সূরা আল-কলম (আয়াত: 14)
হরকত ছাড়া:
أن كان ذا مال وبنين ﴿١٤﴾
হরকত সহ:
اَنْ کَانَ ذَا مَالٍ وَّ بَنِیْنَ ﴿ؕ۱۴﴾
উচ্চারণ: আন কা-না যা- মা-লিওঁ ওয়া বানীন।
আল বায়ান: এ কারণে যে, সে ছিল ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততির অধিকারী।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৪. এজন্যে যে, সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী।
তাইসীরুল ক্বুরআন: কারণ সে সম্পদ আর (অনেক) সন্তানাদির অধিকারী।
আহসানুল বায়ান: (১৪) (এ জন্য যে) সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধিশালী।[1]
মুজিবুর রহমান: সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী।
ফযলুর রহমান: এই বিবেচনায় যে, তার ধনবল ও জনবল আছে।
মুহিউদ্দিন খান: এ কারণে যে, সে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততির অধিকারী।
জহুরুল হক: এইজন্য যে সে ধনসম্পদের এবং সন্তানসন্ততির অধিকারী।
Sahih International: Because he is a possessor of wealth and children,
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৪. এজন্যে যে, সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৪) (এ জন্য যে) সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধিশালী।[1]
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, উল্লিখিত মন্দ চরিত্রের শিকার সে এই জন্য হয় যে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততির নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন। অর্থাৎ, সে নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে অকৃতজ্ঞ হয়। কেউ কেউ বলেন, এর সম্পর্ক হল, ولا تُطِعْ (আনুগত্য করো না) কথার সাথে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির মধ্যে এইসব মন্দ গুণ বিদ্যমান থাকে, তার কথা কেবল এই জন্য মেনে নেওয়া হয় যে, তার আছে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৮-১৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের অনুসরণ করতে এখানে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করছেন। এটা সকল মিথ্যুকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ তারা আনুগত্য পাওয়ার অধিকার রাখে না। এজন্য যে, মুশরিকরা চায়-তারা যে ধর্মের ওপর আছে সে ব্যাপারে আপনি একটু নম্রভাব প্রকাশ করুন এবং একাত্মতা ঘোষণা করুন।
تُدْهِنُ অর্থ একমত পোষণ করা, অথবা অন্যায়ের বিরোধিতা না করা ও এ ব্যাপারে নম্রতা দেখানো।
حَلَّاف হল যে ব্যক্তি বেশি বেশি শপথ করে। همان হল যে ব্যক্তি গীবত ও ঠাট্টা করে অপরের দোষত্র“টি বর্ণনা করে।
نَمِيْم বলা হয় যে ব্যক্তি ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এক জনের কথা অপর জনের কাছে বলে বেড়ায়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি বললেন : এ দু’ কবরবাসীকে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে, অবশ্য বড় কোনো অপরাধের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। একটি অপরাধ হল : প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবের ছিটা থেকে বেঁচে থাকত না, অপরটি হল : এক জনের দোষ অপর জনের কাছে বলে বেড়াত। (সহীহ বুখারী হা. ১৩১২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৬০৫৬)
مَّنَّاع অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজে ভাল কাজ করা হতে বিরত থাকে এবং অপরকেও ভাল কাজে বাধা দেয়। (ইবনু কাসীর)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : ইসলাম থেকে তার সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে বাধা দেয়।
(مُعْتَدٍ أَثِيْم)
অর্থাৎ অন্যায় ও অবাধ্য কাজে শরীয়তের সীমা অতিক্রম করে।
عُتُلّ যে কর্কশ ভাষায় কথা বলে, রূঢ় আচরণ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সংবাদ দেব না? তারা বলল : হ্যাঁ, তিনি বললেন : প্রত্যেক দুর্বল ও দুর্বল করে রাখা হয় এমন ব্যক্তি। তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে কোন শপথ করলে আল্লাহ তা‘আলা তা পূরণ করেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সংবাদ দেব না? তারা বলল : হ্যাঁ, তিনি বললেন : প্রত্যেক রূঢ় আচরণকারী, কর্কশ ভাষী ও অহংকারী (সহীহ বুখারী হা. ৪৯১৮, সহীহ মুসলিম হা. ২৮৫৩) অন্য বর্ণনায় রয়েছে : প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে কোন জাতির সাথে সম্পৃক্ত করে অথচ সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় ও প্রত্যেক অহংকারী। (সহীহ মুসলিম হা. ২৮৫৩)
زَنِيْم বলা হয় এমন ব্যক্তি যে নিজেকে কোন গোত্রের দিকে সম্পৃক্ত করে, আসলে সে ঐ গোত্রের লোক নয়।
মোট কথা আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এসব অসৎ চরিত্রের অধিকারী কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করতে বারণ করছেন।
(أَنْ كَانَ ذَا مَالٍ)
এ আয়াতগুলো ওয়ালীদ বিন মুগীরাহ ও অন্যান্য কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। কারণ তাদের ধন সম্পদ, সন্তান-সন্ততির গৌরবেই তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে এবং দীন ইসলাম গ্রহণে অহংকার প্রকাশ করেছে। যেমন সূরা মুদ্দাসসিরে আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরেছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
وَاعْلَمُوْآ أَنَّمَآ أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ لا وَّأَنَّ اللهَ عِنْدَه۫ٓ أَجْرٌ عَظِيْمٌ
“ আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এক পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮ : ২৮)
(سَنَسِمُه۫ عَلَي الْخُرْطُوْمِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : এর অর্থ তরবারী দ্বারা নাক কেটে ফেলা। তিনি আরো বলেছেন : এটি যার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে তার নাক বদরের দিন তরবারী দ্বারা কাটা হয়েছিল। কাতাদাহ বলেন : কিয়ামতের দিন তার নাক কাটা হবে নির্দশন স্বরূপ যাতে তাকে চেনা যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُم
“অপরাধীদেরকে চেনা যাবে তাদের আলামত হতে।” (সূরা আর রহমান ৫৫ : ৪১)
এসব নাযিল হয়েছে ওয়ালিদ বিন মুগীরাহ্ এর ব্যাপারে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা এত তিরস্কার করেছেন যা অন্য কাউকে করেননি। কেউ বলেছেন : আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়েছেন। যেমন বদরের দিন তাদের নাককে
তলোয়ারের নিশানা বানানো হয়েছিল। আবার কেউ বলেছেন : এটা কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের নিদর্শন হবে। তাদের নাক দেগে চিহ্নিত করা হবে।
এসব আয়াত ওয়ালিদ বিন মুগীরাহর ব্যাপারে নাযিল হলেও তা প্রত্যেক ঐ সব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা উল্লিখিত দোষে দুষ্ট হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এসব দোষে দুষ্ট হওয়া হতে বিরত রাখুন। আমীন!
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আয়াতে বর্ণিত খারাপ চরিত্রের অধিকারীদের নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে।
২. অধিকাংশ মানুষের সঠিক ধর্ম পালনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার সম্পদ ও সন্তান।
৩. খারাপ চরিত্রের অধিকারী অনুসরণের যোগ্য হতে পারে না।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৮-১৬ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমি তো তোমাকে বহু নিয়ামত, সরল-সঠিক পথ মহান চরিত্র দান করেছি, সুতরাং তোমার জন্যে এখন উচিত যে, যারা আমাকে অস্বীকার করছে তুমি তাদের অনুসরণ করবে না। তারা তো চায় যে, তুমি নমনীয় হবে, তাহলে তারাও নমনীয় হবে। ভাবার্থ এই যে, তুমি তাদের বাতিল মাবুদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়বে এবং সত্য পথ হতে কিছু এদিক ওদিক হয়ে যাবে। এরূপ করলে তারা খুশী হবে।
মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি অধিক শপথকারী ইতর প্রকৃতির লোকদেরও অনুসরণ করবে না। যারা ভ্রান্ত পথে রয়েছে তাদের লাঞ্ছনা ও মিথ্যা বর্ণনা প্রকাশ হয়ে পড়ার সদা ভয় থাকে। তাই তারা মিথ্যা শপথ করে করে অন্যদের মনে নিজেদের সম্পর্কে ভাল ধারণা জন্মাতে চায়। তারা নিঃসঙ্কোচে মিথ্যা কসম খেতে থাকে এবং আল্লাহর পবিত্র নামগুলোকে অনুপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি)-এর অর্থ হলো মিথ্যাবাদী। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে দুর্বল চিত্ত লোক। হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, (আরবি)-এর অর্থ ‘মুকাবির' এবং (আরবি) এর অর্থ দুর্বল। (আরবি) এর অর্থ গীবতকারী, চুগলখোর, যে বিবাদ লাগাবার জন্যে এর কথা ওকে এবং ওর কথা একে লাগিয়ে থাকে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় বলেনঃ “এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, আর এদেরকে খুব বড় (পাপের) কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব করার সময় পর্দা করতো না এবং অপরজন ছিল চুগলখোর।`
মুসনাদে আহমাদে হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত হুযাইফা (রাঃ) এ হাদীসটি ঐ সময় শুনিয়েছিলেন যখন তাঁকে বলা হয় যে, এ লোকটি আমীর-উমারার নিকট (গোয়েন্দারূপে) কথা পৌঁছিয়ে থাকে।
মুসনাদে আহমাদে হযরত আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনে সাকন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম লোক কারা এ খবর কি আমি তোমাদেরকে দিবো না?” সাহাবীগণ উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদেরকে এ খবর দিন!” তিনি তখন বললেনঃ “তারা হলো ঐ সব লোক যাদেরকে দেখলে মহামহিমান্বিত আল্লাহকে স্মরণ হয়!” তারপর তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের নিকৃষ্ট লোকদের সংবাদ দিবো না? তারা হলো চুগলখোর, যারা বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে থাকে এবং সৎ ও পবিত্র লোকদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে।” (ইমাম ইবন মাজাহও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
এরপর আল্লাহ তা'আলা ঐ সব লোকের আরো বদ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা কল্যাণের কার্যে বাধা দান করে, তারা সীমালংঘনকারী ও পাপিষ্ঠ। অর্থাৎ তারা নিজেরা ভাল কাজ করা হতে বিরত থাকে এবং অন্যদেরকেও বিরত রাখে, হালাল জিনিস ও হালাল কাজ হতে সরে গিয়ে হারাম ভক্ষণে ও হারাম কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা পাপী, দুষ্কর্মপরায়ণ ও হারাম ভক্ষণকারী। তারা দুশ্চরিত্র, রূঢ় স্বভাব এবং তদুপরি কুখ্যাত। তারা শুধু সম্পদ জমা করে এবং কাউকেও কিছুই দেয় না।
মুসনাদে আহমাদে হযরত হারিসাহ ইবনে অহাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকের পরিচয় দিবো না? প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি, যাকে দুর্বল মনে করা হয় (সেই জান্নাতী)। যদি সে আল্লাহর নামে কোন শপথ করে তবে আল্লাহ তা বাস্তবায়িত করে দেন। আর আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীর সংবাদ দিবো না? প্রত্যেক অত্যাচারী, যালিম ও অহংকারী (জাহান্নামী)।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন) অন্য এক হাদীসে আছেঃ “প্রত্যেক জমাকারী ও বাধাদানকারী, অশ্লীলভাষী এবং রূঢ় স্বভাব ব্যক্তি (জাহান্নামী)।
আর একটি বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ (আরবি) কে? উত্তরে তিনি বলেনঃ “দুশ্চরিত্র, রূঢ় স্বভাব, অত্যধিক পানাহারকারী, লোকদের উপর অত্যাচারকারী এবং বড় পেটুক ব্যক্তি।” (এ হাদীসটি বহু সংখ্যক বর্ণনাকারী মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন)
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আকাশ কাঁদে যাকে আল্লাহ তা'আলা শারীরিক সুস্থতা দান করেছেন, পেট পুরে খেতে দিয়েছেন এবং জায়গা-জমি, ধন-সম্পদ (অর্থাৎ দুনিয়ার ভোগ্যবস্তু সবকিছুই) দান করেছেন এতদসত্ত্বেও সে জনগণের উপর অত্যাচার করে থাকে।” (এ হাদীসটিও দুই মুরসাল পন্থায় বর্ণিত হয়েছে)
মোটকথা (আরবি) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার দেহ সুস্থ ও সবল, বেশী পানাহারকারী এবং খুবই শক্তিশালী। আর (আরবি) হলো ঐ ব্যক্তি যে বদনামী কুখ্যাত। আরবদের পরিভাষায় (আরবি) ঐ লোককে বলা হয় যাকে কোন এক সম্প্রদায়ভুক্ত মনে করা হয়, আসলে কিন্তু সে ঐ সম্প্রদায়ভুক্ত নয়। আরব কবিরাও এটাকে এই অর্থেই ব্যবহার করেছেন, অর্থাৎ যার নসবনামা সঠিক নয়। কথিত আছে যে, এর দ্বারা আখনাস ইবনে শুরায়েক সাকাফীকে বুঝানো হয়েছে, যে বানু যারা গোত্রের মিত্র ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, আসওয়াদ ইবনে আবদি ইয়াগুস যুহরীদের বুঝানো হয়েছে। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, জারজ সন্তান উদ্দেশ্য।
এটাও বর্ণিত আছে যে, কর্তিত কান বিশিষ্ট বকরী, যে কান তার গলদেশে ঝুলতে থাকে, এরূপ বকরীকে যেমন পালের মধ্যে সহজেই চেনা যায় ঠিক তেমনই মুমিনকে কাফির হতে সহজেই পৃথক করা যায়। এ ধরনের আরো বহু উক্তি রয়েছে। কিন্তু সবগুলোরই সারমর্ম হলো এই যে, (আরবি) হলো ঐ ব্যক্তি যে কুখ্যাত এবং যার সঠিক নসবনামা এবং প্রকৃত পিতার পরিচয় জানা যায় না। এ ধরনের লোকদের উপর শয়তান খুব বেশী জয়যুক্ত হয় এবং তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “জারজ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অন্য এক হাদীসে আছেঃ জারজ সন্তান তিনজন মন্দ লোকের একজন, যদি সেও তার পিতা-মাতার মত আমল করে।”
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদের দুষ্কর্মের কারণ এই যে, তারা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী। আমার নিয়ামতসমূহের শুকরিয়া আদায় তো দূরের কথা, তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং ঘৃণার স্বরে বলেঃ এটা তো সেকালের উপকথা মাত্র। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমাকে ছেড়ে দাও এবং তাকে যাকে আমি সৃষ্টি করেছি অসাধারণ করে। আমি তাকে দিয়েছি বিপুল ধন-সম্পদ এবং নিত্যসঙ্গী পুত্রগণ। আর তাকে দিয়েছি স্বাচ্ছন্দ জীবনের প্রচুর উপকরণ। এরপরও সে কামনা করে যে, আমি তাকে আরও অধিক দিই। না, তা হবে না, সে তো আমার নিদর্শনসমূহের উদ্ধত বিরুদ্ধাচারী। আমি অচিরেই তাকে ক্রমবর্ধমান শাস্তি দ্বারা আচ্ছন্ন করবো! সে তো চিন্তা করলো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো! অভিশপ্ত হোক সে! কেমন করে সে এই সিদ্ধান্ত করলো! আরও অভিশপ্ত হোক সে! কেমন করে সে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো! সে আবার চেয়ে দেখলো। অতঃপর সে কুঞ্চিত করলো ও মুখ বিকৃত করলো। অতঃপর সে পিছনে ফিরলো এবং দম্ভ প্রকাশ করলো, এবং ঘোষণা করলোঃ এটাতো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত যাদু ছাড়া আর কিছু নয়, এটা তো মানুষেরই কথা। আমি তাকে নিক্ষেপ করবো সাকারে। তুমি কি জান সাকার কি? ওটা তাদেরকে জীবিতাবস্থায় রাখবে না ও মৃত অবস্থায় ছেড়ে দিবে না। এটা তো গাত্র চর্ম দগ্ধ করবে! সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশ জন প্রহরী।” (৭৪:১১-৩০)
আল্লাহ তা’আলা এরপর বলেনঃ আমি তার নাক দাগিয়ে দিবো। অর্থাৎ আমি তাকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করবো যে, তার লাঞ্ছনা কারো কাছে গোপন থাকবে না। সবাই তার পরিচয় জেনে নিবে। যেমন দাগযুক্ত নাক বিশিষ্ট লোককে এক নযর দেখলেই হাজার হাজার লোকের মধ্যেও চিনতে অসুবিধা হয় না এবং সে তার নাকের দাগ গোপন করতে চাইলেও গোপন করতে পারে না, অনুরূপভাবে ঐ লাঞ্ছিত ও অপমানিত ব্যক্তির লাঞ্ছনা ও অপমান কারো অজানা থাকবে না। এটাও কথিত আছে যে, বদরের দিন তার নাকে তরবারীর আঘাত লাগবে। এটাও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন নাকে জাহান্নামের মোহর লেগে যাবে, অর্থাৎ মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। তাহলে নাক দ্বারা মুখমণ্ডল উদ্দেশ্য হবে। ইমাম আবূ জা’ফর ইবনে জারীর (রঃ) এই সমুদয় উক্তি বর্ণনা করে বলেনঃ এই উক্তিগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এই ভাবে হতে পারে যে, এসবই ঐ ব্যক্তির মধ্যে একত্রিত হবে। এটাও হবে এবং ওটাও হবে। দুনিয়াতেও সে অপমানিত হবে, সত্য সত্যই তার নাকে দাগ দেয়া হবে এবং কিয়ামতের দিনেও সে দাগযুক্ত অপরাধী হবে। প্রকৃতপক্ষে এটাই সঠিকতমও বটে।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বহু বছর ধরে বান্দা আল্লাহর নিকট মুমিন রূপে লিখিত হয়, কিন্তু সে এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে যে, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে বান্দা আল্লাহর নিকট বহু বছর ধরে কাফির রূপে লিখিত হয়, কিন্তু সে এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। যে ব্যক্তি মানুষের দোষারোপকারী এবং চুগলখোর অবস্থায় মারা যাবে, কিয়ামতের দিন তার নাকের উপর তার দুই ওষ্ঠের দিক হতে দাগ দিয়ে দেয়া হবে, যা পাপীর নিদর্শনরূপে গণ্য হবে।`
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।