আল কুরআন


সূরা আত-তূর (আয়াত: 19)

সূরা আত-তূর (আয়াত: 19)



হরকত ছাড়া:

كلوا واشربوا هنيئا بما كنتم تعملون ﴿١٩﴾




হরকত সহ:

کُلُوْا وَ اشْرَبُوْا هَنِیْٓـًٔۢا بِمَا کُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ﴿ۙ۱۹﴾




উচ্চারণ: কুলূওয়াশরাবূহানীআম বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।




আল বায়ান: তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর, তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: (তাদেরকে বলা হবে) খাও আর পান কর খুব মজা করে- তোমরা যে ‘আমাল করতে তার প্রতিফল হিসেবে।




আহসানুল বায়ান: (১৯) তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক। [1]



মুজিবুর রহমান: তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক।



ফযলুর রহমান: (তাদেরকে বলা হবে,) “তোমরা (দুনিয়ায়) যা করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর।”



মুহিউদ্দিন খান: তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর।



জহুরুল হক: তোমরা যা করে থাকতে সেজন্য তৃপ্তির সাথে খাওদাও ও পান করো।



Sahih International: [They will be told], "Eat and drink in satisfaction for what you used to do."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৯. তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক।(১)


তাফসীর:

(১) এখানে “তৃপ্তির সাথে” বা মজা করে কথাটি অত্যন্ত ব্যাপক অৰ্থ বহন করে। মানুষ জান্নাত যে লাভ করবে কোন প্রকার কষ্ট বা পরিশ্রম ছাড়াই তা লাভ করবে। বরং তা হুবহু তার আকাংখা ও মনের পছন্দ মত হবে। যত চাইবে এবং যখনই চাইবে সামনে এনে হাজির করা হবে। সে যা কিছু লাভ করবে তা তার অতীত কাজের প্রতিদান হিসেবে এবং নিজের বিগত দিনের উপার্জনের ফল হিসেবে লাভ করবে। [দেখুন: সাদী]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৯) তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক। [1]


তাফসীর:

[1] অন্যত্র বলেছেন, (كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ) অর্থাৎ, পানাহার কর তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা (সৎকর্ম) করেছিলে তার বিনিময়ে। (সূরা হা-ক্কবাহ ২৪ আয়াত) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর অনুকম্পা লাভের জন্য ঈমানের সাথে সৎকর্মও অত্যাবশ্যক।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১৭-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



জাহান্নামীদের দুর্ভোগের আলোচনা করার পর এখানে জান্নাতীদের শান্তিময় জীবন-যাপনের কথা আলোচনা করা হয়েছে।



যারা ঈমানের সাথে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করত : তাঁর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জন করে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক জীবন-যাপন করবে এবং এ ঈমানের ওপর অটল থেকে মৃত্যু বরণ করবে তারা মৃত্যুর পর নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। তারা সেখানে সকল প্রকার ভোগ্য সামগ্রী উপভোগ করবে, কোন প্রকার শাস্তির মুখোমুখি তাদের হতে হবে না।



مَصْفُوفَةٍ অর্থ সারিবদ্ধ, অর্থাৎ জান্নাতে সারিবদ্ধ খাট বিছানো থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা আনতনয়না হুরদের সাথে জান্নাতীগণকে বিবাহ দিয়ে দেবেন।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. তাক্বওয়ার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল।

২. মুত্তাকীদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের বর্ণনা পেলাম।

৩. ঈমান ও সৎ আমল জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ।

৪. জান্নাতীদের সুখময় জীবন সম্পর্কে জানা গেল।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১৭-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা সৌভাগ্যবানদের পরিণাম বর্ণনা করছেন যে, তারা ঐ সব শাস্তি হতে রক্ষা পাবে যেসব শাস্তি হতভাগ্যদেরকে দেয়া হবে এবং তাদেরকে সুখময় জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হবে। সেখানে তারা উন্নতমানের নিয়ামত ভোগ করতে থাকবে। সেখানে তাদের জন্যে সর্ব প্রকারের ভোগ্যবস্তু, নানা প্রকারের সুখাদ্য, বিভিন্ন প্রকারের সুপেয় পানীয়, উন্নত মানের পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাল ভাল সওয়ারী, সুউচ্চ অট্টালিকা এবং সব রকমের নিয়ামতরাশি প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে তাদের কোন প্রকারের ভয়-ভীতি থাকবে না। মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনি তাদেরকে রক্ষা করবেন জাহান্নামের শাস্তি হতে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাকো। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা পানাহার কর তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে।” (৬৯:২৪)

মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘তারা শ্ৰেণীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।' হযরত হায়সাম ইবনে মালিক তাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “মানুষ বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। চল্লিশ বছর পর্যন্ত সে এভাবে আরামে বসে থাকবে, তার নড়াচড়া বা উঠবার কোনই প্রয়োজন হবে না। যা তার মনে চাইবে এবং যাতে তার চক্ষু ঠাণ্ডা হবে তাই তার কাছে এসে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে যে, জান্নাতে মানুষ সত্তর বছর পর্যন্ত বালিশে হেলান দিয়ে আরামে বসে থাকবে। তার কাছে পরমা সুন্দরী হুরীগণ বিদ্যমান থাকবে। তারা তার মনের চাহিদা মেটাবে। বহু খাদেম তার খিদমতের জন্যে তার চারদিকে ঘোরা ফেরা করবে। অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে সে ডুবে থাকবে। সত্তর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর যখন সে অন্য দিকে ঘুরবে তখন সে সম্পূর্ণ নতুন দৃশ্য দেখতে পাবে। সে এমন হ্রদেরকে দেখতে পাবে যাদেরকে পূর্বে কখনো দেখেনি। তারা তাকে বলবেঃ “আমরা আপনার প্রতি বড়ই কৃতজ্ঞ যে, আপনার দৃষ্টি আমাদের দিকে পড়েছে।” মোটকথা, এভাবে মন মাতানো ও প্রাণ ভুলানো নিয়ামতরাশির মধ্যে তারা নিমগ্ন থাকবে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের একের মুখ অপরের মুখের দিকে থাকবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা মুখখামুখি হয়ে আসনে আসীন হবে।” (৩৭:৪৪)।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের মিলন ঘটাবো আয়ত-লোচনা হুরের সঙ্গে। অর্থাৎ আমি তাদের জন্যে রাখবো উত্তম সঙ্গিনী ও সুন্দরী স্ত্রী, যারা হবে আয়ত-লোচনা হুরদের মধ্য হতে। আর মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ আমি আয়ত-লোচনা হুরদের সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে দিবো। এদের গুণাবলী সম্বলিত হাদীসগুলো কয়েক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ওগুলোর পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।