সূরা আল-জাসিয়া (আয়াত: 13)
হরকত ছাড়া:
وسخر لكم ما في السماوات وما في الأرض جميعا منه إن في ذلك لآيات لقوم يتفكرون ﴿١٣﴾
হরকত সহ:
وَ سَخَّرَ لَکُمْ مَّا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا مِّنْهُ ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَکَّرُوْنَ ﴿۱۳﴾
উচ্চারণ: ওয়া ছাখখারা লাকুম মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদিজামী‘আম মিনহু ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিলিলকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।
আল বায়ান: আর যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, তার সবই তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। চিন্তাশীল কওমের জন্য নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও যমীনের সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শনাবলী রয়েছে, এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন যা আছে আকাশে আর যা আছে যমীনে সেগুলোর সব কিছুকে। এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন আছে।
আহসানুল বায়ান: (১৩) তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজের পক্ষ হতে,[1] চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে বহু নিদর্শন।
মুজিবুর রহমান: তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু নিজ অনুগ্রহে। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।
ফযলুর রহমান: আসমানে ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তিনি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
মুহিউদ্দিন খান: এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
জহুরুল হক: আর তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন মহাকাশমন্ডলীতে যা-কিছু আছে আর যা-কিছু রয়েছে পৃথিবীতে, -- এ সমস্ত তাঁর কাছ থেকে। নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।
Sahih International: And He has subjected to you whatever is in the heavens and whatever is on the earth - all from Him. Indeed in that are signs for a people who give thought.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১৩. আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও যমীনের সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শনাবলী রয়েছে, এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১৩) তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজের পক্ষ হতে,[1] চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে বহু নিদর্শন।
তাফসীর:
[1] ‘অধীন’ করার অর্থ হল, সেগুলোকে তোমাদের সেবায় নিযুক্ত করে রেখেছেন। তোমাদের জন্য যাবতীয় মঙ্গল ও উপকারিতা এবং তোমাদের জীবন ও জীবিকা সব কিছুই এরই সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, চাঁদ-সূর্য, উজ্জ্বল তারকারাজি, মেঘ-বৃষ্টি এবং হাওয়া ইত্যাদি। আর ‘নিজের পক্ষ হতে’ মানে স্বীয় বিশেষ রহমতে ও অনুগ্রহে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১২-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এখানেও আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি তার দেওয়া কিছু নিয়ামতের বর্ণনা করেছেন। তিনি সমুদ্রকে মানুষের কল্যাণার্থে নিয়োজিত করেছেন এবং পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিসও মানুষের কল্যাণার্থে নিয়োজিত রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا بِکُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللہِ ثُمَّ اِذَا مَسَّکُمُ الضُّرُّ فَاِلَیْھِ تَجْئَرُوْنَ)
“তোমাদের নিকট যে সমস্ত নেয়ামত রয়েছে তা আল্লাহরই পক্ষ হতে; আবার যখন দুঃখ-কষ্ট তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর।” (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৫৩)
এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা নাহ্লসহ আরো অন্যান্য স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর মু’মিনদেরকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন তাদের শত্র“দেরকে ক্ষমা করে দেয়। এ বিধান ইসলামের প্রথম যুগের। পরবর্তীতে যখন মুসলিমরা শক্তিশালী হয়ে উঠল তখন আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন শত্র“দের বিরুদ্ধে জিহাদ করে।
সুতরাং সামর্থ্য না থাকলে কাফিরদের ওপর চড়াও হওয়া যাবে না, বরং ধৈর্য ধারণ করাটাই উত্তম। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আর যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি সৎ আমল করবে তার ফল সে নিজেই ভোগ করবে, অন্য কেউ তা ভোগ করার সুযোগ পাবে না। পক্ষান্তরে যে মন্দ কাজ করবে তার পরিণতিও সে নিজেই ভোগ করবে, অন্য কেউ তার থেকে তার মন্দ বোঝা হালকা করে দেবে না।
অর্থাৎ যার যার কৃতকর্মের প্রতিদান তার নিজেকেই ভোগ করতে হবে, কেউ এ ব্যাপারে ভাগী হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( إِنْ أَحْسَنْتُمْ أَحْسَنْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ قف وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا)
“তোমরা সৎ কর্ম করলে সৎ কর্ম নিজেদের জন্য করবে এবং মন্দ কর্ম করলে তাও করবে নিজেদের জন্য।” (সূরা বানী ইসরা-ঈল ১৭ : ৭)
সুতরাং যে সকল ব্যক্তি তাদের অনুসারী বা মুরীদদের অপরাধের বোঝা বহন করার আশ্বাস প্রদান করে তাদের প্রদত্ত আশ্বাস অনর্থক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ج وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰي)
“প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো (পাপের) ভার গ্রহণ করবে না।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৬৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. পৃথিবীর সকল জিনিস মানুষের কল্যাণার্থে সৃষ্টি হয়েছে।
২. বিপদে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
৩. বাতিলকে প্রতিহত করার ক্ষমতা থাকলে তা প্রতিহত করতে হবে।
৪. প্রত্যেকে নিজের কৃতকর্মের ফলাফল নিজেই ভোগ করবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১২-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাঁরই হুকুমে মানুষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী সমুদ্রে সফর করে থাকে। মালভর্তি বড় বড় নৌযানগুলো নিয়ে তারা এদিক হতে ওদিক ভ্রমণ করে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে আয়-উপার্জন করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা এই ব্যবস্থা এ জন্যেই রেখেছেন যে, যেন তারা তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আকাশের জিনিস যেমন সূর্য, চন্দ্র, তারাকারাজি এবং পৃথিবীর জিনিস যেমন পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী এবং মানুষের উপকারের অসংখ্য জিনিস তাদের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন। এগুলোর সবই তাঁর অনুগ্রহ, ইহসান, ইনআম এবং দান। সবই তাঁর নিকট হতে এসেছে। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের নিকট যেসব নিয়ামত রয়েছে সবই আল্লাহ প্রদত্ত, অতঃপর যখন তোমাদেরকে কষ্ট ও বিপদ স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁরই কাছে অনুনয় বিনয় করে থাকো।”(১৬:৫৩)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সব জিনিসই আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এসেছে এবং তাতে যে নাম রয়েছে তা তাঁরই নামসমূহের মধ্যে নাম। সুতরাং এগুলোর সবই তাঁরই পক্ষ হতে আগত। কেউ এমন নেই যে তার নিকট হতে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারে বা তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে পারে। সবাই এ বিশ্বাস রাখে যে, তিনি এরূপই।
একটি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “মাখলুককে কি জিনিস দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “আলো, আগুন, অন্ধকার এবং মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” অতঃপর তিনি লোকটিকে বলেনঃ “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে দেখা হলে তাকেও জিজ্ঞেস করে নিয়ো। লোকটি সেখান হতে ফিরে গিয়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো। তিনিও ঐ উত্তরই দিলেন এবং লোকটিকে বললেনঃ “তুমি আবার হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট ফিরে যাও এবং জিজ্ঞেস কর যে এ সবগুলো কি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে?” লোকটি পুনরায় হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে ওটা জিজ্ঞেস করলো। তখন তিনি (আরবী) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা গারীব আসার, এমনকি অস্বীকার্যও বটে)
মহান আল্লাহ বলেনঃ চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে বহু নিদর্শন রয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, মুমিনদেরকে ধৈর্যধারণের অভ্যাস রাখতে হবে। যারা কিয়ামতকে বিশ্বাস করে না তাদের মুখ হতে তাদেরকে বহু কষ্টদায়ক কথা শুনতে হবে এবং মুশরিক ও আহলে কিতাবের দেয়া বহু কষ্ট সহ্য করতে হবে।
এই হুকুম ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে জিহাদ এবং নির্বাসনের হুকুম নাযিল হয়।
আল্লাহ পাকের ‘যারা আল্লাহর দিবসগুলোর প্রত্যাশা করে না' এই উক্তির ভাবার্থ হলোঃ যারা আল্লাহর নিয়ামত লাভ করার চেষ্টা করে না। তাদের ব্যাপারে মুমিনদেরকে বলা হচ্ছেঃ তোমরা পার্থিব জীবনে তাদের অপরাধকে ক্ষমার চক্ষে দেখো। তাদের আমলের শাস্তি স্বয়ং আল্লাহ তাআলা প্রদান করবেন। এ জন্যেই এর পরেই বলেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। সেই দিন প্রত্যেককে তার ভাল ও মন্দের প্রতিফল দেয়া হবে। সকর্মশীলকে পুরস্কার এবং পাপীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।