আল কুরআন


সূরা আয-যুখরুফ (আয়াত: 27)

সূরা আয-যুখরুফ (আয়াত: 27)



হরকত ছাড়া:

إلا الذي فطرني فإنه سيهدين ﴿٢٧﴾




হরকত সহ:

اِلَّا الَّذِیْ فَطَرَنِیْ فَاِنَّهٗ سَیَهْدِیْنِ ﴿۲۷﴾




উচ্চারণ: ইল্লাল্লাযী ফাতারানী ফাইন্নাহূছাইয়াহদীন।




আল বায়ান: ‘তবে (তিনি ছাড়া) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হিদায়াত দিবেন।’




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৭. তবে তিনি ব্যতীত যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর নিশ্চয় তিনি শীঘ্রই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন।




তাইসীরুল ক্বুরআন: আমার সম্পর্ক আছে শুধু তাঁর সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।




আহসানুল বায়ান: (২৭) সম্পর্ক আছে শুধু তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। [1]



মুজিবুর রহমান: সম্পর্ক আছে শুধু তাঁরই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন।



ফযলুর রহমান: তবে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি এর ব্যতিক্রম। (অর্থাৎ আমি শুধু তাঁরই ইবাদত করি।) নিশ্চয়ই তিনি আমাকে সুপথ দেখাবেন।”



মুহিউদ্দিন খান: তবে আমার সম্পর্ক তাঁর সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তিনিই আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন।



জহুরুল হক: তাঁকে ব্যতীত যিনি আমাকে আদিতে সৃষ্টি করেছেন, কাজেই নিশ্চয় তিনি শীঘ্রই আমাকে পথ দেখাবেন।



Sahih International: Except for He who created me; and indeed, He will guide me."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ২৭. তবে তিনি ব্যতীত যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর নিশ্চয় তিনি শীঘ্রই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (২৭) সম্পর্ক আছে শুধু তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে তাঁর দ্বীনের হিদায়াত দিয়ে তাতে সুদৃঢ়ও রাখবেন। আমি কেবল তাঁরই ইবাদত করব।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২৬-৩৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



এ আয়াতগুলোতে কয়েকটি বিষয়ের আলোচনা প্রস্ফুটিত হয়েছে। প্রথমত : একজন মু’মিন সকল প্রকার তাগুত ও শির্ক থেকে সম্পর্ক মুক্ত থাকবে এবং নিজের সকল বিষয় আল্লাহ তা‘আলার ওপর সোপর্দ করে দেবে। একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘটনা এ কথাই বলে দিচ্ছে। ধর্মের জন্য তিনি তাঁর মুশরিক পিতা ও জাতির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :



(قَالَ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ لا‏ أَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُكُمُ الْأَقْدَمُوْنَ ز فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّيْٓ إِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِيْنَ لا الَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ)‏‏



“সে বলল : ‎ ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, কিসের পূজা করছো ‘তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃপুরুষেরা? ‘তারা সকলেই আমার শত্র“, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত; ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা শুআরা ২৬ : ৭৫-৭৮)



এ ছাড়াও সূরা আন‘আমের ৭৮-৭৯ নম্বর আয়াতে এবং সূরা মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।



(وَجَعَلَهَا كَلِمَةًۭ بَاقِيَةً فِيْ عَقِبِه۪)



অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল বানানো মা‘বূদের ইবাদত থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করার বাণীটি পরবর্তী বংশধরদের শিক্ষার জন্য অবশিষ্ট রেখেছেন। যাতে তারা সকল প্রকার তাগুতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। এটাই হল লা ইলাহা ইল্লালাহ (لا اله الا الله) এর দাবী। لا اله আল্লাহ ব্যতীত সকল মা‘বূদ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, الا الله সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সম্পাদন করবে। সুতরাং একজন মু’মিন সর্বদা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, কখনো আল্লাহ তা‘আলার বিধানের বাইরে যাবে না। একবার মাসজিদে যাবে, আরেক বার মন্দিরে যাবে, একবার মাসজিদ উদ্বোধন করবে আরেক বার মন্দির বা গির্জা উদ্বোধন করবে তা হতে পারে না।



দ্বিতীয়ত :



মানুষের জীবিকা, জীবন-মৃত্যু, কল্যাণ-অকল্যাণ ও মান-সম্মান সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা বন্টন করে দিয়েছেন। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা কাকে নবুওয়াত দেবেন তাও বন্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার বণ্টনানুপাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাসূল হিসেবে প্রেরিত হলেন তখন মক্কার মুশরিকরা অস্বীকার করল। এবং বলতে লাগল কেন এ দুই গ্রামের (মক্কা ও তায়েফ) মধ্য হতে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে নাবী বানানো হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : আমি আমার রহমত তথা নবুওয়াত উপযুক্ত ব্যক্তিকেই প্রদান করি। অতএব এখানে তাদের কোন হাত নেই।



(لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ধনী বানিয়েছেন, কাউকে গরীব বানিয়েছেন, কাউকে মালিক বানিয়েছেন, কাউকে শ্রমিক বানিয়েছেন যাতে একজন অন্যজন দ্বারা উপকার নিতে পারে। সবাই যদি মালিক হতো তাহলে শ্রমিক হতো কে? আর সবাই যদি ধনী হতো তাহলে মুচি হতো কে? তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত রিযিক বন্টন করে দিয়েছেন, আর এ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(وَاللّٰهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰي بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ ج فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُوْا بِرَا۬دِّيْ رِزْقِهِمْ عَلٰي مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَا۬ءٌ ط أَفَبِنِعْمَةِ اللّٰهِ يَجْحَدُوْنَ)‏



“আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?” (সূরা নাহ্ল ১৬ : ৭১)



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, সত্য প্রত্যাখ্যানে যদি মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়ার আশংকা না থাকত তাহলে আমি দুনিয়ায় যারা আমার বিরুদ্ধাচরণ করে, আমাকে অস্বীকার করে তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি যাতে তারা আরোহণ করতে পারে এবং তাদেরকে দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত দরজা, বিশ্রামের জন্য পালঙ্ক যাতে তারা হেলান দিয়ে বসে থাকবে। আর তার সাথে স্বর্ণ নির্মিতও। তবে এগুলো পার্থিব জীবনেই সীমাবদ্ধ। আর আখিরাতে তারা ভোগ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং মু’মিনগণ থাকবে পরম আনন্দে ও আরাম-আয়েশে। হাদীসে বলা হয়েছে।



একদা ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়িতে গমন করেন, ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রীদের থেকে ঈলা করছিলেন। (কিছু দিনের জন্য স্ত্রীদের সংগ ত্যাগ করার শপথ করাকে ঈলা বলে)। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে আছেন এবং তাঁর দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে ‘উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রূম সম্রাট কাইসার এবং পারস্য সম্রাট কিসরা তারা কত আরামে দিন অতিবাহিত করছে। আর আপনি আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় ও মনোনীত বান্দা হওয়া সত্ত্বেও আপনার এ অবস্থা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন : হে ইবনুল খাত্ত্বাব! তুমি কি সন্দেহের মধ্যে রয়েছো? অতঃপর তিনি বলেন : এরা হলো ঐ সকল লোক যারা তাদের পার্থিব জীবনেই তাদের ভোগ্য বস্তু পেয়ে গেছে। (সহীহ মুসলিম ২ : ১১৩)



অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুনিয়ার মূল্য যদি একটি মশার ডানার পরিমাণও হত তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোক পানিও পান করতে দিতেন না। (সহীহ, তিরমিযী হা. ২৩২০)



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. একজন মু’মিন শির্ক ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক যুক্ত থাকতে পারে না।

২. দুনিয়াতে সুখে থাকার মানেই এমনটি নয় যে, আখিরাতেও সে সুখে থাকবে।

৩. দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট একটি মশার ডানার সমানও নয়।

৪. আল্লাহ কারো ইচ্ছামত কোন কিছু করেন না, বরং তিনি তাঁর ইচ্ছামত কাজ করে থাকেন।

৫. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ব্যক্তির রিযিক বরাদ্দ করে দিয়েছেন। কারো রিযিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২৬-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:

কুরায়েশ কাফিররা বংশ ও দ্বীনের দিক দিয়ে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল বলে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সুন্নাতকে তাদের সামনে রেখে বলেনঃ “দেখো, যে ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন তাঁর পরবর্তী সমস্ত নবী (আঃ)-এর পিতা, আল্লাহর রাসূল এবং একত্ববাদীদের ইমাম, তিনিই স্পষ্ট ভাষায় শুধু নিজের কওমকে নয়, বরং স্বয়ং নিজের পিতাকেও বলেনঃ তোমরা যাদের পূজা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার সম্পর্ক আছে শুধু ঐ আল্লাহর সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আমি তোমাদের এসব মাবুদ হতে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ। এদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই।

আল্লাহ তাআলাও তাঁকে তাঁর হক কথা বলার সাহসিকতা ও একত্ববাদের প্রতি আবেগ ও উত্তেজনার প্রতিদান প্রদান করেন যে, তিনি তাঁর সন্তানদের মধ্যে কালেমায়ে তাওহীদ চিরদিনের জন্যে বাকী রেখে দেন। তাঁর সন্তানরা এই পবিত্র কালেমার উক্তিকারী হবেন না এটা অসম্ভব। তাঁর সন্তানরাই এই তাওহীদী কালেমার প্রচার করবেন এবং দিকে দিকে ছড়িয়ে দিবেন। ভাগ্যবান ও সৎ লোকেরা এই বংশের লোকদের নিকট হতেই তাওহীদের শিক্ষা গ্রহণ করবে। মোটকথা, ইসলাম ও তাওহীদের শিক্ষক রূপে মনোনয়ন পেয়েছেন এই বংশের লোকেরাই।

প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমিই এই কাফিরদেরকে এবং এদের পূর্বপুরুষদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম ভোগের, অবশেষে তাদের নিকট আসলো সত্য ও স্পষ্ট প্রচারক রাসূল। যখন তাদের নিকট সত্য আসলো তখন তারা বললোঃ এটা তো যাদু এবং আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করি। জিদ ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে তারা সত্যকে অস্বীকার করে বসলো এবং কুরআনের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে গেল এবং বলে উঠলো- সত্যিই যদি এটা আল্লাহর কালাম হয়ে থাকে তবে কেন এটা মক্কা ও তায়েফের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হলো না?

প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি দ্বারা তারা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা, উরওয়া ইবনে মাসঊদ সাকাফী, উমায়ের ইবনে আমর, উবা ইবনে রাবীআহ, হাবীব ইবনে আমর ইবনে উমায়ের সাকাফী, ইবনে আবদে ইয়ালীল, কিনানাহ ইবনে আমর প্রমুখ ব্যক্তিদেরকে বুঝিয়েছিল। তাদের মতে এই দুই জনপদের কোন উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া উচিত ছিল।

তাদের এই প্রতিবাদের জবাবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এরা কি তোমার প্রতিপালকের করুণার মালিক যে, এরাই তা বন্টন করতে বসেছে? আমার জিনিস আমারই অধিকারভুক্ত। আমি যাকে ইচ্ছা তাকেই তা প্রদান করে থাকি। কোথায় আমার জ্ঞান এবং কোথায় তাদের জ্ঞান! রিসালাতের সঠিক হকদার কে তা আমিই জানি। এই নিয়ামত তাকেই দেয়া হয় যে সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, যার আত্মা পবিত্র, যার বংশ সবচেয়ে বেশী সম্ভ্রান্ত এবং যে মূলগতভাবেও সর্বাপেক্ষা পবিত্র।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর করুণা যারা বন্টন করতে চাচ্ছে তাদের জীবনোপকরণও তো তাদের অধিকারভুক্ত নয়। আমিই তাদের মধ্যে জীবিকা বন্টন করি তাদের পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করি যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। আমি যাকে যা ইচ্ছা এবং যখন ইচ্ছা দিয়ে থাকি এবং যখন যা ইচ্ছা ছিনিয়ে নিই। জ্ঞান, বিবেক, ক্ষমতা ইত্যাদিও আমারই দেয়া এবং এতেও আমি পার্থক্য রেখেছি। এগুলো সবাইকে আমি সমান দিইনি। এর হিকমত এই যে, এর ফলে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। এর ওর প্রয়োজন হয় এবং ওর এর প্রয়োজন হয়। সুতরাং একে অপরের অধীনস্থ থাকে।

অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ এরপর বলেনঃ আমি যদি এই আশংকা না করতাম যে, মানুষ মাল-ধনকে আমার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির প্রমাণ মনে করে নিয়ে সত্য প্রত্যাখ্যানে এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, তবে আমি কাফিরদেরকে এতো বেশী মাল-ধন দিতাম যে, তাদের গৃহের ছাদ রৌপ্য নির্মিত হতো, এমনকি ঐ সিঁড়িও হতো রৌপ্য নির্মিত যাতে তারা আরোহণ করে। আর তাদের গৃহের জন্যে দিতাম রৌপ্য নির্মিত দরযা এবং বিশ্রামের জন্যে দিতাম রৌপ্য ও স্বর্ণ নির্মিত পালংক। তবে এ সবই শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার। এগুলো ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল এবং আখিরাতের নিয়ামতরাশির তুলনায় এগুলো অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। আর আখিরাতের এই নিয়ামত ও কল্যাণ রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যে। দুনিয়া লোভীরা এখানে ভোগ-সম্ভার ও সুখ-সামগ্রী কিছুটা লাভ করবে বটে কিন্তু আখিরাতে তারা হবে একেবারে শূন্য হস্ত। সেখানে তাদের কাছে একটাও পুণ্য থাকবে না। যার বিনিময়ে তারা মহান আল্লাহর নিকট হতে কিছু লাভ করতে পারে, যেমন সহীহ হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

অন্য হাদীসে রয়েছেঃ “আল্লাহর কাছে যদি এই দুনিয়ার মূল্য একটি মশার ডানার পরিমাণও হতো তবে তিনি এখানে কোন কাফিরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না।”

মহান আল্লাহ বলেন যে, পরকালের কল্যাণ শুধু ঐ লোকদের জন্যেই রয়েছে। যারা দুনিয়ায় সদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। পরকালে এরাই মহান প্রতিপালকের বিশিষ্ট নিয়ামত ও রহমত লাভ করবে, যাতে অন্য কেউ তাদের শরীক হবে না।

একদা হযরত উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীতে আগমন করেন, ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় স্ত্রীদের হতে ঈলা কিছু দিনের জন্যে স্ত্রীদের সংসর্গ ত্যাগ করার শপথ করাকে শরীয়তের পরিভাষায় ঈলা বলা হয়) করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) একাকী ছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তিনি একখণ্ড চাটাই এর উপর শুয়ে রয়েছেন এবং তাঁর দেহে চাটাই এর দাগ পড়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে হযরত উমার (রাঃ) কেঁদে ফেলেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! রোমক সম্রাট কায়সার এবং পারস্য সম্রাট কিসরা কত শান-শওকতের সাথে আরাম-আয়েশে দিন যাপন করছে! আর আপনি আল্লাহর প্রিয় ও মনোনীত বান্দা হওয়া সত্ত্বেও আপনার এই (শশাচনীয়) অবস্থা!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেলান লাগিয়ে ছিলেন, হযরত উমার (রাঃ)-এর একথা শুনে তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ “হে উমার (রাঃ)! তুমি কি সন্দেহের মধ্যে রয়েছো?” অতঃপর তিনি বলেনঃ “এরা হলো ঐ সব লোক যারা তাদের পার্থিব জীবনেই তাড়াতাড়ি তাদের ভোগ্য বস্তু পেয়ে গেছে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি বলেনঃ “তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তাদের জন্যে দুনিয়া এবং আমাদের জন্যে আখিরাত?”

সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থসমূহে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করো না এবং এগুলোর থালায় আহার করো না, কেননা, এগুলো দুনিয়ায় তাদের (কাফিরদের) জন্যে এবং আখিরাতে আমাদের জন্যে।” আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিতে দুনিয়া খুবই ঘৃণ্য ও তুচ্ছ।

হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলার নিকট দুনিয়ার মূল্য যদি একটি মশার ডানার সমানও হতো তবে তিনি কোন কাফিরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।