আল কুরআন


সূরা আল-আন‘আম (আয়াত: 29)

সূরা আল-আন‘আম (আয়াত: 29)



হরকত ছাড়া:

وقالوا إن هي إلا حياتنا الدنيا وما نحن بمبعوثين ﴿٢٩﴾




হরকত সহ:

وَ قَالُوْۤا اِنْ هِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنْیَا وَ مَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِیْنَ ﴿۲۹﴾




উচ্চারণ: ওয়া কা-লূইন হিয়া ইলা-হায়া-তুনাদদুনইয়া-ওয়া মা-নাহনুবিমাব‘ঊছীন।




আল বায়ান: আর তারা বলেছিল, ‘আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া কিছু নেই এবং আমরা পুনরুজ্জীবিত হব না।’




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৯. আর তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদেরকে পুনরুত্থিতও করা হবে না।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: তারা বলে, আমাদের দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই, আমাদেরকে আবার (জীবিত করে) উঠানো হবে না।




আহসানুল বায়ান: (২৯) তারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না।’ [1]



মুজিবুর রহমান: তারা বলেঃ এই পার্থিব জীবনই প্রকৃত জীবন, এরপর আর কোন জীবন নেই, আর আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবেনা।



ফযলুর রহমান: তারা বলে, “আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই এবং (মৃত্যুর পর) আমাদেরকে পুনরায় উঠানো হবে না।”



মুহিউদ্দিন খান: তারা বলেঃ আমাদের এ পার্থিব জীবনই জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত হতে হবে না।



জহুরুল হক: আর তারা বলে -- "আমাদের দুনিয়াদারী জীবন ব্যতীত আর কিছুই নেই, আর আমরা পুনরুত্থিতও হব না।"



Sahih International: And they say, "There is none but our worldly life, and we will not be resurrected."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ২৯. আর তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদেরকে পুনরুত্থিতও করা হবে না।(১)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ যদি তারা দুনিয়াতে পুনঃ প্রেরিত হয়, তবে সেখানে পৌছে একথাই বলবে যে, আমরা এ পার্থিব জীবন ছাড়া অন্য কোন জীবন মানি না; এ জীবনই একমাত্র জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে না। [ইবন কাসীর] মোটকথাঃ কাফের ও পাপীরা হাশরের ময়দানে প্রাণ রক্ষার্থে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নানা ধরণের কথাবার্তা বলবে। কখনো মিথ্যা কসম খাবে, কখনো দুনিয়ায় পুনঃ প্রেরিত হওয়ার আকাঙ্খা করবে। এতে ফুটে উঠল যে, পার্থিব জীবন অনেক বড় নেয়ামত এবং অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়। যদি তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। তাই ইসলামে আত্মহত্যা হারাম এবং মৃত্যুর জন্য দো'আ ও মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ। কারণ এতে আল্লাহ তা'আলার একটি বিরাট নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

সারকথা এই যে, দুনিয়াতে যে বস্তুটি প্রত্যেকেই প্রাপ্ত হয়েছে এবং যা সর্বাধিক মূল্যবান ও প্রিয়, তা হচ্ছে মানুষের জীবন। এ কথাও সবার জানা যে, মানুষের জীবনের একটা সীমাবদ্ধ গণ্ডি রয়েছে কিন্তু তার সঠিক সীমা কারো জানা নেই যে, তা সত্তর বছর হবে, না সত্তর ঘন্টা হবে, না একটি শ্বাস ছাড়ারও সময় পাওয়া যাবে না। সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জন্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (২৯) তারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না।’ [1]


তাফসীর:

[1] এটা হলো بَعْث بَعْدَ المَوت (মৃত্যুর পর পুনরুত্থান) এর কথা অস্বীকার যা প্রত্যেক কাফের করে এবং এই বাস্তবতাকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করাই হলো প্রকৃতপক্ষে তাদের কুফরী ও অবাধ্যতার সবচেয়ে বড় কারণ। তাছাড়া মানুষের অন্তরে যদি পরকালের প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে তারা কুফরী ও অবাধ্যতার পথ থেকে সত্বর ফিরে আসবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:



মুশরিক ও কাফিররা যখন জাহান্নামের আগুনের সামনে অবস্থান করবে তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে সে দৃশ্যপট আল্লাহ তা‘আলা এখানে তুলে ধরেছেন।



সেদিন তারা আফসোস করে বলবে, যদি পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হত। তাদের এ আফসোসের কথা অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(رَبَّنَآ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوْقِنُوْنَ)



“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, (এখন) তুমি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ কর; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।”(সূরা সিজদাহ ৩২:১২)



আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি দুনিয়াতে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছিল তা-ই করবে। তারা মিথ্যুক। কারণ তারা বিশ্বাস করে দুনিয়ার জীবনই হল আসল জীবন। এখন জীবিত আছি আবার মরে যাব। মৃত্যুর পর কিছুই হবে না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ)‏



“একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি বাঁচি এখানেই এবং আমরা উত্থিত হব না।”(সূরা মু’মিনূন ২৩:৩৭)



তারা যেসব মিথ্যাচার করেছে কিয়ামতের দিন তাদের সব গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাবে। নাবী রাসূলগণ যে সত্য নিয়ে এসেছিলেন তারা তা জেনেশুনে গোপন ও প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যার ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা তার ইবাদত করেছে।



(أَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّ)



‘এটা কি প্রকৃত সত্য নয়?’ অর্থাৎ স্বচক্ষে দর্শন করার পর তো তারা স্বীকার করবে যে, আখেরাতের জীবন বাস্তব ও সত্য। তবে সেখানে এ স্বীকারোক্তিতে কোন লাভ হবে না বরং আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: “এখন তোমরা তোমাদের কুফরীর কারণে আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।”



সুতরাং সময় থাকতে সতর্ক হওয়া উচিত। জাহান্নামের আগুন দেখার পর দুনিয়াতে আসার আফসোস করে লাভ হবে না। কারণ সেদিন প্রতিদানের দিন, আমলের দিন নয়।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে কাফির মুশরিকরা দুনিয়াতে ফিরে আসার কামনা করবে, কিন্তু তা অসম্ভব।

২. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের অন্যতম রুকন। এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে ঈমানদার হওয়া যাবে না।

৩. সময়ের সদ্ব্যবহার না করলে অসময়ের আফসোস কোন কাজে আসবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ পাক এখানে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন তাদেরকে আগুনের সামনে দাঁড় করানো হবে, তারা ওর কড়া ও শৃংখল দেখতে পাবে, তখন অফিসোস করে বলবেঃ হায়! পুনরায় যদি আমাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা ভাল কাজ করতাম এবং আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ অবিশ্বাস করতাম না। বরং ঐগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করতাম। আল্লাহ পাক বলেনঃ না, না, বরং কথা এই যে, কুফর, অবিশ্বাস ও বিরোধিতার যে ব্যাপারগুলো তারা অন্তরে গোপন রেখেছিল সেগুলো আজ প্রকাশ হয়ে গেল। যদিও দুনিয়া বা আখিরাতে তারা তা অস্বীকার করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তাদের যুক্তি শুধুমাত্র এটাই যে, তারা বলে-আমরা মুশরিক ছিলাম না। লক্ষ্য কর, তারা কিরূপ মিথ্যা কথা বানিয়ে নিয়েছে। এর অর্থ এও হতে পারে দুনিয়ায় তারা যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতা জানা সত্ত্বেও তাঁর উপর ঈমান আনেনি সেটা কিয়ামতের দিন তাদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং তখন তারা আফসোস করতে থাকবে। দুনিয়ায় কিন্তু সেটা প্রকাশ পায়নি। যেমন হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে বলেছিলেনঃ “হে ফিরাউন! তুমি তো ভালরূপেই জান যে, এটা আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন!” আর আল্লাহ পাকও ফিরাউন ও তার কওম সম্পর্কে বলেছেনঃ “তারা অস্বীকার করেছে বটে, কিন্তু তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, ওটা তাদের পক্ষ থেকে অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি।” এর ভাবার্থ এটা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দ্বারা ঐ মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা লোকদের সামনে মুমিন বলে পরিচিত ছিল বটে, কিন্তু ভিতরে ছিল কাফির। এর মাধ্যমে এই কাফিরদের ঐ কথার সংবাদ দেয়া হচ্ছে যেই কথা তারা কিয়ামতের দিন বলবে। যদিও এই সূরাটি মক্কী এবং নিফাক তো ছিল মদীনাবাসী বা ওর আশে পাশের লোকদের মধ্যে, তবুও এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা তো মক্কী সূরার মধ্যেও নিফাকের বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেটা হচ্ছে সূরায়ে আনকাবূত। এই সূরায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যারা মুমিন তাদেরকেও আল্লাহ জানেন এবং যারা মুনাফিক তাদেরকেও জানেন।' (২৯:১১) এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে যে, পরকালে মুনাফিকরা যখন শাস্তি অবলোকন করবে তখন কুফর ও নিফাক গোপন করার পর তাদের কাছে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তাদের ঈমান ছিল বাহ্যিক ঈমান। সুতরাং এখানে আল্লাহ পাক যে বলেছেন, তারা যা গোপন করতো এখন তা প্রকাশ পেয়েছে’ এর ভাবার্থ এই যে, তারা পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাচ্ছে তা যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের কারণে তা নয়। বরং কিয়ামতের দিনের শাস্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েই তারা এ কথা বলছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলে সাময়িকভাবে জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ। আর যদি তাদেরকে। পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানোও হয় তবে আবারও তারা কুফরী করতেই থাকবে। তারা যে বলছে, “আমরা আর অবিশ্বাস করবো না, বরং ঈমানদার হয়ে যাবো এ সব মিথ্যা কথা। তারা তো বলে-এই পার্থিব জীবনই প্রকৃত জীবন, এরপর আর কোন জীবন নেই, আর আমাদেরকে পুনরুথিতও করা হবে না। আল্লাহ পাক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হায়! তুমি যদি সেই দৃশ্যটি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন- এটা (অর্থাৎ কিয়ামত) কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বলবেঃ হ্যা, আপনার কসম! এটা সত্য। তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে। তাহলে তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, এটা কি যাদু? তোমাদেরকে কি অন্তদৃষ্টি দেয়া হয়নি?





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।