আল কুরআন


সূরা কাফ (আয়াত: 13)

সূরা কাফ (আয়াত: 13)



হরকত ছাড়া:

وعاد وفرعون وإخوان لوط ﴿١٣﴾




হরকত সহ:

وَ عَادٌ وَّ فِرْعَوْنُ وَ اِخْوَانُ لُوْطٍ ﴿ۙ۱۳﴾




উচ্চারণ: ওয়া ‘আ-দুওঁ ওয়া ফির ‘আউনুওয়া ইখওয়া-নুলূত।




আল বায়ান: ‘আদ, ফির‘আউন ও লূত সম্প্রদায়।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. আর আদ, ফিরআউন ও লুত সম্প্রদায়।




তাইসীরুল ক্বুরআন: ‘আদ, ফেরাউন ও লূত জাতি,




আহসানুল বায়ান: (১৩) আ’দ, ফিরআউন ও লূত সম্প্রদায়,



মুজিবুর রহমান: আদ, ফির‘আউন ও লূত সম্প্রদায়।



ফযলুর রহমান: আদ জাতি, ফেরাউন, লূতের ভাইয়েরা (সমপ্রদায়),



মুহিউদ্দিন খান: আদ, ফেরাউন, ও লূতের সম্প্রদায়,



জহুরুল হক: আর 'আদ ও ফিরআউন ও লূত-এর ভাই-বন্ধুরা,



Sahih International: And 'Aad and Pharaoh and the brothers of Lot



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৩. আর আদ, ফিরআউন ও লুত সম্প্রদায়।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৩) আ”দ, ফিরআউন ও লূত সম্প্রদায়,


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১২-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



এখানে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী কয়েকটি জাতির কথা তুলে ধরছেন যারা তাদের নিকট প্রেরিত রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, ফলে তাদের ওপর শাস্তি নেমে এসেছিল। যেমন-



নূহ (রহঃ)-এর জাতির কাছে তাঁকে, সামুদ জাতির কাছে সালেহ (রহঃ)-কে, আ‘দ জাতির কাছে হূদ (রহঃ)-কে, লূত (রহঃ)-এর জাতির কাছে লূত (রহঃ)-কে, “আসহাবে আইকাহ” বা জঙ্গলের অধিবাসীদের কাছে শু‘আইব (রহঃ)-কে এবং তুব্বা সম্প্রদায়ের কাছে নাবী প্রেরণ করেছেন। তারা তাদের কাছে আগত নাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আইকাহ বলা হয় জঙ্গলকে, এটা বলার কারণ হল, এ অবাধ্য জাতি প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সেখানেই ধ্বংস করে দেন। এটাও বলা হয় যে, উক্ত জঙ্গলে ‘আইকাহ’ বলে একটা গাছকে তারা পূজো করত।



এ সম্পর্কে বিস্তারিত সূরা আ‘রাফের ৮৫-৯৩ ও হূদের ৮৪-৯৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।



রাস্ জাতি বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে বেশ কয়েকটি মত পাওয়া যায় তবে ইমাম ইবনু জারীর প্রাধান্য দিয়ে বলেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য “আসহাবুল উখদূদ”। এদের সম্পর্কে সূরা আল বুরূজ-এ আলোচনা আসবে ইনশা-আল্লাহ তা‘আলা।



কুরআনে দুজায়গায় তুব্বার উল্লেখ রয়েছে- এখানে এবং সূরা দুখানে। কিন্তু উভয় জায়গায় কেবল নামই উল্লেখ করা হয়েছে- বিস্তারিত কোন ঘটনা বিবৃত হয়নি। তাই এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণ দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। মূলত তুব্বা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়, বরং এটা ইয়ামানের হিমইয়ারী সম্রাটের উপাধি বিশেষ। যেমন পারস্যের বাদশাকে কিসরা, রোমের বাদশাদেরকে কায়সার, মিশরের বাদশাদেরকে ফির‘আউন এবং হাবশা অর্থাৎ ইথিওপিয়ার রাজাদেরকে নাজ্জাসী বলা হত। তারা দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়ামানের পশ্চিমাংশকে রাজধানী বানিয়ে আরব, শাম, ইরাক আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করেছিল।



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তোমরা তুব্বাকে গালি দিও না। কারণ তিনি মু’মিন ছিলেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা. ২৪৩৩) এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, তুব্বা কোন ব্যক্তির নাম যিনি মু’মিন ছিলেন। মোটকথা তারা কালক্রমে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হয়ে যায়, মূর্তিপূজা ও অগ্নিপূজা শুরু করে ফলে আল্লাহ তা‘আলা আযাব দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।



(فَحَقَّ وَعِيدِ) অর্থাৎ তারা নাবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে তাদের ওপর শাস্তি আপতিত হয়েছিল।



এর মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা ও মক্কাবাসীসহ সারা পৃথিবীর কাফিরদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, যারাই ইতোপূর্বে নাবীদের অবাধ্য হয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে তাই তোমরাও যদি নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এমন আচরণ কর তাহলে তোমাদের পরিণতি তাই হবে যা হয়েছিল তাদের।



(أَفَعَيِينَا بِالْخَلْقِ الْأَوَّلِ)



অর্থাৎ প্রথমবার সৃষ্টি করা যখন আমার জন্য কোন ব্যাপার ছিল না, তখন দ্বিতীয়বার জীবিত করা তো প্রথমবারের তুলনায় আমার জন্য আরো সহজ। মহান আল্লাহ বলেন :



(وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُه۫ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ ط وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلٰي فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ج وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)



“তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তা পুনরাবৃত্তি করবেন এটা তার জন্য খুবই সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী মহাবিজ্ঞ।” (সূরা রূম ৩০ :২৭)



হাদীসে কুদ্সীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন : আদম সন্তান আমাকে এই বলে কষ্ট দেয় যে, আমি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম না যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছি। অথচ প্রথমবার সৃষ্টি করা দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার চেয়ে বেশি সহজ নয়। (সহীহ বুখারী, সূরা আল ইখলাস-এর তাফসীর)



সুতরাং রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে পূর্বের জাতিরা যে শাস্তি ভোগ করেছে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যেন আমাদের দ্বারা এমন আচরণ প্রকাশ না পায়।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা প্রদান ও কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

২. পূর্ববর্তী নাবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী জাতিদের কয়েকটির বর্ণনা পেলাম।

৩. নাবীদের বর্জন করার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণতি কী হয়েছিল তা জানলাম।

৪. পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১২-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা মক্কাবাসীকে ঐ শাস্তি হতে সতর্ক করছেন যা তাদের পূর্বে তাদের মত মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের উপর আপতিত হয়েছিল। যেমন হযরত নূহ (আঃ)-এর কওম, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং আসহাবুর রাস্স, যাদের পূর্ণ ঘটনা সূরায়ে ফুরকানের তাফসীরে গত হয়েছে। আর সামূদ, আ’দ, ফিরাউন এবং হযরত লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়, যাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ঐ যমীনকে আল্লাহ সড়া-পচা পাঁকে পরিণত করেছেন। এসব ছিল তাদের কুফরী, ঔদ্ধত্য এবং সত্যের বিরুদ্ধাচরণেরই ফল। আসহাবে আয়কাত দ্বারা হযরত শু’আয়েব (আঃ)-এর কওমকে এবং কাওমু তুব্বা দ্বারা ইয়ামনীদেরকে বুঝানো হয়েছে। সূরায়ে দুখানে তাদের ঘটনাও গত হয়েছে এবং সেখানে এর পূর্ণ তাফসীর করা হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই। অতএব সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই প্রাপ্য। এসব উম্মত তাদের রাসূলদেরকে (আঃ) অবিশ্বাস করেছিল। তাই তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, একজন রাসূলকে (আঃ) অস্বীকারকারী যেন সমস্ত রাসূলকেই অস্বীকারকারী। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হযরত নূহ (আঃ)-এর কওম রাসূলদেরকে অস্বীকার করে ।” (২৬:১০৫)

অথচ তাদের নিকট তো শুধু হযরত নূহই (আঃ) আগমন করেছিলেন। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে তারা এমনই ছিল যে, যদি তাদের নিকট সমস্ত রাসূলও আসতেন তবুও তারা সকলকেই অবিশ্বাস করতো, একজনকেও বিশ্বাস করতো না। তাদের কৃতকর্মের ফল হিসেবে তাদের উপর আল্লাহ তা'আলার শাস্তির ওয়াদা পূর্ণ হয়েছে। অতএব মক্কাবাসী এবং অন্যান্য সম্বোধনকৃত লোকদেরও এই বদভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত। নচেৎ হয়তো ঐরূপ শাস্তি তাদের উপরও আপতিত হবে।

এরপর প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে, পুনঃসৃষ্টি বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করবে? প্রথমবার সৃষ্টি করা হতে তো দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা খুব সহজই হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রথমবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং পুনর্বার সৃষ্টিও তিনিই করবেন এবং এটা তার কাছে খুবই সহজ।” (৩০:২৭) মহামহিমানিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়; বলে- অস্তিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন ওটা পচে গলে যাবে? বলঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করছেন। এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (৩৬:৭৮-৭৯)

সহীহ হাদীসে আছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আদম-সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। সে বলে- আল্লাহ আমাকে পুনর্বার কখনই সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি দ্বিতীয়বারের সৃষ্টি হতে আমার কাছে মোটেই সহজ নয়।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।