আব্বাস (রাঃ)-সহ প্রসিদ্ধ মুফাসসিরগণ বলেছেন :
دردي الزيت
বা তেল গলানোর পর নিচে যে সরিষার আঁশ/বস্তু (খইল) পড়ে থাকে তাই হল دردى الزيت। কিয়ামতের দিন আকাশ এরূপ হয়ে যাবে।
الْعِهْن ঘরের ভেতর ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করলে আলোতে যে ধূলিকণা উড়তে দেখা যায় তাই-ই হল الْعِهْن। কিয়ামতের দিন পাহাড়সমূহ এরূপ হয়ে যাবে। حَمِيْمٌ বলা হয় অন্তরঙ্গ বন্ধুকে।
يُّبَصَّرُوْنَهُمْ
অর্থাৎ যদিও একজন অন্যজনকে প্রত্যক্ষ করতে পারবে কিন্তু সবাই নিজ চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে, কেউ কাউকে জিজ্ঞাসা করবে না।
ثُمَّ يُنْجِيْهِ অর্থাৎ দুনিয়াতে স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, ধন-সম্পদ ইত্যাদি তার কত প্রিয় ছিল কিন্তু আখিরাতে এ সবের কোন মূল্যই থাকবে না। এ সব কিছূু দিয়ে হলেও সে বাঁচতে চাইবে। কিন্তু সে কখনো বাঁচতে পারবে না।
فَصِيْلَتِهِ অর্থ : গোষ্ঠি, জাতি।
لَظٰي হল জাহান্নামের একটি নাম। এ অংশের প্রখরতা খুব বেশি, ফলে চামড়া পুুড়ে শরীর থেকে খসে যাবে।
(تَدْعُوْا مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلّٰي)
অর্থাৎ জাহান্নাম তাকে ডাকবে সত্য দীন গ্রহণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে বলে।
(وَجَمَعَ فَأَوْعٰي)
অর্থাৎ সম্পদ জমা করে রাখত যাকাত দিত না-এমনসব ব্যক্তিদের জন্য জাহান্নামের এরূপ শাস্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন অবস্থা থেকে মুক্তি দান করুন। আমীন!
(اِنَّ الْاِنْسَانَ خُلِقَ ھَلُوْعًا... اُولٰ۬ئِکَ فِیْ جَنّٰتٍ مُّکْرَمُوْنَ)
এখানে মানুষের চিরাচরিত একটি স্বভাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন হা-হুতাশ করে আর যখন কোন নেয়ামত পায় তথা ধন-সম্পদ বা শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি তখন কৃপণতা করে আল্লাহ তা‘আলার হক যথাযথ আদায় করে না, তবে যারা সৎ বান্দা তারা ব্যতীত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
্রشَرُّ مَا فِي رَجُلٍ شُحٌّ هَالِعٌ وَجُبْنٌ خَالِعٌগ্ধ
মানুষের মাঝে নিকৃষ্টতম স্বভাব হলো অত্যন্ত কৃপণতা ও চরম কাপুরুষতা। (আবূ দাঊদ : ২৫১৩, সিলসিলা সহীহাহ : ৫৬০)
পরের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা মু’মিনূনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামতের পূর্বে আকাশ-জমিনের ভয়াবহ অবস্থা হবে।
২. মানুষ সেদিন সব কিছুর বিনিময়ে হলেও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে কিন্তু সক্ষম হবে না।
৩. জাহান্নাম যাদেরকে ডাকবে তাদের পরিচয় জানলাম।
৪. সুখ-সাচ্ছন্দ্যে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা এবং দুঃখ-বেদনায় ধৈর্য ধারণ করা উচিত। সুখ-শান্তি পেয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা উচিত নয়।
৫. প্রকৃত মু’মিনরা সালাত ও লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও সম্পদের হকের কথা ভুলে যায় না।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১৯-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে মানব প্রকৃতির দুর্বলতা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা বড়ই অসহিষ্ণু ও অস্থির চিত্ত। যখন কোন বিপদে পড়ে তখন বড়ই হা-হুতাশ করতে থাকে এবং নিরাশায় একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। পক্ষান্তরে, যখন কোন কল্যাণ লাভ করে ও অবস্থা স্বচ্ছল হয় তখন হয়ে যায় অতি কৃপণ। আল্লাহ তা'আলার হকের কথাও তখন সে ভুলে যায়।
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষের নিকৃষ্টতম জিনিস হলো অত্যন্ত কৃপণতা ও চরম পর্যায়ের কাপুরুষতা।” (এ হাদীসটি সুনানে আবু দাউদেও বর্ণিত হয়েছে)
এরপর আল্লাহ্ পাক বলেনঃ তবে হ্যাঁ, এই নিন্দনীয় স্বভাব হতে তারাই দূরে রয়েছে যাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত রয়েছে এবং যারা চিরন্তনভাবে কল্যাণের তাওফীক লাভ করেছে। যাদের গুণাবলীর মধ্যে একটি বড় গুণ এই যে, তারা পুরোপুরিভাবে নামায কায়েম করে থাকে। তারা নামাযের সময়ের প্রতি যত্নবান থাকে। ফরয নামায তারা ভালভাবে আদায় করে। নিজেদের নামাযে তারা তা প্রকাশ করে। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু'মিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাযে।” (২৩:১-২) আরবরা বদ্ধ ও হরকতবিহীন পানিকেও (আরবি) বলে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নামাযে ইতমীনান বা স্থিরতা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ধীরে সুস্থে ও স্থিরতার সাথে রুকু-সিজদাহ্ আদায় করে না সে তার নামাযে সদা নিষ্ঠাবান নয়। কেননা, সে নামাযে স্থিরতা প্রকাশ করে না, বরং কাকের মত ঠোকর মারে। সুতরাং তার নামায তাকে মুক্ত করাবে না বা পরিত্রাণ লাভে সহায়তা করবে না। এটাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা প্রত্যেক ঐ ভাল আমলকে বুঝানো হয়েছে যা স্থায়ী হয়। যেমন সহীহ্ হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর নিকট ঐ আমলই অধিক পছন্দনীয় যা চিরস্থায়ী হয়, যদিও তা অল্প হয়। অন্য শব্দে রয়েছেঃ “যার উপর আমলকারী স্থায়ীভাবে থাকে।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, যখন তিনি কোন আমল করতেন তখন তাঁর উপর চিরস্থায়ী থাকতেন (অর্থাৎ কখনো ঐ আমল পরিত্যাগ করতেন না)
হযরত কাতাদাহ্ (রঃ) (আরবি)-এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত দানইয়াল (আঃ) উম্মতে মুহাম্মাদী (সঃ)-এর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেনঃ “তারা এমন নামায পড়বে যে, যদি হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় এরূপ নামায পড়তো তবে তারা ডুবে মরতো না। আ'দ সম্প্রদায়ের এরূপ নামায় হলে তাদের উপর দিয়ে অকল্যাণকর বায়ু প্রবাহিত হতো না। সামূদ সম্প্রদায় এরূপ নামায পড়লে তাদেরকে ভীষণ চীৎকারের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হতো না। সুতরাং হে লোক সকল! তোমরা ভালভাবে নামাযের পাবন্দ হয়ে যাও। এটা মু'মিনদের জন্যে উত্তম চরিত্র (গত গুণ)।”
মহান আল্লাহ্ এরপর বলেনঃ যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের। (আরবি) ও (আরবি) এর পূর্ণ তাফসীর সূরা যারিয়াতে গত হয়েছে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ এ লোকগুলো কর্মফল দিবসকে সত্য বলে জানে। এ কারণেই তারা এমন সব আমল করে যাতে পুরস্কার লাভ করবে এবং আযাব হতেও পরিত্রাণ পাবে।
আল্লাহ তা’আলা তাদের আরো গুণ বর্ণনা করছেন যে, তারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তিকে ভয় করে, যে শাস্তি হতে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি নির্ভয় থাকতে পারে না। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাকে নিরাপত্তা দান করেন সেটা স্বতন্ত্র কথা।
আর এ লোকগুলো নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে, তাদের পত্নী অথবা তাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী। এ দু'টি আয়াতের পূর্ণ তাফসীর (আরবি)-এর মধ্যে গত হয়েছে।
এরা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আত্মসাৎ করে না ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। এগুলো হলো মু'মিনদের গুণাবলী। আর যারা এদের বিপরীত আমল করে তারা মুনাফিক। যেমন সহীহ্ হাদীসে এসেছেঃ “মুনাফিকের লক্ষণ বা নিদর্শন তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে তা আত্মসাৎ করে।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, কখনও কোন অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে। আর ঝগড়া করলে গালি দেয়।
তারা তাদের সাক্ষ্যদানে অটল। অর্থাৎ তাতে কম বেশী করে না ও সাক্ষ্যদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে পালিয়েও যায় না। তারা সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে কিছুই গোপন করে না। যারা তা গোপন করে তাদের অন্তর পাপী।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তারা তাদের নামাযে যত্নবান থাকে। অর্থাৎ সময় মত ওয়াজিব ও মুসতাহাব পূর্ণভাবে বজায় রেখে নামায পড়ে। এ কথাটি এখানে বিশেষ লক্ষণীয় যে, এই জান্নাতীর গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক শুরুতেও নামাযের উল্লেখ করেছেন এবং শেষেও করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, দ্বীনের কার্যসমূহে নামাযের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী এবং এটা খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এটা আদায় করা অত্যন্ত জরুরী এবং এর হিফাযত করা একান্ত কর্তব্য। সূরা (আরবি)-এর মধ্যে ঠিক এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। ওখানে আল্লাহ পাক এসব বিশেষণ বর্ণনা করার পর বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারাই হবে অধিকারী, অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।” (২৩:১০-১১) আর এখানে বলেছেনঃ তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকারের ভোগ্যবস্তু পেয়ে তারা আনন্দিত হবে এবং মহাসম্মান লাভ করবে।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।