সূরা আয-যুখরুফ (আয়াত: 4)
হরকত ছাড়া:
وإنه في أم الكتاب لدينا لعلي حكيم ﴿٤﴾
হরকত সহ:
وَ اِنَّهٗ فِیْۤ اُمِّ الْکِتٰبِ لَدَیْنَا لَعَلِیٌّ حَکِیْمٌ ؕ﴿۴﴾
উচ্চারণ: ওয়া ইন্নাহূফীউম্মিল কিতা-বি লাদাইনা-লা‘আলিইয়ুন হাকীম।
আল বায়ান: আর নিশ্চয় তা আমার কাছে উম্মুল কিতাবে সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, প্রজ্ঞাপূর্ণ।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪. আর নিশ্চয় তা আমাদের কাছে উম্মুল কিতাবে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, হিকমতপূর্ণ।
তাইসীরুল ক্বুরআন: আমার কাছে তা উম্মুল কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) সংরক্ষিত আছে, আর তা হল অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানে পূর্ণ।
আহসানুল বায়ান: (৪) নিশ্চয় এ আমার নিকট মূল গ্রন্থে (লাওহে মাহফূযে সুরক্ষিত) মহান, প্রজ্ঞাময়।[1]
মুজিবুর রহমান: এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে; এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ।
ফযলুর রহমান: আর এই কোরআন তো আমার কাছে মূল গ্রন্থে (লওহে মাহ্ফূযে) সংরক্ষিত আছে। নিশ্চয়ই তা সুমহান, প্রজ্ঞাপূর্ণ।
মুহিউদ্দিন খান: নিশ্চয় এ কোরআন আমার কাছে সমুন্নত অটল রয়েছে লওহে মাহফুযে।
জহুরুল হক: আর নিঃসন্দেহ এটি রয়েছে আমাদের কাছে আদিগ্রন্থে, মহোচ্চ, জ্ঞানসমৃদ্ধ।
Sahih International: And indeed it is, in the Mother of the Book with Us, exalted and full of wisdom.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৪. আর নিশ্চয় তা আমাদের কাছে উম্মুল কিতাবে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, হিকমতপূর্ণ।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৪) নিশ্চয় এ আমার নিকট মূল গ্রন্থে (লাওহে মাহফূযে সুরক্ষিত) মহান, প্রজ্ঞাময়।[1]
তাফসীর:
[1] এখানে কুরআন কারীমের সেই মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে, যা ঊর্ধ্ব জগতে (মহান আল্লাহর) নিকট রয়েছে। যাতে নিম্ন জগদ্বাসীরাও এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রতি খেয়াল রেখে প্রকৃতার্থে যেন তার প্রতি গুরুত্ব দেয় এবং তা থেকে হিদায়াতের সেই উদ্দেশ্য সাধন করে, যার জন্য তাকে দুনিয়াতে অবতীর্ণ করা হয়েছে। أُمُّ الْكِتَابِ বলতে ‘লাওহে মাহফূয’কে বুঝানো হয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: নামকরণ :
الزخرف (যুখরুফ) শব্দের অর্থ চাকচিক্য, কারুকার্য, স্বর্ণ ইত্যাদি। সূরার ৩৫ নম্বর আয়াতে زخرف শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ, তবে মুকাতিল (রহঃ) বলেন :
(وَسْئَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُّسُلِنَآ)
আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ।
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। সূরাতে প্রত্যেক জাতির কাছে আগত নাবী-রাসূলদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, মক্কার মুশরিকদের আল্লাহর রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করা, মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত অসংখ্য নেয়ামত প্রদান করা, অধিংকাশ মানুষ পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়ে সত্যবিমুখ হওয়া, শির্ক ও মুশরিকদের সাথে আপোষহীন নাবী ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর কথা পরবর্তীদের জন্য শিক্ষাস্বরূপ বহাল রাখা, প্রত্যেকের উপযুক্ত রিযিক বন্টন করে দেয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১-৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
حٰمٓ (হা-মীম) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা আল বাকারার শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সঠিক উদ্দেশ্য/অর্থ একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।
আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্ট কিতাবের অর্থাৎ- কুরআনের শপথ করে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি এ কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে করে মানুষের বুঝতে সহজ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ )
“কুরআনকে আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?” (সূরা কামার ৫৪ : ১৭) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ)
“এ কুরআন আরবি ভাষায়, এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই, যাতে তারা সাবধানতা অবলম্বন করে।” (সূরা যুমার ৩৯ : ২৮)
আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করার হেকমত আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলে দিচ্ছেন যে, যাতে তোমরা এ কুরআন বুঝতে পার। আরবি এমন একটি ভাষা যা সকলের বোধগম্য এবং তা অল্প কথায় অনেক কিছু বুঝায় যা অন্যান্য ভাষায় এ বৈশিষ্ট্য নেই। তাছাড়া আরো দুটো কারণ হতে পারে। যেমন-
১. যেহেতু তা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম ভাষা এবং সহজ ভাষা।
২. প্রাথমিক পর্যায়ে সম্বোধন আরবদেরকেই করা হয়েছে। তাই তাদের ভাষাতেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যাতে তারা সহজেই বুঝতে ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
(أُمِّ الْكِتٰبِ) দ্বারা এখানে লাওহে মাহফূযকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- এ কুরআন লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত রয়েছে, যা সুউচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন এবং তাতে কোন মতবিরোধ ও বৈপরিত্য নেই।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : কোন জাতি অন্যায় কাজে লিপ্ত হলেই তাদের অন্যায় কাজের কারণে তাদের থেকে উপদেশবাণী প্রত্যাহার করে নেন না। বরং তাদের কাছে নাবী-রাসূল, কিতাব প্রেরণ করতে থাকেন। যাতে তারা কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে না পারে।
এর দ্বারা বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্য হতে পারে।
১. তোমরা যেহেতু পাপসমূহে একেবারে মেতে আছ এবং অব্যাহতভাবে তা করেই যাচ্ছ বলে কি তোমরা ভেবে নিয়েছ যে, আমি তোমাদেরকে ওয়ায-নসীহত করা ছেড়ে দেব?
২. অথবা তোমাদের কুফরী ও সীমাতিক্রম করার জন্য আমি তোমাদেরকে কিছুই বলব না এবং আমি তোমাদেরকে এমনিই ছেড়ে দেব?
৩. অথবা আমি তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেব এবং তোমাদেরকে না কোন বিষয়ের নির্দেশ দেব, আর না কোন কর্ম থেকে নিষেধ করব।
৪. অথবা, এমনটিও হতে পারে যে, তোমরা যেহেতু কুরআনের ওপর ঈমান আনছ না। তাই আমি কুরআন অবতীর্ণ করার ধারাই বন্ধ করে দেব। এটা আল্লাহ তা‘আলার অশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি কল্যাণ যিক্র-এর প্রতি দা‘ওয়াত দেয়ার ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেননি, যদিও তারা বিমুখ হওয়া এবং অস্বীকার করার ব্যাপারে সীমাতিক্রম করছিল।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা প্রদান করছেন যে, মক্কার কুরাইশরা সত্যের দা‘ওয়াত থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেয়া নতুন কোন বিষয় নয়, বরং ইতোপূর্বে যত নাবী-রাসূল এসেছেন তাদের সাথে জাতির অধিকাংশ লোকেরাই হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে এমনকি তাঁদেরকে হত্যাও করেছে। তাদের এ সকল বাড়াবাড়ি করার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল মক্কার কুরাইশদের তুলনায় অধিক শক্তিশালী।
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(يَا حَسْرَةً عَلَي الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا كَانُوْا بِه۪ يَسْتَهْزِئُوْنَ أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُوْنَ )
“আফসোস বান্দাদের জন্য! তাদের কাছে কখনও এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের পূর্বে বহু মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি, যারা তাদের দিকে আবার ফিরে আসবে না?” (সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ৩০)
এটা মূলত মক্কার কুরাইশদের জন্য ধমকস্বরূপ বলা হয়েছে যে, পূর্বের জাতিরা এত শক্তিশালী থাকার পরও যেহেতু নিজেদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারেনি, তারাও যদি এরূপ ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাহলে তাদের ন্যায় এরাও ধ্বংস হয়ে যাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে সহজেই মানুষ বুঝতে পারে।
২. কোন সম্প্রদায়ের অন্যায়ের কারণে আল্লাহ তা‘আলা সেখানে সতর্ককারী পাঠানো বন্ধ করে দেন না বরং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদেরকে সতর্ক করেই যান।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে কোন শক্তিশালীর শক্তিই কোন উপকারে আসবে না। যত শক্তিশালীই হোক না কেন যদি অপরাধ করে তাহলে তার শাস্তি তাকে ভোগ করতেই হবে।
৪. দাওয়াত কবূল করবে না বলে নিরাশ হয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই, বরং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা কুরআন কারীমের শপথ করেছেন যা সুস্পষ্ট, যার অর্থ জাজ্বল্যমান এবং যার শব্দগুলো উজ্জ্বল। যা সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও অলংকারপূর্ণ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটা এই জন্যে যে, যেন লোকজন জানে, বুঝে ও উপদেশ গ্রহণ করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি।' যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এই কুরআনকে স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি।”(২৬:১৯৫)
মহান আল্লাহ বলেনঃ “এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে, এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ। উম্মুল কিতাব অর্থ লাওহে মাহফু। (আরবী) অর্থ আমার নিকট। (আরবী) অর্থ মরতবা, ইযযত, শরাফত ও ফযীলত। (আরবী) অর্থ দৃঢ়, মযবূত, বাতিলের সাথে মিলিত হওয়া এবং অন্যায়ের সাথে মিশ্রিত হওয়া হতে পবিত্র। অন্য জায়গায় এই পবিত্র কালামের বুযুর্গীর বর্ণনা নিম্নরূপে দেয়া হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, যারা পূত পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ স্পর্শ করে না। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।”(৫৬:৭৭-৮০) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “না, এই আচরণ অনুচিত, এটা তো উপদেশ বাণী; যে ইচ্ছা করবে সে এটা স্মরণ রাখবে, ওটা আছে মহান লিপিসমূহে, যা উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন, পবিত্র, মহান, পূত চরিত্র লিপিকর-হস্তে লিপিবদ্ধ ।”(৮০:১১-১৬) সুতরাং এই আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে আলেমগণ বলেন যে, অযু বিহীন অবস্থায় কুরআন কারীমকে হাতে নেয়া উচিত নয়, যেমন একটি হাদীসেও এসেছে, যদি তা সত্য হয়। কেননা, ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতারা ঐ কিতাবের ইযযত ও সম্মান করে থাকেন যাতে এই কুরআন লিখিত আছে। সুতরাং এই পার্থিব জগতে আমাদের তো আরো বেশী এর সম্মান করা উচিত। কেননা, এটা যমীনবাসীর নিকটই তো প্রেরণ করা হয়েছে। এটা দ্বারা তো তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। অতএব, এই পৃথিবীবাসীর এর খুব সম্মান ও আদব করা উচিত। কেননা, মহান আল্লাহ বলেনঃ “এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে, এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ।
এর পরবর্তী আয়াতের একটি অর্থ এই করা হয়েছেঃ “তোমরা কি এটা মনে করে নিয়েছে যে, তোমাদের আনুগত্য না করা এবং আদেশ নিষেধ মান্য না করা সত্ত্বেও আমি তোমাদেরকে ছেড়ে দিবো? এবং তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবো না?” আর একটি অর্থ এই করা হয়েছেঃ “এই উম্মতের পূর্ববর্তী লোকেরা যখন এই কুরআনকে অবিশ্বাস করেছিল তখনই যদি এটাকে উঠিয়ে নেয়া হতো তবে গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়া হতো। কিন্তু আল্লাহর প্রশস্ত রহমত এটা পছন্দ করেনি এবং বিশের অধিক বছর ধরে এ কুরআন অবতীর্ণ হতে থাকে। এ উক্তির ভাবার্থ হচ্ছেঃ “এটা আল্লাহ তা'আলার স্নেহ ও দয়া যে, অস্বীকারকারী ও দুষ্টমতি লোকদের দুষ্টামির কারণে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত ও উপদেশ দান পরিত্যাগ করা হয়নি যাতে তাদের সৎ লোকেরা সংশোধিত হয়ে যায় এবং সংশোধন হতে অনিচ্ছুক লোকদের উপর যুক্তি-প্রমাণ সমাপ্ত হয়ে যায়।”
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমাকে তোমার কওম যে অবিশ্বাস করছে এতে তুমি দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না, বরং ধৈর্যধারণ কর। এদের পূর্ববর্তী কওমদের নিকটেও নবী রাসূলগণ এসেছিল, তখন তারাও তাদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করেছিল।”
অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ‘তাদের মধ্যে যারা এদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। আর এই ভাবে চলে আসছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখতো এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল! পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে প্রবলতর।” (৪০:৮২) এই বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত গত হয়েছে অর্থাৎ তাদের রীতি-নীতি, শাস্তি ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা তাদের পরিণামকে পরবর্তীদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশের বিষয় করেছেন। যেমন তিনি এই সূরার শেষের দিকে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তৎপর পরবর্তীদের জন্যে আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত।” অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর নিয়ম তাঁর বান্দাদের মধ্যে গত হয়েছে।”(৪০:৮৫) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি আল্লাহর নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না।”(৩৩:৬২)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।