সূরা আস-সাফ (আয়াত: 13)
হরকত ছাড়া:
وأخرى تحبونها نصر من الله وفتح قريب وبشر المؤمنين ﴿١٣﴾
হরকত সহ:
وَ اُخْرٰی تُحِبُّوْنَهَا ؕ نَصْرٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَتْحٌ قَرِیْبٌ ؕ وَ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ ﴿۱۳﴾
উচ্চারণ: উখরা-তুহিববূনাহা- নাসরুম মিনাল্লা-হি ওয়া ফাতহুন কারীব ওয়া বাশশিরিল মু’মিনীন।
আল বায়ান: এবং আরো একটি (অর্জন) যা তোমরা খুব পছন্দ কর। (অর্থাৎ) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. এবং (তিনি দান করবেন) আরও একটি অনুগ্রহ, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও আসন্ন বিজয়; আর আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর অন্য আরেকটিও (তিনি তোমাদেরকে দিবেন) যা তোমরা পছন্দ কর (আর তা হল) আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। (হে নবী!) ঈমানদার লোকেদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
আহসানুল বায়ান: (১৩) আর তিনি তোমাদেরকে দান করবেন বাঞ্ছিত আরো একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়।[1] আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। [2]
মুজিবুর রহমান: আর তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়; মু’মিনদেরকে এর সুসংবাদ দাও।
ফযলুর রহমান: (তিনি তোমাদেরকে দেবেন) তোমাদের পছন্দনীয় আরও একটি অনুগ্রহ: (শত্রুর বিরুদ্ধে) আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী এক বিজয়। মুমিনদেরকে (তার) সুসংবাদ দাও।
মুহিউদ্দিন খান: এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।
জহুরুল হক: আর অন্য একটি যা তোমরা ভালবাস -- আল্লাহ্র কাছ থেকে সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। আর সুসংবাদ দাও মুমিনদের।
Sahih International: And [you will obtain] another [favor] that you love - victory from Allah and an imminent conquest; and give good tidings to the believers.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৩. এবং (তিনি দান করবেন) আরও একটি অনুগ্রহ, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও আসন্ন বিজয়; আর আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।(১)
তাফসীর:
(১) আখেরাতের নেয়ামতের সাথে কিছু দুনিয়ার নেয়ামতেরও ওয়াদা করে বলা হয়েছে, (وَأُخْرَىٰ تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ) “এবং তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরো একটি অনুগ্রহ। আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়; মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।” অর্থাৎ আখেরাতের নেয়ামত ও বাসগৃহ তো পাওয়া যাবেই; দুনিয়াতেও একটি নগদ নেয়ামত পাওয়া যাবে, তা হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। এর অর্থ শত্রুদের উপর বিজয় লাভ। এখানে قَرِيبٌ (বা নিকট) শব্দটি আখেরাতের বিপরীতে ধরা হলে ইসলামের সকল বিজয়ই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর যদি প্রচলিত قَرِيبٌ (বা আসন্ন) ধরা হয়, তবে এর প্রথম অর্থ হবে খাইবার বিজয় এবং এরপর মক্কা বিজয়। تُحِبُّونَهَا অর্থাৎ, তোমরা এই নগদ নেয়ামত খুব পছন্দ কর। কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে নগদকে পছন্দ করে। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, (وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا) অর্থাৎ, মানুষ তড়িঘড়ি পছন্দ করে। [সূরা আল-ইসরা: ১১] এর অর্থ এই নয় যে, আখেরাতের নেয়ামত তাদের কাছে প্রিয় নয়। বরং অর্থ এই যে, আখেরাতের নেয়ামত তো তাদের প্রিয় কাম্যই, কিন্তু স্বভাবগতভাবে কিছু নগদ নেয়ামতও তারা দুনিয়াতে চায় তাও দেয়া হবে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর, মুয়াস্সার, বাগভী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৩) আর তিনি তোমাদেরকে দান করবেন বাঞ্ছিত আরো একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়।[1] আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। [2]
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, যখন তোমরা তাঁর রাস্তায় যুদ্ধ করবে এবং তাঁর দ্বীনের সাহায্য করবে, তখন তিনি তোমাদেরকে জয় ও সাহায্য দানে ধন্য করবেন। ﴿إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ﴾ অর্থাৎ, যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। (সূরা মুহাম্মাদ ৭ আয়াত) ﴿وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ﴾ অর্থাৎ, আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে (তাঁর ধর্মকে) সাহায্য করে। (সূরা হাজ্জ ৪০ আয়াত) আখেরাতের নিয়ামতের তুলনায় এটাকে আসন্ন বিজয় গণ্য করেছেন। আর এ থেকে মক্কা বিজয় বুঝানো হয়েছে। আর কেউ কেউ প্রতাপশালী পারস্য ও রোমক রাজ্যদ্বয় মুসলিমদের জয়লাভ করাকে এরই বাস্তব চিত্র গণ্য করেছেন; যা খেলাফতে রাশেদার যুগে মুসলিমরা লাভ করেন।
[2] অর্থাৎ, মৃত্যুর পর জান্নাতের এবং দুনিয়াতে বিজয় ও সাহায্যের। তবে শর্ত হল, ঈমানদারদেরকে ঈমানের দাবীসমূহ পূরণ করতে হবে। ﴿وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ﴾ (آل عمران: ১৩৯) পরের আয়াতে মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে দ্বীনের সাহায্যের প্রতি আরো তাকীদ করছেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৭-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰي.... وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَﭜ)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয় যেমন বলে : আল্লাহ তা‘আলা সন্তান গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার স্ত্রী আছে ইত্যাদি; তাদের চেয়ে বড় যালেম আর কেউ নেই। অথচ তাকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করা হয়।
(نُوْرَ اللّٰهِ) আল্লাহ তা‘আলার নূর অর্থ : কুরআন, ইসলাম, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিংবা দলীল প্রমাণাদি। মুখ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়ার অর্থ হল : তাদের সে সব কটুক্তি ও নিন্দনীয় কথাবার্তা যা তাদের মুখ থেকে বের হয় তা দিয়ে তারা ঐ জ্যোতিকে প্রতিহত করতে চায়।
(وَاللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِه)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সারা জাহানে তার প্রসার ঘটাবেন এবং অন্য সমস্ত ধর্মের ওপর তাকে জয়যুক্ত করবেন।
(هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلٰي تِجَارَةٍ)
এখানে আমল (ঈমান ও জিহাদ)-কে বাণিজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এতেও ব্যবসা-বাণিজ্যের মত লাভ রয়েছে। সে লাভের কথা পরের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(إِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰي مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ط يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে তার বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে স্বসস্ত্র যুদ্ধ করে, হত্যা করে ও নিহত হয়।” (সূরা তাওবা ৯ : ১১১)
এটা হল আখেরাতের লাভ। আর দুনিয়াবী লাভ হল আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধক্ষেত্রসহ সর্বত্র সহযোগিতা করবেন এবং বিজয় দান করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ)
“ওহে, যারা ঈমান এনেছে! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদমকে মযবুত করে দেবেন।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭ : ৭)
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার বিজয়সমূহ নিকটতম তাই তাকে (فَتْحٌ قَرِيْبٌ) বলা হয়েছে।
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا....)
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে সর্বাবস্থায় কথায়, কাজে ও জান-মাল দ্বারা তাঁর সাহায্যকারী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করছেন যেমন ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার পথে সাহায্য করেছিল।
حَوَارِيْ শব্দটি حَوَرٌ ধাতু থেকে উৎপত্তি। অর্থ দেওয়ালে চুনকাম করার জন্য ধবধবে সাদা চুন। পারিভাষিক অর্থে ঈসা (আঃ)-এর খাঁটি অনুসারী শীর্ষস্থানীয় ভক্ত ও সাহায্যকারী ব্যক্তিগণকে ‘হাওয়ারী’ বলা হত। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেছেন তাদের সংখ্যা ছিল ১২জন। ঈসা (আঃ)্-এর অনুসারী ও সাহায্যকারীকে, সহচরদেরকে ‘হাওয়ারী’ বলা হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসারী ও সহচরদেরকে ‘সাহাবী’ বলা হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : প্রত্যেক নাবীর একজন বিশেষ সাহায্যকারী (হাওয়ারী) ছিল। আমার বিশেষ সাহায্যকারী হল যুবাইর (রাঃ)। (সহীহ বুখারী হা. ২৮৪৭, সহীহ মুসলিম হা. ২৪১৫)
ইমাম বাগাভী অত্র আয়াতের তাফসীরে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহণের পর খ্রিস্টান জাতি তিন দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল তাকে ‘আল্লাহ তা‘আলা’ বলে। একদল তাকে ‘আল্লাহ তা‘আলার পুত্র’ বলে এবং একদল তাকে ‘আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল’ বলে। প্রত্যেক দলের অনুসারী দল ছিল। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ বাড়তে থাকে। অতঃপর শেষনাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন ঘটে এবং তিনি মু’মিনদের দলকে সমর্থন দেন। ফলে তারাই দলীলের ভিত্তিতে জয়লাভ করে। এ সকল ঈসায়ীগণ সবাই ইসলাম কবূল করে।
(فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ)
অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াতে একদল লোক তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল। আর একদল তাঁর দাওয়াত বর্জন করে কুফরী করল। এটা ছিল সেসব ইয়াহূদী যারা ঈসা (আঃ)-এর মায়ের প্রতি অপবাদ দিয়েছিল।
(فَأَيَّدْنَا الَّذِيْنَ)
অর্থাৎ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-এর ওপর ঈমান আনয়নকারী দলকে অন্যান্য ভ্রষ্ট দলের ওপর শক্তিশালী করেছেন। তাই সঠিক আক্বীদার অধিকারী এ দলটি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপরও ঈমান আনল। আর এভাবে তিনি দলীল-প্রমাণের দিক দিয়েও সমস্ত কাফিরদের ওপর এদেরকে জয়যুক্ত করেছেন। এ জয়ের সর্বশেষ বিকাশ ঘটবে তখন যখন কিয়ামতের পূর্বকালে ঈসা (আঃ) পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন।
মু’মিনরা এভাবেই কিয়ামত অবধি কাফিরদের ওপর বিজয়ী থাকবে তবে শর্ত হল : তাদেরকে সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক ঈমান ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করা সবচেয়ে বড় জুলুম।
২. আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে সারা জাহানে বিজয়ী করবেন, যতই কাফির-মুশরিকরা প্রতিহত করার চেষ্টা করুক।
৩. জিহাদ করার ফযীলত জানলাম।
৪. আখেরাতের বিজয় সবচেয়ে বড় বিজয়।
৫. আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সহযোগিতা করা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য।
৬. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সহযোগিতা করেন।
৭. হকপন্থীরা সবর্দা জয়ী থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১০-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বর্ণিত হাদীস পূর্বে গত হয়েছে যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন আমল আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয়?” তাঁদের এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তা'আলা এই সূরাটি অবতীর্ণ করেন। এতে তিনি বলেনঃ এসো, আমি তোমাদেরকে এমন এক লাভজনক ব্যবসার কথা বলে দিই যাতে ক্ষতির কোনই সম্ভাবনা নেই। এতে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে এবং ভয়ের কোন কারণ থাকবে না। তা হচ্ছে এই যে, তোমরা আল্লাহর একত্বে ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এই ব্যবসা দুনিয়ার ব্যবসা হতে বহুগুণে উত্তম। যদি তোমরা এই ব্যবসায়ে হাত দাও তবে তোমাদের পদস্খলন ও পাপ-অপরাধ আমি ক্ষমা করে দিবো। আর তোমাদেরকে দাখিল করবে এমন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং তোমাদেরকে প্রবিষ্ট করবে স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। বিশ্বাস রেখো যে, মহাসাফল্য এটাই।
আরো জেনে রেখো যে, তোমরা সদা তোমাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে থাকো, এই মুকাবিলার সময় আমি তোমাদেরকে সাহায্য করতে থাকবো এবং তোমাদের ঈপ্সিত বিজয় দান করবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী)
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাগুলো স্থির রাখবেন।” (৪৭:৭) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী)
অর্থাৎ “অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন যে তাঁকে সাহায্য করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাবান, মহাপরাক্রমশালী।” (২২:৪০) দুনিয়ার এই সাহায্য ও বিজয় এবং আখিরাতের ঐ জান্নাত ও নিয়ামত ঐ লোকদের জন্যে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যের কাজে সদা লেগে থাকে এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীনের খিদমত করে। তাই তো তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি আমার পক্ষ হতে মুমিনদেরকে এর সুসংবদি দাও।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।