আল কুরআন


সূরা আয-যুখরুফ (আয়াত: 17)

সূরা আয-যুখরুফ (আয়াত: 17)



হরকত ছাড়া:

وإذا بشر أحدهم بما ضرب للرحمن مثلا ظل وجهه مسودا وهو كظيم ﴿١٧﴾




হরকত সহ:

وَ اِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمْ بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُهٗ مُسْوَدًّا وَّ هُوَ کَظِیْمٌ ﴿۱۷﴾




উচ্চারণ: ওয়া ইযা-বুশশিরা আহাদুহুম বিমা-দারাবা লিররাহমা-নি মাছালান জাল্লা ওয়াজহুহূ মুছওয়াদ্দাওঁ ওয়া হুওয়া কাজীম।




আল বায়ান: আর যখন তাদের কাউকে সুসংবাদ দেয়া হয়, যা রহমানের প্রতি তারা দৃষ্টান্ত পেশ করে, তখন তার মুখমন্ডল মলিন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় যে, সে দুঃসহ যাতনাপিষ্ট।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৭. আর যখন তাদের কাউকে সুসংবাদ দেয়া হয় যা রহমানের প্রতি তারা দৃষ্টান্ত পেশ করে তা দ্বারা, তখন তার মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায়, এমতাবস্থায় যে সে দুঃসহ যাতনাক্লিষ্ট।




তাইসীরুল ক্বুরআন: তাদের কাউকে যখন সংবাদ দেয়া হয় সেই সন্তানের যা তারা দয়াময় আল্লাহর প্রতি আরোপ করে, তখন তার মুখ মন্ডলে কালিমা ছেয়ে যায়, আর মন দুঃখ বেদনায় ভরে যায়।




আহসানুল বায়ান: (১৭) ওরা পরম দয়াময় আল্লাহর প্রতি যে কন্যা-সন্তান আরোপ করে, ওদের কাউকেও সে কন্যা সন্তানের সংবাদ দেওয়া হলে তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।



মুজিবুর রহমান: দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে তাদের কেহকে সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃসহ মর্ম যাতনায় ক্লিষ্ট হয়।



ফযলুর রহমান: তাদের কাউকে যদি সেই সংবাদ (অর্থাৎ কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদ) দেওয়া হয়, যা সে করুণাময় আল্লাহর প্রতি আরোপ করে, তাহলে তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃখভারাক্রান্ত হয়।



মুহিউদ্দিন খান: তারা রহমান আল্লাহর জন্যে যে, কন্যা-সন্তান বর্ণনা করে, যখন তাদের কাউকে তার সংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং ভীষণ মনস্তাপ ভোগ করে।



জহুরুল হক: আর যখন তাদের কাউকে সুসংবাদ দেওয়া হয় তাই দিয়ে যার দৃষ্টান্ত সে স্থাপন করে পরম করুণাময়ের প্রতি, তার চেহারা তখন কালো হয়ে যায় আর সে অতিমাত্রায় ক্ষুদ্ধ্ব হয়।



Sahih International: And when one of them is given good tidings of that which he attributes to the Most Merciful in comparison, his face becomes dark, and he suppresses grief.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৭. আর যখন তাদের কাউকে সুসংবাদ দেয়া হয় যা রহমানের প্রতি তারা দৃষ্টান্ত পেশ করে তা দ্বারা, তখন তার মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায়, এমতাবস্থায় যে সে দুঃসহ যাতনাক্লিষ্ট।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৭) ওরা পরম দয়াময় আল্লাহর প্রতি যে কন্যা-সন্তান আরোপ করে, ওদের কাউকেও সে কন্যা সন্তানের সংবাদ দেওয়া হলে তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১৫-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



মক্কার কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করত, শুধু তাই নয় বরং তাঁর জন্য কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করত। এ আয়াতগুলোতে তাদের সেসব কথার তীব্র সমালোচনা ও ধিক্কার প্রদান করা হয়েছে।



جُزْءًا দ্বারা কারো মতে উদ্দেশ্য হল- কাফিররা তাদের দেব-দেবীর নামে তাদের যে-সব ফসল, চতুষ্পদ জন্তু ইত্যাদির একটি অংশ এবং আল্লাহ তা‘আলার নামে একটি অংশ রেখে দিত।



আল্লাহ তা‘আলার বাণী :



(وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْأَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعْمِهِمْ وَهٰذَا لِشُرَكَا۬ئِنَا)



“আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য’।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৩৬, ইবনে কাসীর- তাফসীর অত্র আয়াত)



আবার কারো মতে جزءا দ্বারা তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সন্তান-স্ত্রী পরিজন সাব্যস্ত করত তাই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর সা‘দী, তাফসীর মুয়াসসার) মোটকথা তারা বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করে।



আল্লাহ তা‘আলা তাদের ধিক্কার দিয়ে বলেন যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সন্তান সাব্যস্ত করে এমন সন্তান যদি তাদেরকে দান করা হয় তাহলে তাদের চেহারাসমূহ কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃখ-বেদনায় ব্যথিত হয়ে পড়ে। যে সন্তান তারা নিজেদের জন্য পছন্দ করে না সে সন্তান কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য হতে পারে। এটাতো সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক কথা এবং বন্টনের দিক দিয়েও এটা একটি অশুভ বণ্টন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :



(أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثٰي تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيْزٰي ‏)‏



“তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র, আর তাঁর জন্য কন্যা সন্তান? এ প্রকার বন্টন তো অসঙ্গত।” (সূরা নাজম ৫৩ : ২২)



তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সকল অংশীদার ও সন্তান, স্ত্রী-পরিজন সাব্যস্ত করে তা সম্পূর্ণই বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন; এ ব্যাপারে তাদের কোনই দলীল-প্রমাণ নেই। আর আল্লাহ তা‘আলা যদি সন্তান-স্ত্রী-পরিজন গ্রহণ করার চিন্তা-ভাবনা করতেন তাহলে তিনি তাঁর সৃষ্টি হতে উত্তম জিনিসই গ্রহণ করতেন। এ সকল জিনিস গ্রহণ করা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত আর এটা তাঁর জন্য সমীচীনও নয়।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেন, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় যে-সব বিষয়ে দুর্বল তা হলো : তারা তর্ক-বিতর্কে, স্পষ্ট বক্তব্যদান ইত্যাদিতে পুরুষের তুলনায় দুর্বল, আর তাদের বৈশিষ্ট্য হলো : তারা অলংকারে আবৃত হয়ে নিজ বাড়িতে স্বামীর ঘর-সংসার দেখাশোনা করবে, আর পুরুষ বাইরে কাজ-কর্ম করে মহিলাদের সমস্ত ব্যয়ভাব বহন করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, ফিরিশ্তারা আল্লাহর সন্তান নয় এবং তারা নারীও নয়; বরং তারা আল্লাহ তা‘আলার এক প্রকার বান্দা।



মুশরিকরা অন্যান্য বাতিল মা‘বূদের ইবাদত করার স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলে আল্লাহ তা‘আলা চাচ্ছেন তাই আমরা তাদের ইবাদত করি। যেমন অন্যত্র তাদের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا لَوْ شَا۬ءَ اللّٰهُ مَآ أَشْرَكْنَا وَلَا اٰبَا۬ؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ)



“যারা শির্ক করেছে তারা অচিরেই বলবে, ‘আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্ক করতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করতাম না।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৪৮) তাদের এসব দাবী মিথ্যা ও অযৌক্তিক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনো কাউকে নির্দেশ দেননি তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. আল্লাহ তা‘আলার কোনই শরীক বা অংশীদার নেই আর তিনি সন্তান-স্ত্রী-পরিজন গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।

২. ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার বান্দা, তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার কন্যা নন।

৩. নিজের জন্য যা পছন্দনীয় নয় তা অপরের জন্য নির্ধারণ করা যাবে না।

৪. মহিলাদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানা গেল।

৫. মানুষ যা কিছু করে ও বলে তার সকল কিছুই লিখে রাখা হয়।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১৫-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ঐ অপবাদ ও মিথ্যার খবর দিচ্ছেন যা তারা তাঁর উপর আরোপ করেছিল, যার বর্ণনা সূরায়ে আন'আমের নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলেঃ এটা আল্লাহর জন্যে এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্যে। যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌছে; তারা যা মীমাংসা করে তা নিকৃষ্ট।”(৬:১৩৬) অনুরূপভাবে মুশরিকরা ছেলে ও মেয়েদের ভাগ বন্টন করে মেয়েদেরকে সাব্যস্ত করতো আল্লাহর জন্যে, যারা তাদের ধারণায় ঘৃণ্য ছিল, আর ছেলেদেরকে নিজেদের জন্যে পছন্দ করতো। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এই প্রকার বন্টন তো অসংগত।”(৫৩:২১-২২)

এখানেও আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে তার অংশ সাব্যস্ত করেছে। মানুষ তো স্পষ্টই অকৃতজ্ঞ।”

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তিনি কি তাঁর সৃষ্টি হতে নিজের জন্যে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্র সন্তান দ্বারা?” এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের উক্তিকে চরমভাবে অস্বীকার করেছেন। তারপর পূর্ণভাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেনঃ দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে তাদের কাউকেও সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার চেহারা লজ্জায় কালো হয়ে যায়। শরমে সে মানুষকে মুখ দেখায় না। এটা যেন তার কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার। অথচ সে নিজের পূর্ণ নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করে বলে যে, আল্লাহর কন্যা রয়েছে। এটা কতই না বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তারা নিজেদের জন্যে যা পছন্দ করে না তাই আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করছে!

অতঃপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে এমন সন্তান, যে অলংকারে মণ্ডিত হয়ে লালিত পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ক কালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ? অর্থাৎ যে কন্যা সন্তানদেরকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয় এবং অলংকারে মণ্ডিত করে যাদের এ অসম্পূর্ণতাকে ঢাকা দেয়া হয় এবং বাল্যাবস্থা হতে মৃত্যু পর্যন্ত যারা সাজ সজ্জারই মুখাপেক্ষী থেকে যায়, আবার ঝগড়া-বিবাদ এবং তর্ক-বিতর্কের সময় যাদের কথাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় না, এদেরকেই মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করা হচ্ছে। যাদের বাহির ও ভিতর ত্রুটিপূর্ণ, যাদের বাহ্যিক ক্রটিকে অলংকারের দ্বারা দূর করার চেষ্টা করা হয়, তাদেরকেই সম্পর্কযুক্ত করা হয় আল্লাহর সাথে। মেয়েদের বাহ্যিক ত্রুটিকে ঢাকা দেয়ার জন্যে অলংকার দ্বারা যে তাদেরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয় এটা আরব কবিদের কবিতার মধ্যেও পাওয়া যায়। যেমন কোন আরব কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৌন্দর্যের ক্রটি দূর করার জন্যেই অলংকারের প্রয়োজন হয়, সুতরাং পূর্ণ সৌন্দর্যের জন্যে অলংকারের কি প্রয়োজন?”

মেয়েদের আভ্যন্তরীণ ক্রটিও রয়েছে, যেমন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে না। না মুখের দ্বারা পারে, না সাহসিকতার দ্বারা পারে। কোন একজন আরববাসী এটাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে শুধু কান্নাকাটির দ্বারা সাহায্য করতে পারে এবং শুধু গোপনে কোন কল্যাণের কার্য করতে পারে।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে।' অর্থাৎ তারা এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে। মহান আল্লাহ তাদের এই উক্তিকে অস্বীকার করে বলেনঃ ‘এদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছে?' অর্থাৎ আল্লাহ যে ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছেন এটা কি তারা দেখেছে? এরপর তিনি বলেনঃ ‘তাদের এই উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর দ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে।

এরপর তাদের আরো নির্বুদ্ধিতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না।' অর্থাৎ “আমরা ফেরেশতাদেরকে নারী মনে করে ওদের মূর্তি বানিয়েছি এবং ওদের পূজা করছি, এটা যদি আল্লাহর ইচ্ছা না থাকতো তবে তিনি আমাদের এবং ওদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতেন এবং তখন আমরা এদের আর পূজা করতে পারতাম না। সুতরাং আমরা যখন এদের পূজা করছি এবং তিনি আমাদের ও এদের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি তখন এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমরা ভুল করছি না, বরং ঠিকই করছি।” সুতরাং তাদের প্রথম ভুল এই যে, তারা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করেছে। তাদের দ্বিতীয় ভুল হলো এই যে, তারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করেছে। আর তাদের তৃতীয় ভুল হচ্ছে এই যে, তারা ফেরেশতাদের পূজা শুরু করে দিয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। তারা শুধু তাদের পূর্বপুরুষদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করছে। তাদের চতুর্থ ভুল এই যে, তারা এটাকে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত বলছে এবং এর কারণ এই বের করেছে যে, যদি আল্লাহ তাদের এই কাজে অসন্তুষ্ট থাকতেন তবে তাদের জন্যে এদের পূজা করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এটা তাদের সরাসরি মূর্খতা ও অবাধ্যতা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাদের এ কাজে চরম অসন্তুষ্ট। এক একজন নবী (আঃ) এটা খণ্ডন করে গেছেন এবং এক একটি কিতাব এর নিকৃষ্টতা বর্ণনা করেছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (একথা বলাবার জন্যে) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাগূতের (শয়তানের বা অন্যান্যদের) ইবাদত হতে দূরে থাকো, অতঃপর তাদের মধ্যে কতক এমন বের হয় যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেন এবং তাদের মধ্যে কতক এমনও বের হয় যাদের উপর পথভ্রষ্টতা বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ কর এবং দেখো যে, অবিশ্বাসকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল।”(১৬:৩৬) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে (রাসূলরূপে) প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস করঃ আমি কি তাদেরকে রহমান (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্যদের ইবাদত করার অনুমতি দিয়েছিলাম? (কখনো নয়)।'(৪৩:৪৫)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা সবকিছুই নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে। অর্থাৎ তাদের আল্লাহর কুদরত বা ক্ষমতা সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নেই।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।