আল কুরআন


সূরা গাফির (আল মু‘মিন) (আয়াত: 7)

সূরা গাফির (আল মু‘মিন) (আয়াত: 7)



হরকত ছাড়া:

الذين يحملون العرش ومن حوله يسبحون بحمد ربهم ويؤمنون به ويستغفرون للذين آمنوا ربنا وسعت كل شيء رحمة وعلما فاغفر للذين تابوا واتبعوا سبيلك وقهم عذاب الجحيم ﴿٧﴾




হরকত সহ:

اَلَّذِیْنَ یَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَ مَنْ حَوْلَهٗ یُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَ یُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا ۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ کُلَّ شَیْءٍ رَّحْمَۃً وَّ عِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِیْنَ تَابُوْا وَ اتَّبَعُوْا سَبِیْلَکَ وَ قِهِمْ عَذَابَ الْجَحِیْمِ ﴿۷﴾




উচ্চারণ: আল্লাযীনা ইয়াহমিলূনাল‘আরশা ওয়া মান হাওলাহূইউছাব্বিহূনা বিহামদি রাব্বিহিমওয়া ইউ’মিনূনা বিহী ওয়া ইয়াছতাগফিরূনা লিল্লাযীনা আ-মানূ রাব্বানা-ওয়াছি‘তা কুল্লা শাইয়িররাহমাতাওঁ ওয়া ‘ইলমান ফাগফির লিল্লাযীনা তা-বূওয়াত্তাবা‘ঊ ছাবীলাকা ওয়াকিহিম ‘আযা-বাল জাহীম।




আল বায়ান: যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৭. যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রাবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্ৰশংসার সাথে এবং তার উপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আপনি তাদের রক্ষা করুন।




তাইসীরুল ক্বুরআন: যারা ‘আরশ বহন করে আছে, আর যারা আছে তার চারপাশে, তারা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করে আর তাঁর প্রতি ঈমান পোষণ করে আর মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দিয়ে সব কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছ, কাজেই যারা তাওবাহ করে ও তোমার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা কর, আর জাহান্নামের ‘আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা কর।




আহসানুল বায়ান: (৭) যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারিপাশ ঘিরে আছে তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সাথে ঘোষণা করে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব যারা তওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে, তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। [1]



মুজিবুর রহমান: যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, অতএব যারা তাওবাহ করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।



ফযলুর রহমান: যারা আল্লাহর আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশ ঘিরে থাকে তারা (সেই ফেরেশতারা) তাদের প্রভুর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তাঁকে বিশ্বাস করে এবং মুমিনদের জন্য (তাঁর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। (তারা বলে,) “হে আমাদের প্রভু! অনুগ্রহ ও জ্ঞান দ্বারা তুমি সবকিছু ধারণ করে আছো। অতএব, যারা তওবা করে ও তোমার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করো এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা কর।”



মুহিউদ্দিন খান: যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।



জহুরুল হক: যারা আরশ বহন করে আর যারা এর চারপাশে রয়েছে তারা তাদের প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করছে আর তাঁর প্রতি বিশ্বাস করছে, আর পরিত্রাণ প্রার্থনা করছে তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে -- "আমাদের প্রভু! তুমি সব-কিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছ করুণার ও জ্ঞানের দ্বারা, কাজেই তুমি পরিত্রাণ করো তাদের যারা ফিরেছে ও তোমার পথ অনুসরণ করেছে, আর তাদের রক্ষা করো জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি থেকে।



Sahih International: Those [angels] who carry the Throne and those around it exalt [Allah] with praise of their Lord and believe in Him and ask forgiveness for those who have believed, [saying], "Our Lord, You have encompassed all things in mercy and knowledge, so forgive those who have repented and followed Your way and protect them from the punishment of Hellfire.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৭. যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রাবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্ৰশংসার সাথে এবং তার উপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আপনি তাদের রক্ষা করুন।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৭) যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারিপাশ ঘিরে আছে তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সাথে ঘোষণা করে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব যারা তওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে, তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। [1]


তাফসীর:

[1] এখানে নিকটতম ফিরিশতাদের একটি বিশেষ দল এবং তাঁদের কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দলটি সেই ফিরিশতাদের, যাঁরা আল্লাহর আরশ তুলে ধরে আছেন এবং তাঁদের, যাঁরা তার চারিপাশে আছেন। এদের একটি কাজ হল, এঁরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর প্রশংসা করেন। অর্থাৎ, তাঁকে সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন, তাঁর পরিপূর্ণতা ও গুণাবলীকে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেন এবং তাঁর সামনে অসহায়তা ও বিনয় (অর্থাৎ ঈমান) প্রকাশ করেন। এঁদের দ্বিতীয় কাজ হল, এঁরা ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বলা হয় যে, আরশ বহনকারী ফিরিশতার সংখ্যা হল চার। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাঁদের সংখ্যা হবে আট। (ইবনে কাসীর)


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৭-৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ দয়ার সংবাদ দিচ্ছেন এবং বান্দার কল্যাণ বয়ে আনে এমন কিছু মাধ্যম যা তাদের সাধ্যাতীত তার বর্ণনা দিচ্ছেন। তা হল আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, দীন ও পরকালে তাদের জন্য যা কল্যাণকর তা চেয়ে দু‘আ করে। এ সংবাদে আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহনকারী ফেরেশতা ও তার পার্শ্ববর্তী ফেরেশতাদেরও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। তারা আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি ইবাদত করে, তারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল এবং বান্দাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আরশ বহনকারী ফেরেশতা বর্তমানে চারজন, কিয়ামতের দিন তা হবে আটজন। (সূরা হাক্কাহ ৬৯ : ১৭)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমাকে আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের বর্ণনা দিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাঁদের কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত সাতশত বছরের দূরত্বের সমান। (আবূ দাঊদ হা. ৪৭২৭, মিশকাত হা. ৫৭২৮, সহীহ)



মূলত এখানে যারা মু’মিন ও মুত্তাকী তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে যে, তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহনকারী/ধারণকারী ও নিকটতম ফেরেশতাগণ যারা তাদের রবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর প্রশংসা করে তাঁরা পৃথিবীবাসী (মুত্তাকী) মু‘মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে।



এখানে নিকটতম ফেরেশতাদের দুটো কাজের কথা বর্ণনা করা হয়েছে- একটি হলো, এঁরা আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা ঘোষণা করে, তাঁর পরিপূর্ণতা ও গুণাবলীকে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করে এবং তাঁর সামনে অসহায়ত্য ও বিনয় প্রকাশ করে। দ্বিতীয়টি হলো, এঁরা ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বলে, হে আমাদের রব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব যারা তাওবা করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আর তাদেরকে প্রবেশ করান চিরস্থায়ী জান্নাতে যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের মাতা-পিতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কাজ করেছে তাদেরকেও। যেমন আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে অন্যত্র বলেন,



(وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَا۬ءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَأَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَأُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولٰ۬ئِكَ لَهُمْ عُقْبَي الدَّارِ لا -‏ جَنّٰتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَا۬ئِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيّٰتِهِمْ وَالْمَلٰ۬ئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ) ‏



“এবং যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্য ধারণ করে, সালাত কায়েম করে আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, এদের জন্য শুভ পরিণাম- (তা হল) স্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পতœী ও সন্ত‎ান-সন্ত‎তিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও, এবং ফেরেশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে প্রত্যেক দ্বার দিয়ে।” (সূরা রা‘দ ১৩ : ২২-২৩)



সুতরাং যখন কোন ব্যক্তি অনুপস্থিত মু’মিন ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে তখন ফেরেশতারা সে দু‘আকারী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। সহীহ মুসলিমে এসেছে : যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ করে তখন ফেরেশতারা তার দু‘আয় আমীন বলে এবং বলে : আল্লাহ তা‘আলা তোমাকেও অনুরূপ প্রদান করুক যা তুমি তোমার ঐ মু’মিন ভাইয়ের জন্য চাচ্ছ। (সহীহ মুসলিম ৪/২০৯৪) এবং ফেরেশতারা আরো দু‘আ করে বলে- তাদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করুন। সেদিন আপনি যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করবেন তাকেইতো অনুগ্রহ করবেন। সুতরাং আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার আরশ ধারণ করে আছে এ কথা জানা গেল।

২. ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে, তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং মু‘মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

৩. মু’মিনদের মর্যাদার কথা জানা গেল।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আরশ বহনকারী চারজন ফেরেশতা এবং এর আশেপাশের সমস্ত ভাল ও সম্মানিত ফেরেশতা এক দিকে তো আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেন, সমস্ত দোষ ও অপরাধ হতে তাঁকে দূর বলেন এবং অপরদিকে তাকে সমস্ত গুণ ও প্রশংসার যোগ্য মেনে নিয়ে তার প্রশংসা কীর্তন করেন। মোটকথা, যা আল্লাহর মধ্যে নেই তা হতে তারা তাকে পবিত্র ও মুক্ত বলেন এবং যা তাঁর মধ্যে রয়েছে তা তারা সাব্যস্ত করেন। তারা তার উপর ঈমান ও বিশ্বাস রাখেন এবং নিজেদের নীচতা ও অপারগতা প্রকাশ করেন। যমীনবাসী সমস্ত মুমিন পুরুষ ও স্ত্রীর জন্যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। পৃথিবীবাসীদের আল্লাহর উপর ঈমান তাঁকে না দেখেই ছিল বলে তিনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তাঁর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাদেরকে নিযুক্ত করে দেন। সুতরাং তারা তাদেরকে না দেখেই সদা-সর্বদা তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, যখন কোন মুসলিম তার কোন (মুসলিম) ভাই-এর অনুপস্থিতির সময় তার জন্যে দু'আ করে তখন ফেরেশতা তার দু'আয় আমীন বলেন এবং বলেনঃ “আল্লাহ তোমাকেও ওটাই প্রদান করুন যা তুমি তোমার ঐ মুমিন ভাই-এর জন্যে চাচ্ছ।”

মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উমাইয়া ইবনে সালাতের কোন কোন কবিতার সত্যতা স্বীকার করেন। যেমন নিম্নের কবিতাঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর বহনকারী ফেরেশতা চারজন। দুই জন একদিকে এবং অপর দুই জন অন্যদিকে থাকেন।”

তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “সে সত্য বলেছে।” তারপর ঐ কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সূর্য প্রত্যেক রাত্রির শেষে রক্তিম বর্ণে উদিত হয়, তারপর গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। এটা কখনো স্বীয় আকৃতিতে প্রকাশিত হয় না, বরং রুক্ষ ও পানসেই থাকে।” এবারও রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সে সত্য বলেছে।” (এর সনদ খুব পাকা ও মযবৃত। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এই সময় আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের সংখ্যা চারজন হবে)

কিয়ামতের দিন কিন্তু আটজন ফেরেশতা আরশ বহন করবেন। যেমন কুরআন মাজীদে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই দিন আটজন ফেরেশতা তাদের প্রতিপালকের আর্শকে ধারণ করবে তাদের ঊর্ধ্বে।” (৬৯-১৭) হ্যাঁ, তবে এই আয়াতের ভাবার্থেও এই হাদীস হতে দলীল গ্রহণে একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, সুনানে আবি দাউদের একটি হাদীসে রয়েছেঃ হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বাতহা নামক স্থানে একটি সমাবেশে ছিলেন যেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-ও অবস্থান করছিলেন। এমন সময় (আকাশে) এক খণ্ড মেঘ চলতে দেখা যায়। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ঐ মেঘের দিকে তাকিয়ে বলেনঃ “এর নাম কি?” সাহাবীগণ (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “আমরা এটাকে (আরবী) বলে থাকি।” তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ “তোমরা কি এটাকে (আরবী)-ও বল না?” তাঁরা জবাব দিলেনঃ “হ্যা এটাকে আমরা (আরবী)-ও বলে থাকি।” তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা এটাকে (আরবী)-ও কি বল না?” তারা উত্তর দিলেনঃ “ হ্যা, (আরবী)-ও বলি বটে।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁদেরকে প্রশ্ন করলেনঃ “আসমান ও যমীনের মধ্যে দূরত্ব কত তা কি তোমরা জান?” তারা উত্তরে বললেনঃ “জ্বী, না।” তিনি বললেনঃ “এ দু'টোর মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে একাত্তর, বাহাত্তর অথবা তেহাত্তর বছরের পৃথ। এর উপরের আসমানও এই প্রথম আসমান হতে এরূপই দূরত্বে রয়েছে। সপ্তম আকাশ পর্যন্ত একটি হতে অপরটির মাঝে অনুরূপ দূরত্ব রয়েছে। সপ্তম আকাশের উপর একটি সমুদ্র রয়েছে যার গভীরতা এই পরিমাণই। ওর উপর আট জন ফেরেশতা পাহাড়ী ছাগলের আকারে রয়েছেন যেগুলোর খুর হতে হাঁটু পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো এক আকাশ হতে অন্য আকাশের দূরত্বের সমান। তাঁদের পিঠের উপর আল্লাহ্ তা'আলার আরুশ রয়েছে। যার উচ্চতাও এই পরিমাণ। এর উপরে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা রয়েছেন। (এ হাদীসটি জামেউত তিরমিযীতেও রয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে গারীব বলেছেন) এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এই সময় আল্লাহ্ তা'আলার আরশ আটজন ফেরেশতার উপর রয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের তাসবীহ্ নিম্নরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। সমস্ত প্রশংসা আপনারই প্রাপ্য যে, আপনি (আপনার বান্দাদের পাপরাশি) জানা সত্ত্বেও সহনশীলতা প্রদর্শন করছেন।”

অপর চারজন ফেরেশতার তাসবীহ নিম্নরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমতার পরেও (আপনার বান্দাদের পাপরাশি) ক্ষমা করছেন এ জন্যে আমি আপনার মহিমা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি।” এ জন্যেই মুমিনদের ক্ষমা প্রার্থনায় তারা এ কথাও বলেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। বানী আদমের সমস্ত গুনাহ ও তাদের অপরাধের উপর আপনার রহমত ছেয়ে আছে। অনুরূপভাবে আপনার জ্ঞানও তাদের সমস্ত কথা এবং কাজকে পরিবেষ্টন করে আছে। তাদের সমস্ত অঙ্গ-ভঙ্গী সম্পর্কে আপনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। সুতরাং তাদের এই ব্যক্তিরা যখন তাওবা করতঃ আপনার দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাপকার্য হতে বিরত থাকে, আপনার আহকাম পালন করে, ভাল কাজ করে ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ করে তখন আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করুন এবং আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিন। আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও তাদের ঈমানের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরকেরও তাদের সাথে মিলিত করবো এবং তাদের আমলের কিছুই কম করবো না।” (৫২:২১) অর্থাৎ তাদের সবকেই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান করবো, যাতে উভয় পক্ষেরই চক্ষু ঠাণ্ডা হয়। আর আমি এটা করবো না যে, উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের মর্যাদা কমিয়ে দিবো, বরং যাদের মর্যাদা কম তাদের মর্যাদা আমি বাড়িয়ে দিবো এবং এটা তাদের উপর আমার দয়া ও অনুগ্রহেরই ফল।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন, মুমিন জান্নাতে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেঃ “আমার পিতা, আমার ভাই এবং আমার সন্তান-সন্ততি কোথায়?” উত্তর দেয়া হবেঃ “তাদের পুণ্য এতো ছিল না যে, তারা এরূপ মর্যাদায় পৌছতে পারে।” সে বলবেঃ “আমি তো আমার জন্যে এবং তাদের সবারই জন্যে আমল করেছিলাম। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকেও তার মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিবেন। অতঃপর তিনি (আরবী) এ আয়াতটি পাঠ করেন।

হযরত মুতরাফ ইবনে আবদিল্লাহ (রঃ) বলেন যে, ফেরেশতারাও মুমিনদের মঙ্গল কামনা করে থাকেন। অতঃপর তিনিও এই আয়াতটিই পাঠ করেন। আর শয়তান তাদের অমঙ্গল কামনা করে।

মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” অর্থাৎ তিনি এমন বিজয়ী যার উপর কেউ বিজয় লাভ করতে পারে না এবং যাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। তিনি স্বীয় কথায়, কাজে এবং শরীয়তে ও তকদীরে প্রজ্ঞাময়। সুতরাং ফেরেশতারা প্রার্থনায় আরো বলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি মুমিনদেরকে আপনার শাস্তি হতে রক্ষা করুন। সেই দিন আপনি যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করবেন তার প্রতি তো আপনি অনুগ্রহই করবেন। আর এটাই তো মহা সাফল্য।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।