আল কুরআন


সূরা আল-ফাতহ (আয়াত: 12)

সূরা আল-ফাতহ (আয়াত: 12)



হরকত ছাড়া:

بل ظننتم أن لن ينقلب الرسول والمؤمنون إلى أهليهم أبدا وزين ذلك في قلوبكم وظننتم ظن السوء وكنتم قوما بورا ﴿١٢﴾




হরকত সহ:

بَلْ ظَنَنْتُمْ اَنْ لَّنْ یَّنْقَلِبَ الرَّسُوْلُ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ اِلٰۤی اَهْلِیْهِمْ اَبَدًا وَّ زُیِّنَ ذٰلِکَ فِیْ قُلُوْبِکُمْ وَ ظَنَنْتُمْ ظَنَّ السَّوْءِ ۚۖ وَ کُنْتُمْ قَوْمًۢا بُوْرًا ﴿۱۲﴾




উচ্চারণ: বাল জানানতুম আল্লাইঁ ইয়ানকালিবার রাছূলুওয়ালমু’মিনূনা ইলাআহলীহিম আবাদাওঁ ওয়া যুইঁনিয়া যা-লিকা ফী কুলূবিকুম ওয়া জানানতুন জান্নাছছাওই ওয়া কুনতুম কাওমাম বূরা-।




আল বায়ান: বরং তোমরা মনে করেছিলে রাসূল ও মুমিনরা তাদের পরিবারের কাছে কখনো ফিরে আসবে না; আর এটি তোমাদের অন্তরে শোভিত করে দেয়া হয়েছিল; আর তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে এবং তোমরা ছিলে ধংসোম্মুখ কওম ।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মুমিনগণ তাদের পরিবার পরিজনের কাছে কখনই ফিরে আসবে না এবং এ ধারণা তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল; আর তোমরা খুব মন্দ ধারণা করেছিলে এবং তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়!(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রসূল ও মু’মিনগণ কক্ষনো তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবে না, আর এ খেয়ালটা তোমাদের মনে খুবই চমৎকার ক’রে দেয়া হয়েছিল। তোমরা ধারণা করেছিলে বড়ই কু-ধারণা, আসলে তোমরা হলে ধ্বংসের যোগ্য একটা সম্প্রদায়।




আহসানুল বায়ান: (১২) বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রসূল ও বিশ্বাসীগণ তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট কখনই ফিরে আসতে পারবে না এবং এ ধারণা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত হয়েছিল; আর তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে।[1] তোমরা তো ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।’ [2]



মুজিবুর রহমান: না, তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মু’মিনগণ তাদের পরিবার পরিজনের নিকট কখনই ফিরে আসতে পারবেনা এবং এই ধারণা তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল; তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে, তোমরাতো ধ্বংসম্মুখ এক সম্প্রদায়।



ফযলুর রহমান: “বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রসূল ও (তার সহযোগী) মুমিনরা (রণাঙ্গন থেকে বেঁচে) কখনো তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবে না, এবং এই ধারণা তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল। তোমরা খুব খারাপ ধারণা পোষণ করেছিলে। তোমরা হচ্ছ এক ধ্বংসমুখী সমপ্রদায়।”



মুহিউদ্দিন খান: বরং তোমরা ধারণ করেছিলে যে, রসূল ও মুমিনগণ তাদের বাড়ী-ঘরে কিছুতেই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের জন্যে খুবই সুখকর ছিল। তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।



জহুরুল হক: না, তোমরা ভেবেছিলে যে রসূল ও মুমিনগণ আর কখনো তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে আসতে পারবে না, আর এইটি তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল, আর তোমরা ভ্রান্তধারণা ধারণা করেছিল, আর তোমরা তো ছিলে এক ধ্বংসমুখী জাতি।



Sahih International: But you thought that the Messenger and the believers would never return to their families, ever, and that was made pleasing in your hearts. And you assumed an assumption of evil and became a people ruined."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১২. বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মুমিনগণ তাদের পরিবার পরিজনের কাছে কখনই ফিরে আসবে না এবং এ ধারণা তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল; আর তোমরা খুব মন্দ ধারণা করেছিলে এবং তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়!(১)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ তোমরা এ ধরনের খারাপ ধারণার কারণে আল্লাহর কাছে ধ্বংসের উপযুক্ত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছিলে। [জালালাইন] সুতরাং তোমাদের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। [মুয়াস্‌সার]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১২) বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রসূল ও বিশ্বাসীগণ তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট কখনই ফিরে আসতে পারবে না এবং এ ধারণা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত হয়েছিল; আর তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে।[1] তোমরা তো ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।” [2]


তাফসীর:

[1] আর তা এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাঁর রসূলকে সাহায্য করবেন না। এটা সেই পূর্বের ধারণাই। কেবল তাকীদের জন্য পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

[2] بُوْرٌ হল بَآئِرٌ এর বহুবচন। অর্থঃ ধ্বংসমুখী। অর্থাৎ, এরা হল সেই লোক, যাদের অদৃষ্টে ধ্বংস নির্ধারিত হয়ে আছে। দুনিয়াতে তারা আল্লাহর আযাব থেকে বেঁচে গেলেও, আখেরাতে কিন্তু বাঁচতে পারবে না। সেখানে তাদেরকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



ষষ্ঠ হিজরীতে যখন স্বপ্নযোগে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন যে, তিনি উমরা করার জন্য মক্কায় যাচ্ছেন তখন সকল সাহাবীদের মাঝে সাধারণ ঘোষণা দিলেন প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। সাহাবীরা প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু মদীনার চতুর্দিকে বসবাসকারী কয়েকটি গোত্র প্রস্তুতি নেয়নি।



যমন গিফার, মুযাইনা, জাহাইনা, আসলাম এবং দুআল গোত্রসমূহ। প্রস্তুতি না নেয়ার কারণ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে- তারা সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের মোহে যেতে পারেনি।



‎আল্লাহ তা‘আলা‎ বলেন : তারা যেসব ওজর পেশ করে তা কেবল তাদের মুখের কথা, অন্তর থেকে বলছে না, মূলত এরা মুনাফিক। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল মুসলিমরা মক্কার মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করে পারবে না, সেখানে তাদের মৃত্যু অনিবার্য। তাই মৃত্যুর ভয়ে তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করেনি। তাই আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদেরকে বলে দিতে নির্দেশ দিলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করতে চান তাহলে তোমাদের পক্ষে কে তাঁর ফায়সালাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখে? অর্থাৎ কারও কিছু করার নেই।



(وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهِ)



‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে না’ অর্থাৎ যারা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল আমলসমূহে ইখলাস রাখে না বরং মুনাফিকী পন্থা অবলম্বন করে ‎আল্লাহ তা‘আলা‎ তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি দিবেন।



অতএব কখনো একজন প্রকৃত মু’মিনকে সন্তান ও সম্পদের মোহ আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ পালনে বিরত রাখতে পারে না। বরং সব কিছুর ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



“বল : ‎ ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পতœী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর‎ এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর‎ আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত’ আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎ পথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা তাওবা ৯ : ২৪)



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে যে-সকল মুনাফিক গোত্র শরীক হয়নি তাদের পরিচয় জানলাম।

২. ‎আল্লাহ তা‘আলা‎র ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা হারাম।

৩. মুনাফিকদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

৪. যারা কল্যাণমূলক কাজে পেছনে পড়ে থাকে তাদের তিরস্কার করা হয়েছে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

যেসব আরব বেদুঈন জিহাদ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছিল এবং মৃত্যুর ভয়ে বাড়ী হতে বের হয়নি, আর মনে করে নিয়েছিল যে, এতো বড় কুফরী শক্তির সামনে তারা কখনো টিকতে পারবে না এবং যারা তাদের সঙ্গে লড়বে তাদের ধ্বংস অনিবার্য, তারা আর কখনো তাদের ছেলে মেয়েদের মুখ দেখতে পাবে না, যুদ্ধক্ষেত্রেই তারা সবাই নিহত হয়ে যাবে, কিন্তু যখন তারা দেখলো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গ (রাঃ) সহ আনন্দিত অবস্থায় ফিরে আসলেন তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে মিথ্যা ওযর পেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে পূর্বেই অবহিত করেন যে, এই মন্দ অন্তর বিশিষ্ট লোকেরা তাঁর কাছে। এসে মুখে অন্তরের বিপরীত কথা বলবে এবং মিথ্যা ওযর পেশ করবে। তারা বলবেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে, অতএব তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাদের এ কথার জবাবে বলেনঃ “তারা মুখে যা বলে তা তাদের অন্তরে নেই। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও- যদি আল্লাহ তোমাদের কারো কোন ক্ষতি কিংবা মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন তবে কে তাঁকে নিবৃত্ত করতে পারে? তোমরা জেনে রেখো যে, তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত।” অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মুনাফিক বা কপটদের কপটতা সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন থাকে না। তিনি ভালরূপেই জানেন যে, মুনাফিকদের যুদ্ধ হতে পিছনে সরে থাকা কোন ওযরের কারণে ছিল না, বরং প্রকৃত কারণ ছিল তাদের অবাধ্যতা এবং কপটতা। তাদের অন্তর সম্পূর্ণরূপে ঈমান শূন্য। তারা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল নয় এবং রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যে যে কল্যাণ রয়েছে এ বিশ্বাস তাদের নেই। তারা নিজেদের প্রাণ ভয়ে ভীত। তারা নিজেরা যুদ্ধে মারা যাবে এ ভয়তো তাদের ছিলই, এমন কি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীদের (রাঃ) সম্পর্কেও তাদের ধারণা ছিল যে, তাঁরা সবাই নিহত হয়ে যাবেন, একজনও রক্ষা পাবেন না যিনি তাঁদের সংবাদ আনয়ন করতে পারেন। এই ধারণা তাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল। তাই, আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্পর্কে বলেনঃ “তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে, তোমরা তো ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।”

এরপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “যারা আল্লাহ ও র সূল (সঃ)-এর প্রতি ঈমান আনে না, আমি ঐ সব কাফিরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।”

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় আধিপত্য, শাসন ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। যে কেউ তার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তাঁর রহমতের দরযায় করাঘাত করে, তিনি তার জন্যে তাঁর রহমতের দরযা খুলে দেন। তার পাপ যত বেশীই হোক না কেন, যখন সে তাওবা করে তখন করুণাময় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে নেন। এবং তাকে ক্ষমা করে থাকেন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।